শাখা হিসাব কাকে বলে? শাখা হিসাবের উদ্দেশ্য, সুবিধা ও অসুবিধা?

শাখা হিসাব কাকে বলে :-

বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ অধিক বিক্রয়, অধিক মুনাফা অর্জন, পণ্যের বাজার বৃদ্ধি, পণ্যের প্রচার ও প্রসার, ক্রেতাকে উত্তম সেবাদান, বিক্রয়োত্তর সেবা দান, ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্যে দেশ বা বিদেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিনা কেন্দ্র বা ব্যবসায় কেন্দ্র স্থাপন করে ব্যবসায় পরিচালনা করে। এ সব বিনা কেন্দ্রকে শাখা প্রতিষ্ঠান বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কারবারের প্রধান কেন্দ্রকে প্রধান অফিস বা হেড অফিস এবং পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রকে শাখা অফিস বলা হয়।

শাখা প্রতিষ্ঠানের আলাদা কোনো আইনগতসত্ত্বা নেই। এটি হেড অফিস বা প্রধান অফিসের নিয়ন্ত্রণে থাকে। শাখাকে একটি মুনাফা কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

কোনো বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার শাখা প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন প্রবক্তা, সম্পদ বৃদ্ধির গতিশীলতা, ক্রেতাকে উত্তম সেবাদান, বিক্রয়োত্তর সেবা দান, ইত্যাদি সার্বিক বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে থাকে। এ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিসের বইতে বিভিন্ন শাখার জন্যে যে পৃথক হিসাব প্রস্তুত করে, তাকে শাখা হিসাব বলে।

শাখা হিসাবের মাধ্যমে শাখার পরিচালন দক্ষতা, কর্মকৌশলতা, অর্জিত লাভের পরিমাণ, সম্পদের ব্যবহার, ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
শাখা হিসাব কাকে বলে

শাখা হিসাবের উদ্দেশ্য :-

শাখা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। প্রকৃতি বা ধরণের ভিন্নতার জন্যে শাখা হিসাবের উদ্দেশ্যও ভিন্ন হয়ে থাকে। নিন্মে শাখা হিসাবের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

১. পৃথক লাভ লোকসান নির্ণয় :

প্রতিটি শাখার হিসাব পৃথক পৃথক ভাবে সংরক্ষণ করে পৃথক পৃথক ভাবে লাভ বা লোকসান নির্ণয় করা, শাখা হিসাবের উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন :- হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে?

২. আর্থিক অবস্থা :

প্রতিটি শাখার হিসাব পৃথক পৃথক ভাবে সংরক্ষণ করে একটি নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে প্রতিটি শাখার আলাদা আলাদাভাবে আর্থিক অবস্থা করা, শাখা হিসাবের উদ্দেশ্য।

৩. পরিচালন দক্ষতা :

পৃথক হিসাব সংরক্ষণ ও ফলাফল নির্ণয় করা হয় বলে প্রতিটি শাখার পরিচালনার দক্ষতা আলাদা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়।

৪. সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার :

শাখাগুলোর পৃথক পৃথক তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিটি শাখার সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

৫. পরিচালন ব্যয় :

পৃথক হিসাব সংরক্ষণের ফলে প্রতিটি শাখার পরিচালন ব্যয় পৃথকভাবে জানা যায়। ফলে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

৬. কমিশন নির্ণয় :

শাখার লাভ লোকসানের উপর ভিত্তি করে শাখা ব্যবস্থাপকসহ কর্মীদের কমিশন ও উৎসাহ বোনাস প্রদান করা হয়। পৃথক পৃথক ভাবে হিসাব ও ফলাফল নির্ণয় করা না হলে এরূপ সুবিধা প্রদানে অসুবিধা হয়।

৭. অগ্রগতি মূল্যায়ন :

প্রতিটি শাখার কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা শাখা হিসাবের অন্যতম উদ্দেশ্য।

৮. ক্রেতাদের চাহিদা :

শাখাগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত হয় বলে অঞ্চলভেদে ক্রেতাদের পণ্যের চাহিদা, রুচিপ্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৯. নিরীক্ষাকার্য শাখা :

হিসাব সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যে হচ্ছে নিরীক্ষাকার্যে শাখা ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করা ও যাচাই করা।

উপরোক্ত উদ্দেশ্যগুলো পুরণের লক্ষ্যে বর্তমানে শাখা হিসাব এর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।


শাখা হিসাবের সুবিধা :-

একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়যোগ্য পণ্যকে সকল ধরণের ক্রেতাদের নিকট পরিচিত করার ক্ষেত্রে শাখা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে শাখা হিসাবের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো বর্ণনা করা হলো:

১. বিক্রয় বৃদ্ধি :

একটি প্রতিষ্ঠান দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা স্থাপন করে এবং পৃথক ভাবে হিসাব সংরক্ষণ করলে পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধি পায় ফলে বিক্রন ও মুনাফা বাড়ে।

২. ব্যাবস্থাপকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ :

শাখাভিত্তিক লাভ-লোকসান ও আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হলে শাখার দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায় এবং ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

৩. আর্থিক অবস্থার তুলনা :

শাখাগুলোর আর্থিক অবস্থার তুলনা করতে শাখা হিসাব যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এতে শাখার দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়।

৪. গুদামজাতকরণ ব্যয় :

শাখাভিত্তিক কার্য পরিচালিত হয় বলে কেন্দ্রীয়ভাবে বড় গুদামের প্রয়োজন হয় না। এতে পণ্য গুদামজাতকরণ ব্যয় কমে।

৫. মধ্যস্বত্বভোগী হ্রাস :

শাখগুলো সরাসরি ক্রেতার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে বলে পণ্য বাজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা হ্রাস পায়।

৬. ভোক্তার তথ্য :

শাখাগুলো ভোক্তাদের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেয়। তাই অঞ্চলভিত্তিক ক্রেতার রুচি, চাহিদা, পছন্দ, অপছন্দ, প্রভৃতি তথ্য জানা যায় ।

৭. ক্রেতার খরচ কম :

শাখাগুলো অঞ্চলভিত্তিক হয় বলে ক্রেতা সহজে কম সময়ে ও কম খরচে চাহিদামতো পণ্য পেয়ে থাকে।

৮. দক্ষতা মূল্যায়ন :

পৃথক পৃথকভাবে হিসাব রক্ষণ করা হয় বলে প্রতিটি শাখার নিজস্ব কর্মদক্ষতা সহজেই মূল্যায়ন করা যায়।

৯. কর্ম পরিকল্পনা :

শাখা ভিত্তিক পৃথক হিসাব ও তথ্য থাকায় মাসিক, ত্রৈমাসিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়।

আরও পড়ুন :- নগদান বই কাকে বলে?

শাখা হিসাবের অসুবিধা :-

শাখা হিসাবের অনেক সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নিম্নে এদের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

১. ব্যয় বৃদ্ধি :

শাখা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশী হলে অবকাঠামোগত ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি পরিচালনা বায়ও বৃদ্ধি পায় ।

২. অধিক মূলধন :

শাখা অফিসের মাধ্যমে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করা হলে প্রতি শাখার জন্যে অবকাঠামো তৈরীসহ অন্যান্য ব্যয়ের জন্যে অধিক মূলধনের প্রয়োজন হয়।

৩. পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ :

শাখাগুলো প্রধান অফিস থেকে দূরে ও বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হয় বলে পারিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে এটা কঠিন।

৪. অবিক্রিত মজুদ পণ্য :

বিভিন্ন শাখার জন্যে বেশী পরিমাণ পণ্য প্রেরণ করা হয় ফলে কোনো কোনো শাখায় পন্য অবিক্রিত থাকতে পারে। এতে মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

৫. লোকসানী শাখা :

অনেক সময় দেখা যায় কোনো কোনো শাখায় লোকসান হলে তা প্রতিষ্ঠানের নিট আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন :- প্রাপ্য হিসাব কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ