সাধারণত তথ্য হলো আমাদের চারপাশের কোনো একটি বিষয়বস্তু, যা আমাদেরকে নতুন কিছু করতে, নতুন কিছু শিখতে, নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহায্য করে। যেমন: উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য, শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি।
নিম্নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন থেকে সৃষ্ট তথ্যের প্রধান উৎসগুলোর নাম দেওয়া হলো: প্রাপ্ত রসিদপত্র ( Receipt Voucher), প্রাপ্ত নগদের রশিদ / পরিপত্র (Counterfoil of Cash Receipt), নগদ মেমো ( Cash Memo), নগদ প্রমাণপত্র (Cash Voucher), প্রদত্ত পরিশোধপত্র (Payment Voucher), চেকের পরিপূরক। অংশ (Counterfoil of Cheque), ক্রয় চালান (Purchase Invoice), বিক্রয় চালান (Sales Invoice), দেনা চিঠি (Debit Note), পাওনা চিঠি (Credit Note)
১. প্রাসংগিকতা (Relevance) :-
হিসাব তথ্য যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে, সে উদ্দেশ্যের সঙ্গে তথ্যের সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। হিসাব তথ্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় বলে ব্যবসায়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজকর্মের সাথে এর সংগতি অবশ্যই থাকা উচিত।
২. সময়োপযোগিতা (Timeliness) :-
যে কোনো তথ্য যথাসময়ে উপস্থাপন করা বাঞ্চনীয়। হিসাব প্রদত্ত তথ্য যদি সময়মত ব্যবহারকারীর কাছে না পৌছায়, তাহলে তা বিশেষ কোনো কাজে আসে না। কাজেই তথ্য যথাসময়ে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কিনা তা অবশ্যই দেখা উচিত।
৩. বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability) :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ হতে হবে। তাই তথ্য যেসব দলিলপত্র হতে নেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এ সব তথ্য নির্ভুল, বিশ্বস্ত ও পক্ষপাতহীন হওয়া একান্তই বাঞ্ছনীয়।
8. সামঞ্জস্যতা (Consistency) :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য বিভিন্ন হিসাবকালের মধ্যে তুলনীয় হতে হবে। অন্যথায় এসব তথ্য ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয় না।
৫. নিরপেক্ষতা (Neutrality) :-
FASB এর মতে “তথ্যের মধ্যে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে, কোনো বিশেষ পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে এ ধরনের কোনো খবরাখবর না থাকলে সেটাই নিরপেক্ষতা"। এ সব তথ্য বিভিন্ন পেশাদার মানুষ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে, তাই এসব তথ্যের নিরপেক্ষতা একান্ত দরকার।
৬. তথ্য প্রকাশের খরচ ও উপকারিতা বিবেচনা (Cost benefit consideration) :-
হিসাব তথ্য প্রকাশের সময় তা প্রকাশের খরচ ও উপকারিতার মধ্যে সামঞ্জস্যতা আছে কিনা তা বিবেচনা করা উচিত।
৭. বস্তুনিষ্ঠতা (Materiality) :-
হিসাব তথ্য প্রকাশের সময় প্রত্যেক তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা উচিত।
এ আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশিত তথ্য বিভিন্ন জনসমষ্টি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীগণকে প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, যথা :
ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন মহল, যেমন: ব্যবস্থাপক বা পরিচালকবর্গ, মালিক বা স্বত্বাধিকারী, ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক সংগঠন, ঋঋণদাতা, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ের কর্মচারী সকলেই কারবার সম্পর্কে আগ্রহী থাকে। তারা কীভাবে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে তা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ :-
ব্যবসায়ের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার ও অপচয় রোধ, মজুত ও মালের সীমা নির্ধারন, ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Credit control), ব্যবসা সম্প্রসারণ, নীতি নির্ধারণ, কর্মচারীদের সুবিধা প্রদান, বিভিন্ন বিভাগের কাজ কর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন, ইত্যাদি বহুমুখী কাজে হিসাব প্রদত্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করে থাকে।
২. মালিক বা স্বত্বাধিকারীগণ :-
ব্যবসায়ে লাভ এর পরিমাণ, মূলধন প্রত্যাবর্তনের ক্ষমতা, মূলধনের ঝুঁকি, ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ সম্ভাবনা, কর্মচারীদের বেতন, ইত্যাদি জানার জন্য মালিক বা স্বত্বাধিকারীগণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে।
৩. সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীগণ :-
সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীগণ হিসাব প্রদত্ত তথ্য হতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, লাভের পরিমাণ, ব্যাংকের সুদের হারের সাথে কোম্পানির লভ্যাংশের তুলনা, লাভের গতি প্রকৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
৪. কর নির্ধারণী :-
সংশ্লিষ্ট হিসাব কালের করযোগ্য আয় ও করের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে মৌলিক তথ্য বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।
৫. সম্ভাব্য ঋণদানকারী সংস্থা :-
কোম্পানি কোনো ঋণদানকারী সংস্থার কাছে ঋণের জন্য দরখাস্ত করলে উক্ত সংস্থা কোম্পানির হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে ঋণদানের ক্ষেত্রে মূল্যবান তথ্য বলে গণ্য করে। হিসাব তথ্য হতে কোম্পানির ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা, ঋণের প্রয়োজনীয়তা, ঋণ পরিশোধে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আগ্রহ ইত্যাদি নির্ধারণ করে।
৬. বর্তমান ও সম্ভাব্য পাওনাদারগণ :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য হতে বর্তমান ও সম্ভাব্য পাওনাদারগণ কোম্পানির দেনা পরিশোধের ক্ষমতা কতটুকু তা নির্ধারণ করে এবং অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির কাছে মালামাল বিক্রয় করা উচিত হবে কিনা তা অনুমান করে।
৭. বর্তমান ও সম্ভাব্য দেনাদারগণ :-
কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থায় কতদিন দেনা রাখা যাবে, কোম্পানি কতদিন দেনা অনাদায়ী রাখতে পারবে, তা নির্ধারণে হিসাব প্রদত্ত তথ্য সাহায্য করে।
৮. শ্রমিক ও কর্মচারী সংঘসমূহ :-
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা ও লভ্যাংশে কর্মচারীদের শেয়ার বা বোনাস ইত্যাদির দাবিদাওয়া পেশ করতে হিসাব প্রদত্ত তথ্য, সংঘসমূহের শ্রমিক নেতাদের সাহায্য করে।
৯. বণিক সমিতিসমূহ :-
বণিক সমিতিসমূহ দেশে বিরাজমান বাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা অবহিত হবার জন্য এবং সমিতির সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য হিসাববিজ্ঞান প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে।
১০. দ্রব্যমূল্য নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ :-
মূল্য নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে ব্যবহার করে এবং কোম্পানির দ্রব্যমূল্য বিধির চাহিদা বিশ্লেষণ করে।
১১. সরকার :-
সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারকে প্রদেয় লভ্যাংশ ঠিকমত সরকারি তহবিলে জমা দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করবার জন্য হিসাব প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে। এ ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহৃত হয়।
১২. জনসাধারণ :-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা এবং অদক্ষ পরিচালনার জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা বা সুদক্ষ পরিচালনার জন্য অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্য কমার সম্ভাবনা আছে কিনা, ইত্যাদি বিশ্লেষণ হিসাব প্রদত্ত তথ্য সাহায্য করে।
হিসাব বিজ্ঞান তথ্য কি :-
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আর্থিক ঘটনাবলি, যেগুলোকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায়, যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়, যা কমপক্ষে ২টি পক্ষকে প্রভাবিত করে, সে সমস্ত ঘটনাগুলোকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আমরা যে ফলাফল পাই, সে ফলাফলকে হিসাববিজ্ঞান তথ্য বলা হয়।
যেমন: একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ৫০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করল, এই ৫০,০০০ টাকার বিক্রিত পণ্যের, উৎপাদন ব্যয় অথবা বিক্রয় বায় ৪০,০০০ টাকা। এখানে মোট মুনাফা ১০,০০০ টাকা। আবার, এই ৫০,০০০ টাকার বিক্রিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অথবা বিক্রয় ব্যয় যদি ৬০,০০০ টাকা হয়, তাহলে মোট ক্ষতি ১০,০০০ টাকা। আবার মনে করুন, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ১,০০,০০০ টাকার চলতি সম্পদ রয়েছে, যার বিপরীতে চলতি দায় ৫০,০০০ টাকা। এখানে, চলতি অনুপাত ২:১। এছাড়াও ধরুন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১০% মুনাফা অর্জন করল। এখন, এ মুনাফা ১০,০০০ টাকা অথবা ক্ষতি ১০,০০০ টাকা, চলতি অনুপাত ২:১, মুনাফা অর্জন ক্ষমতা ১০%, ইত্যাদি হলো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাববিজ্ঞান তথ্য।
আরও পড়ুন :- হিসাব সমীকরণ কাকে বলে?
যেমন: একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ৫০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করল, এই ৫০,০০০ টাকার বিক্রিত পণ্যের, উৎপাদন ব্যয় অথবা বিক্রয় বায় ৪০,০০০ টাকা। এখানে মোট মুনাফা ১০,০০০ টাকা। আবার, এই ৫০,০০০ টাকার বিক্রিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অথবা বিক্রয় ব্যয় যদি ৬০,০০০ টাকা হয়, তাহলে মোট ক্ষতি ১০,০০০ টাকা। আবার মনে করুন, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ১,০০,০০০ টাকার চলতি সম্পদ রয়েছে, যার বিপরীতে চলতি দায় ৫০,০০০ টাকা। এখানে, চলতি অনুপাত ২:১। এছাড়াও ধরুন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১০% মুনাফা অর্জন করল। এখন, এ মুনাফা ১০,০০০ টাকা অথবা ক্ষতি ১০,০০০ টাকা, চলতি অনুপাত ২:১, মুনাফা অর্জন ক্ষমতা ১০%, ইত্যাদি হলো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাববিজ্ঞান তথ্য।
আরও পড়ুন :- হিসাব সমীকরণ কাকে বলে?
হিসাববিজ্ঞান তথ্যের উৎস :-
লেনদেন হাতে কলমে হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হোক কিংবা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বা কম্পিউটারের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হোক, লেনদেন সংঘটিত হওয়ার দলিলপত্রসমূহ ভিত্তি হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে, যা হিসাববিজ্ঞানের তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে।নিম্নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন থেকে সৃষ্ট তথ্যের প্রধান উৎসগুলোর নাম দেওয়া হলো: প্রাপ্ত রসিদপত্র ( Receipt Voucher), প্রাপ্ত নগদের রশিদ / পরিপত্র (Counterfoil of Cash Receipt), নগদ মেমো ( Cash Memo), নগদ প্রমাণপত্র (Cash Voucher), প্রদত্ত পরিশোধপত্র (Payment Voucher), চেকের পরিপূরক। অংশ (Counterfoil of Cheque), ক্রয় চালান (Purchase Invoice), বিক্রয় চালান (Sales Invoice), দেনা চিঠি (Debit Note), পাওনা চিঠি (Credit Note)
হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুনগত বৈশিষ্ট্য :-
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের নিকট হিসাববিজ্ঞান তথ্যকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় :১. প্রাসংগিকতা (Relevance) :-
হিসাব তথ্য যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে, সে উদ্দেশ্যের সঙ্গে তথ্যের সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। হিসাব তথ্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় বলে ব্যবসায়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজকর্মের সাথে এর সংগতি অবশ্যই থাকা উচিত।
২. সময়োপযোগিতা (Timeliness) :-
যে কোনো তথ্য যথাসময়ে উপস্থাপন করা বাঞ্চনীয়। হিসাব প্রদত্ত তথ্য যদি সময়মত ব্যবহারকারীর কাছে না পৌছায়, তাহলে তা বিশেষ কোনো কাজে আসে না। কাজেই তথ্য যথাসময়ে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কিনা তা অবশ্যই দেখা উচিত।
৩. বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability) :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ হতে হবে। তাই তথ্য যেসব দলিলপত্র হতে নেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এ সব তথ্য নির্ভুল, বিশ্বস্ত ও পক্ষপাতহীন হওয়া একান্তই বাঞ্ছনীয়।
8. সামঞ্জস্যতা (Consistency) :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য বিভিন্ন হিসাবকালের মধ্যে তুলনীয় হতে হবে। অন্যথায় এসব তথ্য ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয় না।
৫. নিরপেক্ষতা (Neutrality) :-
FASB এর মতে “তথ্যের মধ্যে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে, কোনো বিশেষ পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে এ ধরনের কোনো খবরাখবর না থাকলে সেটাই নিরপেক্ষতা"। এ সব তথ্য বিভিন্ন পেশাদার মানুষ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে, তাই এসব তথ্যের নিরপেক্ষতা একান্ত দরকার।
৬. তথ্য প্রকাশের খরচ ও উপকারিতা বিবেচনা (Cost benefit consideration) :-
হিসাব তথ্য প্রকাশের সময় তা প্রকাশের খরচ ও উপকারিতার মধ্যে সামঞ্জস্যতা আছে কিনা তা বিবেচনা করা উচিত।
৭. বস্তুনিষ্ঠতা (Materiality) :-
হিসাব তথ্য প্রকাশের সময় প্রত্যেক তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা উচিত।
আরও পড়ুন :- হিসাব কাকে বলে?
হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারী কারা :-
প্রতিটি হিসাবকাল শেষে ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান, সম্পত্তি ও দায়ের অবস্থান, নগদ প্রবাহ বিবরণী (Cash Flow Statement) ইত্যাদি আর্থিক বিবরণী (Financial Statement) আকারে প্রকাশ করা হয়।এ আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশিত তথ্য বিভিন্ন জনসমষ্টি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীগণকে প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, যথা :
- অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী (Internal users) এবং
- বাহ্যিক ব্যবহারকারী (External users)।
ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন মহল, যেমন: ব্যবস্থাপক বা পরিচালকবর্গ, মালিক বা স্বত্বাধিকারী, ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক সংগঠন, ঋঋণদাতা, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ের কর্মচারী সকলেই কারবার সম্পর্কে আগ্রহী থাকে। তারা কীভাবে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে তা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ :-
ব্যবসায়ের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার ও অপচয় রোধ, মজুত ও মালের সীমা নির্ধারন, ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Credit control), ব্যবসা সম্প্রসারণ, নীতি নির্ধারণ, কর্মচারীদের সুবিধা প্রদান, বিভিন্ন বিভাগের কাজ কর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন, ইত্যাদি বহুমুখী কাজে হিসাব প্রদত্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করে থাকে।
২. মালিক বা স্বত্বাধিকারীগণ :-
ব্যবসায়ে লাভ এর পরিমাণ, মূলধন প্রত্যাবর্তনের ক্ষমতা, মূলধনের ঝুঁকি, ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ সম্ভাবনা, কর্মচারীদের বেতন, ইত্যাদি জানার জন্য মালিক বা স্বত্বাধিকারীগণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে।
৩. সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীগণ :-
সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীগণ হিসাব প্রদত্ত তথ্য হতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, লাভের পরিমাণ, ব্যাংকের সুদের হারের সাথে কোম্পানির লভ্যাংশের তুলনা, লাভের গতি প্রকৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
৪. কর নির্ধারণী :-
সংশ্লিষ্ট হিসাব কালের করযোগ্য আয় ও করের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে মৌলিক তথ্য বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।
৫. সম্ভাব্য ঋণদানকারী সংস্থা :-
কোম্পানি কোনো ঋণদানকারী সংস্থার কাছে ঋণের জন্য দরখাস্ত করলে উক্ত সংস্থা কোম্পানির হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে ঋণদানের ক্ষেত্রে মূল্যবান তথ্য বলে গণ্য করে। হিসাব তথ্য হতে কোম্পানির ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা, ঋণের প্রয়োজনীয়তা, ঋণ পরিশোধে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আগ্রহ ইত্যাদি নির্ধারণ করে।
৬. বর্তমান ও সম্ভাব্য পাওনাদারগণ :-
হিসাব প্রদত্ত তথ্য হতে বর্তমান ও সম্ভাব্য পাওনাদারগণ কোম্পানির দেনা পরিশোধের ক্ষমতা কতটুকু তা নির্ধারণ করে এবং অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির কাছে মালামাল বিক্রয় করা উচিত হবে কিনা তা অনুমান করে।
৭. বর্তমান ও সম্ভাব্য দেনাদারগণ :-
কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থায় কতদিন দেনা রাখা যাবে, কোম্পানি কতদিন দেনা অনাদায়ী রাখতে পারবে, তা নির্ধারণে হিসাব প্রদত্ত তথ্য সাহায্য করে।
৮. শ্রমিক ও কর্মচারী সংঘসমূহ :-
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা ও লভ্যাংশে কর্মচারীদের শেয়ার বা বোনাস ইত্যাদির দাবিদাওয়া পেশ করতে হিসাব প্রদত্ত তথ্য, সংঘসমূহের শ্রমিক নেতাদের সাহায্য করে।
৯. বণিক সমিতিসমূহ :-
বণিক সমিতিসমূহ দেশে বিরাজমান বাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা অবহিত হবার জন্য এবং সমিতির সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য হিসাববিজ্ঞান প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে।
১০. দ্রব্যমূল্য নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ :-
মূল্য নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে হিসাব প্রদত্ত তথ্যকে ব্যবহার করে এবং কোম্পানির দ্রব্যমূল্য বিধির চাহিদা বিশ্লেষণ করে।
১১. সরকার :-
সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারকে প্রদেয় লভ্যাংশ ঠিকমত সরকারি তহবিলে জমা দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করবার জন্য হিসাব প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে। এ ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহৃত হয়।
১২. জনসাধারণ :-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা এবং অদক্ষ পরিচালনার জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা বা সুদক্ষ পরিচালনার জন্য অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্য কমার সম্ভাবনা আছে কিনা, ইত্যাদি বিশ্লেষণ হিসাব প্রদত্ত তথ্য সাহায্য করে।
আরও পড়ুন :- চেক ও বিনিময় বিল পার্থক্য?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.