হিসাববিজ্ঞানের পরিধি :-
হিসাববিজ্ঞানের আওতা বা পরিধি শুধুমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সকল শ্রেণীর প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত।যেখানেই আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হয় সেখানেই হিসাববিজ্ঞান প্রয়োজন। অতএব হিসাববিজ্ঞানের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্ষেত্র বা পরিধি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে প্রত্যেক ব্যক্তি বিভিন্ন কাজ ও লেনদেন থেকে অর্থ উপার্জন করে এবং পারিবারিক কলাণে ব্যয় করে। এই আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের জন্য হিসাববিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োজন হয়।
২. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন। মুনাফা অর্জিত হয়েছে কিনা ও আর্থিক অবস্থা জানার জন্য হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োগ অপরিহার্য। তাছাড়া ব্যবসায়ের কার্যক্রম মূল্যায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও হিসাববিজ্ঞানের সাহায্য প্রয়োজন।
৩. অব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যেমন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, ক্লাব, সমিতি, হাসাপাতাল, পাবলিক লাইব্রেরি, এনজিও, সমবায় সমিতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হয়। ফলে এ সব প্রতিষ্ঠানেও হিসাববিজ্ঞান দরকার।
৪. সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, মন্ত্রণালয়, অফিস আদালত, রাষ্ট্রীয় সংস্থা, কর্পোরেশন, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ইত্যাদির সুষ্ঠু হিসাব সংরক্ষণের জন্য হিসাববিজ্ঞানের নীতিও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
৫. পেশাজীবিদের জন্য চার্টার্ড একাউটেন্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কর উপদেষ্টা, কনসালটেন্ট, এ্যাডভোকেট ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ ও কর নির্ধারণের জন্য হিসাববিজ্ঞান প্রয়োগ করে।
হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলী :-
কেবলমাত্র আর্থিক লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ, কার্যক্রম নির্ণয় ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণের মধ্যেই হিসাববিজ্ঞানের কাজ সীমিত নয়। বিবরণী ও অন্যান্য প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রস্তুতকরণ এবং উক্ত তথ্য মালিক, ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে পরিবেশন করাও হিসাববিজ্ঞানের কাজের আওতা। হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা১.ঐতিহাসিক বা তত্ত্বাবধানমূলক কার্যাবলী এবং
২. ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলী।
ঐতিহাসিক বা তত্ত্বাবধানমূলক কার্যাবলী :-
তত্ত্বাবধানমূলক কার্যাবলী বলতে যথাযথভাবে হিসাব রাখার মাধ্যমে ব্যবসায়ে ব্যবহৃত মালিকের মূলধন সংরক্ষণ ও লাভজনক ও কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা বুঝায়। সুনির্দিষ্ট তত্ত্বাবধানমূলক কার্যাবলী নিম্নরূপ :- সংঘটিত ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও অর্থনৈতিক ঘটনা চিহ্নিতকরণ:
- আর্থিক ঘটনা টাকায় পরিমাপ ও লিপিবদ্ধকরণ:
- লেনদেনের শ্রেণীবিন্যাস ও স্থায়ী হিসাবভুক্তকরণ;
- হিসাবের উদ্বৃত্ত নির্ণয় ও সারসংক্ষেপ প্রস্তুতকরণ;
- হিসাবের সমন্বয় লিপিবদ্ধকরণ;
- আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ এবং
- ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাকরণ।
ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলী :-
ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলী বলতে আর্থিক ও পরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহকরণ, লিপিবদ্ধকরণ, বিশ্লেষণকরণ এবং বিবরণী ও প্রতিবেদনের আকারে মালিক, ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষমূহকে পরিবেশন করাকে বুঝায়।প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপকদের পরিকল্পনা প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কার্যাবলীর আওতাভুক্ত। নিচে হিসাববিজ্ঞানের ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কার্যাবলী বর্ণনা হলো
ক. তথ্য সংগ্রহ (Data collection) :-
তথ্য বলতে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসান, মূলধন, দায়-সম্পদ অতীত ও বর্তমান আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা সংক্রান্ত যাবতীয় উপাত্তকে বুঝায় যা ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। হিসাববিজ্ঞানে তথ্য দু'রকমের হতে পারে যথা
(i) নিয়মিত তথ্য ও
(ii) বিশেষ তথ্য।
হিসাববিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী সংরক্ষিত হিসাব ও আর্থিক বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে নিয়মিত তথ্য বলে। হিসাববিজ্ঞানের কার্য প্রক্রিয়া থেকে এ সমস্ত তথ্য নিয়মিত সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যে অতিরিক্ত তথ্য প্রয়োজন হয় যা মূলতঃ হিসাব থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় তাকে বিশেষ তথ্য বলে। যেমন-নতুন পণ্য উৎপাদন, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি।
তথ্য সংগ্রহ বলতে সংশ্লিষ্ট হিসাব ও পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ করাকে বুঝায়। উপাত্ত দু'রকমের হতে পারে যথা-প্রাথমিক উপাত্ত ও মাধ্যমিক উপাত্ত।
হিসাববিজ্ঞানের তথ্য দু'প্রকার উৎস থেকে সংগৃহীত হতে পারে যথা-
(১) অন্তঃস্থ অর্থাৎ হিসাবের বই, আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন এবং
(২) বহিঃস্থ অর্থাৎ শেয়ার বাজার, বাণিজ্য সভা, কোম্পানি নিবন্ধকের কার্যালয়ে রক্ষিত হিসাবপত্র, গবেষণা পত্রিকা, অর্থনৈতিক ও পরিসংখ্যান সংস্থাসমূহের বিবরণী ও প্রতিবেদন।
খ) তথ্য প্রস্তুতকরণ (Preparing information) :-
উপাত্ত সংগ্রহ করে ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে। ভুল-ত্রুটিপূর্ণ এবং অপ্রাসঙ্গিক উপাত্ত বাদ দিতে হবে। বাকি উপাত্তগুলো সময়, পরিমাণ ও ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস ও বিশ্লেষণ করতে হবে।
এরপর প্রাসঙ্গিক, সময়োপযোগী, বিশ্বাসযোগ্য, বস্তুনিষ্ঠ ও বোধগম্য উপাত্তসমূহ নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। এ সব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত তথ্যে পরিণত হয়।
গ) তথ্য পরিবেশন (Presentation of information) :-
সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে সাধারণতঃ দু'ভাবে তথ্য পরিবেশন করা হয়ঃ
১) নিয়মিত তথ্য পরিবেশন :-
বিভিন্ন প্রতিবেদন ও চিত্রের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবেদন যথা- লাভ-লোকসান হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, নগদ প্রবাহ বিবরণী, কার্যকরী মূলধন প্রতিবেদন, অনুপাত বিশ্লেষণ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। চিত্র ও তথ্য চিত্র, রেখা চিত্র, বার চিত্র, পাই চিত্র ইত্যাদি।
২) চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পরিবেশন :-
তথ্য ব্যবহারকারীর প্রয়োজন ও নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন :- দ্বৈত হিসাব পদ্ধতি কি?
হিসাববিজ্ঞানের প্রথা বা নীতিসমূহ গুলি হলো:
১. রক্ষণশীরতা (Conservatism principle) :-
ব্যবসায় জগতে সম্ভাব্য লোকসানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাকে রক্ষণশীলতা বলে। এই নীতির মূল কথা হল লাভ হবার সম্ভাবনা ১০০% ভাগ হলেও লাভ না হওয়া পর্যন্ত হিসাবভুক্ত করা চলবে না, কিন্তু লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা হিসাবে দেখাতে হবে।
হিসাববিজ্ঞানের তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে তাই ব্যবসায়ের প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে সকল প্রতিবেদন তৈরী করতে হবে, কোন অলীক বা রঙিন চিত্র আঁকা চলবে না। এই নীতি অনুযায়ী মজুতপণ্যের ক্রয় মূল্য ও বাজার মূল্য এ দুটির যেটি কম সেই মূল্যে হিসাব লিপিবদ্ধ করা হয়।
২. সামঞ্জস্যতা নীতি (Consistency Principle) :-
এই নীতি অনুসারে হিসাব কার্যক্রমে একবার যে নিয়ম ও রীতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা প্রতিটি হিসাবকালে যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এর কোন ব্যতিক্রম হলেই বিভিন্ন বছরের ফলাফল সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না এবং তুলনাও করা যাবে না। বিভিন্ন বছরে একই ধরনের নিয়ম পদ্ধতি ব্যবহার করলে হিসাবের নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্লেষণ ও তুলনা সহজ হয়।
যেমন, স্থায়ী সম্পত্তির অবচয় নির্ণয়ে যদি সরল রৈখিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাহলে প্রতিবছর এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। যদি পদ্ধতির পরিবর্তন করে ক্রমহৃাসমান পদ্ধতি ব্যবহার বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে করা যাবে। সে ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণ ও তার ফলাফল আলাদাভাবে দেখাতে হবে। এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয়ও করতে হবে।
৩. প্রকাশকরণ নীতি (Disclosure Principle) :-
এই নীতি অনুযায়ী হিসাবরক্ষক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিটি হিসাব বিবরণী এবং প্রতিবেদন কেবলমাত্র সত্য নির্ভর হলেই চলবে না। ব্যবসায় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য যেন ঐসব হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত বা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্যের জন্য কোন একটি ব্যবসায় সম্পর্কে যা কিছু অপরের জানা প্রয়োজন যা কিছু অপরের জানা উচিত তার সবই হিসাবরক্ষকরা প্রস্তুতকৃত হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন এবং সেই সাথে লক্ষ্য রাখবেন সমস্ত তথ্য যেন সত্য হয়।
৪. বস্তুনিষ্ঠতা বা প্রাসঙ্গিকতা নীতি (Materiality Principle) :-
ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য হিসাবভুক্ত করার সময় এসব তথ্য হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ বা প্রাসঙ্গিক তা যাচাই করে দেখতে হবে।
এই নীতি অনুসারে কোন তথ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার বা দৃষ্টি গোচর করার আগে বিচার করে দেখতে হবে যে, সেটা তথ্য প্রকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্থ মূল্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোপরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা প্রাসঙ্গিক। এই ৪টি বিষয়ের কোন একটিতে যদি কোন তথ্য প্রাসঙ্গিক মনে হয় তবে তা প্রকাশ করতে হবে।
যেমন-কম মূল্যমানের ষ্টেশনারি দ্রব্যের সেবা একাধিক বৎসর ধরে পাওয়া গেলো তা সম্পত্তি হিসেবে গণ্য না করে, চলতি বৎসরের বায়ের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকাশ, অর্থমূল্য প্রয়োগ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ দৃষ্টিকোণ থেকেই যেহেতু এ ঘটনা বস্তুনিষ্ঠ বা প্রাসঙ্গিক নয় তাই একে সম্পত্তি হিসাবে প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।
হিসাববিজ্ঞানের প্রথা বা নীতি :-
সাধারণভাবে প্রচলিত রীতি যা হিসাব বিবরণী প্রস্তুতকালে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানীদের কার্য নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ হিসাব সংক্রান্ত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সমাধান করার জন্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যে সব রীতি ও আচরণ বিধি মেনে চলা হয় তাকে হিসাববিজ্ঞান প্রথা বা নীতি বলে।হিসাববিজ্ঞানের প্রথা বা নীতিসমূহ গুলি হলো:
১. রক্ষণশীরতা (Conservatism principle) :-
ব্যবসায় জগতে সম্ভাব্য লোকসানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাকে রক্ষণশীলতা বলে। এই নীতির মূল কথা হল লাভ হবার সম্ভাবনা ১০০% ভাগ হলেও লাভ না হওয়া পর্যন্ত হিসাবভুক্ত করা চলবে না, কিন্তু লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা হিসাবে দেখাতে হবে।
হিসাববিজ্ঞানের তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে তাই ব্যবসায়ের প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে সকল প্রতিবেদন তৈরী করতে হবে, কোন অলীক বা রঙিন চিত্র আঁকা চলবে না। এই নীতি অনুযায়ী মজুতপণ্যের ক্রয় মূল্য ও বাজার মূল্য এ দুটির যেটি কম সেই মূল্যে হিসাব লিপিবদ্ধ করা হয়।
২. সামঞ্জস্যতা নীতি (Consistency Principle) :-
এই নীতি অনুসারে হিসাব কার্যক্রমে একবার যে নিয়ম ও রীতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা প্রতিটি হিসাবকালে যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এর কোন ব্যতিক্রম হলেই বিভিন্ন বছরের ফলাফল সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না এবং তুলনাও করা যাবে না। বিভিন্ন বছরে একই ধরনের নিয়ম পদ্ধতি ব্যবহার করলে হিসাবের নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্লেষণ ও তুলনা সহজ হয়।
যেমন, স্থায়ী সম্পত্তির অবচয় নির্ণয়ে যদি সরল রৈখিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাহলে প্রতিবছর এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। যদি পদ্ধতির পরিবর্তন করে ক্রমহৃাসমান পদ্ধতি ব্যবহার বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে করা যাবে। সে ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণ ও তার ফলাফল আলাদাভাবে দেখাতে হবে। এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয়ও করতে হবে।
৩. প্রকাশকরণ নীতি (Disclosure Principle) :-
এই নীতি অনুযায়ী হিসাবরক্ষক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিটি হিসাব বিবরণী এবং প্রতিবেদন কেবলমাত্র সত্য নির্ভর হলেই চলবে না। ব্যবসায় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য যেন ঐসব হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত বা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্যের জন্য কোন একটি ব্যবসায় সম্পর্কে যা কিছু অপরের জানা প্রয়োজন যা কিছু অপরের জানা উচিত তার সবই হিসাবরক্ষকরা প্রস্তুতকৃত হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন এবং সেই সাথে লক্ষ্য রাখবেন সমস্ত তথ্য যেন সত্য হয়।
৪. বস্তুনিষ্ঠতা বা প্রাসঙ্গিকতা নীতি (Materiality Principle) :-
ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য হিসাবভুক্ত করার সময় এসব তথ্য হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ বা প্রাসঙ্গিক তা যাচাই করে দেখতে হবে।
এই নীতি অনুসারে কোন তথ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার বা দৃষ্টি গোচর করার আগে বিচার করে দেখতে হবে যে, সেটা তথ্য প্রকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্থ মূল্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোপরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা প্রাসঙ্গিক। এই ৪টি বিষয়ের কোন একটিতে যদি কোন তথ্য প্রাসঙ্গিক মনে হয় তবে তা প্রকাশ করতে হবে।
যেমন-কম মূল্যমানের ষ্টেশনারি দ্রব্যের সেবা একাধিক বৎসর ধরে পাওয়া গেলো তা সম্পত্তি হিসেবে গণ্য না করে, চলতি বৎসরের বায়ের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকাশ, অর্থমূল্য প্রয়োগ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ দৃষ্টিকোণ থেকেই যেহেতু এ ঘটনা বস্তুনিষ্ঠ বা প্রাসঙ্গিক নয় তাই একে সম্পত্তি হিসাবে প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন :- সমন্বয় দাখিল পদ্ধতি কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.