চালানি কারবার কাকে বলে :-
মালিকের দায়িত্বে প্রতিনিধির মাধ্যমে কমিশনের বিনিময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে পণ্য প্রেরণ করে তা বিক্রয় করাকে চালানী কারবার বলে।অর্থাৎ উৎপাদনকারি কিংবা পাইকারি বিক্রেতা অথবা পণ্যের মালিক বা প্রেরক নিজ দায়িত্বে প্রতিনিধির (Agent) মাধ্যমে কমিশনের বিনিময়ে সময়মত নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের জন্য একস্থান হতে অন্যস্থানে পণ্য প্রেরণ করলে তাকে চালানি কারবার বা Consignment Business বলে।
যিনি পণ্য প্রেরণ করেন তাকে চালান প্রেরক (Consignor) এবং যিনি পণ্য গ্রহণ করেন ও বিক্রি করেন তাকে চালান প্রাপক (Consigner) বলা হয়। চালান প্রাপক প্রেরকের প্রতিনিধি হিসেবে পণ্য বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট হারে কমিশন পান। তিনি এক্ষেত্রে লাভ বা লোকসানের অংশ বহন করেন না।
উল্লেখ্য যে, চালানি পণ্যকে কখনও বিজ্ঞ বলা হয় না। কারণ পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয় মাত্র। চালান প্রাপক মোট বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে তার পাওনা, কমিশন, খরচ ও অগ্রিম প্রদত্ত অর্থ কেটে রেখে বাকী অর্থ চেক বা ব্যাংক এর মাধ্যমে চালান প্রেরকের নিকট পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন :- হিসাব চক্র কাকে বলে?
চালানি কারবারের বৈশিষ্ট্য :-
চালানি কারবার একটি বিশেষ ধরণের ব্যবসায়, যার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা বিশেষ দিক রয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেল্লখ করা হলো:১. মূখ্য ব্যক্তি (Principal) :
চালানি কারাবারে পণ্য প্রেরণকারী বিক্রেতা হিসেবে নয়, মূখ্যব্যক্তি বা Principal হিসেবে বিবেচিত হয়।
২. প্রতিনিধি (Agent) :
এরূপ কারবারে পণ্য প্রাপক ক্রেতা নয়, পণ্যের প্রেরকের প্রতিনিধি বা Agent হিসেবে পরিচিত।
৩. পণ্যের মালিকানা (Ownership of Goods) :
চালানি কারাবারে পণ্যের মালিকানা স্বত্ত্ব পণ্য প্রেরকেরই থাকে।
8. কমিশন (Commission) :
চালান প্রাপক প্রেরকের প্রতিনিধি হিসেবে পণ্য বিক্রয় করে থাকেন এবং নির্ধারিত হারে কমিশন পেয়ে থাকেন।
৫. ঝুঁকি (Risk) :
সাধারণত চালানি কারাবারে পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি জনিত ঝুঁকি পণ্য প্রেরককেই বহন করতে হয়।
৬. লোকসান ( Loss) :
চালানি কারাবারে পণ্য বিক্রয়ে লোকসান হলে প্রেরককেই (Consignor) তা বহন করতে হয়। প্রাপক (Consignce) কোনরূপ লোকসান বহন করে না।
আরও পড়ুন :- পাইকারী ব্যবসায় কাকে বলে?
চালানি কারবারের সুবিধা :-
আধুনিক যুগে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক জগতে চালানি কারবারের বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। এ সুবিধাগুলো আমরা চালান প্রেরক (Consignor) ও চালান প্রাপক (Consignee) এর দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথকভাবে আলোচনা করতে পারি। নিয়ে সুবিধাগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:ক) চালান প্রেরকের (Consignor) দৃষ্টিকোণ হতে সুবিধাসমূহ:
১. বিশাল বাজার সৃষ্টি চালানি কারবারের মাধ্যমে চালান প্রেরক দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে তার তৈরিকৃত পণ্যের ব্যাপক বাজার সৃষ্টি করতে পারে।
২. বিক্রয় প্রসার চালানি কারাবারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও পণ্যের ব্যাপক বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। এর ফলে পণ্যের বিক্রমও বৃদ্ধি পায়।
৩. দামি পণ্য বিক্রয়ের সুবিধা। সাধারণতঃ দামি পণ্যের বাজার সীমিত হয়। এক্ষেত্রে চালানি কারবার দামি পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৪. প্রতিযোগিতা হ্রাস চালান মূল্যে পণ্য প্রেরণ করা হলে চালান প্রাপক পণ্যের প্রকৃত মূল্য ও মুনাফার পরিমাণ জানতে পারে না। ফলে একই ধরনের ব্যবসায় প্রতিযোগি আসার সম্ভাবনা কম থাকে।
৫. বাড়তি মুনাফা চালান প্রেরক চালান প্রাপককে সামান্য কমিশনের বিনিময়ে বিক্রয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করতে পারে এবং এতে চালান প্রেরক বাড়তি মুনাফা অর্জনের সুবিধা পায়।
৬. মালিকানার সুবিধা চালানি কারবারে প্রেরিত পণ্যের মালিকানা স্বত্ত্ব পণ্য প্রেরকের নিকট থেকে যায়। ফলে পণ্য প্রেরক লাভজনক মূল্যে বিক্রয়ের জন্য যেকোনো সময় পণ্য প্রাপকের নিকট হতে পণ্য ফেরত নিতে পারে।
খ) চালান প্রাপকের (Consignee) দৃষ্টিকোণ হতে সুবিধাসমূহ:
১. বিনা পুঁজিতে ব্যবসায় চালানি কারবারে পণ্য প্রাপক কোনরূপ পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়াই নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রয়ের সুবিধা ভোগ করে।
২. মূল্যের উঠানামা চালানি কারবারে পণ্যের মূল্য হ্রাসজনিত কোন ক্ষতি চালান প্রাপককে বহন করতে হয় না। বরং মূল্য বৃদ্ধি পেলে প্রাপক চুক্তি মোতাবেক অতিরিক্ত কমিশন পেয়ে থাকে।
৩. কম ঝুঁকি পণ্যের সকল ঝুঁকি পণ্য প্রেরকের থাকে, ফলে কোনরূপ ঝুঁকি ছাড়াই প্রাপক পণ্য বিক্রি করে কমিশন লাভের সুবিধা পায়।
৪. পণ্য ফেরত দেয়ার সুযোগ প্রাপ্ত পণ্য সম্পূর্ণ বিক্রি না হলে অবিক্রিত পণ্য প্রেরককে ফেরত নিতে হয়। ফলে এরূপ অবিক্রিত পণ্যের জন্য প্রাপক দায় বহন করে না।
৫. খরচ আদায় করার সুযোগ। চালান প্রাপক পণ্যের জন্য যে পরিমাণ খরচ করে থাকেন, পরবর্তীতে তা বি অর্থ থেকে আদায় বা উদ্ধার করতে পারেন।
আরও পড়ুন :- কার্যপত্র কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.