যান্ত্রিক আবহবিকার কাকে বলে :-
ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন শিলা আবরণ যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয় তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার বলে।প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের দ্বারা শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় বলে একে প্রাকৃতিক আবহবিকার বলে।
যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে উত্তাপের দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে তুষারের প্রভাব খুব বেশি সেখানে অধিক হয়ে থাকে। সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, শিলার চাপ হ্রাস-বৃদ্ধি এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন সংগঠিত হয়।
যান্ত্রিক বা প্রাকৃতিক আবহবিকার প্রক্রিয়া :-
প্রাকৃতিক বিচূর্ণীভবনের প্রক্রিয়াসমূহ নিম্নরূপ। যথা১. তাপমাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে:
২. তুষারের মাধ্যমে
৩. পানির মাধ্যমে
৪. চাপ হ্রাসের মাধ্যমে এবং
৫. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে।
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে -
১. তাপমাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে :
সূর্যতাপের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠের শিলারাশি খন্ড-বিখন্ড হয়ে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবনে সহায়তা করে থাকে। মরুভূমি এলাকায় দিনের প্রচন্ড সূর্যতাপে শিলার খনিজসমূহ আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং রাতে ঠান্ডায় সংকুচিত হয়।
এভাবে ক্রমাগত সম্প্রসারণ ও সংকোচন প্রক্রিয়া কার্যকর থাকায় খনিজসমূহের বাঁধন দুর্বল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে খনিজসমূহ শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন :- পাত সঞ্চালন তত্ত্ব কি?
শিলাস্ত্ররের উপরেই স্বাভাবিক সূর্যরশ্মি পতিত হয়। তখন শিলা উত্তপ্ত হয়ে পার্শ্ব বা নিচের দিকে প্রসারিত হতে না পেরে উপরের দিকে প্রসারিত হয়। এর ফলে শিলার উপরের স্তর থেকে পৃথক হয়ে স্তরে স্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা অনেকটা পেঁয়াজের খোসার ন্যায় খুলে যায়। শিলার এরূপ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে শিলার স্তর মোচন (Exfoliation) বলা হয়।
এভাবে শিলার উপরের অংশ আলগা হয়ে খন্ড-বিখন্ড হতে থাকে এবং কালক্রমে গোলাকার রূপ ধারণ করে। এ জাতীয় বিচূর্ণীভবনকে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবনও (Spheroidal Weathering) বলা হয়। এভাবে সৃষ্ট গোলাকার শিলাখন্ডকে অবশিষ্ট শিলা (Residual Rock) বলে। এটি গ্রানাইট শিলায় অধিক দেখা যায়।
২. তুষারের মাধ্যমে :
যেসব শিলায় ফাঁটল দেখতে পাওয়া যায় সেসব ফাঁটলে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে থাকে। শীতল জলবায়ু অঞ্চলে বা উচ্চ অক্ষাংশে অথবা উচ্চ পর্বত গাত্রে গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাঙ্করের ফাঁটলের মধ্যে পানি প্রবেশ করে সঞ্চিত হলে তা পরে অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয়। এর ফলে ফাঁটলের মধ্যস্থিত পানিও বরফে পরিণত হয়।
ফাঁটলের দুই পার্শ্বের দেয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে (প্রতি বর্গ সে.মি. প্রায় ১৪ কিলোগ্রাম)। এই চাপের ফলে ফাঁটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্ত্রর ফেঁটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তর খন্ডে পরিণত হয়। এই প্রস্তর খন্ডগুলো পর্বতগাত্র বেয়ে পাদদেশে এসে জমে। এরূপে কোনো বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকার শিলাখন্ডের দ্বারা আবৃত অঞ্চলকে ফেলসেনমার বা কম্পেড (Felsenmeer or Blockspade) বলে ।
আরও পড়ুন :- বার্ষিক গতি কাকে বলে?
শিলাস্ত্ররের উপরেই স্বাভাবিক সূর্যরশ্মি পতিত হয়। তখন শিলা উত্তপ্ত হয়ে পার্শ্ব বা নিচের দিকে প্রসারিত হতে না পেরে উপরের দিকে প্রসারিত হয়। এর ফলে শিলার উপরের স্তর থেকে পৃথক হয়ে স্তরে স্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা অনেকটা পেঁয়াজের খোসার ন্যায় খুলে যায়। শিলার এরূপ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে শিলার স্তর মোচন (Exfoliation) বলা হয়।
এভাবে শিলার উপরের অংশ আলগা হয়ে খন্ড-বিখন্ড হতে থাকে এবং কালক্রমে গোলাকার রূপ ধারণ করে। এ জাতীয় বিচূর্ণীভবনকে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবনও (Spheroidal Weathering) বলা হয়। এভাবে সৃষ্ট গোলাকার শিলাখন্ডকে অবশিষ্ট শিলা (Residual Rock) বলে। এটি গ্রানাইট শিলায় অধিক দেখা যায়।
২. তুষারের মাধ্যমে :
যেসব শিলায় ফাঁটল দেখতে পাওয়া যায় সেসব ফাঁটলে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে থাকে। শীতল জলবায়ু অঞ্চলে বা উচ্চ অক্ষাংশে অথবা উচ্চ পর্বত গাত্রে গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাঙ্করের ফাঁটলের মধ্যে পানি প্রবেশ করে সঞ্চিত হলে তা পরে অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয়। এর ফলে ফাঁটলের মধ্যস্থিত পানিও বরফে পরিণত হয়।
ফাঁটলের দুই পার্শ্বের দেয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে (প্রতি বর্গ সে.মি. প্রায় ১৪ কিলোগ্রাম)। এই চাপের ফলে ফাঁটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্ত্রর ফেঁটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তর খন্ডে পরিণত হয়। এই প্রস্তর খন্ডগুলো পর্বতগাত্র বেয়ে পাদদেশে এসে জমে। এরূপে কোনো বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকার শিলাখন্ডের দ্বারা আবৃত অঞ্চলকে ফেলসেনমার বা কম্পেড (Felsenmeer or Blockspade) বলে ।
আরও পড়ুন :- বার্ষিক গতি কাকে বলে?
পর্বত গাত্রে কোণাকৃতি এরূপ প্রস্তুর খন্ড সঞ্চিত হলে তাকে ফ্রী (Screes) বা ট্যালাস (Tallus) বলে। সছিদ্র ( Porous) মৃত্তিকার মধ্যে পানি বরফে পরিণত হলে মৃত্তিকা ফেটে যায়। শীতপ্রধান দেশে কৃষিজমির বড় বড় মাটির ঢেলা তুষারের ক্রিয়ায় ফেটে যায়। এতে পরবর্তীতে কৃষিকার্যের সুবিধা হয়।
৩. পানির মাধ্যমে :
পানি তিন প্রক্রিয়ায় বিচূর্ণীভবনে সহায়তা করে থাকে। যথা
ক) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে পানি বছরের পর বছর ধরে শিলাখন্ডগুলোকে আঘাত করে দুর্বল করে ফেলে এবং এতে শিলাখন্ডগুলো ক্রমশ খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায়।
খ) কখনো কখনো পানি নরম পাললিক শিলা এবং ছিদ্রযুক্ত রূপান্তরিত শিলার মধ্যে প্রবেশ করে এবং শিলাস্তরকে আর্দ্র করে ফেলে। পরে সূর্যের তাপে ঐ পানি বাষ্পে পরিণত হয় এবং শিলাখন্ডগুলো পুনরায় শুকিয়ে যায়। শিলান্তরের অভ্যন্তর ভাগে এরূপে ক্রমাগত আর্দ্র ও শুষ্ক হবার দরুণ তা ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিলাখন্ডে পরিণত হয় এবং যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন ঘটায়।
গ) আবার শিলাগুরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে শিলাভরকে আর্দ্র করে ফেলে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন। উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার ভাঁটার প্রভাবে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন ঘটে।
৪. চাপ হ্রাসের মাধ্যমে :
ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ওপরের পাললিক শিলান্তরের চাপে সংকুচিত অবস্থায় থাকে। ওপরের শিলাস্ত্রর অপসারিত হলে ভূ-অভ্যন্তরের শিলার উপর চাপ হ্রাস পায়। ফলে এ সমস্ত শিলা কিছুটা সম্প্রসারিত হয়। এ অবস্থায় শিলার ওপরের স্তর নিচের মূল শিলা থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যায়। গ্রানাইট জাতীয় শিলায় এ ধরনের বিচূর্ণীভবন দেখা যায়।
৫. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে :
উচ্চ পর্বত গাত্রের খাড়া ঢালে প্রকান্ড শিলাখন্ড কোনো প্রকারে ভেঙ্গে আলগা হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নিচে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। পতিত শিলার আঘাতে পাদদেশের শিলাও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। আবার চলার পথে ভূ-পতিত শিলা অন্যান্য উচ্চ স্থানের শিলাগুলো দ্বারা সদা চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সর্বদা যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন ঘটছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.