ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কি কি? ব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য?

ব্যাকটেরিয়ার নামকরণ :-

ব্যাকটেরিয়াম (Bacterium) শব্দটি গ্রীক ভাষা হতে উৎপত্তি। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে Ehrenberg সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়াম শব্দটি ব্যবহার করেন।

ব্যাকটেরিয়াম (Bacterium) শব্দের অর্থ দণ্ড (Staff)। ব্যাকটেরিয়াম শব্দের বহুবচন ব্যাকটেরিয়া (Bacteria)। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) এবং জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (Robert Hock) প্রভৃতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় স্বল্পজ্ঞাত অণুজীববিজ্ঞান আধুনিক অণুজীববিজ্ঞানে রূপান্তরিত হয়েছে।

ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার :-

পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে বহুপূর্ব হতে, কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্র না থাকার কারণে এ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কিছু জানা যায় নি। তবে ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় তাতে ব্যাকটেরিওলজী ও প্রোটো-জুয়োলজীর জনক বলে পরিচিত অ্যান্টনি ভন লিউয়েনহুক (Antony van Leeuwenhoek)-এর ডায়েরি ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের প্রথম দিনগুলির সাক্ষ্য বহন করে।

হল্যান্ডের ডেলফ্ট (Delft) শহর নিবাসী বিজ্ঞানী লিউয়েনহুক ১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তাঁর ডায়েরিতে যে বিবরণ লিখেছেন তাতে জানা যায় ঐ মাসের ৯ তারিখে তিনি একটি পাত্রে কিছু বৃষ্টির পানি ধরেছিলেন। ১০ তারিখে তিনি তাঁর স্বহস্তে নির্মিত সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে উক্ত পানিতে কিছু জীবন্ত বস্তু আছে বলে মনে করেন।

আরও পড়ুন :- ভাইরাস কাকে বলে?

কিন্তু সেগুলো এত ছোট ও সংখ্যায় এত অল্প ছিল যে তিনি এটাকে সত্য বলে গ্রহণ করতে পারেন নি। পরে ১১ জুন তারিখে পুনরায় ঐ পানি নিয়ে পরীক্ষা করেন এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র আকৃতির জীব দেখতে পান। তিনি এগুলোর নাম দেন ক্ষুদ্রপ্রাণি বা (Animacutes)।

১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর তারিখে লণ্ডনের রয়্যাল সোসাইটিকে লেখা লিউয়েন হুকের চিঠিতে ব্যাকটেরিয়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। পরে ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর রবার্ট হুক (Robert Hooke) এবং নিয়ামী গ্রিউ (Nehemiah Grew) মরিচ ভিজানো পানি পরীক্ষা করে লিউয়েন হুকের আবিষ্কার প্রমাণ ও সমর্থন করেন।

ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে :-

ব্যাকটেরিয়া হলো সাধারণত ক্লোরোফিলবিহীন, প্রাককেন্দ্রীক (যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়) প্রাককোষী আণুবীক্ষণিক (যাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না) জীব। গাঠনিক উপাদান ও পুষ্টি পদ্ধতির জন্য ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলা হয়।
ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে

ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কি কি :-

বিভিন্ন বিজ্ঞানী ব্যাকটেরিয়াকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে শ্রেনিবিন্যাস করেছেন। যে সকল বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীগণ ব্যাকটেরিয়াকে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন তা হলো কোষের আকৃতিগত পার্থক্য, জৈবিক প্রক্রিয়া, পুষ্টির ভিন্নতা, ফ্ল্যাজেলার বিভিন্নতা, রঞ্জন গ্রহণের ক্ষমতা এবং স্পোর উৎপাদন ক্ষমতা ইত্যাদি।

কোষের আকারের ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস :-

কোষের আকৃতি অনুসারে ব্যাকটেরিয়াকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

ক) কক্কাস :

গোলাকার ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় করাস। কক্কাস ব্যাকটেরিয়া আবার পাঁচ রকমের। যথা ১। মাইক্রোকক্কাস, ২। ডিপ্লোকক্কাস, ৩ স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ৪। স্ট্রেপটোকক্কাস এবং ৫। সারসিনা।

আরও পড়ুন :- গলগি বডি কি?

১. মাইক্রোকক্কাস : যে সব গোলাকার ব্যাকটেরিয়া এককভাবে অবস্থান করে তাকে মাইক্রোকক্কাস বলে। উদাহরণ- মাইক্রোকক্কাস ডেনিট্রিফিকানস

২. ডিপ্লোকক্কাস : যে সব গোলাকার ব্যাকটেরিয়া জোড়ায় জোড়ায় থাকে তাদেরকে ডিপ্লোকক্কাস বলে। উদাহরণ- Diplococcus pneumonia

৩. স্ট্যাফাইলোকক্কাস : যে সব গোলাকার ব্যাকটেরিয়া অনিয়মিত গুচ্ছাকারে সাজান থাকে তাকে স্ট্যাফাইলোকক্কাস বলে । উদাহরণ- Staphylococcus aureus

৪. স্ট্রেপটোকক্কাস : যে সব গোলাকার ব্যাকটেরিয়া চেইনের মত সাজানো থাকে তাকে স্ট্রেপটোকক্কাস বলে। উদাহরণ- Streptococcus facts

৫. সারসিনা : যে সকল গোলাকার ব্যাকটেরিয়া নিয়মিত দলে অবস্থান করে সমান সমান দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বিশিষ্ট একটি ঘন তলের মত গঠন করে তাদেরকে সারসিনা বলে। উদাহরণ- Sarcina lutea।

খ) ব্যাসিলাস :

দণ্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। উদাহরণ- Bacillus subtilis, Bulbus B. Anthracis ইত্যাদি।

গ) স্পাইরিলাম :

কুণ্ডলাকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে স্পাইরিলাম ব্যাকটেরিয়া বলে। উদাহরণ- Spirillum volutans, S. minius ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- আরএনএ কি?

ঘ) কমা :

কমা আকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে কমা ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। উদাহরণ- Vibrio cholerae।

ব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য :-

ব্যাকটেরিয়া জড় কোষ প্রাচীরবিশিষ্ট এককোষী আদিকেন্দ্রিক অণুজীব। এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে

১। ব্যাকটেরিয়ার আকার সাধারণত ০.২-৫০ মাইক্রোমিটার।

২। এরা আণুবীক্ষণিক জীব।

৩। এরা এককোষী, তবে একসাথে অনেকগুলো কোষ কলোনি করে বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পারে।

৪। এদের কোষ প্রাককেন্দ্রিক। তাই এদের কোষে রাইবোসোম ছাড়া অন্য কোন ঝিল্লীবদ্ধ অঙ্গানু (যেমন নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গলগি বডি, লাইসোসোম এবং সাইটোস্কেলেটন ইত্যাদি) থাকে না।

৫। এরা পরজীবী ও রোগ উৎপাদনকারী, অধিকাংশই মৃতজীবি এবং কিছু স্বনির্ভর। এরা সাধারণত দ্বিভাজন বা বাইনারি ফিশন প্রক্রিয়ায় সংখ্যাবৃদ্ধি করে।

৬। এদের কোষ প্রাচীর প্রধানত পেপটিডোগ্লাইকান। এর সাথে মিউরামিক অ্যাসিড এবং টিকোয়িক অ্যাসিড থাকে।

৭। ফায ভাইরাসের প্রতি এরা সংবেদনশীল।

৮। এরা অজৈব লবণ জারিত করে শক্তি সংগ্রহ করে।

৯। এরা সাধারণত মৌলিক রং ধারণ করতে পারে। যেমন- গ্রাম পজিটিভ বা গ্রাম নেগেটিভ।

১০। এদের কোষে ক্রোমোসোম হিসেবে একটি দ্বিসূত্রক বৃত্তাকার DNA অণু থাকে। এতে ক্রোমোসোমাল হিস্টোন প্রোটিন থাকে না।

১১। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াতে নিউক্লিয়ার বহির্ভূত DNA থাকে যা সাধারণত প্লাজমিড নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন:- লাইকেন কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ