পরিবেশ দূষণ কাকে বলে? পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ?

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে :-

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই পরিবেশ এবং প্রকৃতি নিয়ে যে পরিবেশ তাই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ।

বর্তমান বিশ্বে প্রকৃতিকে মানুষ যেভাবে ব্যবহার করছে তার প্রভাবে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বর্তমানকালে পরিবেশ যেভাবে বিপন্ন হওয়ার মুখে তা পূর্বে এতটা আলোচিত হয়নি। অবশ্য এই আলোচনার পিছনে মানুষের সচেতনতাও কাজ করছে।

পরিবেশ দূষণ কাকে বলে :-

পরিবেশে জীবের স্বাভাবিক অবস্থা বা জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর অবস্থার নাম দূষণ।

অন্যদিকে পানি, বাতাস, মৃত্তিকা বা পরিবেশের কোনো উপাদানের ভৌত, রাসায়নিক বা জৈবিক যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তনই প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ।

অর্থাৎ যে সকল উপাদানের কারণে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয় পরিবেশের সেই সকল উপাদানকে পরিবেশ দূষক (Environmental Pollutant) বলে।



প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের কারণ :-

মানুষের বহুমুখী কর্মকান্ডই পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের কারণসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যথা

ক. প্রাকৃতিক কারণ এবং

খ. মানবসৃষ্ট কারণ।
পরিবেশ দূষণ কাকে বলে

ক. প্রাকৃতিক কারণ (Natural Causes) :

প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক কারণসমূহ নিম্নরূপ :

১. বন্যা ও খরা :

বন্যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় মলমূত্র ও মৃত জীবজন্ত মিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এবং ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় প্রভৃতি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আবার খরা হলে জলজ প্রাণি এবং জীবজন্ত্র মরে দূষণ ঘটে।

২. ভূমিকম্প :

ভূমিকম্পের কারণে মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা ও মাটি চাপা পড়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।

৩. ঘূর্ণিঝড় :

কোনো এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন হলে উক্ত এলাকায় জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জীবজন্ত্রর দেহাবশেষে পচন ধরে পরিবেশ দূষিত হয়।

৪. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত :

আগ্নেয়গিরির উদ্‌গীরণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগ্নেয়গিরির চারপাশে পুড়ে যায়, ভূমিধ্বস হয় এবং মানুষ ও পশুপাখি প্রভৃতি মারা যায়। এতেও পরিবেশ দূষিত হয়।

উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও মহামারি, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি কারণেও প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত হয়।

আরও পড়ুন :- ভূগোল কাকে বলে?

খ. মানবসৃষ্ট কারণ (Man-made Causes) :

প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণগুলো নিম্নরূপ :

১. গাছপালা নিধন :

পরিবেশের ভারসাম্যে রক্ষার জন্য গাছপালা আবশ্যকীয় উপাদান। কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজনের তাগিদে বা অনেক সময় অপ্রয়োজনে গাছপালা নিধন করে পরিবেশের ক্ষতি করছে।

২. পাহাড় কর্তন :

পাহাড় কর্তন বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যা। অনেকেই অবৈধভাবে পাহাড় কর্তন করে। পাহাড়ি এলাকায় পরিবেশ নষ্ট হয়।

৩. অপরিকল্পিত নগরায়ন :

প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন। গ্রামীন এলাকা থেকে মানুষ কর্মের সন্ধানে নগরে ছুটে আসে। ফলে অত্যধিক মানুষের চাপে নগরীয় পরিবেশ দূষিত হয়।

৪. কীটনাশক ব্যবহার :

কৃষিকাজে অধিক হারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানির সাথে কীটনাশক মিশে পানি দূষণ ঘটায় ।

৫. ভূ-গর্ভস্থ পানি আহরণ :

ভূ-গর্ভস্থ পানি অধিক হারে উত্তোলনের কারণে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং উক্ত এলাকা মরুময় হয়ে যেতে পারে। ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটে।

৬. শিল্প বর্জ্য :

শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বর্জ্য যত্রতত্র নিষ্কাষণের ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটে। এছাড়া কল-কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে।

৭. জ্বালানি দহনের নির্গত ধোয়া :

যানবাহন, ইটভাটা, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতিতে ব্যবহৃত কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, পারমানবিক জ্বালানি, কাঠ প্রভৃতি থেকে নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়া ও প্যাসের মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হয়।

উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ, জলাভূমি ভরাট প্রভৃতি মানব সৃষ্ট কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে।

পরিবেশ দূষণের ফলাফল :-

পরিবেশ দূষিত হলে সার্বিকভাবে প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের উপর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন- বায়ু, পানি, মৃত্তিকা দূষণমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাদের চারপাশের দূষিত পরিবেশ জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের ফলাফল দুইটি উদাহরণের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করব।

যেমন- কল-কারখানা, যানবাহন বা ইটভাটার কালো ধোঁয়া বায়ুকে দূষিত করে। আর উক্ত বায়ু শ্বাস গ্রহণের সময় শরীরে প্রবেশ করে রক্ত চলাচল বিঘ্ন ঘটায়। সর্দি কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, শ্বাস গ্রহণে বিঘ্ন ঘটে এবং বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আবার চামড়া শিল্পে কাঁচা চামড়া পচন রোধ করার জন্য চামড়ার ভিতরে ভাঁজে ভাঁজে লবণ দেয়া হয়। যখন এই চামড়া ধোঁয়া হয় তখন দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষারকীয় পানি বের হয়। এগুলো বাতাস ও পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

সুতরাং বলা যায় যে, প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ