দ্বৈত হিসাব পদ্ধতির সংজ্ঞা :-
জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের মূলধন জাতীয় ব্যয় ও মূলধন জাতীয় প্রাপ্তি এবং তারল্যতা সম্পর্কে পৃথকভাবে জানার জন্যে উদ্বর্তপত্রকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে প্রকাশ করে থাকে, যাকে দ্বৈত হিসাব বলা হয়।উদ্বর্তপত্রের একটি অংশকে মূলধন হিসাব ( Capital Account) এবং অপর অংশকে সাধারণ উচ্চতপত্র (General Balance Sheet) বলা হয়। এটি উচ্চতপত্রের ভিন্নরূপ উপস্থাপনা মাত্র। আমাদের দেশে রেলপথ, গ্যাস কোম্পানি, ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিটিসিএল, প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান দ্বৈত হিসাব পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য :-
দ্বৈত হিসাব হিসাবরক্ষণের পৃথক কোনো পদ্ধতি নয়, তাই জাবেদা, খতিয়ান, রেওয়ামিল প্রভৃতি অন্যান্য হিসাবের মতো একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। তবে আর্থিক বিবরণী (Financial Statement) প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিজের এদের কয়েকটি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :১. দুই অংশে বিভক্ত উদ্ধতপত্র :
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতিতে উচ্চতপত্রকেদু ভাগে ভাগে বিভক্ত করে উপস্থাপন করা হয়। এর একটিকে মূলধন হিসাব(Capital Account ) এবং অপর অংশকে সাধারণ উন্নতপত্র (General Balance Sheet) নামে অভিহিত করা হয়।।
২. রাজস্ব হিসাব :
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত আয় বিবরণীর ন্যায় এখানে রাজস্ব হিসাব (Revenue Account) প্রস্তুত করা হয়। রাজস্ব হিসাবে পরিচালনা ব্যয়, অবচয়, মেরামত ব্যয় এবং প্রত্যক্ষ আয়গুলো দেখানো হয়। এ হিসাবের জের নিট রাজস্ব হিসাব (Net Revenue Account) এ স্থানান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন :- হস্তান্তরযোগ্য কাকে বলে?
৩. নিট রাজস্ব হিসাব :
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান বন্টন হিসাবের ন্যায় এ হিসাব। তবে এখানে অন্যান্য ব্যয়ের সাথে কর্জ ও ঋণপত্রের সুদকেও মূলধনের অংশ মনে করে লভ্যাংশের মতো এ হিসাবে ডেবিট করা হয়। এ হিসাবের জের সাধারণ স্থিতিপত্রে স্থানান্তর করা হয়।
৪. অবচিতি তহবিল :
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতিতে স্থায়ী সম্পত্তিসমূহ ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করা হয়, অর্থাৎ অবচয়কে বাদ দিয়ে দেখানো হয় না। অবচয়কে পৃথকভাবে আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দায় হিসেবে দেখানো হয়।
৫. ঋণ ও ঋণপত্র :
এ পদ্ধতিতে ঋণ ও ঋণপত্রকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ঋণ ও ঋণপত্রের সুদকে লভ্যাংশের ন্যায় নিট রাজস্ব হিসেবে দেখানো হয়।
৬. প্রতিস্থাপন :
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতিতে পুরাতন সম্পত্তির প্রতিস্থাপন করা হলে প্রতিস্থাপন খরচ রাজস্ব হিসাবে (Revenue Account) চার্জ করা হয়। অবশ্য বড় ধরণের বায় হলে অতিরিক্ত অংশ মূলধনী বায় হিসেবে দেখানো হয়।
৭. পরিসংখ্যান তথ্য :
এ হিসাবের প্রত্যেকটি তথ্য পর্যাপ্ত পরিসংখ্যান তথ্য ও উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত থাকে।
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতির সুবিধা :-
জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত দ্বৈত হিসাব ব্যবস্থায় বিশেষ সুবিধাগুলো নিম্নরূপ:
১. সহজে বোধগম্য :
এ পদ্ধতিতে মূলধন হিসাব পৃথকভাবে প্রস্তুত করা হয় বলে সাধারণ শেয়ার মালিক এবং হিসাব সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিগণও সহজে মূলধন ও ঋণের পরিমাণ জানতে পারে।
২. সম্পত্তি প্রতিস্থাপন :
এ পদ্ধতিতে অবচয় সম্পত্তি হতে সরাসরি বাদ না দিয়ে অবচিতি তহবিলের মাধ্যমে দায় স্বরূপ দেখানো হয় বলে আয়ুস্কাল শেষে সম্পত্তি প্রতিস্থাপন সহজ হয়।
৩. তারল্যতা :
এ পদ্ধতিতে উন্নতপত্রে পৃথকভাবে চলতি সম্পত্তি ও চলতি দায় দেখানো হয়। তাই সহজেই তারল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৪. তহবিলের ব্যবহার :
এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা জনসাধারণ সহজেই জানতে পারে।
আরও পড়ুন :- প্রাপ্য হিসাব কাকে বলে?
১. বাণিজ্যিক ফলাফল :
এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ফলাফল এর চিত্র ফুটে ওঠে না।
২. সঠিক আর্থিক চিত্র :
উদ্বর্তপত্রে সম্পত্তিসমূহকে ক্রয়মূলে দেখানো হয় বলে সঠিক আর্থিক চিত্র ফুটে ওঠেনা।
৩. স্থায়িত্ব :
এ পদ্ধতিতে প্রস্তুত মূলধন হিসাব ( Capital Account) এ এমন কিছু সম্পত্তি দেখানো হয় যাদের স্থায়িত্ব একেবারেই কম। যেমন: শেয়ার ও ঋণপত্রের বাট্টা, প্রাথমিক খরচ, প্রভৃতি।
১. বোধগম্যতা :
জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের হিসাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে দ্বৈত হিসাব ব্যবস্থায় উপস্থাপন করে। কিন্তু জনসাধারণ তা সহজে বুঝতে পারে না।
২. মেরামত ব্যয় :
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে তা নিরূপণ করা যায় না।
৩. হিসাববিজ্ঞান নীতি :
স্বল্প স্থায়ী সম্পত্তিকে মূলধনী সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়, যা কোনো ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
৪. আর্থিক চিত্র :
সম্পত্তিসমূহ ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করা হয় বলে সঠিক আর্থিক চিত্র ফুটে ওঠে না।
১. সহজে বোধগম্য :
এ পদ্ধতিতে মূলধন হিসাব পৃথকভাবে প্রস্তুত করা হয় বলে সাধারণ শেয়ার মালিক এবং হিসাব সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিগণও সহজে মূলধন ও ঋণের পরিমাণ জানতে পারে।
২. সম্পত্তি প্রতিস্থাপন :
এ পদ্ধতিতে অবচয় সম্পত্তি হতে সরাসরি বাদ না দিয়ে অবচিতি তহবিলের মাধ্যমে দায় স্বরূপ দেখানো হয় বলে আয়ুস্কাল শেষে সম্পত্তি প্রতিস্থাপন সহজ হয়।
৩. তারল্যতা :
এ পদ্ধতিতে উন্নতপত্রে পৃথকভাবে চলতি সম্পত্তি ও চলতি দায় দেখানো হয়। তাই সহজেই তারল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৪. তহবিলের ব্যবহার :
এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা জনসাধারণ সহজেই জানতে পারে।
আরও পড়ুন :- প্রাপ্য হিসাব কাকে বলে?
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতির অসুবিধা :-
অনেকগুলো সুবিধার পাশপাশি দ্বৈত হিসাব ব্যবস্থার কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:১. বাণিজ্যিক ফলাফল :
এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ফলাফল এর চিত্র ফুটে ওঠে না।
২. সঠিক আর্থিক চিত্র :
উদ্বর্তপত্রে সম্পত্তিসমূহকে ক্রয়মূলে দেখানো হয় বলে সঠিক আর্থিক চিত্র ফুটে ওঠেনা।
৩. স্থায়িত্ব :
এ পদ্ধতিতে প্রস্তুত মূলধন হিসাব ( Capital Account) এ এমন কিছু সম্পত্তি দেখানো হয় যাদের স্থায়িত্ব একেবারেই কম। যেমন: শেয়ার ও ঋণপত্রের বাট্টা, প্রাথমিক খরচ, প্রভৃতি।
দ্বৈত হিসাব পদ্ধতির সমালোচনা :-
দ্বৈত হিসাব ব্যবস্থায় জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ সমাজের সর্বপ্রকার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সমালোচকদের চোখে ধরা পড়া এ পদ্ধতির কতিপয় দুর্বলতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:১. বোধগম্যতা :
জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের হিসাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে দ্বৈত হিসাব ব্যবস্থায় উপস্থাপন করে। কিন্তু জনসাধারণ তা সহজে বুঝতে পারে না।
২. মেরামত ব্যয় :
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে তা নিরূপণ করা যায় না।
৩. হিসাববিজ্ঞান নীতি :
স্বল্প স্থায়ী সম্পত্তিকে মূলধনী সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়, যা কোনো ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
৪. আর্থিক চিত্র :
সম্পত্তিসমূহ ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করা হয় বলে সঠিক আর্থিক চিত্র ফুটে ওঠে না।
আরও পড়ুন :- চালানি কারবার কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.