সংশ্লেষ কাকে বলে? সংশ্লেষের প্রকারভেদ?

কোন সমগ্রকের সুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় তা হল সংশ্লেষ। সম্পর্কের মাত্রা একমুখী হতে পারে আবার বিপরীত মুখী হতে পারে যেমন জল পড়াশুনা করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায় সম্পর্ক এক মু সম্পর্ক। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ফসল খারাপ হয়। এরূপ সম্পর্ককে বিপরীত মুখী সম্পর্ক বলা হয়।

দুইটি চলকর মধ্যে সম্পর্ক আছে এটুকু জানলে চলবেনা তার জন্য প্রয়োজন চলকের সম্পর্কের মাত্রা কতটুকু তার পরিমাপ সম্পর্কে জানা। সম্পর্ক পরিমাপের জন্য কার্ল পিয়ার্সন একটি পরিমাপ পদ্ধতি বের করেছেন যাকে বলা হয় সংশ্লেষার বা Co-efficient of correlation। সংশ্লেষাঙ্কের মানের পরিমাণ দুইটি চলকের মধ্যকার সম্পর্কের মাত্রা নির্দেশ করে।

সাধারণত দুটি চলকের মধ্যে একটি চলকের মানের পরিবর্তনে অন্য চলকের মানের পরিবর্তন হয় অথবা হয় না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, চলক দুটির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। যদি মানের পরিবর্তন না হয় তবে আমরা বলতে পারি তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়গুলোকে সংজ্ঞায়িত করলে আমরা সংশ্লেষের ধারণা পাব।

সংশ্লেষ কাকে বলে :-

দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে তাকে সংশ্লেষণ বলে।

যেমন, বাজারে কোন জিনিসের সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যায় আবার বিপরীত দিকে সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়ে যায় অর্থাৎ চলন সরবরাহের উপর দাম বাড়ে বা কমে। এ সম্পর্ককে সংশ্লেষণ বলে।

আরও পড়ুন :- স্তম্ভ নকশা কাকে বলে?

সংশ্লেষণ প্রকারভেদ :-

১. সরল সংশ্লেষ

ক. পূর্ণ ধনাত্মক সংশ্লেষ

খ. আংশিক ধনাত্মক সংশ্লেষ

গ. পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষ

ঘ. আংশিক ঋণাত্মক সংশ্লেষ

ঙ. শূন্য সংশ্লেষ

২. বহুধা সংশ্লেষ

৩. আংশিক ও সম্পূর্ণ সংশ্লেষ

৪. রৈখিক ও বক্ররৈখিক সংশ্লেষ

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
সংশ্লেষ কাকে বলে

১. সরল সংশ্লেষ :

অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক বা পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধানের অনেক ক্ষেত্রে তথ্যবিশ্বের এককের বৈশিষ্ট্যগুলোকে দুটি সম্পর্কযুক্ত চলক দ্বারা পরিমাপ করা হয়। চলক দুটির মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা তাদের পরিবর্তনের প্রকৃতি বিবেচনা করে পরিমাপ করা হয়। দুটি চলকের মধ্যে একটির মান পরিবর্তনের ফলে যদি অন্য চলকটির মান ও পরিবর্তিত (বৃদ্ধি বা হ্রাস) হয় তবে বলা যায় যে, তাদের মধ্যে পরিবর্তনশীলতার সম্পর্ক আছে। দুটি চলকের তথ্য সারির মধ্যে এ পরিবর্তনশীলতা একমুখী বা বিপরীতমুখী হতে পারে। দুটি চলকের পারস্পরিক পরিবর্তনশীলতার এ সম্পর্ককে সংশ্লেষণ বা সরল সংশ্লেষ বলে।

ক. পূর্ণ ধনাত্মক সংশ্লেষণ :

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটি চলকের মান বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে অন্যটির মানও যদি বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় এবং একটি চলকের প্রতিটি মান বৃদ্ধির বা হ্রাসের অপর চলকের অনুষঙ্গী মানের বৃদ্ধির অনুপাত সমান থাকে তবে চলক দুটির এ সংশ্লেষকে পূর্ণ ধনাত্মক সংশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লেষাংকের মান r=1 হয়।


খ. অপূর্ণ ধনাত্মক সংশ্লেষণ :

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটি চলকের মান বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে অন্য চলকটির মান বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় কিন্তু একটি চলকের মান বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে অপর চলকের অনুষঙ্গী মানের বৃদ্ধি বা হ্রাসের অনুপাত সমান না থাকে তবে চলক দুটির সংশ্লেষকে অপূর্ণ ধনাত্মক বিশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লেষাংকের মান ) অপেক্ষা বেশি কিন্তু 1 অপেক্ষা কম হয়।

গ. পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষণ :

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটি চালকের মান বাড়লে বা কমলে যদি অন্যটির মান কমে বা বাড়ে কিন্তু এ বাড়া বা কমার অনুপাত উভয় চলকে স্থির থাকে তবে চলক দুটির এ সম্পর্ককে পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লেষাংকের মান r=-1 হয়।

ঘ. অপূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষণ :

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটি চলকের মান বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে যদি অন্য চলকটির মান হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় কিন্তু এ পরিবর্তনের অনুপাত অসমান হয়। তবে চলক দুটির সংশ্লেষকে অপূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লেষাংকের মান 1 এর চেয়ে বড় এবং O এর ছোট হয়ে থাকে।

ঙ. শূণ্য সংশ্লেষ :

যদি দুইটি চলকের মধ্যে কোনো ধরনের সরল রৈখিক সম্পর্ক না থাকে অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় না তখন সেই চলকের সংশ্লেষকে শুন্য সংশ্লেষ বলে।

২. বহুধা সংশ্লেষণ :

তথ্যবিশ্ব এককের দুইয়ের বেশি সংখ্যক বৈশিষ্ট্য বা চলকের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনের ফলে অপর বৈশিষ্ট্যগুলোও যদি পরিবর্তিত হয় তবে তাদের মধ্যকার পরিবর্তনশীলতার এ সম্পর্ককে বহুধা সংশ্লেষণ বলে।

অন্য কথায় তথ্যবিশ্বের দুইয়ের বেশি সংখ্যক চলকের পারস্পরিক পরিবর্তনশীলতার সম্পর্ককে বহুধা সংশ্লেষণ বলে।

যেমনঃ ধানের একর প্রতি ফলন, বীজের মান, জমির উর্বরাশক্তি, সার প্রযোগের পরিমাণ, কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ, সূর্যকিরণ ইত্যাদি চলকগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এ সম্পর্কই বহুধা সংশ্লেষণ।

আরও পড়ুন :- পরিসংখ্যান কাকে বলে?

৩. আংশিক ও সম্পূর্ণ :

দুইয়ের অধিক চলক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও অন্যান্য চলকসমূহকে বিবেচনার বাইরে সহ-সম্বন্ধ রেখে শুধুমাত্র দুটি চলকের সহ-সম্বন্ধ নির্ণয় করা হলে তাকে আংশিক সহ সম্বন্ধ বলে।

যেমনঃ মূল্য, যোগান ও চাহিদা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত হলেও যখন যোগানকে বিবেচনার বাইরে রেখে শুধুমাত্র মূল্য ও চাহিদার সহ সম্বন্ধ নির্ণয় করা হয়। তখন তাকে আংশিক সহ সম্বন্ধ বলা হয়।

পক্ষান্তরে, সহ সম্বন্ধ নির্ণয় করার সময় পরস্পর সম্পর্কিত সকল চালককে বিবেচনা করা হলে তখন তাকে সম্পূর্ণ সহ সম্বন্ধ বলা হয়।

৪. রৈখিক ও বক্র রৈখিক :

রৈখিক এবং বক্ররৈখিক সহ-সম্বন্ধ নির্ভর করে চলকসমূহের পরিবর্তনের হারের ধারাবাহিকতার উপর। যদি দুটি চলকের পরিবর্তনের হার একটি স্থির অনুপাতে হয় তবে তাদের মধ্যে বিদ্যমান সহ সম্বন্ধকে রৈখিক সহ সম্বন্ধ বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ