কয়লা কাকে বলে :-
কয়লা এক ধরনের খনিজ পদার্থ। নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে সঞ্চিত উদ্ভিজ উপাদান পচন প্রক্রিয়ায় পাঁট এ পরিণত হয়। এ পীট জাতীয় উপাদানের স্তর ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয় এবং মাটি, বালি ও বিভিন্ন উপাদানে ঢাকা পড়ে যায়। এ ধরনের পরিবেশে সৃষ্ট চাপ, তাপ ও রাসায়নিক পাঁট স্থর কয়লায় রূপান্তরিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরভাগে শিলান্তরের মধ্যে স্তরীভূত অবস্থায় কয়লা পাওয়া যায় বলে একে স্তরীভূত শিলা বলা হয়।কয়লা কত প্রকার ও কি কি :-
কয়লা কার্বনের সমাবেশ মাত্র। যে কয়লায় কার্বনের পরিমান যতবেশী সে কয়লার তাপ প্রদান ক্ষমতা তত বেশী। আর যে কয়লার তাপ প্রদান ক্ষমতা যত বেশী সে কয়লা তত উন্নত।
আরও পড়ুন :- শিলা কাকে বলে?
আরও পড়ুন :- শিলা কাকে বলে?
সুতরাং কয়লার গুনাগুন তাপ প্রদান ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। কয়লার গুনাগুনের তারতম্য অনুযায়ী কয়লাকে প্রধানত চার শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যেমনঃ
১. এ্যানথ্রাসাইড কয়লা
২. বিটুমিনাস করলা
৩. লিগনাইট বা বাদামি কয়লা
৪. পীট কয়লা
নিচে বিভিন্ন শ্রেণীর কয়লার বর্ণণা দেয়া হলোঃ
১. এ্যানথ্রাসাইড :
এ শ্রেণীর কয়লা সবচেয়ে শক্ত ও উৎকৃষ্ট শ্রেণীর। এটার রং ঘন কৃষ্ণবর্ণ, উজ্জল ও ভারী হয়ে থাকে। এটা সহজে প্রজ্জলিত হতে চায় না। তবে একবার প্রজ্জলন হলে নীল আভাযুক্ত প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয় এবং দীর্ঘ সময় জ্বলতে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ কার্বন থাকে।
২. বিটুমিনাস কয়লা :
এটি মধ্যম শ্রেণীর কয়লা যা থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। তবে সামান্য ধোয়াও বের হয়ে থাকে। এতে ৮২ ভাগ কার্বন ও ৫ ভাগ হাইড্রোজেন থাকে। পৃথিবীর সঞ্চিত কয়লার ৭৫ ভাগ কয়লাই এ শ্ৰেণীভূক্ত।
৩. লিগনাইট বা বাদামী কয়লা :
এটি একটি নিকৃষ্ট ধরনের কয়লা। এটি সাধারনত নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে থাকে । এর রং বাদামী বলে একে বাদামী কয়লাও বলা হয়। এতে ৬৫ ভাগ কার্বন থাকে। এ ধরনের কয়লায় গ্যাস ও জলীয় বাষ্প বেশী থাকার ফলে তাপ তুলনামূলক ভাবে কম হয়।
আরও পড়ুন :- খনিজ তেল কাকে বলে?
৪. পীট কয়লা :
এটি কয়লার মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন মানের। এটাকে পুরপুরি কয়লা বলা যায় না। এতে মাত্র ৪৯% কার্বন থাকে এবং জ্বালালে খুব ধোঁয়া হয়। অত্যন্ত কার্বন থাকে বলে তাপ উৎপাদন ক্ষমতা খুব কম এবং খুব তাড়াতাড়ি পুড়ে যায়।
কয়লার ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব :-
কয়লার ব্যবহার আদি কাল থেকে। তবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এর বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়। নিম্নে কয়লার ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হলোঃ১. লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রসার :
লৌহ-ইস্পাত শিল্পে বিপুল পরিমান আকরিক লৌহ পরিশোধন করে লৌহ পিন্ড ও ইস্পাত উৎপাদন করা হয়। ইস্পাত শিল্পের বিকাশের জন্য কয়লা অপরিহার্য। আকরিক পরিশোধনের জন্য রাষ্ট ফার্নেসে আকরিকের বি-গুন অনুপাতের কালার মিশ্রন ঘটান হয়।
২. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন :
কয়লা থেকে আলকাতরা ও পিচ আহরিত হয় যা সড়ক পথ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। আবার বিশ্বের কোথাও কোথাও রেল ও নৌযানে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়।
৩. তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি উপকরণ :
কয়লা সম্পদে সমৃদ্ধ বেশীর ভাগ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন :- খনিজ কাকে বলে?
৪. রসায়ন শিল্পের কাঁচামাল :
বেশ কয়েকটি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে কয়লার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। কয়লা থেকে প্রাপ্ত আলকাতরা প্লাস্টিক, রঞ্জন দ্রব্য, কৃত্রিম তন্ত্র প্রভৃতি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বেঞ্জন কীটনাশক, রোগ প্রতিরোধক ঔষুধ প্রভৃতি তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কয়লার উপর নির্ভরশীল।
৫. গৃহ উত্তপ্ত রাখা :
শীত প্রধান দেশে আবাস গৃহ উত্তপ্ত রাখার জন্য বিপুল পরিমান কয়লা ব্যবহার করা হয়।
৬. শ্রমিক নিয়োগ :
পৃথিবীতে কয়লার ব্যাপক চাহিদার কারনে কয়লা খনি আবিষ্কার, অনুসন্ধান ও কয়লা উত্তোলন বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য কয়লা খনিতে প্রচুর শ্রমিক কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে।
৭. অন্যতম বাণিজ্যিক দ্রব্য :
কয়লার বিশ্বব্যাপি চাহিদা থাকায় কয়লা সমৃদ্ধ দেশগুলো যেমন: রুশ ফেডারেশন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা প্রচুর পরিমান কয়লা রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কয়লা ব্যবহার করছে।
৮. জ্বালানী :
জ্বালানির কাজ যেমন- ইটের ভাটা, রান্নার কাজে কয়লা ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে কয়লার বহুমুখী ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বনডাই অক্সাইড এবং সালফার-ডাই-অক্সাইট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ উপজাত জলীয় বাষ্পের সাথে যুক্ত হয়ে অকৃষ্টি ঘটায় যা পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে।
আরও পড়ুন:- রূপান্তরিত শিলা কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.