বার্ষিক গতি কাকে বলে? বার্ষিক গতির কারণ ও ফলাফল?

বার্ষিক গতি কাকে বলে :-

পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে হতে সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে (সূর্যকে পরিক্রমনের পথ) নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর এইরূপ গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়।

পৃথিবী আপন অক্ষের চারিদিকে ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করার পাশাপাশি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ও নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর এইরূপ আবর্তন কে বার্ষিক গতি বলে।

সূর্যের চারিদিকে একবার পূর্ণ পরিক্রমণ বা আবর্তনের জন্যে পৃথিবীর মোট সময় প্রয়োজন ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছর (Solar Year) বলে।

ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক সৌর বছর গণনা করা হয়। প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় কালকে প্রতি চার বছর অন্তর ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা হিসেবে ঐ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিন হিসেবে গণনা করা হয়। এই বছরটি অধিবর্ষ (Leap Year) নামে অভিহিত।

মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো একটি বছরের সংখ্যাগত নম্বরটিকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোনো ভাগ শেষ না থাকে, তবে ঐ বছরটি হবে লিপ ইয়ার। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না ( ২০১৬ + ৪ = ৫০৪) অর্থাৎ ঐ বছরটি হবে একটি অধিবর্ষ। ঐ বছরে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিনে গণনা করা হবে।

পৃথিবী সূর্যকে পরিভ্রমনের সময় ৩রা জানুয়ারি পৃথিবী সূর্যের নিকটতম অবস্থানে (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কি.মি) এবং ৪ জুলাই সর্বাধিক দূরবর্তী অবস্থানে (১৫ কোটি ১০ লক্ষ কি.মি) থাকে। পৃথিবীর এইরূপ অবস্থানকে যথাক্রমে অনুসুর (Perihelion) ও অপসুর (Aphelion) বলে। বার্ষিক গতির গড় বেগ প্রতি ঘণ্টায় ১,০৭,০০০ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন :- বায়ুমণ্ডলের কয়টি স্তর?

বার্ষিক গতির কারণ :-

বার্ষিক গতির কারণসমূহ নিম্নরূপ :

১. পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের ন্যায়।

২. সূর্যকে পরিভ্রমণের জন্য পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।

৩. পৃথিবী নিজ কক্ষপথে (Orbit) ৬৬.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে। এবং

৪. পৃথিবী নিজ অক্ষে (Axis) ২৩.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর কারনে বার্ষিক গতি হয়ে থাকে।
বার্ষিক গতি কাকে বলে

বার্ষিক গতির ফলাফল :-

বার্ষিক গতির প্রধান দুটি ফলাফল হলো দিবা-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি এবং ঋতু পরিবর্তন।

দিবা-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি :

পৃথিবী সূর্যকে যে কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে তার দৈর্ঘ্য ৯৩ কোটি ৮০ লক্ষ কিলোমিটার। এই কক্ষপথে পরিভ্রমণের সময় জানুয়ারি মাসে সূর্য পৃথিবীর নিকটতম অবস্থানে (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব) থাকে এবং ৪ জুলাই দূরবর্তী অবস্থানে (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার দূরুত্ব) থাকে। পৃথিবী এবং সূর্যের এইরূপ অবস্থানকে যথাক্রমে অনুসূর (Perihelion) ও অপসুর (Aphelion) বলে।

সূর্যের চর্তুদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের সময় পৃথিবী ২১ শে জুন তারিখে পৃথিবীর কক্ষপথের এমন এক স্থানে এসে পৌঁছে, যখন উত্তর মেরু সূর্যের দিকে সর্বাপেক্ষা বেশি (২৩.৫°) ঝুঁকে থাকে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি রেখায় সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়।

আরও পড়ুন :- আহ্নিক গতি কাকে বলে?

বিপরীতক্রমে এই সময়ে দক্ষিণ মেরু বা মকরক্রান্তিতে পৃথিবী সূর্য হতে সবচেয়ে বেশি দূরুত্বে থাকে। যার দরুণ দেখা যায়, ২১ শে জুন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত্রি সবচেয়ে ছোট হয় অপরদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোট এবং রাত্রি সবচেয়ে বড় হয়।

এই সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে একই তারিখে অর্থাৎ ২১ শে জুন তারিখে ৬৬.৫° উত্তর অক্ষরেখা হতে উত্তর মেরু পর্যন্ত স্থানটিতে ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে এবং ৬৬.৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা হতে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত স্থানটিতে ২৪ ঘণ্টাই রাত্রি থাকে।

২১ শে জুনের পর পৃথিবী নিজকক্ষপথে পরিভ্রমণের সময় ক্রমশ উত্তর মেরুতে পৃথিবী সূর্য হতে দূরে যেতে থাকে এবং দক্ষিণমেরুতে পৃথিবী সূর্যের নিকট আসতে থাকে।

অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে ধীরে ধীরে দিন ছোট হতে থাকে রাত্রি বড় হতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর গোলার্ধের বিপরীত অবস্থা হয়। অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় থাকে এবং রাত ছোট হতে থাকে।

এভাবে পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে পরিভ্রমণের সময় ২৩ শে সেপ্টেম্বর উভয় মেরুতে (উত্তর ও দক্ষিণ মেরু) সূর্য হতে পৃথিবীর দূরত্ব সমান থাকে। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র ২৩ শে সেপ্টেম্বর দিন রাত্রি সমান থাকে।

উত্তর গোলার্ধের ন্যায় একই কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে ২২ শে ডিসেম্বর ৬৬.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ হতে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাই দিন হয় এবং ৬৬.৫° উত্তর অক্ষাংশ হতে উত্তর মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাই রাত্রি হয়।

পৃথিবীর এইরূপ পরিভ্রমণের সময় ২১ শে মার্চ তারিখে পূণরায় ২৩ শে সেপ্টেম্বরের ন্যায় পৃথিবীর কক্ষপথের এমন এক স্থানে এসে পৌঁছে যখন উভয় মেরু সূর্য হতে সমান দূরে অবস্থান করে এবং পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয়।

ঋতু পরিবর্তন পদ্ধতি :

ভূ-পৃষ্ঠে কোনো একটি অঞ্চলে দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ও ঐ স্থানে সূর্য রশিার পতন কোণের পার্থক্যের জন্য, অর্থাৎ সূর্য রশ্মি লম্বভাবে অথবা তীর্যকভাবে পতিত হবার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট অঞ্চলটিতে সারা বছর ব্যাপী তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে। সূর্যের এই তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে সমগ্র বৎসরকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি ভাগকে একেকটি ঋতু নামে অভিহিত করা হয়। সমগ্র বিশ্বে মোট চারটি ঋতু পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন :- সৌরজগৎ কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ