অভিক্ষেপ কাকে বলে? অভিক্ষেপ কত প্রকার ও কি কি? মানচিত্র অভিক্ষেপের ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য?

মানচিত্র হচ্ছে হ্রাসকৃত স্কেলে সমতল কাগজের ওপর সম্পূর্ণ পৃথিবীর বা এর অংশবিশেষের প্রতিভূ বা অবিকল প্রতিচ্ছবি। পৃথিবী বর্তুলাকার। ফলে বর্তুলাকার পৃথিবীকে হুবহু সমতলে বিছানো সম্ভব নয় এবং স্বাভাবিকভাবেই কোন সমতল কাগজে আঁকা যাবে না। তবে বর্তুলাকার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা রয়েছে। পৃথিবী বা এর অংশবিশেষের মানচিত্র সমতল পৃষ্ঠে আঁকতে হলে আমাদেরকে পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক অক্ষরেখা এবং উত্তর দিকে বিস্তৃত কাল্পনিক দ্রাঘিমা রেখাগুলোর সাহায্য নিতে হবে।

অভিক্ষেপ কাকে বলে :-

অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোকে ভূগোলক থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সমতল পৃষ্ঠে বিন্যস্ত মানচিত্র অভিক্ষেপকরে সঠিক ও নির্ভুলভাবে মানচিত্র আঁকা সম্ভব। অতএব, ভূগোলকের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোকে সমতল পৃষ্ঠে স্থানান্তরিত করার বিভিন্ন পদ্ধতিকে মানচিত্র অভিক্ষেপ বলে।

মানচিত্র অভিক্ষক্ষেপে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলো জালের মত ছক তৈরি করে। এই ছককে ইংরেজীতে 'গ্রাটিকুল' বলে। মানচিত্র অভিক্ষেপ বলতে মূলত এই জালের মত ছককেই বোঝায়।

মানচিত্র অভিক্ষেপের ব্যবহার :-

সমগ্র পৃথিবী বা পৃথিবীর অংশবিশেষের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক মানচিত্র সঠিকভাবে আঁকার জন্য মানচিত্র অভিক্ষেপ ব্যবহার করা হয়। বৃহৎ স্কেলে অনেক বড় পরিধির ভূগোলক বহন বা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক অসুবিধা হতো। 

আরও পড়ুন:- অভিগমন কি?

এ ছাড়া ভূগোলকের কোন অংশের বা অঞ্চলের কোন বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা বা দূরত্ব পরিমাপ করাও সম্ভব নয়। কাজেই মানচিত্রের উদ্দেশ্য ও স্কেল অনুসারে বিভিন্ন প্রকার মানচিত্র অভিক্ষেপ পদ্ধতি বিকাশ লাভ করেছে এবং মানচিত্র অংকনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অভিক্ষেপের বৈশিষ্ট্য :-

অভিক্ষেপের প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনটি। যথা

১. সমতলের উপর অভিক্ষেপ অয়ন করা হয়।

২. অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে অভিক্ষেপ অঙ্কন করা হয়।

৩. পৃথিবীর প্রকৃতি আনুপাতিকহারে হ্রাস করে বা নির্দিষ্ট স্কেলে অঙ্কন করা হয়।
অভিক্ষেপ কাকে বলে

অভিক্ষেপ কত প্রকার ও কি কি :-

অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা সমন্বিত ভূ-গোলক (Globe) হচ্ছে পৃথিবীর অবিকল আকৃতি বুঝানোর উপযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির গোলক। কাঁচ, প্লাস্টিক বা অনুরূপ কোনো স্বচ্ছ পদার্থ দ্বারা তৈরি। এই ভূ-গোলকটির মধ্য দিয়ে আলো জালিকে ভূ-গোলকটিকে একখন্ড কাগজের মাধ্যমে ঢেকে দেয়া হলে কাগজের উপর কৃত্রিম অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার ছায়া পতিত হয়। এই ছায়ারেখাগুলোই ভূ-গোলকের অভিক্ষেপ।

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কাগজটিকে এককভাবে ভূ গোলকের উপর স্থাপন করা সম্ভব নয়। এ কারণে বিভিন্ন অবস্থায় অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলোর ছায়া বিভিন্ন ধরনের হয়। ভূগোলকের উপর কাগজকে তিনভাবে স্থাপন করা হয় বলে অভিক্ষেপ প্রধানত তিন প্রকার। যথা

১. শীর্ষদেশীয় বা মেরুদেশীয় অভিক্ষেপ (Zenithal Projection)

২. শাঙ্কব অভিক্ষেপ (Conical Projection) এবং

৩. বেলন অভিক্ষেপ (Cylindrical Projection)


১. শীর্ষদেশীয় বা মেরুদেশীয় অভিক্ষেপ :-

ভূগোলকের সাথে কাগজ সমতলভাবে স্থাপন করে যে অভিক্ষেপ অঙ্কন করা হয় তাকে শীর্ষদেশীয় অভিক্ষেপ (Zenithal Projection) বলে।

এই অভিক্ষেপে মেরু বিন্দুতে, নিরক্ষীয় অঞ্চলে অথবা অন্য কোনো স্থানে সমতলভাবে কাগজ স্থাপন করে অভিক্ষেপ করা হয় বলে শীর্ষদেশীয় অভিক্ষেপ প্রধানত তিন প্রকার। যথা-

(ক) মেরুদেশীয় (Polar) অভিক্ষেপ

(খ) নিরক্ষীয় (Equatorial) অভিক্ষেপ এবং

গ) তীর্যক (Oblique) অভিক্ষেপ।

অভিক্ষেপে আলোর অবস্থান এবং উজ্জ্বলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলোক রশ্মির অবস্থান এবং সমতলভাবে কাগজটি যে বিন্দুতে অবস্থান করে তার উপর নির্ভর করে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলোর কেন্দ্রে বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে বা কোনো একটি বিন্দুতে অবস্থান করতে পারে। আলোক রশ্মির এইরূপ তিন ধরনের অবস্থানের জন্য মেরুস্থানীয় অভিক্ষেপকে আবার তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা

ক. নমোনিক বা কেন্দ্রিয় অভিক্ষেপ (Gnomonic Projection) :

এই অভিক্ষেপে আলোক রশ্মি ভূগোলকের কেন্দ্রে অবস্থান করে।

খ. স্টেরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ (Stereographic Projection) :

যখন আলোক রশ্মি সমতলভাবে স্থাপিত কাগজটির ঠিক বিপরীতে বা ভূগোলকের উপর যে কোন বিন্দুতে অবস্থান করে তাকে স্টেরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ বলে ।

আরও পড়ুন:- জরিপ কাকে বলে?

গ. অর্থোগ্রাফিক অভিক্ষেপ (Orthographic Projection) :

এই অভিক্ষেপে আলোক রশ্মি গুলো পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে।

২. শাঙ্কব অভিক্ষেপ (Conical Projection) :

ভূগোলকটিকে যখন কোনো কাগজের শাঙ্করের ভিতর স্থাপন করে অভিক্ষেপ অঙ্কন করা হয়, তাকে শাঙ্কর অভিক্ষেপ বলে।

৩. বেলন অভিক্ষেপ (Cylindrical Projection) :

ভূগোলকটিকে কোনো বেলন বা নলের মধ্যে স্থাপন করে বেলনের উপর ভূগোলকের ছায়া প্রতিফলিত করে যে অভিক্ষেপ করা হয় তাকে বেলনাকার বা নলাকার অভিক্ষেপ বলে।

ভূ-পৃষ্ঠের সঠিক মানচিত্র অঙ্কন করার জন্য অভিক্ষেপ করার সময় আয়তন, আকৃতি, স্কেল ও দিক প্রভৃতি লক্ষ্য রাখতে হয়। তাই এই সকল উপাদানের উপর নির্ভর করে অভিক্ষেপকে পুণরায় চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-

১. সম আয়তন বিশিষ্ট অভিক্ষেপ (Equal Area Projection)

২. সঠিক আকৃতিবিশিষ্ট অভিক্ষেপ (Orthomorphic Projection)

৩. সমদূরবর্তী অভিক্ষেপ (Equidistant Projection)

৪. সঠিক দিকবিশিষ্ট অভিক্ষেপ ( Azimuthal Projection

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ