প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব কাকে বলে :-
কোন নির্দিষ্ট সময়ে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার নগদ আদান-প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ সাজিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাকে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব বলে।অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত না হলেও বিভিন্ন উৎস থেকে নগদ টাকা পায় এবং বিভিন্ন বায়ের খাতে প্রদান করে থাকে। এ সকল নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্ষিপ্তাকারে শ্রেণীবদ্ধ করে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
সুতরাং প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নগদান বই একই প্রকৃতির। এটি অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাবে প্রথম ধাপ। সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে এ হিসাব প্রস্তুত করা হয়। এ হিসাব হতে নির্দিষ্ট সময়ের প্রাপ্তি ও প্রদানের পরিমাণ এবং নগদ তহবিলের পরিমাণ জানা যায়।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের বৈশিষ্ট্য :-
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপ :১. প্রারম্ভিক উদ্বৃত্ত : নগদান বইয়ের মত প্রারম্ভিক হাতে নগদ ও ব্যাংক জমা উদ্বৃত্ত নিয়ে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের কাজ শুরু হয়।
২. নগদ ও চেক প্রাপ্তি : নগদে বা চেকে সকল প্রাপ্তি ও হিসাবের ডেবিট পাশে লেখা হয়।
৩. নগদ ও চেক প্রদান : নগদে বা ঢেকে সকল প্রদান ও হিসাবের ক্রেডিট পাশে লেখা হয়।
৪. বকেয়া প্রাপ্তি ও প্রদান : বিগত বছরের বকেয়া আয় প্রাপ্তি বা ব্যয় প্রদান করা হলে তা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৫. অগ্রীম প্রাপ্তি বা প্রদান : পরবর্তী বছরের আয় অগ্রীম প্রাপ্ত হলে বা ব্যয় অগ্রীম প্রদত্ত হলে তা এ হিসাবে লিপিবন্ধ করা হয়।
৬. অনগদ লেনদেন : অনগদ লেনদেন যেমনঃ অবচয়, এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
৭. সম্পত্তিবাচক হিসাব : এটি একটি সম্পত্তিবাচক হিসাব এবং সবসময় ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রদর্শন করে।
৮. মুনাফা ও মূলধনজাতীয় লেনদেন : মূলধন ও মুনাফাজাতীয় সকল নগদ লেনদেন এই হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
৯. নগদ প্রবাহ : এ হিসাব থেকে কোন নির্দিষ্ট সময়ের নগদ অর্থের আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ সম্বন্ধে জানা যায়।
১০. সমাপনী উদ্বৃত্ত : নির্দিষ্ট সময় শেষে সমাপনী নগদ তহবিল ও ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের কাজ শেষ হয়।
আরও পড়ুন :- শাখা হিসাব কাকে বলে?
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের সুবিধা :-
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হলঃ১. নগদ আয়ের পরিমাণ : প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব থেকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কোন নির্দিষ্ট সময়ের নগদ আয়ের পরিমাণ জানা যায়।
২. নগদ ব্যয়ের পরিমাণ : এ হিসাব থেকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়ের নগদ ব্যয়ের পরিমাণ জানা যায়।
৩. আয়ের উৎস : এ হিসাব থেকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানা যায় এবং কোন উৎস কত আয় হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
৪. ব্যয়ের খাতা : এ হিসাব হতে ব্যয়ের খাতাসমূহ এবং কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে তা জানা যায় এবং তা বিশ্লেষণ করে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং আয় অনুযায়ী ব্যয় সীমিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ।
৫. আয়-ব্যয় তুলনা ও বিশ্লেষণ : বিভিন্ন বর্ষের প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব থেকে আয়-ব্যয় ভুলনা ও বিশ্লেষণ পূর্বক ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
৬. মূলধন ও মুনাফাজাতীয় প্রাপ্তি ও প্রদান : এ হিসাব হতে মূলধন ও মুনাফাজাতীয় প্রদান ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
৭. ঋণ গ্রহণ বা বিনিয়োগ : প্রাপ্তির চেয়ে প্রদান বেশী হলে ঋণ গ্রহণ বা অতিক্তি অর্থ হাতে থাকলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও হিসাব সহায়তা করে।
৮. কার্যক্রম মূল্যায়ন : এ হিসাব অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মূল্যায়ন তথা সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ণয়ে তথ্য প্রদান করে।
৯. হাতে নগদ ও ব্যাংক জমা : এ হিসাব থেকে হাতে নগদ ও ব্যাংক জমার পরিমাণ জানা যায়।
১০. আয়-ব্যয় হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত : প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব তথ্য প্রদান করে আয়-ব্যয় হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন :- অব্যবসায়ী কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.