মানুষ সামাজিক জীব। সুপ্রাচীনকাল থেকেই খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে এবং আত্মরক্ষার্থে একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে বেড়িয়েছে। যখন মানুষ দেখলো যে বীজ বপন করে ফসল ফলানো যায় তখন থেকেই মানুষ ছুটাছুটি বন্ধ করে একস্থানে বসবাস করতে শিখে যায়। এটি সম্ভবত বসতির সূচনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
একইভাবে পরিবেশের সাথে মানুষের অভিযোজনের প্রথম পদক্ষেপ হলো বসতি স্থাপন। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকূল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বসতি গড়ে তোলে। অর্থাৎ সমাজবদ্ধ জীবনের প্রয়োজন থেকেই বসতির সৃষ্টি। তাই দেখা যায়, পথঘাটের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন আকার বা ধরনের গৃহে জনমণ্ডলীর সমাবেশ গড়ে উঠে।
Stone (১৯৬৫) এর মতে, “কোনো স্থানে এক বা একাধিক পরিবার বসবাস করাকে বসতি বলে"।
Dickinson (১৯৩২) বসতিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে-“ বসতি হলো সেই স্থান যেখানে মানুষ বসবাস করে এবং বিভিন্ন প্রকার কাজ (যেমন- কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প প্রভৃতি) সম্পাদন করে"।
সুতরাং বলা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে মানুষ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে যখন বসবাস করে তখন তাকে বসতি বলে।
৬. গোলাকার বসতি :
মরু অঞ্চলের কোনো ঝর্ণা বা হ্রদ বা অন্য কোনো আকর্ষণীয় স্থানের চারপাশে যে বসতি গড়ে উঠে তাকে গোলাকার বসতি বলা হয়।
পূর্ব আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের কোনো কোনো অঞ্চলে গবাদি পশুর খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে এ জাতীয় বসতি দেখা যায়।
নগর বসতিতে অনেক রাস্তাঘাট এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশালাকার বহুতল ভবন থাকে। এ বসতি অঞ্চলে সাধারণত বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃপ্রণালী, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে। আকৃতি ও গঠন নগর বসতিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো
১. গঞ্জ (Ganj) :
কোনো বসতি যখন ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে তখন সে বসতিকে গঞ্জ বলা হয়।
এ জাতীয় বসতিতে ক্রমেই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গঞ্জসমূহে আবাসিক এলাকা খুব একটা থাকে না।
২. শহর (Town):
যে বসতি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রশাসন, শিল্পকর্ম প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে তাকে শহর বসতি বলে।
শহর বসতিতে বসবাসকারী মানুষের পেশায় বৈচিত্র্যতা থাকে। শহরে সাধারণত ১ লক্ষের কম লোক বাস করে। শহর ব্যবস্থাপনার জন্য কমিটি বা স্থানীয় সরকার থাকে। এগুলোকে পৌরসভা বলা হয়। সাধারণত বড় কোনো গঞ্জ, নদীবন্দর বা হাট শহরে পরিণত হয়।
৩. নগর (City) :
অপেক্ষাকৃত বৃহৎ শহর বসতিকে নগর বসতি বলা হয়। সাধারণত ১ লক্ষের অধিক লোকের আবাসস্থলকে নগর বলা হয়।
বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার ফলে শহর প্রসারিত হয়ে নগরে পরিণত হয়। নগর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার নিয়োজিত থাকে এবং সরকার সেবা প্রদান করে।
৪. মহানগর (Metropolis ) :
জনসংখ্যা ১ মিলিয়নের উপর। মহানগর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকে সিটি কর্পোরেশন বলা হয়। যেমন- চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রংপুর প্রভৃতি। মহানগরের আয়তন, প্রভাব বলয়, কর্মক্ষেত্র, প্রশাসনিক ক্ষমতা নগর অপেক্ষা অধিক। নগর অপেক্ষা মহানগরে কর্মবৈচিত্র্যতা অধিকঃ ।
৫. মেগাসিটি (Mega City) :
কোনো নগরের জনসংখ্যা যখন ৫ মিলিয়নের অধিক হয় তখন তাকে মেগাসিটি বলে।
গঞ্জ শহর, নগর, মহানগর অপেক্ষা মেগাসিটির পরিধি, প্রভাব বলয়, কর্মবৈচিত্রতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা, কর্মব্যস্ততা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অধিক থাকে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা মেগাসিটি। তবে এখানে ধারণ ক্ষমতার অধিক জনসংখ্যা বসবাস করছে।
একইভাবে পরিবেশের সাথে মানুষের অভিযোজনের প্রথম পদক্ষেপ হলো বসতি স্থাপন। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকূল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বসতি গড়ে তোলে। অর্থাৎ সমাজবদ্ধ জীবনের প্রয়োজন থেকেই বসতির সৃষ্টি। তাই দেখা যায়, পথঘাটের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন আকার বা ধরনের গৃহে জনমণ্ডলীর সমাবেশ গড়ে উঠে।
বসতি বা জনবসতি কাকে বলে :-
কোনো একটি স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকেই বসতি বা জনবসতি বলে।Stone (১৯৬৫) এর মতে, “কোনো স্থানে এক বা একাধিক পরিবার বসবাস করাকে বসতি বলে"।
Dickinson (১৯৩২) বসতিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে-“ বসতি হলো সেই স্থান যেখানে মানুষ বসবাস করে এবং বিভিন্ন প্রকার কাজ (যেমন- কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প প্রভৃতি) সম্পাদন করে"।
সুতরাং বলা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে মানুষ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে যখন বসবাস করে তখন তাকে বসতি বলে।
আরও পড়ুন :- জরিপ কাকে বলে?
বসতিই সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই বসতির রূপ বিভিন্ন ধরনের। শীতপ্রধান দেশের বসতি ও গরম প্রধান দেশের বসতি কাঁচা বা পাকা যে কোনোটিই হতে পারে। আবার তুন্দ্রা জলবায়ুর শীতল আবহাওয়ায় এস্কিমোরা বরফের ঘরে তাদের বসতি স্থাপন করে। সময়ের সাথে সাথে বসতির ধরণ ও রূপ পরিবর্তন হয়। এভাবেই বিশ্বে গ্রাম ও নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
ক. গ্রামীণ বসতি এবং
খ. শহুরে বসতি।
গ্রামীণ ও শহুরে বসতিকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
গ্রামীণ বসতির অধিবাসীরা সাধারণত কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য শিকার বা চাষ প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন প্রকার গ্রামীণ বসতির ধরণ ও বৈশিষ্ট্যে নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. বিক্ষিপ্ত বসতি :
যখন কোনো বসতি কোনো নিয়ম না মেনে পরস্পর বেশ ব্যবধানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে তখন তাকে বিক্ষিপ্ত বসতি বলে।
এ ধরনের বসতি বিচ্ছিন্ন বসতি নামেও পরিচিত। বিক্ষিপ্ত বসতিতে একেকটি বাড়িতে দুইটি বা তিনটি ঘরের সমষ্টি থাকতে পারে। সাধারণত বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলে পানির অভাব থাকে না বলে কৃষকেরা নিজ নিজ জমির সন্নিকটে বসবাস করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে। উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের বসতি দেখা যায়। আবার অনেক সময় বনভূমি বা পার্বত্য অঞ্চলেও এরূপ বসতি দেখা যায়। এ ধরনের বসতির অধিবাসীদের অধিকাংশই কৃষিজীবী।
২. নিবিড় বসতি :
কোনো স্থানে যখন প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য, উন্নত ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থা, পানির সহজলভ্যতা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সম্ভাবনা প্রভৃতি নিয়ামক অনুকূল থাকে, তখন সেখানে নিবিড় বসতি গড়ে উঠে।
এ ধরনের বসতিকে পুঞ্জীভূত বা সন্নিবিষ্ট বসতিও বলা হয়। এ বসতি অঞ্চলে বসতবাড়ি খুবই ঘন এবং কিছুটা উন্নত উপকরণে তৈরি। অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিকতাবোধ খুব বেশি এবং জীবনযাত্রার মানও বেশ উন্নত। অধিকাংশ অধিবাসী কৃষিজীবী হলেও অন্যান্য পেশাজীবির লোকজনও থাকে। এ বসতি অঞ্চলে স্কুল, ডাকঘর, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা দেখা যায়।
৩. সারিবদ্ধ বসতি :
যে বসতি নদীর তীরবর্তী উঁচু ভূমি, রাস্তা বা রেলপথের উভয় পার্শ্বে অথবা উপকূলভাগে অবস্থিত কোনো বালিয়াড়ির পশ্চাতে সারিবদ্ধভাবে সরলরেখার ন্যায় গড়ে উঠে তাকে সারিবদ্ধ বসতি বলে।
অধিবাসীদের অধিকাংশই কৃষিজীবী হলেও নদী, সড়ক বা রেলপথে পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আদান-প্রদানের সুযোগ পায়। এ জাতীয় বসতির ধরণ সরল বা বক্ররেখার ন্যায় হয়ে থাকে। সারিবদ্ধ বসতি কখনো কখনো ৫ থেকে ৬ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
৪. রাশিকৃত বসতি :
যে বসতি বিভিন্ন রাস্তার সংযোগ স্থলে বা রাস্তা ও নদীর মিলন হলে গড়ে উঠে তাকে রাশিকৃত বসতি বলা হয়।
যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধা থাকায় এ বসতি অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ প্রসার লাভ করে। এ বসতির অধিবাসীদের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি বাণিজ্যিক কার্যাদি।
৫. অনুকেন্দ্রিক বসতি :
যে বসতির কেন্দ্রে এমন একটি সুবিধা বা ভূমি ব্যবহার থাকে যাকে কেন্দ্র করে বসতি গড়ে ওঠে। এ ধরনের বসতিকে অনুকেন্দ্রিক বসতি বলা হয়।
ইউরোপের অনেক পুরানো বসতি রয়েছে যেগুলো একটি গীর্জাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিল ও ডোবা অঞ্চলে এ ধরনের বসতির প্রাধান্য দেখা যায়। এসব অঞ্চলে একটি উঠানকে কেন্দ্র করে অনুকেন্দ্রিক বসতি গড়ে উঠে।
বসতিই সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই বসতির রূপ বিভিন্ন ধরনের। শীতপ্রধান দেশের বসতি ও গরম প্রধান দেশের বসতি কাঁচা বা পাকা যে কোনোটিই হতে পারে। আবার তুন্দ্রা জলবায়ুর শীতল আবহাওয়ায় এস্কিমোরা বরফের ঘরে তাদের বসতি স্থাপন করে। সময়ের সাথে সাথে বসতির ধরণ ও রূপ পরিবর্তন হয়। এভাবেই বিশ্বে গ্রাম ও নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
জনবসতি কত প্রকার ও কি কি :-
গঠন বিন্যাস এবং কার্যাবলির উপর ভিত্তি করে বসতিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-ক. গ্রামীণ বসতি এবং
খ. শহুরে বসতি।
গ্রামীণ ও শহুরে বসতিকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক. গ্রামীণ বসতি :-
যে বসতির অধিকাংশ জনগোষ্ঠির উপজীবিকা প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল সেই জনগোষ্ঠির বসতিকে গ্রামীণ বসতি বলা হয়।গ্রামীণ বসতির অধিবাসীরা সাধারণত কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য শিকার বা চাষ প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন প্রকার গ্রামীণ বসতির ধরণ ও বৈশিষ্ট্যে নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. বিক্ষিপ্ত বসতি :
যখন কোনো বসতি কোনো নিয়ম না মেনে পরস্পর বেশ ব্যবধানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে তখন তাকে বিক্ষিপ্ত বসতি বলে।
এ ধরনের বসতি বিচ্ছিন্ন বসতি নামেও পরিচিত। বিক্ষিপ্ত বসতিতে একেকটি বাড়িতে দুইটি বা তিনটি ঘরের সমষ্টি থাকতে পারে। সাধারণত বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলে পানির অভাব থাকে না বলে কৃষকেরা নিজ নিজ জমির সন্নিকটে বসবাস করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে। উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের বসতি দেখা যায়। আবার অনেক সময় বনভূমি বা পার্বত্য অঞ্চলেও এরূপ বসতি দেখা যায়। এ ধরনের বসতির অধিবাসীদের অধিকাংশই কৃষিজীবী।
২. নিবিড় বসতি :
কোনো স্থানে যখন প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য, উন্নত ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থা, পানির সহজলভ্যতা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সম্ভাবনা প্রভৃতি নিয়ামক অনুকূল থাকে, তখন সেখানে নিবিড় বসতি গড়ে উঠে।
এ ধরনের বসতিকে পুঞ্জীভূত বা সন্নিবিষ্ট বসতিও বলা হয়। এ বসতি অঞ্চলে বসতবাড়ি খুবই ঘন এবং কিছুটা উন্নত উপকরণে তৈরি। অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিকতাবোধ খুব বেশি এবং জীবনযাত্রার মানও বেশ উন্নত। অধিকাংশ অধিবাসী কৃষিজীবী হলেও অন্যান্য পেশাজীবির লোকজনও থাকে। এ বসতি অঞ্চলে স্কুল, ডাকঘর, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা দেখা যায়।
৩. সারিবদ্ধ বসতি :
যে বসতি নদীর তীরবর্তী উঁচু ভূমি, রাস্তা বা রেলপথের উভয় পার্শ্বে অথবা উপকূলভাগে অবস্থিত কোনো বালিয়াড়ির পশ্চাতে সারিবদ্ধভাবে সরলরেখার ন্যায় গড়ে উঠে তাকে সারিবদ্ধ বসতি বলে।
অধিবাসীদের অধিকাংশই কৃষিজীবী হলেও নদী, সড়ক বা রেলপথে পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আদান-প্রদানের সুযোগ পায়। এ জাতীয় বসতির ধরণ সরল বা বক্ররেখার ন্যায় হয়ে থাকে। সারিবদ্ধ বসতি কখনো কখনো ৫ থেকে ৬ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
৪. রাশিকৃত বসতি :
যে বসতি বিভিন্ন রাস্তার সংযোগ স্থলে বা রাস্তা ও নদীর মিলন হলে গড়ে উঠে তাকে রাশিকৃত বসতি বলা হয়।
যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধা থাকায় এ বসতি অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ প্রসার লাভ করে। এ বসতির অধিবাসীদের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি বাণিজ্যিক কার্যাদি।
৫. অনুকেন্দ্রিক বসতি :
যে বসতির কেন্দ্রে এমন একটি সুবিধা বা ভূমি ব্যবহার থাকে যাকে কেন্দ্র করে বসতি গড়ে ওঠে। এ ধরনের বসতিকে অনুকেন্দ্রিক বসতি বলা হয়।
ইউরোপের অনেক পুরানো বসতি রয়েছে যেগুলো একটি গীর্জাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিল ও ডোবা অঞ্চলে এ ধরনের বসতির প্রাধান্য দেখা যায়। এসব অঞ্চলে একটি উঠানকে কেন্দ্র করে অনুকেন্দ্রিক বসতি গড়ে উঠে।
আরও পড়ুন :- অভিক্ষেপ কাকে বলে?
৬. গোলাকার বসতি :
মরু অঞ্চলের কোনো ঝর্ণা বা হ্রদ বা অন্য কোনো আকর্ষণীয় স্থানের চারপাশে যে বসতি গড়ে উঠে তাকে গোলাকার বসতি বলা হয়।
পূর্ব আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের কোনো কোনো অঞ্চলে গবাদি পশুর খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে এ জাতীয় বসতি দেখা যায়।
খ. নগর বসতি :
যে বসতি অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভূমি ব্যবহার ব্যতীত অকৃষি পেশায় অর্থাৎ চাকুরি, শিল্প, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা, প্রশাসন প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে বসবাস করে তখন তাকে নগর বসতি বলে।নগর বসতিতে অনেক রাস্তাঘাট এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশালাকার বহুতল ভবন থাকে। এ বসতি অঞ্চলে সাধারণত বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃপ্রণালী, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে। আকৃতি ও গঠন নগর বসতিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো
১. গঞ্জ (Ganj) :
কোনো বসতি যখন ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে তখন সে বসতিকে গঞ্জ বলা হয়।
এ জাতীয় বসতিতে ক্রমেই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গঞ্জসমূহে আবাসিক এলাকা খুব একটা থাকে না।
২. শহর (Town):
যে বসতি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রশাসন, শিল্পকর্ম প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে তাকে শহর বসতি বলে।
শহর বসতিতে বসবাসকারী মানুষের পেশায় বৈচিত্র্যতা থাকে। শহরে সাধারণত ১ লক্ষের কম লোক বাস করে। শহর ব্যবস্থাপনার জন্য কমিটি বা স্থানীয় সরকার থাকে। এগুলোকে পৌরসভা বলা হয়। সাধারণত বড় কোনো গঞ্জ, নদীবন্দর বা হাট শহরে পরিণত হয়।
৩. নগর (City) :
অপেক্ষাকৃত বৃহৎ শহর বসতিকে নগর বসতি বলা হয়। সাধারণত ১ লক্ষের অধিক লোকের আবাসস্থলকে নগর বলা হয়।
বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার ফলে শহর প্রসারিত হয়ে নগরে পরিণত হয়। নগর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার নিয়োজিত থাকে এবং সরকার সেবা প্রদান করে।
৪. মহানগর (Metropolis ) :
জনসংখ্যা ১ মিলিয়নের উপর। মহানগর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকে সিটি কর্পোরেশন বলা হয়। যেমন- চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রংপুর প্রভৃতি। মহানগরের আয়তন, প্রভাব বলয়, কর্মক্ষেত্র, প্রশাসনিক ক্ষমতা নগর অপেক্ষা অধিক। নগর অপেক্ষা মহানগরে কর্মবৈচিত্র্যতা অধিকঃ ।
৫. মেগাসিটি (Mega City) :
কোনো নগরের জনসংখ্যা যখন ৫ মিলিয়নের অধিক হয় তখন তাকে মেগাসিটি বলে।
গঞ্জ শহর, নগর, মহানগর অপেক্ষা মেগাসিটির পরিধি, প্রভাব বলয়, কর্মবৈচিত্রতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা, কর্মব্যস্ততা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অধিক থাকে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা মেগাসিটি। তবে এখানে ধারণ ক্ষমতার অধিক জনসংখ্যা বসবাস করছে।
আরও পড়ুন :- জনপদ কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.