শব্দ দূষণ কাকে বলে :-
শব্দ হলো এক প্রকার শক্তি। এই শক্তি আমাদের কানে প্রবেশ করে শ্রবণ অনুভূতি সৃষ্টি করে, এই শক্তিকে শব্দ বলা হয়।যেমন- কোনো বস্তুতে ঘর্ষণের ফলে বায়ুতে এক ধরনের তরঙ্গ ধ্বনি সৃষ্টি হয় যা শব্দ নামে পরিচিত। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি হলো কান, যা দিয়ে আমরা শব্দ শুনি। মানুষের এই শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের তীব্রতা ধারণ ক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। তীব্রতা অনুসারে শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ধারণ ক্ষমতা দেখানো হয়েছে। যেমন-
শব্দের মাত্রা (ডেসিবল) | শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ধারণ ক্ষমতা |
---|---|
১-১০ | সামান্য আওয়াজ |
১০-৩০ | খুব শান্ত পরিবেশ |
৩০-৫০ | মোটামুটি শান্ত পরিবেশ |
৫০-৭৫ | বিরক্তিকর নয় এমন সাধারণ আওয়াজ |
৭৫-১০০ | বিরক্তিকর তীব্র আওয়াজ |
১০০-১৩০ | অসহ্য আওয়াজ |
১৩০-১৫০ | শ্রবণ যন্ত্রে ব্যথা অনুভূত হয় |
১৫০ এর বেশি। | শ্রবণযন্ত্রের অনুভূতি ক্ষমতা নষ্ট হয়। |
উপরোক্ত ছক অনুযায়ী আমাদের শ্রবণযন্ত্রের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১-৭৫ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। উক্ত মাত্রার উপরের শব্দ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতায় ঊর্ধ্বে সৃষ্ট যে কোনো শব্দ যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায় তাই হলো শব্দ দূষণ।
শব্দ দূষণের কারণ :-
শব্দ দূষণের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নরূপ :১. কল-কারখানা :
কল-কারখানার নির্গত বিকট শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। যেমন- ছাপাখানা, পাথরভাঙ্গা মেশিন, সার কারখানা ও শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের মেশিনের আওয়াজ।
২. দালান-কোঠা :
বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বড় বড় দালান-কোঠা নির্মাণের সময় নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুত, পাইলিং প্রভৃতি করার সময় বিকট আওয়াজ হয়, যা আশেপাশে ব্যাপক শব্দ দূষণ ঘটায়।
৩. যানবাহন :
ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ইত্যাদি যানবাহনের ইঞ্জিনের শব্দে দূষণ হয়। যানবাহনের হর্ণও শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া সাধারণ বিমান, জেট বিমান, যুদ্ধ বিমান প্রভৃতি তীব্র গতিতে চলার সময় যে আওয়াজ হয় তা শব্দ দূষণ ঘটায়।
৪. সাইরেন ও যুদ্ধ সামগ্রীর শব্দ :
ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স বা যুদ্ধের সময় যে সাইরেন বাজানো হয় তাও শব্দ দূষণ ঘটায়। এছাড়া গোলাবারুদ, বোমা বিস্ফোরণ, গ্রেনেড বিস্ফোরনে বিকট আওয়াজ হয়, যা শব্দ দূষণের উৎস হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন :- দূর্যোগ কাকে বলে?
৫. গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র :
মাইক, ক্যাসেট বা রেডিওতে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হলে শব্দ দূষিত হয়। বাদ্যযন্ত্রের ড্রামের আওয়াজেও শব্দ দূষণ ঘটে।
৬. মেঘের গর্জন :
বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের সাথে মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের ফলে বিকট আওয়াজ হয় যা শব্দ দূষণ ঘটায়।
৭. ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত:
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পন এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয় তার ফলে শব্দ দূষণ ঘটে।
৮. পশুপাখির শব্দ :
কুকুরের ঘেউ ঘেউ, কাকের কা কা, বাঘ বা সিংহের গর্জনের ফলেও শব্দ দূষণ হয়।
৯. জনসমাগম :
রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, হাটবাজারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সমাগম হলে সেখানে শব্দ দূষণ ঘটে।
৫. গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র :
মাইক, ক্যাসেট বা রেডিওতে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হলে শব্দ দূষিত হয়। বাদ্যযন্ত্রের ড্রামের আওয়াজেও শব্দ দূষণ ঘটে।
৬. মেঘের গর্জন :
বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের সাথে মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের ফলে বিকট আওয়াজ হয় যা শব্দ দূষণ ঘটায়।
৭. ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত:
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পন এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয় তার ফলে শব্দ দূষণ ঘটে।
৮. পশুপাখির শব্দ :
কুকুরের ঘেউ ঘেউ, কাকের কা কা, বাঘ বা সিংহের গর্জনের ফলেও শব্দ দূষণ হয়।
৯. জনসমাগম :
রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, হাটবাজারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সমাগম হলে সেখানে শব্দ দূষণ ঘটে।
শব্দ দূষণের প্রভাব :-
শব্দ দূষণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় প্রকার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এটি বিরক্তিকর হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতি করে থাকে। নিম্নে শব্দ দূষণের অন্যতম ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হলো।১. বধিরতা :
কানের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১-৭৫ ডেসিবল। এর অধিক শব্দ হলে কানের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের উচ্চ শব্দ শ্রবণ করলে বধির হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন :- মৃত্তিকা দূষণ কাকে বলে?
২. স্নায়ুযন্ত্র :
শব্দ দূষণের ফলে স্নায়ুযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে যা পরবর্তীতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- রক্তসংবহন তন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে।
৩. রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি :
অনেক সময় তীব্র শব্দের প্রভাবে রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদপিন্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণও কমে যায়। এতে হৃদ প্রসারণের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপও বন্ধ হতে পারে ।
২. স্নায়ুযন্ত্র :
শব্দ দূষণের ফলে স্নায়ুযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে যা পরবর্তীতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- রক্তসংবহন তন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে।
৩. রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি :
অনেক সময় তীব্র শব্দের প্রভাবে রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদপিন্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণও কমে যায়। এতে হৃদ প্রসারণের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপও বন্ধ হতে পারে ।
৪. শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি :
অধিক শব্দ দূষণযুক্ত এলাকায় বসবাস করলে শিশুদের দৈহিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিশু বধির হয়ে যেতে পারে এবং মানসিক বিকাশ বিঘ্ন হতে পারে।
৫. শ্বাস-প্রশ্বাস :
শব্দ দূষণের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।
৬. স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও খিটখিটে মেজাজ :
শব্দ দূষণের ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপরিউক্ত প্রভাবগুলো ছাড়াও অধিক মাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পড়ালেখা বিঘ্নিত হওয়া, অস্বস্তিবোধসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় :-
শব্দ দূষণ যেহেতু মানুষকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই এ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিম্নোক্ত উপায়গুলির মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।আরও পড়ুন:- বায়োম কাকে বলে?
১. যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণ :
সকল প্রকার যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটরগাড়ির সাইলেন্সার পাইপ ঠিক রাখতে হবে এবং অযথা হর্ণ বাজানো যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, হাসপাতাল প্রভৃতি এলাকায় হর্ণ বাজানো যাবে না।
২. অযথা শব্দ না করা :
হাটার সময় জুতার খট খট শব্দ না করা। অধিক কথা উচ্চস্বরে না বলা, কথা-বার্তায় নম্রতা বজায় রেখে শ্রুতিমধুর করার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৩. রেডিও, টিভি, মাইকের ব্যবহার :
উচ্চ শব্দে রেডিও, টিভি বা মাইক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলে কানের পর্দা দীর্ঘকাল স্বাভাবিক থাকে।
8. বাসস্ট্যান্ড দূরে রাখা :
যেসব এলাকায় অধিক লোকের বসবাস অর্থাৎ লোকালয় থেকে বাসস্ট্যান্ড দূরে রাখতে হবে। এতে শব্দ দূষণ হ্রাস পাবে।
৫. শিল্প-কারখানার শব্দ নিয়ন্ত্রণ :
শিল্প-কারখানায় তীব্র শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে শব্দ দূষণ উৎসস্থলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এছাড়া অবাঞ্ছিত শব্দ তৈরিকারী যন্ত্রপাতির উপর আচ্ছাদন ব্যবহার করেও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৬. আতশবাজি নিয়ন্ত্রণ :
অনেক সময় বিভিন্ন উৎসবে আতশবাজি ব্যবহার করা হয়। আতশবাজির তীব্র শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য লোকালয়ে আতশবাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
সর্বোপরি আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই শব্দ দূষণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একই সাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন :- বায়ু দূষণ কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.