সুনাম কাকে বলে? সুনাম কত প্রকার ও কি কি? সুনামের প্রয়োজনীয়তা?

একটি প্রতিষ্ঠানে নানা ধরণের সম্পত্তি থাকে। সুনাম এর মধ্যে অন্যতম। সুনাম হলো প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতির ফল। প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতির সাথে মুনাফা অর্জন ক্ষমতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মুনাফা অর্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে সুনামও বৃদ্ধি পায়।

সুনাম কাকে বলে :-

সাধারণত: সুনাম (goodwill) বলতে যশ বা খ্যাতিকে বুঝায়। কোনো প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক সুনাম বলতে যশ বা খ্যাতির কারণে ঐ প্রতিষ্ঠান একই প্রকৃতির অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে যে বাড়তি মুনাফা অর্জনের ক্ষমতা রাখে তার আর্থিক মূল্যকে বুঝায়।

অস্পর্শনীয় সম্পত্তিগুলোর মধ্যে সুনাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি। সুনামের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে সুনামও বৃদ্ধি পায়।

Merriam-Webster এর মতে, The favor or advantages that a business has acquired especially through its brands and its good reputation is called goodwill.

লর্ড মেঘনাটন এর মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সুনাম বলতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কারবারি জগতে ঐ প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি বা ক্রেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতাজনিত সুবিধাকে বোঝায়। তার মতে, এ সুনামের দ্বারাই কোনো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কারবারকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান হতে আলাদা করা যায়।

মোট কথা হলো, পণ্যের উৎকৃষ্ট মান, প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক অবস্থান, কর্মচারীদের দক্ষতা, মালিকের ব্যক্তিগত সুখ্যাতি, ব্রান্ড নাম, প্রভৃতি বহু উপাদানের সমষ্টিগত ফলাফলই সুনাম। সুনাম ক্রয়কৃত অথবা অভ্যন্তরীনভাবে সৃষ্ট উভয় ধরণেরই হতে পারে।


সুনামের প্রকারভেদ :-

একটি প্রতিষ্ঠানে সুনাম হলো অস্পর্শনীয় স্থায়ী সম্পত্তি। একেক প্রতিষ্ঠান একেক কারণে সুনামের অধিকারী হয়ে থাকে। সুনামকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

(ক) ঐতিহ্যগত সুনাম :

বহুদিন ধরে কারবার পরিচালিত হলে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান অনেক পুরোনো হলে ভোক্তাদের মধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা-বিশ্বাস তৈরি হয়। এ আস্থা-বিশ্বাসতৈরি হওয়ার কারণে সুনাম সৃষ্টি হয়।

(খ) অবস্থানগত সুনাম :

একটি নির্দিষ্ট বাজারে বা নির্দিষ্ট স্থানে বা নির্দিষ্ট এলাকায় একই ধরণের পণ্য বহু দিন যাবত পাওয়া গেলে ভোক্তাদের মধ্যে উক্ত পণ্য প্রাপ্যতার বিশ্বাস তৈরি হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম সৃষ্টি হয়।

(গ) পণ্যের সুনাম :

কোনো প্রতিষ্ঠান যদি দীর্ঘদিন ধরে গুনগত পণ্য সরবরাহ করে, তাহলে উক্ত পণ্য ব্রান্ড হিসেবে ভোক্তাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। তাতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম সৃষ্টি হয়।

(ঙ) পরিচালনাগত সুনাম :

ব্যবস্থাপক বা পরিচালকমন্ডলী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সাথে কারবার পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় এবং সুনাম তৈরি হয়।

(চ) ব্যক্তিগত সুনাম :

প্রতিষ্ঠানের কোনো দক্ষ কর্মচারী, কর্মকর্তা বা সুপরিচিত মালিক পক্ষের বিশেষ কোনো সুপরিচিতির কারণে অনেক সময় সুনাম সৃষ্টি হয়।
সুনাম কাকে বলে?

সুনামের প্রকৃতি :-

সুনামের কোনো আকার বা বস্তুগত অস্তিত্ব নেই। এটি একটি অদৃশ্য ও অস্পর্শনীয় সম্পত্তি, তবে কাল্পনিক সম্পত্তি নহে কারণ ইহার বাজার মূল্য রয়েছে। সুনাম অনেক সময় দৃশ্যমান সম্পত্তি হতেও অধিক মূল্যবান হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত স্বাভাবিক আয়ের অতিরিক্ত আয়ের ধারণাই সুনাম হিসেবে দেখানো হয় তবে ব্যবসায়ের সুনাম একটি বহু আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়। কারণ প্রতিষ্ঠানের নিট ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও সুনামকে উদ্বর্তপত্রে সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।

অধ্যাপক ডিকসির মতে, যখন কোনো ব্যক্তি সুনামের জন্য কোনো মূল্য প্রদান করে, তখন সে আসলে এমন কোনো কিছুর জন্য অর্থ প্রদান করে, যা তাকে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনে সাহায্য করবে। এ অতিরিক্ত মুনাফা সুনামের সাহায্য ছাড়া স্বচেষ্টায় উপার্জন করা তার পক্ষে সম্ভব হবেনা।

প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, বয়স, কর্মচারীদের সুমিষ্ট ব্যবহার, মালিকের ব্যক্তিগত যশ বা খ্যাতি, খরিদ্দারের প্রকৃতি, সঠিক মূল্য, প্রভৃতি কারণে একেক প্রতিষ্ঠানের সুনামের প্রকৃতি একেক রকমের হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন :- ঘটনা কাকে বলে?

সুনাম সৃষ্টিতে সাহায্যকারী উপাদানসমূহ :-

সুনাম একটি প্রতিষ্ঠানের অদৃশ্য সম্পত্তি। একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম সৃষ্টিতে বিভিন্ন বিষয় প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

১. ক্রেতার সাথে সুমিষ্ট ব্যবহার।
২. পণ্য বা সেবার উৎকর্ষতা বা গুণাগুণ।
৩. পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত সুনাম ও দক্ষতা।
৪. প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক অবস্থান।
৫. গ্রন্থস্বত্ব ও পেটেন্ট স্বত্বের অধিকার।
৬. ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা।

সুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা :-

কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বিক্রয় করা হয় কিংবা প্রতিষ্ঠানে যখন মালিকানা বা সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসে তখন সুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়েজনীয়তা দেখা দেয়। নিম্নে সুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো:

ক) একমালিকানা কারবারের ক্ষেত্রে :

i) এক মালিকানা প্রতিষ্ঠনটি অপর কোনো ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করা হলে,
ii) প্রতিষ্ঠানটিকে অংশীদারী কারবারে রূপান্তর করা হলে,
iii) প্রতিষ্ঠানটিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হলে সুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন হয়।

খ) অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে :

i) নতুন অংশীদার গ্রহণ করা হলে,
ii) পুরাতন কোনো অংশীদারের মৃত্যু বা অবসর গ্রহণ করলে,
iii) অংশীদারি প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণ বা প্রসণ করা হলে,
iv) অংশীদারদের মধ্যে মুনাফা বন্টনের হার পরিবর্তন হলে,
v) অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বিলোপসাধন হলে,
vi) অংশীদারি কারবারকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হলেসুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন হয়।

গ) যৌথ মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে :

i) দুই বা ততোধিক কোম্পানির একত্রীকরণ হলে,
ii) এক কোম্পানি অপর কোম্পানিকে ক্রয় করলে,
iii) কোম্পানির পুণর্গঠনের ক্ষেত্রে,
iv) হোল্ডিং কোম্পানি কিংবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির যৌথ স্থিতিপত্র প্রস্তুত করতে হলে সুনামের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন :- অবচয় কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ