চেক ও বিনিময় বিলের পার্থক্য :-
চেক ও বিনিময় বিল উভয়ই লিখিত, প্রস্তুতকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও শর্তহীন হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিল। উভয় দলিলই যাবতীয় ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। দলিল দুটির মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকা সত্ত্বেও অনেক মৌলিক পার্থক্যও দেখা যায়। নিম্নে চেক বিনিময় বিলের পার্থক্য বর্ণনা করা হল :
পার্থক্যের বিষয় | চেক | বিনিময় বিল |
---|---|---|
সংজ্ঞা | প্রস্তুতকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত যে মুদ্রিত দলিলে আমানতকারী কোন ব্যক্তি বা বাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রতি লিখিত ও শর্তহীন আদেশ দেয় তাকে চেক বলে । | প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত যে লিখিত দলিলে কোন ব্যক্তিকে বা বাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ভবিষ্যত কোন তারিখে প্রদানের জন্য শর্তহীন আদেশ দেয়া হয় তাকে বিনিময় বিল বলে । |
প্রস্তুতকরণ | ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্দিষ্ট ছাপানো ফরমে চেক প্রস্তুত করা হয়। | ব্যবসায়ীর ছাপানো বিল ফরমে বা সাদা কাগজে বিনিময় বিল প্রস্তুত করা হয়। |
আদেষ্টা ও আদিষ্ট | আদেষ্টা আমানতকারী এবং আদিষ্ট ব্যাংক । | আদেষ্টা পাওনাদার এবং আদিষ্ট দেনাদার। |
প্রস্তুতকারী | আমানতকারী চেক কাটতে পারে । | পাওনাদার বিনিময় বিল প্রস্তুত করে। |
স্বাক্ষর | শুধু আমানতকারী বা আদেষ্টার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। | আদেষ্টা ও আদিষ্ট বা স্বীকৃতিকারীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয় । |
স্বীকৃতি | চেকে কোন স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না । | বিলে আদিষ্ট বা তার প্রতিনিধির স্বীকৃতি প্রয়োজন। |
কপি | কেবল মাত্র এক কপি প্রস্তুত করা হয়। | একাধিক কপি প্রস্তুত করা হয়। বৈদেশিক বিনিময় বিল তিন কপি প্রস্তুত করা হয়। |
স্ট্যাম্প | আমাদের দেশে চেকে কোন স্ট্যাম্প লাগাতে হয় না । | মেয়াদী বিলে মূল্যানুসারে স্ট্যাম্প লাগাতে হয়। |
সংশ্লিষ্ট পক্ষ | এতে তিনটি পক্ষ থাকে। যথা আদিষ্ট ও প্রাপক , আদেষ্টা। | এতে চারটি পক্ষ থাকে। যথা - আদেষ্টা, আদিষ্ট, স্বীকৃতিকারী ও প্রাপক । |
অনুমোদন | হুকুম চেক অনুমোদনের মাধ্যমে হস্তান্তর হলেও বাহকের চেক অনুমোদন ছাড়াই হস্তান্তর হয় । | সাধারণতঃ বিনিময় বিল অনুমোদনের মাধ্যমে হস্তান্তর হয় । |
বাট্টাকরণ | চেক কখনও বাট্টাকরণ করা যায় না । | মেয়াদী বিল মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বাট্টাকরণ ও পূণঃ বাট্টাকরণ করা যায়। |
অনুগ্রহ দিবস | কোন অনুগ্রহ দিবসের ব্যবস্থা নেই এবং প্রয়োজন হয় না । | মেয়াদী বিলের অর্থ পরিশোধের জন্য আদিষ্টকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও তিন দিন অতিরিক্ত সময় দেয়া হয় যাকে অনুগ্রহ দিবস বলে । |
নবায়ন | চেক নবায়নের কোন বিধান নেই । | মেয়াদ শেষে আদিষ্ট অর্থ পরিশোধে অপারগ হলে আদেষ্টার সম্মতিতে বিলের নবায়ন করা যায় । |
কার্যক্ষেত্র | অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে এর ব্যবহার ও কার্যক্ষেত্র সীমিত। | অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিনিময় বিলের কার্যক্ষেত্র বিস্তৃত । |
পরিশোধ | কোন ত্রুটি না থাকলে চাহিবামাত্র ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধিত হয় । | দর্শনী বিলের ক্ষেত্রে চাহিবামাত্র এবং মেয়াদী বিলের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর পরিশোধিত হয়। |
উদ্দেশ্য | নগদ অর্থ লেনদেনের ঝামেলা কমানোর জন্য চেক ব্যবহার করা হয়। | বাকীতে ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধার জন্য বিল ব্যবহার করা হয়। |
দাগকাটা | অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেকে দাগকাটার বিধান আছে । | বিনিময় বিলে নিরাপত্তার জন্য দাগকাটার কোন বিধান নাই । |
নোট ও প্রতিবাদকরণ | চেক অমর্যাদা হলে নোট প্রতিবাদকরণের প্রয়োজন হয় না । | বিল অমর্যাদা হলে নোটও প্রতিবাদকরণ প্রয়োজন হয়। |
ব্যবহারকারী | সব পেশার মানুষ চেক ব্যবহার করে । | শুধুমাত্র ব্যবসায়ী বিল ব্যবহার করে। |
রেফারি | প্রয়োজনে রেফারির নাম উল্লেখ চেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । | প্রয়োজনে রেফারি হিসাবে তৃতীয় পক্ষের নাম বিলে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান আছে। |
আরও পড়ুন :- আর্থিক ও উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.