অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কাকে বলে? অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কত প্রকার ও কি কি? অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য?

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কাকে বলে :-

যে সকল প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম তথা ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন বন্টন ও সহায়ক কার্যাবলীর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত না হয়ে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় সে সব প্রতিষ্ঠানকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলা হয়।

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলতে ঐ সব প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যা সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা প্রদান, জনকল্যাণ, সৃজনশীল ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন : স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পাঠাগার, ক্লাব, এতিমখানা, হাসপাতাল, মসজিদ ইত্যাদি।

এ সকল প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস হল সদস্যদের ভর্তি ফি, চাঁদা, দান, সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুদান ইত্যাদি। এদের কোন কোন কার্যক্রম থেকে মুনাফা অর্জিত হলেও তা জনকল্যাণে ব্যয় করা হয়।

সভ্যতার অগ্রগতি ও শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে মানুষের সামাজিক দায়িত্ববোধ ও চেতনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজবদ্ধ মানুষ সমষ্টিগত কল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণতঃ অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তুলছে।

ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনবিদ, হিসাববিদ প্রভৃতি পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করে না বলে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আওতাভূক্ত।

অতএব অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলতে সামাজিক ও জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যা ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও মুনাফা অর্জনের জন্য পরিচালিত হয় না।
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কাকে বলে

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কত প্রকার ও কি কি :-

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বিবেচনা করে এদের দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

১. অমুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান :

যে সমস্ত অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন বণ্টন ও সহায়ক কার্যাবলীর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় না বরং সেবাদান ও জনকল্যাণের জন্য নিবেদিত তাদের অমুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে।

অমুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল

আরও পড়ুন :- বিনিময় বিল কাকে বলে?

ক. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :

মক্তব, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ। তরুন, কিশোর ও যুবকদের শিক্ষিত করে তাদের জ্ঞান-ভান্ডার, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষিত জনশক্তিকে মানব সম্পদে রূপান্তর করাই এ সব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।

খ. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :

মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলে। এ জাতীয় অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকান্ড মানুষের কল্যাণের জন্য পরিচালিত হয়। এদের সংস্পর্শে মানুষ স্রষ্টাও সৃষ্টি সম্পর্কে সচেতন হয় এবং শান্তি প্রিয় ও সুশৃংখল জীবে পরিণত হয়।

গ. হাসপাতাল ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান :

হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিংহোম, দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র প্রভৃতি এ শ্রেণীতে পড়ে। এ সকল প্রতিষ্ঠান অসহায় ও অসুস্থ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে।

ঘ. দারিদ্র বিমোচন ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান :

রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বয়েজ স্কাউট, মুসলিম এইড, রাবেতা আলমে ইসলামী ইত্যাদি এ শ্রেণীর আওতাভুক্ত। বন্যা, জলচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, মহামারী, যুদ্ধ, দাঙ্গা ইত্যাদির কারণে অনেক সময় মানুষ গৃহহারা ও অসহায় হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় এই শ্রেণীর অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ঔষধপত্র, ত্রাণ সামগ্রী ও গৃহায়নের ব্যবস্থা করে থাকে।

ঙ. সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান :

এতিমখানা, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র, অন্ধকল্যাণ সমিতি, মসজিদ মিশন, লায়ন্স ক্লাব ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সমাজ কল্যাণমূলক কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে।

চ. বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান :

ক্লাব, সাহিত্য সংস্থা, ক্রীড়া সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ইত্যাদি বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

ছ. এন.জি.ও :

বর্তমান যুগে উন্নয়নশীল দেশসমূহে কিছু এনজিও (বেসরকারী প্রতিষ্ঠান) যেমন : আগাখান উন্নয়ন তহবিল, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, আদ্দিন, কেয়ার, সিডা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান অমুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।

২. মুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান :

যে সব অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন-বণ্টন ইত্যাদি ব্যবসায়ী কর্মকান্ডে নিয়োজিত না হয়েও মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় তাদের মুনাফাভোগী অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে। যেমন - নার্সিং হোম, হিসাববিদ সংঘ, ব্র্যাক ইত্যাদি। এদেরকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে বর্ণনা দেওয়া হল -

ক. পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান :

এ জাতীয় অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বস্তুগত লেনদেন করে না কিন্তু পেশাগত সেবা ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে এবং অর্জিত মুনাফা ভোগ করে। যেমন : আইনজীবি, প্রকৌশলী, হিসাববিদ, ডাক্তার ইত্যাদি পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান।

খ. এন.জি.ও :

ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, মাইডাস ইত্যাদি এনজিও কিছুটা সেবার পাশাপাশি মুনাফা অর্জন করে থাকে। বিদেশী সাহায্যে সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অল্প সুদে তহবিল সংগ্রহ করে এবং বেশী সুদে গরীব মানুষদের ধার দেয় ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রকল্পে অংশ গ্রহন করে।


অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য -

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কোন ব্যবসায় সংক্রান্ত কাজ করে না এবং মুনাফা অর্জন করা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য নিম্নে বর্ণনা করা হল :

১. জনকল্যাণ :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সভ্যদের, সমাজের ও দেশের কল্যাণ সাধনে কাজ করে।

২. অব্যবসায়ী কার্যক্রম :

ব্যবসায়ী কার্যক্রম বলতে ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন-বণ্টন ও সহায়ক কার্যাবলী বুঝায়। অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। অব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

৩. উদ্দেশ্য :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষাবিস্তার, সেবা প্রদান, সৃজনশীল ও বিনোদনমূলক কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্য অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়।

৪. ব্যয় নির্বাহ :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সাধারনতঃ ব্যয় নির্বাহের জন্য সদস্যগণের চাঁদা, ভর্তি ফি, দান, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুদান ইত্যাদি উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থের উপর নির্ভর করে।

৫. স্থায়ী সম্পদ সংগ্রহ :

এ সকল প্রতিষ্ঠান স্থায়ী সম্পদের বেশীর ভাগ দান ও অনুদানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

৬. সম্পদের তত্ত্বাবধান : 

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সম্পদ অর্জন ও সংরক্ষণের চেয়ে প্রাপ্ত সম্পদের তত্ত্বাবধান করার প্রতি বেশী গুরুত্ব দেয়।

৭. পরিচালনা :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সর্বাবস্থায় সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকরীতি অনুসরণ করা হয়।

৮. মূলধন তহবিল :

এ সকল প্রতিষ্ঠানের কার্য পরিচালনার পুঁজিকে বা সম্পত্তি ও দায়ের পার্থক্যকে মূলধন তহবিল বলে। মূলধন তহবিলকে নীট সম্পত্তিও বলা হয়।

৯. শ্রেণী বিভাগ :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বিবেচনা করে মুনাফাভোগী ও অমুনাফাভোগী এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

১০. হিসাব :

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হিসাব পদ্ধতি থেকে পৃথক। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মত সাধারণ জাবেদা, খতিয়ান, রেওয়ামিল, লাভ-লোকসান হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র ইত্যাদি তৈরী করা যায় না। সাধারণতঃ প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব, আয়-ব্যয় হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ