পুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টি কাকে বলে? অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার কারণ ও প্রতিকার?

স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য খাদ্য অনিবার্য-এ কথা আমরা সবাই জানি। একজন মানুষকে পরিপূর্ণ সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য গ্রহণের প্রতি নজর দিতে হবে। সুস্বাস্থ্য বলতে সাধারণ অর্থে আমরা বুঝি সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত শারীরিক অবস্থাকে।

সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন নিয়েই পরিপূর্ণ সুস্বাস্থ্য। দৈহিক গঠন, বৃদ্ধি, কর্মক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, সজীবতা ইত্যাদি নির্ভর করে খাদ্য গ্রহণের উপর। এক ধরনের খাদ্য দেহের সব কাজ করতে পারে না। একেক ধরনের খাদ্য দেহে একেক ধরনের কাজ করে থাকে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিভিন্ন খাদ্য পরিমাণমত গ্রহণ করলে দেহের প্রয়োজন যথাযথভাবে মিটিয়ে স্বাস্থ্যরক্ষা সম্ভব। খাদ্য গ্রহদের অপর্যাপ্ততার কারণে দেহে পুষ্টির অভাবজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। একেই অপুষ্টি বলে।

এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে দরকার পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান ও সচেতনতা। শারীরিক শ্রমের কারণে খেলোয়াড়দের ক্যালরিচাহিদা ও খাদ্যতালিকা সাধারণের তুলনায় ভিন্ন হয়। অনেক সময় খাদ্যের বিষক্রিয়া স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়। এজন্য খাদ্যে বিষডিনার কারণ ও প্রতিবিধান জানা অত্যন্ত জরুরী।

পুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টি কাকে বলে :-

পুষ্টিহীনতা ভারত ও বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। পুষ্টি উপাদান অর্থাৎ বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দেহে এসবের অভাবজনিত অবস্থার সৃষ্টি হয়। একেই আমরা পুষ্টিহীনতা বলে থাকি।

আমাদের সমাজে অপুষ্টিজনিত উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো হলো

১. প্রোটিন-ক্যালরি অপুষ্টি :

আমিষ ও ক্যালরির (শক্তি) অভাবে শিশুদের কোয়াশিওরকর ও ম্যারাসমাস রোগ হয়। কোয়াশিওকের রোগে শিশুর ওজন কমে, বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শরীর ও মুখে পানি আসে। ম্যারাসমাস রোগে শিশুর বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং শিশু হাড্ডিসার হয়ে যায়।

আরও পড়ুন :- পুষ্টি কাকে বলে?

২. রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া :

বিশেষ করে লৌহ (আয়রণ) জাতীয় খাদ্যের অভাবে এনিমিয়া হয়। রক্ত কণিকা গঠনে লৌহ, প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদানের ঘাটতিজনিত কারণে এ রোগ হয়ে থাকে।

৩. ভিটামিন এ এর অপুষ্ঠি :

ভিটামিন এ এর ঘাটতি থেকে রাতকানাসহ চোখের নানা ধরনের অসুস্থতা দেখা যায়।

৪. রিকেটস্ :

খাদ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কারণে শিশুদের রিকেটস রোগ হয় ।

৫. গলগন্ড :

আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড (ম্যাগ) সহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়। যেমন- শিশু মৃত্যু, বামনত্ব, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা ইত্যাদি।

এছাড়া ভিটামিন বি এর অভাবে বেরিবেরি, জিহ্বায় ও ঠোঁটের কোণায় ঘা ইত্যাদি হয়ে থাকে।
অপুষ্টি কাকে বলে

অপুষ্টির বা পুষ্টিহীনতার কারণ :-

আমাদের দেশে পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাধারণ কিছু তথ্য সবারই জানা থাকা প্রয়োজন। যেমন- শিশুর খাদ্য হবে অধিক আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থসমৃদ্ধ। কারণ এ সময় তাদের বেড়ে ওঠার সময়। তাছাড়া শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করে প্রচুর শক্তি ক্ষয় করে। তাই এদের খাদ্যে দেহ গঠনকারী প্রোটিন ও শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য শর্করা ও ফ্যাট যোগান দিতে হবে বেশি।

অন্যদিকে বড়দের দেহের বৃদ্ধি হয় না, কেবল রক্ষণাবেক্ষণ ও ক্ষয়পূরণ হয়। এ সময় দেহ গঠনকারী প্রোটিন প্রয়োজন হয়।

শিশুদের তুলনায় অনেক কম। আবার বৃদ্ধ বয়সে দেহে খনিজ লবণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এসব তথ্য জানা থাকলে খাদ্য পরিকল্পনার সময় তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়। অনেক সময় আমরা জেনেশুনেও শুধু অসচেতনতার কারণে বয়স্কদের চর্বিযুক্ত মাংস, মাছ, তেলে ভাজা খাবার, দুধের সর, পনির, অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাদ্য ইত্যাদি দিয়ে থাকি। যা তাদের জন্য অনিরাপদ।

আরও পড়ুন :- শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে?

এভাবে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা আমাদের স্বাস্থ্যহানি বা অপুষ্টির কারণ হয়। খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কারও এদেশে পুষ্টিহীনতার উল্লেখযোগ্য আর একটি কারণ।

নবজাতককে মায়ের দুধের পরিবর্তে মধু বা চিনি পানি দেয়া মারাত্মক ভুল। কারণ, বলা হয়, মায়ের প্রথম দুধই শিশুর প্রথম টিকা। জ্বর হলে ভাত মাছ, মাংস খেতে না দেয়াও কুসংস্কার। অনেকক্ষেত্রে গর্ভবতী মাকে কম খেতে দিয়ে মা ও শিশু উভয়কেই অপুষ্টির দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

ডায়রিয়ায় বা কলেরায় পানি খেতে না দিয়ে মূলত রোগীকে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দেয়া হয়। এসবই নিছক কুসংস্কার। এর স্বপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

পুষ্টিহীনতার প্রতিকার :-

১. জনগণকে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান ও তথ্য জানাতে হবে। এসব তথ্য টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

২. স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেতন হয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম খাদ্য তালিকা পরিকল্পনা ও প্রস্তুত করতে হবে।

৩.খাদ্য সম্পর্কিত সব ধরনের কুসংস্কার ত্যাগ করতে হবে।

৪.উচ্চ মূল্যের খাদ্যের পরিবর্তে দেশীয় এবং মৌসুমী খাদ্য হতে পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্য বাছাই করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হবে। এতে বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ সম্ভব হবে।

৫. সঠিক রক্ষন পদ্ধতি অনুসরণ করলে পুষ্টির অপচয় রোধ হবে এবং খাদ্যের গুণাগুণ বজায় থাকবে। যেমন- শাক-সবজি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করলে ভিটামিনের অপচয় কম হয়। খাদ্যদ্রব্য ভালোভাবে ধুয়ে তারপর টুকরা করতে হবে। এতে পুষ্টিগুণ কম অপচয় হবে। সবজি ও শাকের টুকরা বড় করে কাটতে হবে।

৬. বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গাভী পালন, শাক-সবজি ও ফল-মূলের বাগান করলে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ