আকরিক লোহা কাকে বলে ? আকরিক লোহা কত প্রকার? আকরিক লোহার গুরুত্ব ও ব্যবহার?

আকরিক লোহা কাকে বলে :-

ধাতব খনিজ সম্পদের মধ্যে লোহার ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশী। লোহা বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার ভিত্তি। কিন্তু আমরা যে লৌহ ব্যবহার করি তা সরাসরি প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায়না। লোহা খনিতে অন্যান্য ধাতুর সাথে মিশ্রিত আবস্থায় থাকে। এ মিশ্রিত লোহাকে আকরিক লোহা বলে।

আকরিকে কম পক্ষে ৪০% লোহা না থাকলে তা উত্তোলন করা লাভ জনক হয় । আকরিক লোহার সাথে প্রথমে কয়লা ও চুনাপাথর মিশ্রন করে কাঁচা লোহায় পরিনত করা হয়। প্রস্তুতকৃত কাঁচা লোহার সাথে নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রভৃতি মিশ্রনের মাধ্যমে ইস্পাত তৈরী করা হয়।


আকরিক লোহার শ্রেণী বিভাগ :-

আকরিক লোহায় কি পরিমান খাঁটি লোহা থাকে তার পরিমান বিচার করে আকরিক লোহাকে চার শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়; যথা

১. ম্যাগনেটাইট : এটাই সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট লোহা। যার রং কালো বর্ণের এবং এতে শতকরা ৭২ ভাগ খাঁটি লোহা থাকে।

২. হেমাটাইট : এটার রং লাল। এতে প্রায় ৭০ ভাগ পর্যন্ত লোহা থাকে।

৩. লিমোনাইট : এটা হলুদ থেকে বাদামি রংয়ের হয়। এতে ৬০-৬৫ ভাগ পর্যন্ত লোহা থাকে।

৪. সিডেরাইট : এটা সবচেয়ে নিম্নমানের আকরিক লোহা; যার রং হয় ধূসর বাদামী। এ ধরনের আকরিক লৌহে শতকরা ৪৮ ভাগ পর্যন্ত আকরিক লোহা পাওয়া যায়।
আকরিক লোহা কাকে বলে

আকরিক লোহার ব্যবহার এবং গুরুত্ব :-

বর্তমান সভ্যতার যুগে আকরিক লৌহের ব্যবহার সর্বাধিক। এটা নানাবিধ ব্যবহারিক কাজে লাগান হয়। এর স্বর্ন ও রৌপ্যের থেকে আর্থিক মূল্য কম হলেও এর ব্যবহারিক মূল্য অনেকগুন বেশী। নিম্নে আকরিক লোহার ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হলোঃ

১. বৈচিত্র্য পূর্ণ ব্যবহার :

লোহা অন্যান্য ধাতু থেকে প্রায় সাতজন বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লোহাকে সহজে গালিয়ে ছাচে ফেলে নতুন সামগ্রী তৈরী করা যায়। অন্যান্য ধাতুর সাথে মিশ্রন করে বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবহার করা যায়। লোহাকে কঠিন করা যায়, নরম করা যায় এবং কোমল করা যায়। এতসব গুন অন্য কোন ধাতুর নেই বলে সর্বক্ষেত্রে লোহার ব্যবহার হয়ে থাকে।

২. আসবাবপত্র তৈরী :

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লোহার আলমিরা, খাট, চেয়ার, টেবিল প্রভৃতি তৈরী করা হয়।

আরও পড়ুন :- প্রাকৃতিক গ্যাস কাকে বলে?

৩. গৃহ নির্মান উপকরন :

দালানের কাঠামো, ছাদ, সিড়ি, জানালা, গ্রীল, পাল্লা প্রভৃতি তেরীতে লোহার ব্যবহার হয়ে থাকে।

৪. কাঁচামাল :

লোহা বিভিন্ন শিল্পের কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, লোহার ব্যবহার ব্যতিত কলকব্জা, যন্ত্রপাতি তৈরী সম্ভব নয়।

৫. দৈনন্দিন জীবনে :

লোহা মানুষের প্রতি দিনের কাজে দা, কাস্তে, কোদাল, খুন্তি, কড়াই ইত্যাদি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।

৬. কৃষি সরঞ্জাম প্রস্তুত :

ট্রাকটর, শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলার, পাম্প এবং যন্ত্র সামগ্রী তৈরীতে কাচামাল হিসেবে লোহার ব্যবহার হয়ে থাকে।

৭. বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন :

আধুনিক শিল্প বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টারবাইন, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি তৈরীর জন্য লোহা ও ইস্পাত সামগ্রী ব্যবহৃত হয়।


৮. সমরাস্ত্র তৈরী :

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারও উন্নয়ন প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতিরক্ষার জন্য সমরাস্ত্র তৈরীতে যেমন: ট্যাঙ্ক, কামান, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধ জাহাজ, মিসাইল প্রভৃতি তৈরীতে লোহা ও ইস্পাত ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৯. পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে :

রেল লাইন স্থাপন, রেলগাড়ী তৈরী, মোটর গাড়ী, নৌযান, নৌবন্দর, বিমান প্রভৃতি অধুনিক পরিবহন ও যোগাযোগের মাধ্যম। এ সকল যানবাহন তৈরীতে লোহার বহুল ব্যবহার হচ্ছে। নদীর ওপর সেতু তৈরীতেও লোহার ব্যবহার অত্যধিক।

১০. চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুত :

আধুনিক চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে অস্ত্রপচারের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম তৈরীতে লোহার ব্যবহার অত্যাধিক।

১১. মূল্যবান যন্ত্রপাতি :

সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, টেলিভিশন, রেডিও, ডায়নামা ইত্রাদি তৈরীতেও প্রচুর লোহার ব্যবহার হয়ে থাকে।

১২. লোহা একটি রপ্তানি সামগ্রী :

লৌহ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলো লোহা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে। আকরিক লোহা থেকে পিত্ত-লোহা এবং ইস্পাত খন্ড বিদেশে রপ্তানি করে অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

তাই বলা যায় মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে শুরু করে কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে লোহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে।

আরও পড়ুন:- শিলা কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ