প্রাকৃতিক গ্যাস কি :-
তেলখনি থেকে স্বাভাবিক ভাবে গ্যাস নির্গত হয়; এটাই প্রাকৃতিক গ্যাস নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারনত: তেলের উপর ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।প্রাকৃতিক গ্যাস হিসেবে সাধারনত: তিনটি গ্যাস পাওয়া যায়। যথা- মিথেন, হাড্রোজেন সালফাইড এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি তেল খনিতে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। আবার শুধু প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় এমন খনিও আছে।
গ্যাস খুব সাবধানে উত্তোলন করতে হয়, কারন সুযোগ পেলে বের হয়ে যায় অথবা আগুন লাগলে সব গ্যাস পুড়ে যেতে পারে। খনির অভ্যন্তরীন চাপের ফলেই গ্যাস স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে আসে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশিষ্ট্য :-
প্রাকৃতিক গ্যাস দহন শক্তি সম্পন্ন একপ্রকার খনিজ পদার্থ। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা নিয়ে বর্ণনা করা হলো:১. উত্তোলন ব্যায় কম : প্রথম দিকে উত্তোলন ব্যয় একটু বেশী তবে পরবর্তীতে উত্তোলন ব্যয় খুব কম হয়।
২. ওজন : ওজনের দিক থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস খুবই হালকা।
৩. দহন ক্ষমতা : দহন ক্ষমতা খুব বেশী বলে আগুন দেবার সাথে সাথেই প্রজ্জ্বলিত হয়।
আরও পড়ুন :- জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?
৪. তাপ প্রদান ক্ষমতা : অন্যান্য জ্বালানি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপ প্রদান ক্ষমতা অনেক বেশী।
৫. পরিবেশ দূষন : এতে ছাই ও ধোয়া হয় না বলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ হয় না।
৬. ব্যবহার পদ্ধতি : গ্যাস ব্যবহার খুব সহজ। এর জন্য কোন যন্ত্রপাতি বা কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।
৭. পরিবহন : নলের মাধ্যমে অনেক দূরে গ্যাস পরিবহন করা হয় বলে পরিবহন খরচ খুব কম হয়।
৮. মূল্য : মূল্যের দিকে থেকে গ্যাস খুব সস্তা হয়ে থাকে।
৯. সরবরাহ : নলের সাহায্যে পরিবহন করা হয় তাই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে সরবরাহ করা যায়।
প্রাকৃতিক গ্যাসের অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব :-
বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসও অন্যতম শক্তির উৎস বলে বিবেচিত হয়। এর বহুমুখী ব্যবহার ও যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। নিম্নে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হলোঃ১. রান্নার কাজে :
প্রাকৃতিক গ্যাস সহজ ব্যবহার, কম খরচ ও নিরাপদ বলে পৃথিবীর বহু দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে রান্নার কাজ করছে এবং দিন দিন এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. গৃহ উষ্ণ রাখা :
শীত প্রধান দেশে ঘর গরম রাখার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করছে।
৩. শক্তি সম্পদ :
প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে সিমেন্ট, কাচ, লৌহ ও ইস্পাত এবং রাসায়নিক শিল্পে শক্তির উৎস হিসেবে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন :- আকরিক লোহা কাকে বলে?
৪. কাঁচামাল :
বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন, বর্তমানে কৃত্রিম রাবার, কিটনাশক, কৃত্রিম তন্ত্র, কালি, রং, সিমেন্ট, সুরাসার প্রভৃতি উৎপাদন করতে প্রাকৃতিক গ্যাস কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৫. তেল শোধন :
খনিজ তেল শোধনাগারে প্রচুর গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে তাকে।
৬. পরিবেশ দূষন মুক্ত :
প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ফলে ধোয়া ও ছাই হয়না; ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষন হয়না, যা অন্যান্য জ্বালানীতে কম বেশী হয়ে থাকে। তাই প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের পরিবেশ দূষন মুক্ত থাকে।
৭. গবেষনাগারে :
বৈজ্ঞানিক গবেষনাগারে গ্যাসের ব্যবহার হয়। কারন এতে ধোয়া ও কালি হয়না।
৮. ইটখোলায় :
ইট পোড়ানর জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৯. গ্যাস বাতি :
গ্যাসের সাহায্যে আলো জ্বালিয়ে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন :- কুয়াশা কাকে বলে?
১০. কর্ম সংস্থান :
গ্যাস কুপ খনন, সংগ্রহ, সংরক্ষন, সরবরাহ প্রভৃতি কাজে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন হয়। যার ফলে কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হয়।
১১. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন :
গ্যাস রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
তাই দেখা যায় যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন কাজের অগ্রগতিতে গ্যাসের বহুবিধ ব্যবহার বিদ্যমান। গ্যাসের অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব যথেষ্ট।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.