ভূমিকম্প কাকে বলে :-
ভূ-অভ্যন্তরে আকস্মিক সৃষ্ট কম্পনের দরুণ আকস্মিকভাবে ভূমির যে কম্পন হয় তাকে ভূমিকম্প বলে।একটি শান্ত পুকুরে টিল ছুড়লে যেভাবে ঢেউ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখানে তরঙ্গ শক্তি উৎপত্তি হয় সেখানে থেকে মুক্ত শক্তি টেউয়ের মত শিলায় তরঙ্গের সৃষ্টি করে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে :-
ভূ-অভ্যন্তরের যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে কেন্দ্র (Centre বা Focus) বলে।
ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে :-
কেন্দ্র থেকে সোজা উপরের দিকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিন্দুকে উপকেন্দ্র (Epicentre) বলে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তির কেন্দ্র হতে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে ভূ-কম্পন শক্তি হ্রাস পায়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূ-অভ্যন্তরের প্রায় ১৬-২০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হয়ে থাকে। যে যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয় তাকে বলা হয় সিসমোগ্রাফ।
এখন আমরা ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ভূমিকম্পের কারণ :-
বহু বছর ধরে ভূমিকম্পের কারণসমূহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিম্নলিখিত কারণসমূহ সনাক্ত করেছেন। যথাপাত সঞ্চালন :
সঞ্চালনশীল মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতসমূহের গতিশীলতার সময় যখন পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ হয় তখন ভূমিকম্প হয়। তাই পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলো পাতসীমা বরাবর অবস্থিত।
এছাড়া সঞ্চালনশীল পাত দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় বা সামনে-পিছনে গতিশীল হয় তখন ভূ-গর্ভে চাপের তারতম্য ঘটে এবং ভূমিকম্প হয়।
ভূ-পাত :
পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখন্ড ভূ-ত্বকের উপর বসে পড়লে ভূমিকম্প হয়। ভূ-পাত বা ভূমি ফলসের কারণ হলো নবীন ভাজ পর্বতের শিলাগুলো পরস্পর দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত নয়।
যেমন- ১৯১১ সালে তুরষ্কে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ ছিল পামীর মালভূমিকে বিশাল ভূ-পাত।
শিলাচ্যুতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি :
পৃথিবীর অভ্যন্তরে শিলাচ্যুতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূ-ত্বকের কোনো অংশ উপরে উত্থিত হয় বা নিচে বসে যায় এবং চ্যুতির সমতলে প্রবল ঘর্ষন সৃষ্টি হয় ও ভূমিকম্প হয়। ১৯৫০ সালে আসামে এ কারণেই ভূমিকম্প হয়েছিল।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত :
আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাতের সময় জ্বালামুখ দিয়ে প্রবলবেগে বাষ্প, লাভা প্রভৃতি বের হতে থাকে ও প্রবল ভূমিকম্প হয় ।
তাপ বিকিরণ :
তাপ বিকিরণের ফলে ভূ-ত্বক সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের দরুণ ভূ-ত্বকে ফাউল ও ভাঁজ সৃষ্টির সময় ভূমিকম্প হয়।
আরও পড়ুন :- ভূগোল কাকে বলে?
ভূ-গর্ভস্থ বাষ্প :
ভূ-গর্ভে সৃষ্ট বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূ-ত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেয় এবং এই সময় প্রবল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
ভূ-গর্ভস্থ চাপের হ্রাস :
ভূ-গর্ভে হঠাৎ চাপ হ্রাস পেলে পৃথিবীর মধ্যকার পদার্থ কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয় এবং ভূ-গর্ভের নিচের দিকে নামতে থাকে। এতে ভূ-ত্বক কেঁপে ওঠে।
ভূ-অভ্যন্তরে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি প্রবেশ :
ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে বাষ্পে পরিণত হয়। কারণ ভূ-অভ্যন্তর এখনও প্রচন্ড উত্তপ্ত। এই বাষ্পের পরিমাণ অধিক হলে, ভূ-ত্বকের নিচে ধাক্কা দেয় এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।
হিমবাহের প্রভাব :
পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ আকারের হিমবাহ হঠাৎ নিচে পতিত হলে ভূ-পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের ফলাফল ও প্রভাব :-
ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি :ভূমিকম্পের দরুন ভূ-ত্বকে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। ভূ-ত্বকে চ্যুতি সৃষ্টির ফলে চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ নিচের দিকে নেমে যায়, যাকে গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) বলে এবং যখন উপরের দিকে ওঠে যায় তখন তাকে হর্স্ট (Horst) বা স্তুপ পর্বত বলে।
সমুদ্রতলের পরিবর্তন :
ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রতলের অনেক স্থান ওপরে উত্থিত হয় এবং স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। যেমন- ১৯২১ সালের ভূমিকম্পের ফলে টোকিও উপসাগরের তলদেশ ৬০ মিটার উঁচু হয়। এছাড়া সমুদ্রগর্ভ হতে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয়েছে। অপরদিকে ১৮৯৯ সালে ভারতে কাচ্ছ উপসাগরের ৫০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়।
নদীর গতিপথ পরিবর্তন :
ভূমিকম্পের ফলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়, নদী শুকিয়ে যায় কখনও জলাভূমির সৃষ্টি হয়।
যেমন- ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে দিবং নদীর গতি পথ পরিবর্তিত হয়। এছাড়া ১৭৮৭ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে যে ভূমিকম্প হয় তার ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যায়। এজন্য ব্রহ্মপুত্র নদীটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনা খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আরও পড়ুন :- ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে?
ভূমির উত্থান ও অবনমন :
ভূমিকম্পের ফলে উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয় অথবা সমভূমি অঞ্চল অবনমিত হয় এবং পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের তলদেশের কোনো স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের সৃষ্টি করে।
ভাঁজের সৃষ্টি :
ভূমিকম্পের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।
হিমানী সম্প্রপাত :
ভূ-কম্পনের ফলে পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ বরফ খন্ডগুলো নিচে পতিত হয়।
ভূ-পাত :
ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বিশাল শিলাখন্ড নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বন্যার সৃষ্টি :
ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা কমে যায় অথবা সাথে সাথেই পানির উচ্চতা বেড়ে ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে সমুদ্র উপকূলে বন্যার সৃষ্টি করে।
মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি:
সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ও সুনামির জন্য প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধ্বাসের দরুন পাহাড়ের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেক সময় ভূমিতে ফাটল সৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট অকেজো হয়ে পড়ে। নগর এবং গ্রামীন জনপদে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মারা যায় গৃহপালিত পশু ও মানুষ।
এছাড়া তড়িৎ বর্তক্ষেপ (Short Circuit) এর কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনে আগুন ধরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। মূলত ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।
ভূমির উত্থান ও অবনমন :
ভূমিকম্পের ফলে উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয় অথবা সমভূমি অঞ্চল অবনমিত হয় এবং পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের তলদেশের কোনো স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের সৃষ্টি করে।
ভাঁজের সৃষ্টি :
ভূমিকম্পের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।
হিমানী সম্প্রপাত :
ভূ-কম্পনের ফলে পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ বরফ খন্ডগুলো নিচে পতিত হয়।
ভূ-পাত :
ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বিশাল শিলাখন্ড নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বন্যার সৃষ্টি :
ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা কমে যায় অথবা সাথে সাথেই পানির উচ্চতা বেড়ে ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে সমুদ্র উপকূলে বন্যার সৃষ্টি করে।
মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি:
সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ও সুনামির জন্য প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধ্বাসের দরুন পাহাড়ের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেক সময় ভূমিতে ফাটল সৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট অকেজো হয়ে পড়ে। নগর এবং গ্রামীন জনপদে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মারা যায় গৃহপালিত পশু ও মানুষ।
এছাড়া তড়িৎ বর্তক্ষেপ (Short Circuit) এর কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনে আগুন ধরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। মূলত ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।
আরও পড়ুন :- দূর্যোগ কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.