আগ্নেয় শিলা কাকে বলে? আগ্নেয় শিলা কত প্রকার? আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য?

ইংরেজিতে আগ্নেয় শিলাকে Igneous Rock বলে। Igneous শব্দের অর্থ আগুন। আগ্নেয় শিলা পৃথিবীর প্রথম পর্যায়ের শিলা বলে একে প্রাথমিক শিলাও বলা হয়।

এ শিলায় কোনো স্তর নেই, তাই এই শিলার অপর নাম অস্তরীভূত শিলা। এই শিলায় কোনো জীবাশ্ম নেই। আগ্নেয়গিরি বা ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় ভূ-ত্বকের দুর্বল অংশে ফাটলের সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উত্তপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। এভাবে ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট শিলার সৃষ্টি হয়েছে।

আগ্নেয় শিলা কাকে বলে :-

সৃষ্টির প্রথমে পৃথিবী উত্তপ্ত গ্যাসীয়পিন্ড ছিল। এই গ্যাসপিন্ড ক্রমান্বয়ে তাপ বিকিরণ করে তরল হয়। পরে আরো তাপ বিকিরণ করে উপরিভাগ শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করে। এভাবে গলিত অবস্থা থেকে ঘনীভূত বা কঠিন হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।

অন্যভাবে আগ্নেয় শিলা কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায়- ভূ-অভ্যন্তরে উত্তপ্ত ম্যাগমা শীতল ও কেলাসিত হয়ে আগ্নেয় শিলা গঠিত হয়। অগ্নিময় অবস্থা থেকে এই শিলার সৃষ্টি বলে একে আগ্নেয় শিলা বলা হয়।

আরও পড়ুন :- খনিজ কাকে বলে?

আগ্নেয় শিলা কত প্রকার ও কি কি :-

আগ্নেয় শিলাকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা

ক. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে এবং
খ. গঠনকারী খনিজ উপাদান অনুসারে ।

ক. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে শ্রেনীবিভাগ :

উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলাকে পুনরায় দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। -

১. বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা এবং
২. অন্তজ বা উদবেধী আগ্নেয় শিলা।

১. বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা :-

পৃথিবীর অভ্যন্তরে গলিত পদার্থ জ্বালামুখ বা ফাঁটল দিয়ে বাইরে নির্গত হয়ে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাই বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। যেমন- ব্যাসল্ট, পিউমিস।

ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থগুলোর উৎক্ষিপ্ত হওয়ার উপর ভিত্তি করে এ শিলাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

১.১. বিস্ফোরক আগ্নেয় শিলা এবং 
১.২. শান্তপ্রকৃতির আগ্নেয় শিলা।

আরও পড়ুন:- খনিজসম্পদ কি?

১.১. বিস্ফোরক আগ্নেয় শিলা কাকে বলে :

অগ্ন্যুৎপাতের সময় কিছু পদার্থ প্রচন্ড বেগে বাইরে উৎক্ষিপ্ত হয়ে পতিত হয় এবং পরে জমাট বেঁধে শিলায় পরিণত হয়, একে বিস্ফোরক আগ্নেয় শিলা বলে।

১.২. শান্ত আগ্নেয় শিলা কাকে বলে :

অগ্ন্যুৎপাতের সময় অপেক্ষাকৃত ভারী গলিত পদার্থ ধীরে ধীরে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়ে শিলায় পরিণত হয়, একে শান্তআগ্নেয়শিলা বলে।

২. অন্তঃ বা উদ্‌বেধী আগ্নেয় শিলা :-

কোনো কোনো সময় তরল ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই জমাট বেঁধে যে শিলা গঠন করে তাকে অন্তঃজ শিলা বলে।

অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এ শিলাকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা

২.১. পাতালিক : ভূ-পৃষ্ঠের বহু নিচে অবস্থিত এই শিলা কেলাসিত। যেমন- গ্যাব্রো।

২.২. উপ-পাতালিক : ভূ-গর্ভস্থ ম্যাগমা উপরে আসার সময় ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে জমাট বেঁধে এই শিলা গঠন করে। যেমন- ডলোৱাইট।

খ. গঠনকারী খনিজ উপাদান অনুসারে আগ্নেয় শিলা :

এ শিলাকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা

১. ফেলাপসিক : অধিক পরিমাণে ফেলপার, সিলিকা মিশ্রিত থাকে। এরা হালকা বর্ণের হয়ে থাকে। যেমন- গ্রানাইট, রায়োলাইট।

২. মেফিক : এতে ম্যাগনেসিয়াম ও লোহার পরিমাণ বেশি থাকে। এরা ব্যাসল্ট জাতীয়। এসব ধূসর কালো বর্ণের হয়। যেমন- ব্যাসল্ট, গ্যাব্রো।

৩. উচ্চ মাত্রার মেফিক : অধিক মাত্রায় ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। প্রধান খনিজ হলো অলিভিন, পাইরোক্সিন। গাঢ় সবুজ কালো বর্ণের। যেমন- পেরিডোটাইট, কমাডোটাইট।

৪. ফেলসিক ও মেফিকের মাঝামাঝি : এই জাতীয় শিলা এ্যান্ডেসাইট ধরনের। প্রধান খনিজ হলো- হর্নবোল্ড, সোডিয়াম ফেলসপার। বর্ণ গাঢ়। যেমন- ডাইয়োৱাইট, অ্যান্ডেসাইট।

আরও পড়ুন:- আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য :-

১. স্তরবিহীন :

উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এতে কোনো স্তর থাকে না।

২. জীবাশ্মবিহীন :

উত্তপ্ত গলিত পদার্থ থেকে আগ্নেয় শিলার উৎপত্তি বিধায় কোনো প্রাণি বা উদ্ভিদের অস্তিত্ব আশা করা যায় না। এ কারণে এ জাতীয় শিলার মধ্যে জীবাশ্ম পাওয়া যায় না।

৩. কেলাসিত :

উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে এ জাতীয় শিলা তৈরি হয় বলে ক্ষেত্রবিশেষে কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকারে দানা বাঁধে।

৪. অপ্রবেশ্য :

আগ্নেয় শিলার দানাগুলির মধ্যে কোনো ছিদ্র না থাকায় এই শিলায় পানি প্রবেশ করতে পারে না। তাই আগ্নেয় শিলা অপ্রবেশ্য।

৫. সুদৃঢ় ও সুসংহত :

উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে উৎপন্ন হয় বলে এ শিল্পা সুদৃঢ় ও সুসংহত।

৬. প্রাচীনতম :

আগ্নেয় শিলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা। এই শিলা থেকে অন্যান্য শিলার উৎপত্তি হয়েছে।

৭. অপেক্ষাকৃত ভারী :

আগ্নেয় শিলা অন্যান্য শিলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী।

আরও পড়ুন :- পাললিক শিলা কাকে বলে?