পর্বত কাকে বলে :-
ভূ-পৃষ্ঠের অতি উচ্চ, সুবিস্তৃত এবং খাড়া ঢাল বিশিষ্ট শিলাস্তুপকে পর্বত বলে।পর্বত সাধারণত ৬০০ মিটারের বেশি উচ্চতা সম্পন্ন হয়। তবে পর্বতের উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো পর্বত বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে। যেমন- পূর্ব আফ্রিকার কিলিমানজারো।
আবার কিছু পর্বত ব্যাপক এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। এ ধরনের পর্বত সাধারণত ঢেউয়ের ন্যায় ভাঁজ বিশিষ্ট। যেমন- হিমালয় পর্বত। পর্বত গঠনের প্রক্রিয়াকে ওরোজেনেসিস (Orogenesis) বলে। গ্রীক শব্দ Oro অর্থ পর্বত এবং Genesis অর্থ সৃষ্টি হওয়া।
পর্বতের শ্রেনীবিভাগ :-
পৃথিবীর প্রতিটি পর্বত দেখতে বাহ্যিকভাবে স্বতন্ত্র হলেও উৎপত্তিগত ও গঠন প্রকৃতির দিক দিয়ে এদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পর্বতকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা১. ভঙ্গিল পর্বত
২. আগ্নেয় পর্বত
৩. চ্যুতি-স্তূপ পর্বত এবং
৪. উত্থিত ক্ষয়জাত পর্বত।
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে -
১. ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে (Folded Mountain) :
পাললিক শিলাস্তর আনুভূমিক আলোড়ন বা মহাদেশীয় পর্বতের সংকোচনের ফলে কুঞ্চিত হয়ে ঢেউয়ের আকারে যে পর্বত সৃষ্টি হয় তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।চার ধরনের পর্বতের মধ্যে ভঙ্গিল পর্বত সর্বাধিক বিস্তৃত। অভিসারী প্লেট সীমানায় সংকোচনজনিত চাপে এ ধরনের পর্বত গঠিত হয় বলে এর শিলা কাঠামো ভাঁজ ও চ্যুতিযুক্ত। ভঙ্গিল পর্বত সাধারণত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।
আরও পড়ুন:- চ্যুতি কাকে বলে?
বিভিন্ন পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি :
ভূ-বিজ্ঞানীগণ ভঙ্গিল পর্বত গঠনে কয়েকটি পর্যায় দেখিয়েছেন। যেমন-
প্রথম পর্যায়ে সমুদ্রখাতের উভয় দিক থেকে সংকোচনের ফলে নিম্নাংশ অবনমিত হয় বা নিচে নেমে যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সমুদ্রখাতের অবনমিত অংশে পলি জমা হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে পলির ভারে নিচের দিকে নেমে যায়। ফলে ভূ-অধঃভাজের সৃষ্টি হয়।
তৃতীয় পর্যায়ে অবনমিত খাতের তলদেশ রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় এবং আগ্নেয়শিলা পলির ভিতরে প্রবেশ করে। এবং
চূড়ান্ত পর্যায়ে সংকোচন হ্রাস পায় এবং সম্পূর্ণ খাত উপরে উত্থিত হয়ে পর্বতমালা গঠন করে।
যেমন-এশিয়ার হিমালয়, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ, উত্তর আমেরিকার রকি এবং ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা।
লাভার প্রকৃতির ওপর আগ্নেয় পর্বতের বিস্তৃতি ও আকৃতি নির্ভর করে। কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত খাড়া ঢালবিশিষ্ট এবং স্বল্প স্থান জুড়ে থাকে। আবার স্বল্প ঢাল সম্পন্ন কিন্তু বিস্তৃত এলাকা জুড়েও এ পর্বত হতে পারে ।
বিভিন্ন পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি :
ভূ-বিজ্ঞানীগণ ভঙ্গিল পর্বত গঠনে কয়েকটি পর্যায় দেখিয়েছেন। যেমন-
প্রথম পর্যায়ে সমুদ্রখাতের উভয় দিক থেকে সংকোচনের ফলে নিম্নাংশ অবনমিত হয় বা নিচে নেমে যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সমুদ্রখাতের অবনমিত অংশে পলি জমা হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে পলির ভারে নিচের দিকে নেমে যায়। ফলে ভূ-অধঃভাজের সৃষ্টি হয়।
তৃতীয় পর্যায়ে অবনমিত খাতের তলদেশ রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় এবং আগ্নেয়শিলা পলির ভিতরে প্রবেশ করে। এবং
চূড়ান্ত পর্যায়ে সংকোচন হ্রাস পায় এবং সম্পূর্ণ খাত উপরে উত্থিত হয়ে পর্বতমালা গঠন করে।
যেমন-এশিয়ার হিমালয়, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ, উত্তর আমেরিকার রকি এবং ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা।
২. আগ্নেয় পর্বত (Volcanic Mountain) :
ভূ-অভ্যন্তরস্থ ক্রিয়াকলাপের জন্য ম্যাগমা পাতা হিসাবে উদগিরিত হয়ে চারদিকে সঞ্চিত হয়। পরবর্তীতে জমে ঠাণ্ডা হয়ে যে শিলাস্তূপের সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।লাভার প্রকৃতির ওপর আগ্নেয় পর্বতের বিস্তৃতি ও আকৃতি নির্ভর করে। কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত খাড়া ঢালবিশিষ্ট এবং স্বল্প স্থান জুড়ে থাকে। আবার স্বল্প ঢাল সম্পন্ন কিন্তু বিস্তৃত এলাকা জুড়েও এ পর্বত হতে পারে ।
আরও পড়ুন :- মালভূমি কাকে বলে?
আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি :
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূ-আলোড়নের জন্য ভূ-ত্বকের দুর্বল অংশের ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ উত্তপ্ত লাভা, নানা প্রকার গ্যাস ও বাষ্প, ছাই, ধাতু ইত্যাদি প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। এই উত্তপ্ত লাভা ফাটলের চতুর্দিকে সঞ্চিত হতে হতে উঁচু পর্বতের সৃষ্টি করে।
যেমন- জাপানের ফুজিয়ামা, হাওয়াই দ্বীপের মওনালোয়া, ইতালির ভিসুভিয়াস, আফ্রিকার কিলিমানজারো ইত্যাদি।
দুটি ফাটলের মাঝের অংশ অনেক সময় উপরে ওঠে যায় বা নিচে বসে যায়। চ্যুতি বরাবর এই ধরনের পর্বতকে চ্যুতি-স্তুপ পর্বত বলে।
চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের উৎপত্তি :
তিন ধরনের পরিস্থিতিতে চাতি-স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হতে পারে।
প্রথমত: ভূ-ত্বকের শিলাস্তরে টানজনিত চাপের কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এ ফাঁটল বরাবর একটি শিলাস্তর পাশের স্তরের চেয়ে ওপরের দিকে উঠে গেলে বা নিচের দিকে নেমে গেলে অথবা পাশে সরে গিয়ে চ্যুতি স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ধরনের স্তূপ পর্বত দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত : ভূ-ত্বকের কোনো অংশ ভূ-অভ্যন্তরস্থ কারণে ওপরের দিকে উঠতে থাকলে পার্শ্ববর্তী শিলায় যে টানের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফাঁটল দেখা যায়। এই ফাঁটল বরাবর দু'পাশের শিলাস্তর নিচের দিকে নেমে যায় এবং মাঝের ঊর্ধ্বগামী শিলাস্তূপকে চ্যুতি স্তূপ পর্বতের মত দেখায়। যেমন- পূর্ব আফ্রিকার প্রস্ত উপত্যকার পার্শ্ববর্তী উঁচু পার্বত্য স্তূপই এ ধরনের চ্যুতি-স্তূপ পর্বত।
তৃতীয়ত: কোনো কারণে ভূ-ত্বকের এক অংশ খাড়াভাবে পাশের সমভূমির ওপরে উঠে গেলে চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- জার্মানির ব্লাক ফরেস্ট, ফ্রান্সের ভোঁজ এবং ভারতের বিন্ধ্যা ও ত্রিপুরা পর্বতয় চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
মূলত ভূ-আলোড়নের কারণে সুদূর অতীতকালে ভূ-অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা উত্থিত হওয়ায় শিলাস্তর ওপরের দিকে উঠে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাঁড়া বরাবর শিলাস্তূপ ঊর্ধ্বগামী হয়। পরবর্তীতে এ সমস্ত উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচের আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা উন্মুক্ত হয়। পার্শ্ববর্তী ভূমির চেয়ে এ সুউচ্চ ভূমিরূপকে উত্থিত ক্ষয়জাত পর্বত বলে।
যেমন-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাক হিলস, কলোরাডোর ফ্রান্ট রেঞ্জ (কলোরাডো)।
আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি :
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূ-আলোড়নের জন্য ভূ-ত্বকের দুর্বল অংশের ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ উত্তপ্ত লাভা, নানা প্রকার গ্যাস ও বাষ্প, ছাই, ধাতু ইত্যাদি প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। এই উত্তপ্ত লাভা ফাটলের চতুর্দিকে সঞ্চিত হতে হতে উঁচু পর্বতের সৃষ্টি করে।
যেমন- জাপানের ফুজিয়ামা, হাওয়াই দ্বীপের মওনালোয়া, ইতালির ভিসুভিয়াস, আফ্রিকার কিলিমানজারো ইত্যাদি।
৩. চ্যুতি-স্তূপ পর্বত ( Fault-block Mountain) :
ভূ-আলোড়নের ফলে শিলাস্তরের সংকোচন ও প্রসারণে ভূ-ত্বক অনেক সময় খাড়াভাবে ফেঁটে যায়। যে রেখা বরাবর ফাঁটল সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতি রেখা বলে।দুটি ফাটলের মাঝের অংশ অনেক সময় উপরে ওঠে যায় বা নিচে বসে যায়। চ্যুতি বরাবর এই ধরনের পর্বতকে চ্যুতি-স্তুপ পর্বত বলে।
চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের উৎপত্তি :
তিন ধরনের পরিস্থিতিতে চাতি-স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হতে পারে।
প্রথমত: ভূ-ত্বকের শিলাস্তরে টানজনিত চাপের কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এ ফাঁটল বরাবর একটি শিলাস্তর পাশের স্তরের চেয়ে ওপরের দিকে উঠে গেলে বা নিচের দিকে নেমে গেলে অথবা পাশে সরে গিয়ে চ্যুতি স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ধরনের স্তূপ পর্বত দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত : ভূ-ত্বকের কোনো অংশ ভূ-অভ্যন্তরস্থ কারণে ওপরের দিকে উঠতে থাকলে পার্শ্ববর্তী শিলায় যে টানের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফাঁটল দেখা যায়। এই ফাঁটল বরাবর দু'পাশের শিলাস্তর নিচের দিকে নেমে যায় এবং মাঝের ঊর্ধ্বগামী শিলাস্তূপকে চ্যুতি স্তূপ পর্বতের মত দেখায়। যেমন- পূর্ব আফ্রিকার প্রস্ত উপত্যকার পার্শ্ববর্তী উঁচু পার্বত্য স্তূপই এ ধরনের চ্যুতি-স্তূপ পর্বত।
তৃতীয়ত: কোনো কারণে ভূ-ত্বকের এক অংশ খাড়াভাবে পাশের সমভূমির ওপরে উঠে গেলে চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- জার্মানির ব্লাক ফরেস্ট, ফ্রান্সের ভোঁজ এবং ভারতের বিন্ধ্যা ও ত্রিপুরা পর্বতয় চ্যুতি-স্তূপ পর্বতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৪. উত্থিত ক্ষয়জাত পর্বত ( Residual Mountain) :
ভূ-পৃষ্ঠের নরম শিলাসমূহ বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও অপসারিত হলে কঠিন শিলাসমূহ উঁচু হয়ে পর্বতের ন্যায় অবস্থান করে। একে উত্থিত ক্ষয়জাত পর্বত বলে।মূলত ভূ-আলোড়নের কারণে সুদূর অতীতকালে ভূ-অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা উত্থিত হওয়ায় শিলাস্তর ওপরের দিকে উঠে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাঁড়া বরাবর শিলাস্তূপ ঊর্ধ্বগামী হয়। পরবর্তীতে এ সমস্ত উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচের আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা উন্মুক্ত হয়। পার্শ্ববর্তী ভূমির চেয়ে এ সুউচ্চ ভূমিরূপকে উত্থিত ক্ষয়জাত পর্বত বলে।
যেমন-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাক হিলস, কলোরাডোর ফ্রান্ট রেঞ্জ (কলোরাডো)।
আরও পড়ুন :- সমভূমি কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.