চ্যুতি কাকে বলে :-
ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে সৃষ্ট ফাঁটলের একদিকের অংশ স্থানচ্যুত হয়ে ভূ-গর্ভে বসে যায় আবার কিছু অংশ উপরে উত্থিত হয়। এই ধরনের ভূমিরূপকে চ্যুতি বলে।চ্যুতি যে কোনো প্রকার শিলাতে সৃষ্টি হতে পারে। তবে পাললিক শিলায় চ্যুতির পরিমাণ বেশি। চ্যুতির পরিমাণ কয়েক সেন্টিমিটার থেকে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
চ্যুতির কারণ :-
ভূ-পৃষ্ঠের যে কোনো স্থান আনুভূমিক সঙ্কোচন বা সম্প্রসারিত হলে চ্যুতির সৃষ্টি হতে পারে। আবার কোনো শিলাস্তরে অধিক সঙ্কোচনের প্রভাব পড়লে অপ্রতিসম্য ভাঁজ বা আনুভূমিক ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে শেষ পর্যন্ত ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হতে পারে। এইভাবে একেকটি ভাঁজ একেকটি চ্যুতিতে রূপান্তরিত হতে পারে।প্রত্যেক চ্যুতির দুইটি করে পার্শ্ব থাকে। যথা- উত্থিত পার্শ্ব এবং অবনত পার্শ্ব।
যে সমতল হতে চ্যুতির পার্শ্ব উত্থিত বা অবনত হয় অর্থাৎ চ্যুতির সৃষ্টি হয় তাকে চাতিতল ( Fault Plane) বলে। চ্যুতিতল সাধারণত ঢালু হয় তবে তা খাড়াও হতে পারে। চ্যুতির উত্থিত পার্শ্বের ঢালকে চ্যুতিঢাল ( Fault Scarp) বলে।
উত্থিত পার্শ্বের উপরের নরম শিলাস্তর ক্ষয়সাধনের ফলে অপসারিত হলে নিম্নের কঠিন শিলা দৃষ্টিগোচর হয় এবং চ্যুতিঢালের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। একে চ্যুতিরেখা ঢাল (Fault Line Scarp) বলে।
চ্যুতি কত প্রকার ও কি কি :-
গঠন, আকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার উল্লেখযোগ্য কিছু চ্যুতির বর্ণনা দেয়া হলো -১. স্বাভাবিক চ্যুতি (Normal Fault ) :
কোনো চ্যুতির নিম্ন দেয়াল উপরে উত্থিত হলে বা ঝুলন্ত দেয়ালের নিম্নে অবতরণ করলে তাকে স্বাভাবিক চ্যুতি বলে। স্বাভাবিক চ্যুতির চ্যুতিতল অবনত পার্শ্বেও ঢালু থাকে।
আরও পড়ুন :- আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
২. বিপরীত চ্যুতি (Reverse Fault ) :
বিপরীত চ্যুতি স্বাভাবিক চ্যুতির ঠিক উল্টো। কারণ এর ক্ষেত্রে ঝুলন্ত দেয়াল উপরে উত্থিত হয় এবং নিম্ন দেয়াল নিয়ে অবতরণ করে।
ঝুলন্ত দেয়াল অবনত পার্শ্বের উপর বেশি হেলে থাকে বলে তাকে বিপরীত চ্যুতি বলে।
৩. শাখায়িত চ্যুতি (Branching Fault) :
একটি প্রধান চ্যুতিকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিত অপ্রধান চ্যুতির সৃষ্টি হলে তাকে শাখায়িত চ্যুতি বলে ।
৪. ধাপ চ্যুতি (Step Fault) :
একই চ্যুতিতলে অবনত পার্শ্বে এর সমান্তরালে পরপর কয়েকটি চ্যুতির সৃষ্টি হলে তাতে ধাপ বিশিষ্ট ভূ-প্রকৃতির উদ্ভব হয়। এই চ্যুতি সমষ্টিকে ধাপচ্যুতি বলে।
৫. স্ট্রাইক চ্যুতি (Strike Fault) :
যে চ্যুতি কোনো ঢালুর স্ট্রাইকের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে তাকে স্ট্রাইক চ্যুতি বলে।
২. বিপরীত চ্যুতি (Reverse Fault ) :
বিপরীত চ্যুতি স্বাভাবিক চ্যুতির ঠিক উল্টো। কারণ এর ক্ষেত্রে ঝুলন্ত দেয়াল উপরে উত্থিত হয় এবং নিম্ন দেয়াল নিয়ে অবতরণ করে।
ঝুলন্ত দেয়াল অবনত পার্শ্বের উপর বেশি হেলে থাকে বলে তাকে বিপরীত চ্যুতি বলে।
৩. শাখায়িত চ্যুতি (Branching Fault) :
একটি প্রধান চ্যুতিকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিত অপ্রধান চ্যুতির সৃষ্টি হলে তাকে শাখায়িত চ্যুতি বলে ।
৪. ধাপ চ্যুতি (Step Fault) :
একই চ্যুতিতলে অবনত পার্শ্বে এর সমান্তরালে পরপর কয়েকটি চ্যুতির সৃষ্টি হলে তাতে ধাপ বিশিষ্ট ভূ-প্রকৃতির উদ্ভব হয়। এই চ্যুতি সমষ্টিকে ধাপচ্যুতি বলে।
৫. স্ট্রাইক চ্যুতি (Strike Fault) :
যে চ্যুতি কোনো ঢালুর স্ট্রাইকের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে তাকে স্ট্রাইক চ্যুতি বলে।
আরও পড়ুন :- ভাঁজ কাকে বলে?
৬. ডিপ চ্যুতি (Deep Faults ) :
অবস্থানের দিক থেকে ডিপ চ্যুতি স্ট্রাইক চ্যুতির বিপরীত। ডিপ চ্যুতি স্ট্রাইকের সাথে সমকোণে অবস্থান করে। কাজেই স্ট্রাইকের অবস্থানের উপর এর অবস্থান নির্ভর করে।
৭. তির্যক চ্যুতি :
একই সাথে উল্লম্ব ও আনুভূমিকভাবে ভূমি স্থানান্তরিত হলে যে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে তির্যক চ্যুতি। এ চ্যুতি একই সাথে ডিপ ও স্ট্রাইককে ছেদ করে।
৮. কবজা চ্যুতি :
ভূ-আন্দোলনের প্রভাবে কোনো ভূ-খন্ড স্ট্রাইক বরাবর একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত উপরে উত্থিত হয়ে আবার অবনমিত হয়ে থেকে গেলে কবজা চ্যুতি বলে।
৯. স্রস্ত উপত্যকা :
দুইটি স্বাভাবিক চ্যুতির কোনো ভূ-ভাগ অবনমিত হয়ে যে সৃষ্টি করে তাকে স্রস্ত উপত্যকা বলে । স্রস্ত উপত্যকার উভয় দিকের চ্যুতিতল দেয়ালের মত দেখায়। এর অপর নাম গ্রাবন। জার্মানীর রাইন উপত্যকা, ইসরাইলের মরুসাগর প্রভৃতি স্রস্ত উপত্যকার উদাহরণ।
১০. স্রস্ত মালভূমি :
স্রস্ত উপত্যকার বিপরীত ভূ-প্রকৃতি স্রস্ত মালভূমি। কমপক্ষে দুইদিকে চ্যুতিতল বিশিষ্ট কোন ভূ-খন্ড উপরে উত্থিত হলে তাকে স্রস্ত মালভূমি বলে।
৬. ডিপ চ্যুতি (Deep Faults ) :
অবস্থানের দিক থেকে ডিপ চ্যুতি স্ট্রাইক চ্যুতির বিপরীত। ডিপ চ্যুতি স্ট্রাইকের সাথে সমকোণে অবস্থান করে। কাজেই স্ট্রাইকের অবস্থানের উপর এর অবস্থান নির্ভর করে।
৭. তির্যক চ্যুতি :
একই সাথে উল্লম্ব ও আনুভূমিকভাবে ভূমি স্থানান্তরিত হলে যে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে তির্যক চ্যুতি। এ চ্যুতি একই সাথে ডিপ ও স্ট্রাইককে ছেদ করে।
৮. কবজা চ্যুতি :
ভূ-আন্দোলনের প্রভাবে কোনো ভূ-খন্ড স্ট্রাইক বরাবর একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত উপরে উত্থিত হয়ে আবার অবনমিত হয়ে থেকে গেলে কবজা চ্যুতি বলে।
৯. স্রস্ত উপত্যকা :
দুইটি স্বাভাবিক চ্যুতির কোনো ভূ-ভাগ অবনমিত হয়ে যে সৃষ্টি করে তাকে স্রস্ত উপত্যকা বলে । স্রস্ত উপত্যকার উভয় দিকের চ্যুতিতল দেয়ালের মত দেখায়। এর অপর নাম গ্রাবন। জার্মানীর রাইন উপত্যকা, ইসরাইলের মরুসাগর প্রভৃতি স্রস্ত উপত্যকার উদাহরণ।
১০. স্রস্ত মালভূমি :
স্রস্ত উপত্যকার বিপরীত ভূ-প্রকৃতি স্রস্ত মালভূমি। কমপক্ষে দুইদিকে চ্যুতিতল বিশিষ্ট কোন ভূ-খন্ড উপরে উত্থিত হলে তাকে স্রস্ত মালভূমি বলে।
আরও পড়ুন :- পর্বত কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.