অভিগমন কাকে বলে :-
সাধারণত মানুষের বাসস্থানের এরূপ স্থায়ী বা অস্থায়ী পরিবর্তনকে অভিগমন বলা হয়ে থাকে।জাতিসংঘের মতে, “ এক বা একাধিক বছরের জন্য বাসস্থানের পরিবর্তনকে অভিগমন বলে” ।
বিশেষজ্ঞগণের মতে, “বাসস্থানের স্থায়ী বা অস্থায়ী পরিবর্তনকে অভিগমন বলে"।
অভিগমন কত প্রকার ও কি কি:-
অভিগমনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-ক. প্রকৃতি অনুযায়ী অভিগমন এবং
খ. স্থানভেদে অভিগমন।
ক. প্রকৃতি অনুযায়ী অভিগমন:
অনেক সময়ে মানুষ নিজের ইচ্ছায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। আবার অনেক সময় নিজ বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই এ ধরনের অভিগমনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-- অবাধ অভিগমন এবং
- বলপূর্বক অভিগমন।
১. অবাধ অভিগমন (Free Migration ):
অবাধ অভিগমনে অভিগমনকারীর গন্তব্যস্থলের স্বাধীনতা থাকে। যখন কোনো ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় আবাস স্থান ত্যাগ করে অন্য কোনো পছন্দমতো স্থানে আবাস গড়ে তোলে তখন তাকে অবাধ অভিগমন বলে।
উৎস স্থানের বিভিন্ন অভাব (যেমন-কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি) এবং গন্তব্যস্থানের অধিক সুযোগ-সুবিধার কারণে এ ধরনের অভিগমন ঘটে থাকে। আমাদের দেশের অনেক লোক এসব সুবিধা প্রাপ্তির জন্য গ্রাম থেকে শহরে আবাস গড়ে তোলে।
২. বলপূর্বক অভিগমন (Forced Migration):
অনেক সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রাজনৈতিক চাপ, সহিংসতা, জাতিগত দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক মন্দা বা নানাবিধ সামাজিক কারণে মানুষ নিজ আবাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং অন্যত্র গিয়ে আবাস গড়ে তোলে। এ ধরনের বাধ্য হয়ে অভিগমনকে বলপূর্বক অভিগমন বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ইরাক যুদ্ধে বহু লোক নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। বলপূর্বক অভিগমনের ফলে যে সমস্ত ব্যক্তি কোনো স্থানে আগমন করে এবং স্থায়ী আবাস স্থাপন করে তাদেরকে উদ্বাস্তু (Refugee) বলে। আর যারা সাময়িকভাবে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সুবিধামত সময়ে নিজ দেশে ফিরে যায় তাদেরকে বলা হয় শরণার্থী (Emigree)।
খ. স্থানভেদে অভিগমন :-
স্থানভেদে অভিগমনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-অন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিগমন এবং
আন্তর্জাতিক অভিগমন।
১. অন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিগমন (Intra-state Migration ) :
অন্তঃরাষ্ট্রীয় অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি যখন আবাসস্থান পরিবর্তন করে তখন তাকে অন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিগমন বলে।
এ ধরনের অভিগমন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। যেমন- ঠাকুরগাঁও থেকে কেউ যদি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসে বসবাস করে তখন তাকে অন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিগমন বলে।
অন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিগমনকে আবার পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলঃ
ক. গ্রাম থেকে গ্রামে অভিগমন ( Rural to Rural Migration) :
কোনো ব্যক্তি যখন একই দেশের অভ্যন্তরে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে গিয়ে বসবাস করে তখন তাকে গ্রাম থেকে গ্রাম অভিগমন বলে। আমাদের দেশে সাধারণত মৌসুমী কাজের সন্ধানে এবং বৈবাহিক কারণে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে অভিগমন অধিক হয়ে থাকে।
খ. গ্রাম থেকে শহরে অভিদমন ( Rural to Urban Migration) :
কোনো ব্যক্তি যখন একই দেশের অভ্যন্তরে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয় তখন তাকে গ্রাম থেকে শহরে অভিগমন বলে।
অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে এ ধরনের অভিগমন বেশি হয়। উন্নত দেশগুলোতেও গ্রাম থেকে শহরে অভিযমন দেখা যায়। সাধারণত কর্মসংস্থান, চাকুরি, শিক্ষা, ব্যবসা- বাণিজ্য প্রভৃতি কারণে গ্রাম থেকে শহরে অভিগমন হয়ে থাকে।
গ. শহর থেকে গ্রামে অভিগমন ( Urban to Rural Migration):
শহরে বসবাসরত কোনো মানুষ যখন গ্রামে গিয়ে আবাস গড়ে তোলে তখন তাকে শহর থেকে গ্রামে অভিগমন বলে।
আমাদের দেশে এ ধরনের অভিগমন খুব কম দেখা যায়। সাধারণত চাকুরি থেকে অবসরের পর এ ধরনের অভিগমন ঘটে থাকে। তবে উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের অভিগমন বেশি দেখা যায়।
ঘ. শহর থেকে শহরে অভিগমন (Urban to Urban Migration):
কোনো ব্যক্তি যখন একই দেশের অভ্যন্তরে এক শহর থেকে অন্য শহরে আবাসস্থল পরিবর্তন করে তখন তাকে শহর থেকে শহরে অভিগমন বলে চাকুরি, উন্নত জীবনযাত্রা প্রভৃতি কারণে এ ধরনের অভিগমন হয়ে থাকে।
যেমন-রংপুর শহর থেকে ঢাকা শহরে গমন ।
ঙ. অন্ত:নগর অভিগমন (Intra Urban Migration) :
একই নগরের অভ্যন্তরে যখন কোনো ব্যক্তি একস্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়ে বসবাস করে তখন তাকে অন্তঃনগর অভিগমন বলে।
যেমন- রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে উত্তরায় গিয়ে বসবাস করা অন্ত:নগর অভিগমনের উদাহরণ।
২. আন্তর্জাতিক অভিগমন (International Migration) :-
কোনো দেশের মানুষ যখন নিজ দেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করে তখন তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে।
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভৌগোলিক সীমানা অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলেই আন্তর্জাতিক অভিগমন করা যায় না। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অভিগমনের উৎস এবং গন্তব্যস্থল উভয়ের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অভিগমন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র ও অঞ্চলের মধ্যে। আন্তর্জাতিক অভিবাসনকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
ক. অন্ত:মহাদেশ অভিগমন (Intra Continent Migration) :
একই মহাদেশভুক্ত একদেশ থেকে অন্যদেশে গিয়ে আবাস গড়ে তুললে তাকে অন্তঃমহাদেশ অভিগমন বলে। যেমন-এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব বা জাপানে অভিগম।
খ. আন্তঃমহাদেশ অভিগমন (Inter Continent Migration) :
এর মহাদেশভুক্ত দেশ থেকে অন্য মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত দেশে গিয়ে বসবাস করলে তাকে আন্ত:মহাদেশ অভিযমন বলে। যেমন- এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের যুক্তরাজ্যে বা উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়ার জাপানে অভিগমন।
ক. অন্ত:মহাদেশ অভিগমন (Intra Continent Migration) :
একই মহাদেশভুক্ত একদেশ থেকে অন্যদেশে গিয়ে আবাস গড়ে তুললে তাকে অন্তঃমহাদেশ অভিগমন বলে। যেমন-এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব বা জাপানে অভিগম।
খ. আন্তঃমহাদেশ অভিগমন (Inter Continent Migration) :
এর মহাদেশভুক্ত দেশ থেকে অন্য মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত দেশে গিয়ে বসবাস করলে তাকে আন্ত:মহাদেশ অভিযমন বলে। যেমন- এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের যুক্তরাজ্যে বা উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়ার জাপানে অভিগমন।
অভিগমনের কারণসমূহ :-
নিম্নে অভিগমনের প্রধান কারণসমূহ আলোচনা করা হলো।১. অর্থনৈতিক :
মানুষ তার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। অর্থের প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরে অথবা দেশের বাইরেও অভিগমন করতে পারে। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ বা অঞ্চলে মানুষ অধিক গমন করে থাকে।
২. জীবিকার সন্ধান :
জীবিকার সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে চলেছে।
৩. চাকুরি :
সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত লোকজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে যা অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে বহুমুখী চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এটি অভিগমনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন :
গ্রামের তুলনায় শহরে, ছোট শহরের তুলনায় বড় শহরে, অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে জীবনযাত্রার মান ভালো হওয়ায় মানুষ এ সকল স্থানের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চেষ্টা করে।
৫. বিশ্বায়ন :
অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ বিশ্বায়ন। বিশ্বায়নের ফলে মানুষের কাছে সবকিছুই সহজ হয়েছে। মার্শাল ম্যাকলুহান পৃথিবীকে 'গ্লোবাল ভিলেজ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৬. নগরায়ন ও শিল্পায়ন :
নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেলে গ্রামীণ এলাকা থেকে মানুষ নগরে এসে বসবাস শুরু করে। সাধারণত সুযোগ-সুবিধা অধিক থাকার মানুষ নগরমুখী হয়ে থাকে। যা নগর এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।
নগর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত প্রভৃতির আধিক্য থাকায় তা সহজেই মানুষকে অভিগমনে আকৃষ্ট করে থাকে। নগর এলাকায় শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রের আশেপাশে মানুষের ঘনত্ব বেশি হয়ে থাকে এবং শ্রমজীবি মানুষের একটি বড় অংশ বস্তিতে নিম্নতর জীবনযাপন করে।
৭. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি :
পরিবহন ব্যবস্থার উপর অভিগমন অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রাচীনকালে পরিবহন ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত এবং কষ্টসাধ্য ছিল বলে তখন অভিগমন ছিল ধীরগতির। বর্তমানে পরিবহন ব্যবস্থার অভূতপূর্ব অগ্রগতি হওয়ায় অভিগমনের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন :- অভিক্ষেপ কাকে বলে?
৮. জনসংখ্যা বৃদ্ধি :
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেকে অভিগমনে বাধ্য হয়। অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে বা চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা অন্যত্র গমন করে থাকে। এর ফলে জনবহুল দেশ বা অঞ্চল থেকে জনঘাটতি দেশ বা অঞ্চলে অভিগমন ঘটে থাকে।
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :
অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্প, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরির উদগিরণ প্রভৃতি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই অভিগমন করে থাকে। যেমন- বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে প্রতি বছরই নদী তীরবর্তী বহু মানুষ অন্যত্র অভিগমন করে থাকে।
১০. উচ্চ শিক্ষা :
বর্তমান সময়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিগমন ঘটছে। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে বা দেশের বাইরে গমন করছে। অনেকে শিক্ষা জীবন শেষে সেখানেই চাকুরির ব্যবস্থা করে থেকে যায়।
১১. জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সামাজিক অস্থিরতা :
অভিগমনের অন্যতম কারণ জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সামাজিক অস্থিরতা। যেমন মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেক লোক জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
১২. সাংস্কৃতিক কারণ :
সাংস্কৃতিক কারণও অভিগমনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উন্নত ও মুক্ত সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষ বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে অভিগমন করে থাকে।
উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অভিগমন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। এর ফলে মানুষ দ্রুত এবং অনায়াসে অভিগমন করছে।
৮. জনসংখ্যা বৃদ্ধি :
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেকে অভিগমনে বাধ্য হয়। অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে বা চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা অন্যত্র গমন করে থাকে। এর ফলে জনবহুল দেশ বা অঞ্চল থেকে জনঘাটতি দেশ বা অঞ্চলে অভিগমন ঘটে থাকে।
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :
অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্প, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরির উদগিরণ প্রভৃতি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই অভিগমন করে থাকে। যেমন- বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে প্রতি বছরই নদী তীরবর্তী বহু মানুষ অন্যত্র অভিগমন করে থাকে।
১০. উচ্চ শিক্ষা :
বর্তমান সময়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিগমন ঘটছে। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে বা দেশের বাইরে গমন করছে। অনেকে শিক্ষা জীবন শেষে সেখানেই চাকুরির ব্যবস্থা করে থেকে যায়।
১১. জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সামাজিক অস্থিরতা :
অভিগমনের অন্যতম কারণ জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সামাজিক অস্থিরতা। যেমন মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেক লোক জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
১২. সাংস্কৃতিক কারণ :
সাংস্কৃতিক কারণও অভিগমনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উন্নত ও মুক্ত সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষ বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে অভিগমন করে থাকে।
উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অভিগমন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। এর ফলে মানুষ দ্রুত এবং অনায়াসে অভিগমন করছে।
আরও পড়ুন :- অভিবাসন কাকে বলে?
১. জনসংখ্যার পরিবর্তন :
অভিগমনে উৎস ও গন্তব্যস্থলের জনসংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এর ফলে যত লোক উৎসস্থল ত্যাগ করে তত সংখ্যক লোক গন্তব্যস্থলে যুক্ত হয়। এতে উৎসস্থলে লোক কমে গিয়ে গন্তব্যস্থলে বৃদ্ধি পায়।
২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন :
সাধারণত কর্মের সন্ধানে অধিকাংশ মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে। গন্তব্যস্থলে যে কোনো ধরনের কর্মই হোক না কেনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এতে অভিগমনকারীর জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়।
তবে বস্তি এলাকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের জীবনযাত্রার মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে অভিগমনকারী পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয় এবং অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হয়।
৩. শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি :
যেসব শহরে অধিক হারে অভিগমনকারী আগমন করে সেসব শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। কারণ অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
৪. পরিবেশগত প্রভাব :
পরিবেশের উপর অভিগমনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। সাধারণত শহরাঞ্চলে অভিগমন অধিক হওয়ায় প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
যেমন-শহরে অধিক জনসংখ্যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠে। একই সাথে নিম্ন আয়ের মানুষ বস্তি এলাকায় বসবাস করে যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
শহরাঞ্চলে অভিগমনের হার বেশি হওয়ায় বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ এবং ভূ গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যের উপর প্রভাব পড়ে ।
৫. পেশাগত পরিবর্তন :
অভিগমনের ফলে অনেকের পেশার পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন- গ্রামের একজন কৃষি শ্রমিক যদি শহরে অভিগমন করে রিক্সা চালায় তাহলে তার পেশাগত পরিবর্তন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক পেশা পরিবর্তন করে। অকৃষি পেশায় সম্পৃক্ত হয়। আবার অনেকে একটি চাকুরি পরিবর্তন করে অন্য চাকুরিতে প্রবেশ করে পেশার পরিবর্তন ঘটায়।
৬. অর্থনৈতিক গতিশীলতা :
অভিগমনের ফলে অভিগমনকারীর পরিবারে অর্থনৈতিক গতিশীলতা দেখা যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি গ্রাম থেকে শহরে গমন করলে শহর থেকে গ্রামে অর্থ প্রেরণ করে অথবা বিদেশে অভিগমন করলে দেশে বসবাসরত পরিবারের জন্য অর্থ প্রেরণ করে। এতে গ্রামীণ বা শহুরে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হয়।
৭. ভাষার পরিবর্তন :
গন্তব্যস্থলে ভাষার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে অনেক ক্ষেত্রে ভাষার পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন-কোনো ব্যক্তি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও শহরে অভিগমন করলে তাকে শহরের ভাষা আয়ত্ব করতে হয়। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. সামাজিক অস্থিরতা :
অনেক সময় অতিরিক্ত অভিগমনের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। এতে গন্তব্যস্থলে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়।
অভিগমনের ফলে উপরিউক্ত প্রভাবসমূহ ছাড়াও খাদ্যাভাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং বলা যায় যে, অভিগমনের ফলে ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনে বহুবিধ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
অভিগমনের প্রভাব :
অভিগমনের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে অভিগমনের উল্লেখযোগ্য প্রভাবসমূহ বর্ণনা করা হলো১. জনসংখ্যার পরিবর্তন :
অভিগমনে উৎস ও গন্তব্যস্থলের জনসংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এর ফলে যত লোক উৎসস্থল ত্যাগ করে তত সংখ্যক লোক গন্তব্যস্থলে যুক্ত হয়। এতে উৎসস্থলে লোক কমে গিয়ে গন্তব্যস্থলে বৃদ্ধি পায়।
২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন :
সাধারণত কর্মের সন্ধানে অধিকাংশ মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে। গন্তব্যস্থলে যে কোনো ধরনের কর্মই হোক না কেনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এতে অভিগমনকারীর জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়।
তবে বস্তি এলাকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের জীবনযাত্রার মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে অভিগমনকারী পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয় এবং অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হয়।
৩. শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি :
যেসব শহরে অধিক হারে অভিগমনকারী আগমন করে সেসব শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। কারণ অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
৪. পরিবেশগত প্রভাব :
পরিবেশের উপর অভিগমনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। সাধারণত শহরাঞ্চলে অভিগমন অধিক হওয়ায় প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
যেমন-শহরে অধিক জনসংখ্যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠে। একই সাথে নিম্ন আয়ের মানুষ বস্তি এলাকায় বসবাস করে যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
শহরাঞ্চলে অভিগমনের হার বেশি হওয়ায় বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ এবং ভূ গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যের উপর প্রভাব পড়ে ।
৫. পেশাগত পরিবর্তন :
অভিগমনের ফলে অনেকের পেশার পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন- গ্রামের একজন কৃষি শ্রমিক যদি শহরে অভিগমন করে রিক্সা চালায় তাহলে তার পেশাগত পরিবর্তন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক পেশা পরিবর্তন করে। অকৃষি পেশায় সম্পৃক্ত হয়। আবার অনেকে একটি চাকুরি পরিবর্তন করে অন্য চাকুরিতে প্রবেশ করে পেশার পরিবর্তন ঘটায়।
৬. অর্থনৈতিক গতিশীলতা :
অভিগমনের ফলে অভিগমনকারীর পরিবারে অর্থনৈতিক গতিশীলতা দেখা যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি গ্রাম থেকে শহরে গমন করলে শহর থেকে গ্রামে অর্থ প্রেরণ করে অথবা বিদেশে অভিগমন করলে দেশে বসবাসরত পরিবারের জন্য অর্থ প্রেরণ করে। এতে গ্রামীণ বা শহুরে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হয়।
৭. ভাষার পরিবর্তন :
গন্তব্যস্থলে ভাষার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে অনেক ক্ষেত্রে ভাষার পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন-কোনো ব্যক্তি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও শহরে অভিগমন করলে তাকে শহরের ভাষা আয়ত্ব করতে হয়। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. সামাজিক অস্থিরতা :
অনেক সময় অতিরিক্ত অভিগমনের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। এতে গন্তব্যস্থলে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়।
অভিগমনের ফলে উপরিউক্ত প্রভাবসমূহ ছাড়াও খাদ্যাভাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং বলা যায় যে, অভিগমনের ফলে ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনে বহুবিধ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন :- জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.