যোগাযোগ কাকে বলে ও কত প্রকার ও কি কি? যোগাযোগের গুরুত্ব?

Communication শব্দটি একটি ল্যাটিন ঝ কমিউনিস (Communis) থেকে এসেছে। কমিউনিস শব্দটির অর্থ হচ্ছে সাধারণ। তাই যোগাযোগ বলতে দুই বা ততোধিক বাক্তির মধ্যে তথ্যাদি বিনিময়ের মাধ্যমে সাধারণ সমঝোতায় পৌঁছানোকেই বুঝায়।

মানব জীবনে 'যোগাযোগ' প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জন্মলগ্ন হতে চির শায়িত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগের মধ্যেই অতিবাহিত করতে হয়।

সামাজিক জীবন বলুন, ধর্মীয় জীবন বলুন, অর্থনৈতিক জীবন বলুন, রাজনৈতিক জীবন বলুন, যেরূপ জীবনের কথাই বলুন না কেন, পারস্পরিক নির্ভরতা থাকলে সেখানে আপনাকে যোগাযোগ করতেই হবে। নতুবা জীবন অচল হয়ে পড়বে।

এ যোগাযোগ আপনি অনেকভাবে করতে পারেন- কথা বলে, শব্দ করে, কেঁদে, হেসে, মুখ বাঁকা করে, নাক কুঁচকিয়ে, ভ্রু নেড়ে, কপালের রেখা কুঝান করে, অঙ্গভঙ্গি করে, গলা খাঁকারি দিয়ে, আরও কতো কী!

আরও পড়ুন :- ব্রান্ডিং কি?

আপনি যদি ব্যবসায়ী হন কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তবে আপনাকে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে কাটাতে হবে। আর যেহেতু প্রতিষ্ঠান একই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য অনেকগুলো মানুষের সমাহার সেখানে আপনাকে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করতে হবে, কথাবার্তা বলতে হবে, ঊর্ধ্বতনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে, অধীনস্থ লোকদের সাথেও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সংযোগ রক্ষা করতে হবে।

অর্থাৎ লিখে হোক অথবা পড়ে হোক, আপনাকে যোগাযোগ করতেই হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে আপনি এই যে যোগাযোগ করছেন, এটাই ব্যবসায় যোগাযোগ। এ যোগাযোগে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে হবে। তবেই প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে আপনি অবদান রাখতে পারবেন- আপনার অবদান স্বীকৃত হবে।
যোগাযোগ কাকে বলে

যোগাযোগ কাকে বলে :- 

সাধারণভাবে 'যোগাযোগ (communication) বলতে কথাবার্তা, পত্র বা সংবাদাদির সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করাকে বোঝায়। দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে চিন্তাধারা, বিশেষ ঘটনার বিবরণ, অনুভূতি বা মতামত বিনিময় হলে তাকে 'যোগাযোগ' নামে অভিহিত করা হয়।

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই বা অধিক সংখ্যক ব্যক্তি অথবা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অথবা এক প্রতিষ্ঠান ও আরেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংবাদ আদানপ্রদান হয় তাকে যোগাযোগ বলা হয়।

তাহলে এখন প্রশ্ন আসে ব্যবসায়িক যোগাযোগ কী?

ব্যাবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত খবরাদির আদানপ্রদান হলে তাকে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বলা হয়।

তবে বাইরের লোকের সাথে যোগাযোগের বিষয়বস্তু ব্যবসায় সংক্রান্ত হলেই তা ব্যবসায় যোগাযোগের সংজ্ঞায় পড়বে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যবসায় সংক্রান্ত যোগাযোগ অর্থপূর্ণ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন :- সেবা কাকে বলে?

যোগাযোগ কত প্রকার ও কি কি:-

যোগাযোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিম্নে বিভিন্ন শ্রেণির যোগাযোগের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

১. সমান্তরাল যোগাযোগ (Horizontal communication) :-

বিভিন্ন বিভাগের একই মর্যাদা বা প্রায় একই মর্যাদাসম্পন্ন লোকজনের মধ্যে যে যোগাযোগ হয় তাকে সমান্তরাল যোগাযোগ বলা হয়।

সমমর্যাদা বা সমপর্যায়ের লোকজন, বিভিন্ন বিভাগ বা বিভিন্ন শাখার মধ্যে সংবাদ বিনিময়ের প্রক্রিয়া সমান্তরাল যোগাযোগ নামে পরিচিত।

মনে করুন, বিক্রয় বিভাগের হিসাবরক্ষক উৎপাদন বিভাগের হিসাবরক্ষকের নিকট একটি তথ্য চেয়ে চিঠি দিল। স্থাপক হিসাবরক্ষক সেই তথ্য জানিয়ে জনা বিভাগের হিসাবরক্ষকের নিকট আরেকটি চিঠি (প্রত্যুত্তর) পাঠাল। এ যোগাযোগটি সমান্তরাল যোগাযোগ হবে, কারণ দুজনই একই পদমর্যাদা সম্পন্ন।

২. লম্বিক যোগাযোগ (Vertical communication) :-

এখানেও দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে একজনের পদমর্যাদা আরেক জনের চেয়ে উচ্চমানের হয়। এ ধরনের যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ ঊর্ধ্বগামী এবং নিম্নগামী দুরকমেরই হতে পারে।

এ প্রেক্ষাপটে বলা যায় ঊর্ধ্বগামী এবং নিম্নগামী যোগাযোগের সমন্বয়ে লম্বিক যোগাযোগ তৈরি হয়।

৩. ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward communication) :-

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ নিম্নগামী যোগাযোগেরই বিপরীত গতি প্রবাহ। নিম্নগামী যোগাযোগে তথ্যের স্রোতধারা ওপর থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়, আর ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগে তা নিচ থেকে ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়।

অধীনস্থ কর্মচারীরা যখন তাদের বসের সাথে সংবাদ বিনিময় করে বা নিম্নপদস্থ লোকজন যখন উচ্চপদস্থ যে কোনো লোকজনের সাথে তথ্য বিনিময় করে তখন সেই সংবাদ বা তথ্য-বিনিময় ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ নামে অভিহিত হয়।

৪. নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward communication) :-

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে যে যোগাযোগ স্থাপন করে, তাকে নিম্নগামী যোগাযোগ বলা হয়। এরূপ যোগাযোগে সংবাদাদি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ধাপ থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন মধ্যবর্তী পর্যায়ে ঘুরে প্রতিষ্ঠানের নিম্নতম ধাপে পৌঁছে।


৫. অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ (Internal communication) :-

একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বিভিন্ন অফিসার বা কর্মচারীদের মধ্যে যেসব লিখিত ও মৌখিক সংবাদ বিনিময় হয় তাকে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বলা হয়।

৬. বাহ্যিক যোগাযোগ (External communication) :-

অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ন্যায় বাহ্যিক যোগাযোগও একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই বাইরের জগতের সাথে বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ করে থাকে। বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং কোম্পানি, বিমা কোম্পানি, সরকারি এজেন্সি, চেম্বার অব কমার্স, বিভিন্ন পাওনাদার ও দেনাদার, শেয়ারহোল্ডার প্রমুখের সাথে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতে হয়।

৭. আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Formal communication) :-

প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যে সমস্ত তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়া সাংগঠনিকভাবে অনুমোদিত হয় তাকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলে।

৮. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Informal communication) :-

প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বা বাইরে প্রতিষ্ঠানের বিষয়াদি সম্পর্কিত যেসব যোগাযোগ হয় যা সাংগঠনিকভাবে অনুমোদিত নয় বা যা আনুষ্ঠানিকভাবে করা যায় না, তাকে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলা হয়।

যোগাযোগের গুরুত্ব :-

সমাজ জীবনে যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। যোগাযোগের গুরুত্ব বেশি অনুভূত হয় যখন প্রয়োজনীয় তথ্য যথাসময়ে পাওয়া যায় না। যেমন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যোগাযোগ মানুষকে জীবিকার পথ বেছে নিতে সাহায্য করে, পণ্যের চাহিদা ও বাজার দর পেতে সাহায্য করে, ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনায় সাহায্য করে, নতুন প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে বিস্তারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্যানে সহাযাত্রা করে।

সামাজিক ক্ষেত্রেও যোগাযোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগের মাধ্যমে অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত মানুষ অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থাদির মাধ্যমে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষালাতে উদ্বুদ্ধ হয়। যোগাযোগ মানুষের চিরাচরিত পুরাতন ধারনা পরিবর্তনে অবিরাম প্রভাবিত করে। ফলে মানুষ উত্তরোত্তর সামাজিক উন্নয় সাধন করে।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও যোগাযোগ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পক্রিন ও ফলপ্রসু যোগাযোগের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনাদি সাধারণ মানুষের নিকট সহজেই পৌঁছানো যায়। অপরপক্ষে মানুষের সমস্যাদি সরকারের দৃষ্টিগোচর করা সম্ভব হয়, ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ