মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে? মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য? মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও উপাদান?

মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে :-

শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সুস্থ সংগতি বিধান করাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানুষের সকল আচরণই উদ্দেশ্যমুখী। এ উদ্দেশ্যমুখী আচরণের মূলে রয়েছে কতগুলো চাহিদা। মানুষ যদি বাস্তব জীবনের সকল সমস্যা ও সংকট মেনে নিয়ে চাহিদাগুলো স্বল্পতম সংঘর্ষ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে পারে তবে ইতিবাচক আবেগীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়, মানসিক তৃপ্তি লাভ হয় এবং সংগতি বিধান সম্ভব হয়। এ সার্থক সংগতি বিধানের মধ্যে দিয়েই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা হয়।

আরও পড়ুন :- অপুষ্টি কাকে বলে?

আর যদি কোনো কারণে মানুষ তার চাহিদাগুলো মেটাতে বা পরিতৃপ্ত করতে না পারে তবে নেতিবাচক আবেগীয় অবস্থা দেখা যায়। এর ফলে প্রক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই প্রক্ষোভই মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে বহিঃপ্রকাশ ঘটে মানুষের আচরণের মাধ্যমে।

সুতরাং দেখা যায় যে, মানুষের চাহিদা অর্জিত হলে পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান সম্ভব হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা হয়।

WHO (World Health Organization) এর মতানুসারে মানসিক স্বাস্থ্য হয়েছে তখনই বলা যায় যখন সে মানসিক, শারীরিক সামাজিক থেকে সুস্থ নিরোগ ও সুখী হয় এবং জীবনের সর্বস্তরেই তার কুশলতা বর্তমান থাকে।

WHO মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাখ্যা করে মানসিক সুস্বাস্থ্য হিসেবে মত দিয়েছেন যে, মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান একজন মানুষ সেই যে তার নিজের ক্ষমতা বুঝতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সাথে খাপ পারে এবং সমাজে সর্বস্তরে অবদান রাখতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা :-

J. A. Hadfield-এর মতানুযায়ী, ব্যক্তিত্বের আনন্দদায়ক ক্রিয়াকলাপই হল মানসিক স্বাস্থ্য।

K. A. Menninger-এর মতে পরিবেশের সঙ্গে কার্যকরী ও আনন্দপূর্ণরূণে অভিযোজন ক্ষমতাই হল মানসিক স্বাস্থ্য।

Cutts and Mosley মনে করেন, জীবনের সংকটময় মুহুর্তে সংগতিবিধ করার ক্ষমতাই হল মানসিক স্বাস্থ্য।

মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :-

মানুষ যে কোনো সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। শরীরের সাথে মনের একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। শরীর ভাল না থাকলে মনও ভাল থাকেনা। পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপকের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে আমাদের মন কখনো কখনো উৎযুক্ত এবং কখনো দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই সবসময় মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি সুস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো হলো

১। শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ :

শরীর ভাল না থাকলে মনও ভাল থাকেনা। তাই মনকে ভাল রাখতে হলে অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। অন্যদিকে চার পাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য চিন্তা করার ক্ষমতা, যুক্তি প্রয়োগ ও বিচার করার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।

আরও পড়ুন :- মানসিক অবসাদ কাকে বলে?

২। আত্মবিশ্বাস :

ব্যক্তির দৃঢ় চিত্ত ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৩। পরিস্থিতি মানিয়ে চলা :

মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিরা জীবনে কোথাও পিছপা হয়না। তারা খুব দৃঢ় চিত্তের হয়। মানসিক শক্তির কারণে তারা যে কোনো পরিবেশ মোকাবেলা করতে পারে।

৪। পরিপূর্ণ আত্মতৃপ্তি :

মানসিক স্বাস্থ্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্মতৃপ্তি। বাক্তির পরিপূর্ণ আত্মর্ভূক্তিই হলো মানসিক স্বাস্থ্যের একটি লক্ষণ।

৫। নিজের চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা :

মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি তার চাহিদার মাত্রা সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকে। অবান্তর চাহিদা সৃষ্টি করে সে অসুখী হতে চায়না।

৬। আত্মমূল্যায়ন ক্ষমতার অধিকারী :

মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারীরা সব সময় নিজের আত্মমূল্যায়ন করতে পারে অর্থাৎ তারা নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব :-

সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য শরীরকে সুস্থ রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হল মনকে সুস্থ রাখা। ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকলে সে -

  • পরিবারে ও সমাজে সবার সঙ্গে ভালভাবে মিশতে পারে ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
  • দৈনন্দিন কাজকর্ম আরও ভালভাবে করতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের বাধা ও চাপ মোকাবেলা করতে পারে।
  • বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
  • আরও উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে পারে এবং নিজের, পরিবারের ও সমাজের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
  • কখনও কখনও ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য তার শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকার কারণে তার শারীরিক স্বাস্থ্যও খারাপ হতে থাকে।
আরও পড়ুন :- সূচক সংখ্যা কাকে বলে?

মানসিক স্বাস্থ্যের উপদান :-

মানসিক স্বাস্থ্য মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি দিক। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে ব্যক্তির মনের ক্ষমতা যার দ্বারা ব্যক্তি সমাজের সাথে সামগ্রস্য বজায় রেখে চলতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের উপাদানগুলো হলো

• সুস্থ রোগমুক্ত শরীর

• ক্রিয়াশীল ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি

• আত্মনির্ভরশীলতা

• সচেতন মনোভাব 

• পরিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ণ অংশগ্রহণ।

• পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় কল্যানের দিকে সজাগ দৃষ্টি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ