সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ :-
সাগর, মহাসাগরের পানিরাশির উপরিভাগ সমতল দেখা গেলেও সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ সমতল নয়। স্থলভাগ যেমন বস্তুর প্রকৃতির অর্থাৎ কোথাও সমভূমি, কোথাও মালভূমি, কোথাও সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, আবার কোথাও গভীর খাত, সমুদ্র তলদেশের ভূমির প্রকৃতিও তেমন বন্ধুর।বরং স্থলভাগের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমুদ্রের তলদেশ অধিক বন্ধুর প্রকৃতির। সমুদ্র তলদেশে অসংখ্য পাহাড়, পর্বত, আগ্নেয়গিরি, মালভূমি, পর্বতচূড়া এবং সুগভীর খাত বর্তমান।
অতীতে জাহাজ হতে শিকল বা শক্ত তারের মাথায় ভারী জিনিস বেঁধে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হতো।
বর্তমানে অন্যান্য পদ্ধতিসহ শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা হয়। শব্দ তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে পানির মধ্য দিয়ে প্রায় ১,৪৭৫ মিটার গিয়ে আবার ফিরে আসে। আর এভাবেই সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হয়। সমুদ্রের গভীরতা সাধারণত ফ্যাদমে (এক ফ্যাদম সমান ছয় ফুট) পরিমাপ করা হয়। তাই এই গভীরতা মাপক যন্ত্রের নাম ফ্যাদোমিটার।
সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ কত প্রকার :-
সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানের গভীরতার তারতম্যের ভিত্তিতে সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপকে নিম্নলিখিত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।১. মহীসোপান (Continental Shelf)
২. মহীঢাল (Continental Slope )
৩. গভীর সমুদ্রে সমভূমি (Deep Sea Plains),
৪. নিমজ্জিত শৈলশিরা (Oceanic Ridge) এবং
৫. গভীর সমুদ্র খাত (Oceanic Trench)।
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
মহীসোপান (Continental Shelf) :
মহাদেশ সমূহের চতুর্দিকের স্থলভাগের কিছু অংশ ঢালু হয়ে সমুদ্রের পানির মধ্যে নেমে গেছে। এরূপ সমুদ্রের উপকূল রেখা থেকে সমুদ্রের তলদেশে ক্রমনিম্ন নিমজ্জিত অংশকে মহীসোপান বা Continental Shelf বলে।মহীসোপানকে প্রধান দুইভাগে ভাগ করা যায় ।
ক. তটদেশীয় অঞ্চল
খ. ঝিনুক ।
তটদেশীয় অঞ্চল :
জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি সমুদ্রতীরের যতদূর পর্যন্ত উপরে ফুলে ওঠে এবং ভাটার সময় যতদূর পর্যন্ত নেমে যায় সেই স্থান পর্যন্তবিস্তৃত অংশকে ভটদেশীয় অঞ্চল বলে ।
ঝিনুক অঞ্চল :
তটদেশীয় অঞ্চলের পর হতে ঢাল মহীসোপানের শেষ প্রান্তপর্যন্ত অংশকে ঝিনুক অঞ্চল বা নেবিটীয় অঞ্চল বলে। মূলত: ঝিনুক অঞ্চলের শেষ প্রান্ত হতে মহীঢাল আরম্ভ হয়। বিলুক অঞ্চলে সমুদ্রতরঙ্গ সর্বাধিক ক্রিয়াশীল।
আরও পড়ুন :- সুনামি কাকে বলে?
গভীর সমুদ্রের সমভূমির গড় গভীরতা ৪,০০০-৬,০০০ মিটার গভীর। সমুদ্রের সমভূমিকে সমুদ্রতলের সমভূমি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সমতল নয়।
নিমজ্জিত শৈলশিরাগুলোর মধ্যে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
গভীর সমুদ্র খাতগুলো সাধারণত আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অধিক দেখতে পাওয়া যায়। এই খাতগুলো অল্প পরিসর জায়গা জুড়ে থাকে। গভীর সমুদ্রখাতের গড় গভীরতা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ৫,৪০০ মিটারের অধিক।
মহীঢাল (Continental Slope ) :
মহীসোপানের পরবর্তী অংশ যা খাড়া চালু অবস্থায় গভীর সমুদ্রে নেমে যায় তাকে মহীঢাল বলে।গভীর সমুদ্রে সমভূমি (Deep Sea Plains ) :
সাগরের তলদেশে মহীসোপান, মহীঢালের পরবর্তী বিস্তীর্ণ প্রায় সমতল অংশকে গভীর সমুদ্রের সমভূমি বলে ।গভীর সমুদ্রের সমভূমির গড় গভীরতা ৪,০০০-৬,০০০ মিটার গভীর। সমুদ্রের সমভূমিকে সমুদ্রতলের সমভূমি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সমতল নয়।
নিমজ্জিত শৈলশিরা (Oceanic Ridge) :
সমুদ্রের অভ্যন্তরের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা সমুদ্রগর্তে সঞ্চিত হয়ে শৈলশিরার ন্যায় ভূমিরূপ গঠন করে। এই ধরনের ভূমিরূপকে নিমজ্জিত শৈলশিরা বলে।নিমজ্জিত শৈলশিরাগুলোর মধ্যে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
গভীর সমুদ্রখাত (Oceanic Trench):
মহাসাগরের তলদেশে বিভিন্ন স্থানে গভীর খাত থাকে। এইগুলিকে গভীর সমুদ্রখাত বলে।গভীর সমুদ্র খাতগুলো সাধারণত আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অধিক দেখতে পাওয়া যায়। এই খাতগুলো অল্প পরিসর জায়গা জুড়ে থাকে। গভীর সমুদ্রখাতের গড় গভীরতা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ৫,৪০০ মিটারের অধিক।
আরও পড়ুন :- মহীসোপান কাকে বলে?
মহীসোপান ও মহীঢালের মধ্যে পার্থক্য :-
মহীসোপান:১. মহীসোপান ধীরে ধীরে সমুদ্রগর্ভে নেমে যায় ।
২. মহীসোপানের গভীরতা কম (সর্বোচ্চ গভীরতা ২০০ মিটার)
৩. মহীসোপান অঞ্চল সাধারণত চওড়া বা প্রশস্ত হয়ে থাকে।
৪. মহীসোপান অঞ্চলেই সামুদ্রিক সঞ্চয় বেশি।
৫. পৃথিবীর অধিকাংশ বাণিজ্যিক মৎস্যচারণ ক্ষেত্রগুলো মহীসোপান অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।
মহীঢাল :-
১. মহীঢাল হঠাৎ সমুদ্র গর্ভে নেমে যায়।
২. মহীঢালের গভীরতা অত্যন্ত বেশি (২,০০০-৩,০০০ মিটার বা তার বেশি)।
৩. মহীঢাল অঞ্চলের বিস্তৃতি বা প্রশস্ততা কম ।
৪. মহীঢাল অঞ্চলে সামুদ্রিক সঞ্চয় কম তবে এর প্রান্তেসঞ্চয় বেশি।
৫. এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক মৎস্যচারণ ক্ষেত্র গড়ে উঠেনি।
আরও পড়ুন :- মানচিত্র কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.