ওয়াইম্যাক্স কি :-
WiMAX-এর পূর্ণরূপ হলো World Wide Interoperability for Microwave Access. বহনযোগ্য কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সুবিধাকে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি বলে।এটি একটি তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি। এটি IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক। ২০০১ সালের এপ্রিলে ওয়াইম্যাক্সের জন্ম হয়।
বিভিন্ন প্রকার ইন্টারনেট সেবার মধ্যে স্বল্প ব্যয়ে সীমিত আয়তনের এলাকায় ওয়াইম্যাক্স একটি সহজ ও সুবিধাজনক প্রযুক্তি।
এটি ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (ম্যান)-এর মতো এবং এর গতি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মতোই গতিসম্পন্ন অথচ ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। তবে ব্রডব্যান্ড ওয়াইম্যাক্স পদ্ধতির দুটি প্রধান অংশ থাকে। যথা -
১. বেজ স্টেশন :-
ইনডোর ও আউটডোর টাওয়ার নিয়ে গঠিত। বেজ স্টেশনগুলো একটি ওয়াইম্যাক্স হাব বা সুইচের সাথে যুক্ত থেকে নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়।
আরও পড়ুন:- ওয়াইফাই কাকে বলে?
২. ওয়াইম্যাক্স রিসিভার :-
এর সঙ্গে একটি অ্যান্টেনা থাকে এবং এটিই কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এর কভারেজ এরিয়া 10 থেকে 60 কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ওয়াইম্যাক্স কত প্রকার ও কি কি :-
ওয়াইম্যাক্স সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স ও
- মোবাইল ওয়াইম্যাক্স
ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স :-
ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স IEEE 802.16d স্ট্যান্ডার্ডের এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 10 GHz থেকে 66 GHz । এ ধরনের সংযোগের জন্য গ্রাহক প্রান্তে একটি রিসিভার টাওয়ার বা অ্যান্টেনা বসানো থাকে এবং ওয়াইম্যাক্সের ব্যান্ডইউডথ মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের তুলনায় বেশি থাকার পরও মোবালিটি না থাকার কারণে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি।মোবাইল ওয়াইম্যাক্স :-
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স IEEE 802.16e স্ট্যান্ডার্ডের এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 2 GHz থেকে 11 GHz । এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রান্তে মূলত এজ মডেম ব্যবহৃত এবং ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ট্রান্সমিশনের কারণে সিগন্যাল যেকোনো জায়গায়, অর্থাৎ বাসার ভেতরে বা বাইরে অনায়াসে চলাচল করতে পারে।তবে এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে ওয়াইমাক্সের বেজ স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থান করতে হয়। অন্যথায় রেডিও সিগন্যাল লস বা ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মোবাইল ওয়াইম্যাক্স সার্ভিসের ক্ষেত্রে সার্ভিস প্রোভাইডারদেরকে অধিকসংখ্যক বেজ স্টেশন স্থাপন করতে হয়।
ওয়াইম্যাক্সের বৈশিষ্ট্যসমূহ :-
- এটি IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক।
- কভারেজ এরিয়া সাধারণত 10 থেকে 60 কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- সাধারণত নেটওয়ার্কের জন্য কোনো প্রকার ক্যাবল বা তারের প্রয়োজন হয় না।
- নেটওয়ার্কে সহজে নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত করে নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়ানো যায়।
- ডেটা ট্রান্সফারের রেট সাধারণত 80 Mbps থেকে 1 Gbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- ফুল ডুপ্লেক্সিং মোড ব্যবহৃত হয়।
- এটি সাধারণত 2 GHz 66 GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। তবে Non Line of Sight-এর জন্য ফ্রিকোয়েন্সি
- রেঞ্জ 2 GHz থেকে IT GHz এবং Line of Sight-এর জন্য ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 2 GHz থেকে 66 GHz ।
- সিগন্যাল নয়েজ (SNR-signal to noise ratio) সর্বোচ্চ 7 dB (decibel)।
- বাধামুক্ত সিগন্যাল ট্রান্সফারের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন সুবিধা আছে।
- ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন হতে পারে। ওয়াইম্যাক্স কানেকশন ওরিয়েন্টেড MAC প্রোটোকল ব্যবহার করে ইত্যাদি।
ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা :-
১. অধিক নিরাপদ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা।২. তারের নেটওয়ার্কে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা মেরামতের প্রয়োজন হয় কিন্তু ওয়াইম্যাক্সে সে ঝামেলা নেই।
৩. যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও এখানে বিনিয়োগ এককালীন। সেদিক দিয়ে খরচ অনেক কম।
৪. এর যোগাযোগের আওতা অনেক বেশি হওয়ায় (১০ থেকে ৬০ কিলোমিটার) পথে-ঘাটে যেকোনো জায়গা থেকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব।
৫. ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআটি ব্যবহার করে যোগাযোগ হয় আরো সহজে।
৬. শতাধিক ব্যবহারকারী একক বেজ স্টেশন ব্যবহার করতে পারে।
৭. কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
৮. একই সাথে মাল্টিফাংশনালি সুবিধা পাওয়া যায়।
ওয়াইম্যাক্সের অসুবিধা :-
১. অধিক ব্যয়বহুল।২. দূরত্ব বেশি হলে একাধিক বেজ স্টেশনের প্রয়োজন হয়।
৩. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
৪. ঝড়-বৃষ্টিতে সিগন্যালের সমস্যা দেখা দেয়।
৫. বিদ্যুৎ খরচ অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় বেশি।
৬. নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ব্যান্ডউইথ কমে যায়।
৭. অন্যান্য ডিভাইস কর্তৃক সিগন্যাল জ্যামের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন :- স্প্রেডশিট কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.