ভূগোল বিজ্ঞানের যে শাখায় পৃথিবার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের জীবনযাপন প্রণালি এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে মানব ভূগোল বলে।
মানুষ, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এই তিনটির মিথস্ক্রিয়ার সমন্বয়ে মানব ভূগোলের ভিত্তি রচিত হয়। তাই এটি ভূগোলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এই পোস্টে আমরা মানব ভূগোলের শাখাসমূহ, পরিধি ও পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
আরও পড়ুন :- ভূমিকম্প কাকে বলে?
ফরাসি ভূগোলবিদ ভিদাল ডি লা ব্লাশকে (Vidal de la Blache) মানব ভূগোলের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
অধ্যাপক ড্যাডলি স্ট্যাম্প বলেন, মানব ভূগোল হচ্ছে পৃথিবী আর তার অধিবাসীদের সমাজীয় বর্ণন"।
অধ্যাপক হান্টিংটনের মতে, মাটি, পানি ও বায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদ, প্রাণি ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা একস্থানের জীবনযাত্রা থেকে অন্যস্থানের জীবনযাত্রার পার্থক্য নির্দেশ করে। এ সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা ও আলোচনা মানব ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয়। "
১. আঞ্চলিক ভূগোল (Regional Geography) :
আঞ্চলিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ও বর্ণনা প্রদান করে।
২. জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography) :
জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব বৃদ্ধি, বণ্টন, জনসংখ্যা পরিবর্তনের নিয়ামক, জনমিতিক ট্রানজিশন মডেল, অভিগমন, অভিগমনের কারণ, প্রকারভেদ ও প্রভাব প্রভৃতি জনসংখ্যা ভূগোলে আলোচনা করা হয়।
৩. নগর ভূগোল (Urban Geography) :
নগরবৃদ্ধি, নগরায়ন, প্রধান নগরসমূহ, নগরায়নের ধারা এবং নগরায়নের সমস্যা ও সমাধান প্রভৃতি নগর ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৪. অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic Geography) :
অর্থনৈতিক ভূগোল বিশ্বব্যাপী কৃষি, শিল্প, খনিজ ও শক্তিসম্পদ প্রভৃতি উৎপাদন, উৎপাদনের ভৌগোলিক নিয়ামক ও বণ্টন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্য প্রভৃতির ব্যাখ্যাও অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৫. পরিবহন ভূগোল (Transport Geography) :
পরিবহন ও যোগাযোগের সকল বিষয় (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ প্রভৃতি) পরিবহন ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৬. বাণিজ্যিক ভূগোল ( Commercial Geography) :
বাণিজ্যের প্রকৃতি, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি পণ্য, প্রধান বাণিজ্যিক দেশসমূহ প্রভৃতি বাণিজ্যিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়।
৭. সাংস্কৃতিক ভূগোল (Cultural Geography) :
সাংস্কৃতিক ভূগোল মানুষ ও প্রকৃতির পরস্পর মিথষ্ক্রিয়ার ফলাফল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। এ কারণে নৃ-তত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, জীবাশ্ম প্রভৃতি বিষয় সাংস্কৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৮. পরিবেশ ভূগোল (Environmental Geography) :
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সকল বিষয় পরিবেশ ভূগোলের বিষয়।
মানুষ, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এই তিনটির মিথস্ক্রিয়ার সমন্বয়ে মানব ভূগোলের ভিত্তি রচিত হয়। তাই এটি ভূগোলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এই পোস্টে আমরা মানব ভূগোলের শাখাসমূহ, পরিধি ও পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
মানব ভূগোল কাকে বলে :-
ভূগোল বিজ্ঞানের যে শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এবং ঐ অঞ্চলের মানব সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় (জনসংখ্যা, বসতি, কৃষি, শিল্প, খনিজ, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, দুর্যোগ এবং দূষণ ইত্যাদি) নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে তাকে মানব ভূগোল বলে।আরও পড়ুন :- ভূমিকম্প কাকে বলে?
ফরাসি ভূগোলবিদ ভিদাল ডি লা ব্লাশকে (Vidal de la Blache) মানব ভূগোলের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
অধ্যাপক ড্যাডলি স্ট্যাম্প বলেন, মানব ভূগোল হচ্ছে পৃথিবী আর তার অধিবাসীদের সমাজীয় বর্ণন"।
অধ্যাপক হান্টিংটনের মতে, মাটি, পানি ও বায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদ, প্রাণি ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা একস্থানের জীবনযাত্রা থেকে অন্যস্থানের জীবনযাত্রার পার্থক্য নির্দেশ করে। এ সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা ও আলোচনা মানব ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয়। "
মানব ভূগোলের শাখাসমূহ :-
মানব ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহ নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-১. আঞ্চলিক ভূগোল (Regional Geography) :
আঞ্চলিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ও বর্ণনা প্রদান করে।
২. জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography) :
জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব বৃদ্ধি, বণ্টন, জনসংখ্যা পরিবর্তনের নিয়ামক, জনমিতিক ট্রানজিশন মডেল, অভিগমন, অভিগমনের কারণ, প্রকারভেদ ও প্রভাব প্রভৃতি জনসংখ্যা ভূগোলে আলোচনা করা হয়।
৩. নগর ভূগোল (Urban Geography) :
নগরবৃদ্ধি, নগরায়ন, প্রধান নগরসমূহ, নগরায়নের ধারা এবং নগরায়নের সমস্যা ও সমাধান প্রভৃতি নগর ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
আরও পড়ুন :- মেলা কাকে বলে?
৪. অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic Geography) :
অর্থনৈতিক ভূগোল বিশ্বব্যাপী কৃষি, শিল্প, খনিজ ও শক্তিসম্পদ প্রভৃতি উৎপাদন, উৎপাদনের ভৌগোলিক নিয়ামক ও বণ্টন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্য প্রভৃতির ব্যাখ্যাও অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৫. পরিবহন ভূগোল (Transport Geography) :
পরিবহন ও যোগাযোগের সকল বিষয় (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ প্রভৃতি) পরিবহন ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৬. বাণিজ্যিক ভূগোল ( Commercial Geography) :
বাণিজ্যের প্রকৃতি, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি পণ্য, প্রধান বাণিজ্যিক দেশসমূহ প্রভৃতি বাণিজ্যিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়।
৭. সাংস্কৃতিক ভূগোল (Cultural Geography) :
সাংস্কৃতিক ভূগোল মানুষ ও প্রকৃতির পরস্পর মিথষ্ক্রিয়ার ফলাফল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। এ কারণে নৃ-তত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, জীবাশ্ম প্রভৃতি বিষয় সাংস্কৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৮. পরিবেশ ভূগোল (Environmental Geography) :
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সকল বিষয় পরিবেশ ভূগোলের বিষয়।
আরও পড়ুন :- প্রাকৃতিক গ্যাস কাকে বলে?
৯. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (Disaster Management) :
বিভিন্ন প্রকারের দুর্যোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ও দূষণের সম্পর্ক, দুর্যোগ ও দূষণ মোকাবেলা প্রভৃতি বিষয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
১০. বসতি ভূগোল (Settlement Geography) :
বসতি বিন্যাসে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, গ্রামীণ বসতি, নগর বসতি, গ্রামীণ বসতির ধরণ, বিন্যাস প্রভৃতি আলোচনা করে।
১১. ব্যবহারিক ভূগোল (Practical Geography) :
প্রাকৃতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ভূগোলের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ, প্রদর্শন ব্যাখ্যা করার জন্য স্কেল, মানচিত্র, গ্রাফ ভৌগোলিক প্রতিবেদন প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা মানব ভূগোলের ব্যবহারিক অংশে আলোচনা করা হয় ।
মানব ভূগোলের পরিধি ব্যাপক হওয়ার কারণে মানব ভূগোলের শাখাসমূহ (যেমন-আঞ্চলিক ভূগোল, জনসংখ্যা ভূগোল, নগর ভূগোল, বাণিজ্যিক ভূগোল, পরিবহন ভূগোল, সাংস্কৃতিক ভূগোল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) পৃথক পৃথক শাস্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সার্বিকভাবে (১) মানুষ (২) পরিবেশ ও (৩) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এই তিনটি মানব ভূগোলের মৌলিক বিষয়।
১. মানুষ :
মানুষ ও মানুষের কর্মকাণ্ডই মানব ভূগোলের প্রধান ক্ষেত্র। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব, হ্রাস-বৃদ্ধি, বসতি, অভিগমন, সংস্কৃতি (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, উপজীবিকা) প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা মানব ভূগোলে পাওয়া যায়।
২. পরিবেশ :
প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মানব ভূগোলের মূল বিষয়বস্তু। কেননা, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ যেমন-ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রস্রোত, উদ্ভিদ প্রভৃতি ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে।
৩. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড :
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, পরিবহন ও যোগাযোগ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ মানব ভূগোলে পাওয়া যায়।
মানুষের জীবনযাপন প্রণালির প্রধান চালিকা শক্তি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে গ্রামীণ বসতি ও নগর বসতি। এছাড়াও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে শিক্ষা, ভাষা, বর্ণ, আচার-আচরণ তথা জীবনযাপনের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।
মানুষ, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মিথস্ক্রিয়ার দরুণ এই তিনটি পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কিত এবং মানব ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। পরিবেশের সাথে মানুষের পারস্পরিক কর্মকাণ্ড সর্বদাই পরিবর্তনশীল। মানব ভূগোল, ভূগোলের অন্যান্য শাস্ত্রের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কিত। এ কারণে মানব ভূগোলের পরিধি অধিক বিস্তৃত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
২. বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব, হ্রাস-বৃদ্ধি, জনসংখ্যার বন্টন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৩. মানব বসতি বিন্যাসে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, বসতির প্রকারভেদ, নগরায়নের ধারা, সমস্যা, সমাধান প্রভৃতি বিষয় মানব ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।
৪. পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলভিত্তিক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার অভিগমন, অভিগমনের কারণ, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৫. বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (যেমন-শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য) নির্ভর করে ঐ অঞ্চলের সম্পদ এবং পরিবেশের ধরণ ও পরিবর্তনের উপর। মানব ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে। তাই মানব ভূগোলকে অর্থনৈতিক ভূগোলও বলা হয়।
৬. অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন অঞ্চলের এবং দেশের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা বাড়ছে। মানৰ ভূগোলে দুর্যোগ ও দূষণের বর্ণনা, সম্পর্ক, ব্যবস্থাপনা এবং উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া পরিবেশগত বর্ণনাও মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৭. মানুষ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পূর্বশর্ত পরিবহন ও যোগাযোগ। মানব ভূগোলে পরিবহন ও যোগাযোগের (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ) বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, ভূগোল বিজ্ঞানে মানব ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৯. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (Disaster Management) :
বিভিন্ন প্রকারের দুর্যোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ও দূষণের সম্পর্ক, দুর্যোগ ও দূষণ মোকাবেলা প্রভৃতি বিষয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
১০. বসতি ভূগোল (Settlement Geography) :
বসতি বিন্যাসে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, গ্রামীণ বসতি, নগর বসতি, গ্রামীণ বসতির ধরণ, বিন্যাস প্রভৃতি আলোচনা করে।
১১. ব্যবহারিক ভূগোল (Practical Geography) :
প্রাকৃতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ভূগোলের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ, প্রদর্শন ব্যাখ্যা করার জন্য স্কেল, মানচিত্র, গ্রাফ ভৌগোলিক প্রতিবেদন প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা মানব ভূগোলের ব্যবহারিক অংশে আলোচনা করা হয় ।
মানব ভূগোলের বিষয়বস্তু ও পরিধি :-
মানব ভূগোলের প্রধান উপাদান মানুষ হওয়ায় এর পরিধি ব্যাপক। কারণ মানব ভূগোল, মানুষের জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য সকল বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করে।মানব ভূগোলের পরিধি ব্যাপক হওয়ার কারণে মানব ভূগোলের শাখাসমূহ (যেমন-আঞ্চলিক ভূগোল, জনসংখ্যা ভূগোল, নগর ভূগোল, বাণিজ্যিক ভূগোল, পরিবহন ভূগোল, সাংস্কৃতিক ভূগোল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) পৃথক পৃথক শাস্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সার্বিকভাবে (১) মানুষ (২) পরিবেশ ও (৩) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এই তিনটি মানব ভূগোলের মৌলিক বিষয়।
১. মানুষ :
মানুষ ও মানুষের কর্মকাণ্ডই মানব ভূগোলের প্রধান ক্ষেত্র। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব, হ্রাস-বৃদ্ধি, বসতি, অভিগমন, সংস্কৃতি (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, উপজীবিকা) প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা মানব ভূগোলে পাওয়া যায়।
২. পরিবেশ :
প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মানব ভূগোলের মূল বিষয়বস্তু। কেননা, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ যেমন-ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রস্রোত, উদ্ভিদ প্রভৃতি ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে।
৩. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড :
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, পরিবহন ও যোগাযোগ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ মানব ভূগোলে পাওয়া যায়।
মানুষের জীবনযাপন প্রণালির প্রধান চালিকা শক্তি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে গ্রামীণ বসতি ও নগর বসতি। এছাড়াও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে শিক্ষা, ভাষা, বর্ণ, আচার-আচরণ তথা জীবনযাপনের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।
মানুষ, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মিথস্ক্রিয়ার দরুণ এই তিনটি পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কিত এবং মানব ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। পরিবেশের সাথে মানুষের পারস্পরিক কর্মকাণ্ড সর্বদাই পরিবর্তনশীল। মানব ভূগোল, ভূগোলের অন্যান্য শাস্ত্রের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কিত। এ কারণে মানব ভূগোলের পরিধি অধিক বিস্তৃত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
মানব ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা :-
১. মানব ভূগোলের মূল কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। তাই মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেড়ে উঠা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থাৎ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় মানব ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।২. বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার আকার, ঘনত্ব, হ্রাস-বৃদ্ধি, জনসংখ্যার বন্টন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৩. মানব বসতি বিন্যাসে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, বসতির প্রকারভেদ, নগরায়নের ধারা, সমস্যা, সমাধান প্রভৃতি বিষয় মানব ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।
৪. পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলভিত্তিক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার অভিগমন, অভিগমনের কারণ, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৫. বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (যেমন-শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য) নির্ভর করে ঐ অঞ্চলের সম্পদ এবং পরিবেশের ধরণ ও পরিবর্তনের উপর। মানব ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে। তাই মানব ভূগোলকে অর্থনৈতিক ভূগোলও বলা হয়।
৬. অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন অঞ্চলের এবং দেশের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা বাড়ছে। মানৰ ভূগোলে দুর্যোগ ও দূষণের বর্ণনা, সম্পর্ক, ব্যবস্থাপনা এবং উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া পরিবেশগত বর্ণনাও মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
৭. মানুষ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পূর্বশর্ত পরিবহন ও যোগাযোগ। মানব ভূগোলে পরিবহন ও যোগাযোগের (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ) বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, ভূগোল বিজ্ঞানে মানব ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.