এইচআইভি ও এইডস কাকে বলে? এইডস-এর লক্ষণসমূহ? এইচআইভি এবং এইডস-এর বিস্তার?

এইচআইভি কাকে বলে :-

আমাদের প্রত্যেকের শরীরে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে কোনো রোগের জীবাণু প্রবেশ করলে সহজে শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এমন কিছু ভাইরাস আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আস্তে আস্তে দুর্বল করে। এক সময় তা সম্পূর্ণভাবেই নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। এইচআইভি এমনই একটি ভাইরাস।

এইচআইভি মানুষের শরীরে উৎপন্ন তরল পদার্থ যেমন রক্ত, বীর্য, যোনিরস ও বুকের দুধ ইত্যাদিতে থাকে। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির এই তরল পদার্থগুলো (রক্ত, বীর্য, যোনিক্সে) বিভিন্নভাবে সুস্থ লোকের শরীরে প্রবেশ করলে এবং সংক্রমিত মায়ের দুধ সুস্থ শিশু পান করলে তার শরীরেও এইচআইভি-র সংক্রমণ ঘটবে।

HIV এর পূর্ণ রূপ :-

H= Human (মানুষ)

I = Immunodeficiency (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস )

V = Virus ( জীবাণু)

HIV -কে সম্প্রসারণ করলে দাঁড়ায় Human Immunodeficiency virus যার বাংলা অর্থ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসকারী জীবাণু। এই ভাইরাস কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করলে পরিণামে তার এইডস হয়।

এইডস কাকে বলে :-

এইডস কোন রোগ নয়, এটি একটি অবস্থা। এর নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা বা প্রতিষেধক ওষুধের আবিষ্কার আজও হয়নি।

তাই কোনো ব্যক্তির এইডস হলে মৃত্যু তার একমাত্র পরিণতি।

HIV কোনো মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে রক্তের শ্বেত কণিকা ধ্বংস করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রোগে (যেমন- ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) ঘন ঘন আক্রান্ত হয়। এইচআইভি সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির এরূপ অবস্থাকে এইডস বলে।

আরও পড়ুন :- স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কাকে বলে?

AIDS-এর পূর্ণরূপ কি :-

AIDS-এর পূর্ণরূপ Acquired Immune deficiency Syndrome যার অর্থ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসমূলক অর্জিত অবস্থা।

A = Acquired (অর্জিত)

I = Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা)

D = Deficiency (হ্রাস)

S = Syndrome (লক্ষণসমূহ)

এইচআইডি কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। এইডস-এ আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে । HIV সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে কয়েক বছর হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে HIV আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এইডস সংক্রমিত হতে পারে।
এইডস কাকে বলে

এইডস-এর লক্ষণসমূহ :-

এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নাই। তবে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য রোগে আক্রান্ত হয়। সে লক্ষণগুলো হলো

১. এক মাসের বেশি সময় টানা কাশি;

২. সারা দেহে চুলকানি জনিত চর্মরোগ;

৩. মুখ ও গলায় ফেনাযুক্ত এক ধরনের ঘা;

8. সিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া;

৫. স্মরণ শক্তি ও বুদ্ধিমত কমে যাওয়া।

এ ছাড়াও এইডস-এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো

১. অতি দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া;

২. রাতে জ্বর আসা;

৩. শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া;

8. অবসাদগ্রস্থ থাকা;

৫ দুমাসের অধিক সময় ধরে ডায়রিয়া;

৬. দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি।

উল্লেখ্য যে, কারোর মধ্যে উপরের একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে HIV সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে ।

আরও পড়ুন :- পরিঘাত কাকে বলে?

এইচআইভি এবং এইডস-এর বিস্তার :-

এইচআইডি একটি নীরব ঘাতক। এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগে এইচআইভি ও এইডস কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা জানবার জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন এই ভাইরাস কীসে থাকে?

মানুষের শরীরে উৎপন্ন বিভিন্ন তরল পদার্থ যেমন- রক্ত, বীর্য, যৌনিরস, লালা এগুলোতে HIV বাস করে। এ গুলোর মধ্যে মুখের লালা HIV - পরিমাণ কম থাকে বলে লালা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু রক্ত, যোনিরস ও বীর্য কোনোভাবে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। বিভিন্ন উপারে এইচআইভি ছড়াতে পারে। যেমন

১. অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক :

এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বের এইচআইডি ব্যক্তিদের শতকরা আশি (৮০%) ভাগই অনিরাপদ দৈহিক মিলনে হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যোনিরসের মাধ্যমে যৌন সঙ্গীর দেহে এইডস-এর ভাইরাস প্রবেশ করে। আরও বিপদজনক হলো যৌনসঙ্গিনী যদি সন্তান ধারণ করে তবে ঐ সন্তানের দেহেও এইচআইভি প্রবেশ করে।

২. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তগ্রহণ :

অনেক সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে বা অপারেশনের সময় বা দুর্ঘটনায় পড়লে অন্যের রক্ত নিতে হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য একজনের শরীরের অঙ্গ যেমন- কর্নিয়া, হৃৎপিন্ড, কিডনী বা অন্য কোনো অঙ্গ এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। অসচেতনতা বা দায়িত্বহীনতার কারণে অনেক সময় অপারেশনের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করা হয় না। এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত বা এইচআইভি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির অঙ্গ অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এইচআইভি বিস্তার লাভ করে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই এক সূচ ও সিরিজ ব্যবহার করে। এতে সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ হয়।

এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত মায়ের নিকট থেকে তিনটি পর্যায়ে শিশুর শরীরে এর ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যেমন

ক) গর্ভকালীন সময়ে

খ) প্রসবকালীন সময়ে

গ) মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন :- পুষ্টি কাকে বলে?


এখন জানতে হবে IIIV ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় না :-
  • মশা বা পোকা মাকড়ের কামড়ের মাধ্যমে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ওঠাবসা করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দন বা কোলাকুলি করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত গোসলখানায় বা পুকুরে গোসল করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বিছানাপত্র, বাসনকোসন ব্যবহার করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে লেখাপড়া বা খেলাধুলা করলে এইডস ছড়ায় না।
  • এইচআইভি ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এইডস ছড়ায় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ