ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট একটি সার্বজনীন বিষয়। মানব জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই কোনো না কোনভাবে ব্যবস্থাপনার অস্তিত্ব বিরাজমান মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের যেমন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যকীয়, তেমনি ব্যবসায় সংগঠন, রাষ্ট্র পরিচালনায়, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামরিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও ব্যবস্থাপনা এক অপরিহার্য বিষয়।
ব্যবস্থাপনা কোনো ব্যক্তির জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োগযোগ্য তেমনি পারিবারিক ক্ষেত্রে, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রয়োগ করা যায়।
নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে ব্যক্তি জীবনকে যেমন সমৃদ্ধশালী করা যায় তেমনি সামাজিক সংগঠন। যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি, ধর্মীয় সংগঠন পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার রীতিনীতি অনুসরণযোগ্য।
আবার উৎপাদন, বণ্টন, পরিবহন, ব্যাংকিং, বিমা, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি ব্যবসায়িক কার্যে জড়িত সংগঠনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকলে সফলতার সাথে ব্যবসায় কার্য পরিচালনা করা যায় না। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে এ পোস্টে আমরা ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা কাকে বলে ও কত প্রকার? সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
তবে কালের বিবর্তনে এটা মূলত মানব জাতিকে পরিচালনার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পরের শব্দ দু'টি অর্থাৎ Manage ও Manager এর অর্থ হলো যথাক্রমে 'পথ প্রদর্শক'’ ও ‘পরিচালক' যার সাথেও ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট মিল রয়েছে। ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন কাজের মধ্যে তার অধীনস্থদের নেতৃত্ব প্রদান ও পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
প্রশ্ন হতে পারে প্রয়োজনীয় সম্পদগুলো কী? প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ, বস্তুগত সম্পদ, আর্থিক সম্পদ ও তথ্য সম্পদ হলো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সম্পদ। আর এ সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মসংস্থান, নির্দেশনা ও নেতৃত্বদান, সমন্বয় সাধন, প্রেরণা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা বিশারদগণ ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখা করেছেন। এবার আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol) ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে? এর উত্তরে বলেন, "ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, সংগঠিত করা, নির্দেশ প্রদান, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।"
জর্জ আর, টেরি (George R. Terry) ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? এর উত্তরে বলেছেন, "ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি স্বতন্ত্র সামাজিক প্রক্রিয়া যা মানুষ ও সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের নিমিত্তে পরিকল্পনা, সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত।"
১. মুনাফা অর্জন ও মুনাফা সর্ব্বোচ্চকরণ :-
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য প্রথমত মুনাফা অর্জন করা এবং দ্বিতীয়ত বছর বছর মুনাফার পরিমাণ যতটা সম্ভব বৃদ্ধি করা। মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যম ব্যবস্থাপনা মালিকের পক্ষের সম্পদ বৃদ্ধি করে।
২. ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ :-
মুনাফার একটি অংশ ব্যবসায়ের সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ করা ব্যবস্থাপকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। ফলপ্রসূত ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের সফল সম্প্রসারনের সহায়ক।
৩. সম্পদের ফলপ্রসূত ব্যবহার :-
প্রতিষ্ঠানের মানবীয় ও অমানবীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ফলে প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধশালী হয়।
৪. মানব সম্পদের উন্নয়ন :-
প্রতিষ্ঠানে সঠিক কর্মী নিয়োগদান ও তাদের সক্ষমতা উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার আরেকটি উদ্দেশ্য। নিয়োগকৃত কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
৫. শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা :-
প্রতিষ্ঠানে যাতে কর্ম-অসন্তোষ দেখা না দেয় তার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত ব্যবস্থাপকেরা চৌকষ নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কর্ম-পরিবেশ আনন্দদায়ক করে রাখে।
৬. পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন :-
উৎপাদিত পণ্য ও সেবার গুণগত মান সমুন্নত রাখাও ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য। ব্যবস্থাপনীয় কার্যাবলির মাধ্যমে ভালো মানের পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। একই সাথে সেবার মানও উন্নত করা হয়।।
৭. সমন্বয়সাধন :-
সাবলীল যোগাযোগের মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করার জন্য ব্যবস্থাপনা প্রচেষ্টা চালায়। কারণ ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য হলো আন্তঃবিভাগীয় সমস্বয়সাধন করা।
৮. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি :-
সুনাম ব্যতীত সাফল্যের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। তাই ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনগণের সাথে জনসংযোগের মাধ্যমে এবং উঁচুমানের পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করা।
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পর্কে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন রকম মতামত দিয়েছেন। তবে আধুনিক লেখকদের মতে ব্যবস্থাপনার মুখ্য কাজ চারটিঃ পরিকল্পনা, সংগঠন, নেতৃত্বদান ও নিয়ন্ত্রণ।
এগুলোর ভেতরে আরও প্রাসঙ্গিক কাজ রয়েছে। যেমন কর্মীসংস্থান, বেষণা ও সমন্বয়সাধন ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনার কার্যসমূহ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদিত হয় বিধায় এগুলোকে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াও বলা হয়।
১. পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা :-
লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে অতীত ও বর্তমানের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি পূর্বাভাস প্রণয়ন করতে হয়। কার্যকর ও নিপুণ পূর্বানুমানের উপর পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ নির্ভর করে। আর ভবিষ্যতে কোন কাজ কোথায়, কখন, কিভাবে, কার দ্বারা সম্পাদন করা হবে তার পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই পরিকল্পনা।
ধরুন, আপনাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীদেরকে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সফরে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হবে, কখন, কিভাবে এবং কত সময়ের জন্য যাওয়া হবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। আর এটাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান কাজ। মূলত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কে, কখন, কোথায়, কিভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে কোন কাজ সম্পন্ন করবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করার নামই পরিকল্পনা।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও নীতি নির্ধারণ, প্রকল্প গ্রহণ, কৌশল, পলিসি ও কর্মসূচী নির্ধারণ, বাজেট প্রণয়ন প্রভৃতি পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তার অতীত অভিজ্ঞতা, বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং এর সামর্থ্য ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিকল্পসমূহ হতে সর্বোত্তমটি বেছে নেয়।
২. সংগঠিতকরণ :-
সংগঠন হচ্ছে গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার কৌশল। তাই বলা যায় কোন প্রতিষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্য নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন প্রকৃতির কার্যাবলীকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা, অতঃপর কার্য সম্পাদনে বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব কি হবে, তাদেরকে কতটুকু কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দিতে হবে তা নির্ধারণ করা, অবশেষে যে সব ব্যক্তি বিভাগ অথবা উপবিভাগ থাকবে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কি হবে তা নির্ধারণ করাই হচ্ছে সংগঠন।
এ সমস্ত কার্যকে যখন কোন কাঠামো বা রূপরেখায় প্রকাশ করা হয় তখন তাকে সংগঠন কাঠামো বলে।
৩. কর্মীসংস্থান :-
সংগঠিতকরণের পরের কাজটি হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ করা। ব্যবস্থাপনাকে সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শ্রমিক-কর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ, উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন, নিয়োগদান, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ইত্যাদি কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়।
৪. নির্দেশনা ও নেতৃত্বদান :-
প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীদেরকে নির্দেশ প্রদান করতে হয়। কর্মীরা কোন কাজ কখন করবে, কিভাবে করবে এ সম্পর্কিত আদেশ প্রদানকেই সাধারণভাবে নির্দেশনা বলে।
নেতা হিসেবে ব্যবস্থাপক কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করেন, প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করেন, তত্ত্বাবধান করেন, সর্বোপরি তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। তাই নির্দেশনা হলো ব্যবস্থাপনার সঞ্জীবনী শক্তি।
৫. প্রেরণা (Motivation) :-
কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ জাগত করার প্রক্রিয়াকে প্রেরণা বলে।
কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা, আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ ইত্যাদি সঠিক বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন আর্থিক ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে কর্মীদেরকে কার্যে প্রেরণা দেওয়া হয়। প্রেরণার মাধ্যমে কর্মী পূর্ণ উদ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে।
৬. সমন্বয়সাধন :-
সমন্বয়সাধন হলো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের প্রক্রিয়া। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এতে কাজে ভারসাম্য আসে, শৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং উন্নত সেবা নিশ্চিত করে দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সমন্বয়সাধন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা সংগঠনের সকল বিভাগের কাজের মধ্যে মিলন ঘটায়।
9. নিয়ন্ত্রণ :-
ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হল নিয়ন্ত্রণ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম ঠিকমত সম্পাদন করা হচ্ছে কিনা কিংবা ব্যবস্থাপকগণের নির্দেশ মোতাবেক কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখা এবং কোনরূপ বিচ্যুতি হলে তার সংশোধনকরাকেই নিয়ন্ত্রণ বলে। নিয়ন্ত্রণ মূলত: Verification of Performance,
ব্যবস্থাপনা কোনো ব্যক্তির জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োগযোগ্য তেমনি পারিবারিক ক্ষেত্রে, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রয়োগ করা যায়।
নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে ব্যক্তি জীবনকে যেমন সমৃদ্ধশালী করা যায় তেমনি সামাজিক সংগঠন। যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি, ধর্মীয় সংগঠন পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার রীতিনীতি অনুসরণযোগ্য।
আবার উৎপাদন, বণ্টন, পরিবহন, ব্যাংকিং, বিমা, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি ব্যবসায়িক কার্যে জড়িত সংগঠনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকলে সফলতার সাথে ব্যবসায় কার্য পরিচালনা করা যায় না। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে এ পোস্টে আমরা ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা কাকে বলে ও কত প্রকার? সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট কথার অর্থ :-
ব্যবস্থাপনার ইংরেজী 'Management' শব্দটি ইতালীয় 'Maneggiare' বা 'Manage' ও 'Manager' শব্দ সমূহ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। Maneggiare শব্দের অর্থ হচ্ছে অশ্ব পরিচালনা করা (to trainup the horse)।তবে কালের বিবর্তনে এটা মূলত মানব জাতিকে পরিচালনার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পরের শব্দ দু'টি অর্থাৎ Manage ও Manager এর অর্থ হলো যথাক্রমে 'পথ প্রদর্শক'’ ও ‘পরিচালক' যার সাথেও ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট মিল রয়েছে। ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন কাজের মধ্যে তার অধীনস্থদের নেতৃত্ব প্রদান ও পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
ব্যবস্থাপনা কাকে বলে :-
একটি প্রতিষ্ঠান উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যেসব কার্যাবলি সম্পাদন করে সেগুলোকে একত্রে ব্যবস্থাপনা বলে।প্রশ্ন হতে পারে প্রয়োজনীয় সম্পদগুলো কী? প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ, বস্তুগত সম্পদ, আর্থিক সম্পদ ও তথ্য সম্পদ হলো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সম্পদ। আর এ সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মসংস্থান, নির্দেশনা ও নেতৃত্বদান, সমন্বয় সাধন, প্রেরণা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা বিশারদগণ ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখা করেছেন। এবার আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol) ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে? এর উত্তরে বলেন, "ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, সংগঠিত করা, নির্দেশ প্রদান, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।"
জর্জ আর, টেরি (George R. Terry) ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? এর উত্তরে বলেছেন, "ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি স্বতন্ত্র সামাজিক প্রক্রিয়া যা মানুষ ও সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের নিমিত্তে পরিকল্পনা, সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত।"
আরও পড়ুন:- অংশীদারি ব্যবসায় বিলোপসাধন কি?
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায় যে, পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপকরণ তথা মানব সম্পদ, যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ইত্যাদির কাম্য ব্যবহার কল্পে কর্মীবৃন্দের যৌথ প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের সুস্পষ্ট সামাজিক প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট বলে।
১. উচ্চ ব্যবস্থাপনা (Top Management) :-
উচ্চ ব্যবস্থাপনা স্তরের ব্যবস্থাপকগণ সংগঠনের নীতিমালা প্রণয়ন ও সকল কাজের সমন্বয় সাধন করেন। এ স্তর পুরো সংগঠনের কাজের জন্য দায়ী। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেদে ব্যবস্থাপকদের পদবির নাম ভিন্ন হতে পারে।
একটি বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এ স্তরে সাধারণ প্রেসিডেন্ট, বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর চেয়ারম্যান, বোর্ডের নির্বাহী কমিটি, প্রধান নির্বাহী অফিসার এবং মুখ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকেন, এরা সাধারণত কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত। এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের নীতি এবং দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২. মধ্যম ব্যবস্থাপনা (Middle Management) :-
মধ্যম ব্যবস্থাপনা স্তরে সবচেয়ে বেশি ব্যবস্থাপক থাকেন। বিভাগীয় প্রধান, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার, কর্মী পরিচালক, উৎপাদন ম্যানেজার ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নীতি প্রণয়ন এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন। এরপর মধ্যম স্তরের ব্যবস্থাপকগণ এ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা ও কার্য পদ্ধতি তৈরি করেন। এরপর বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায় যে, পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপকরণ তথা মানব সম্পদ, যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ইত্যাদির কাম্য ব্যবহার কল্পে কর্মীবৃন্দের যৌথ প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের সুস্পষ্ট সামাজিক প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট বলে।
ব্যবস্থাপনা কত প্রকার :-
প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকারের ব্যবস্থাপক থাকেন। প্রতিষ্ঠানের স্তর অনুযায়ী ব্যবস্থাপকদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।। ব্যবস্থাপনার স্তর বলতে প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান নানা ধরনের ব্যবস্থাপক থাকে তাদের পদমর্যাদাগত অবস্থানকে বোঝানো হয়। বড় প্রতিষ্ঠানে সাধারণত তিন ধরনের ব্যবস্থাপনার স্তর বিদ্যমান উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন। এই স্তরের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারিত হয়।১. উচ্চ ব্যবস্থাপনা (Top Management) :-
উচ্চ ব্যবস্থাপনা স্তরের ব্যবস্থাপকগণ সংগঠনের নীতিমালা প্রণয়ন ও সকল কাজের সমন্বয় সাধন করেন। এ স্তর পুরো সংগঠনের কাজের জন্য দায়ী। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেদে ব্যবস্থাপকদের পদবির নাম ভিন্ন হতে পারে।
একটি বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এ স্তরে সাধারণ প্রেসিডেন্ট, বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর চেয়ারম্যান, বোর্ডের নির্বাহী কমিটি, প্রধান নির্বাহী অফিসার এবং মুখ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকেন, এরা সাধারণত কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত। এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের নীতি এবং দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২. মধ্যম ব্যবস্থাপনা (Middle Management) :-
মধ্যম ব্যবস্থাপনা স্তরে সবচেয়ে বেশি ব্যবস্থাপক থাকেন। বিভাগীয় প্রধান, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার, কর্মী পরিচালক, উৎপাদন ম্যানেজার ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নীতি প্রণয়ন এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন। এরপর মধ্যম স্তরের ব্যবস্থাপকগণ এ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা ও কার্য পদ্ধতি তৈরি করেন। এরপর বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:- ব্যবস্থাপক কাকে বলে?
৩. অপারেটিং ব্যবস্থাপনা (Operating Management) :-
ব্যবস্থাপনার তৃতীয় স্তর হলো অপারেটিং স্তর। এ স্তর সংগঠনের নিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকদের সাথে সম্পর্কিত। এ স্তরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ; যথা-সহকারী ব্যবস্থাপক, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ, সুপারভাইজার বা ফোরম্যান। এরা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।
(ক) ব্যক্তি জীবন :-
যে কোন ব্যক্তির জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুষ্ঠুভাবে জীবনকে চালাতে বা পরিচালনা করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকীয় জ্ঞানের প্রয়োগ অপরিহার্য।
(খ) পারিবারিক জীবন :-
একটি পরিবারকে বিশেষ করে যৌথ পরিবারে গৃহকর্তা বা কর্ত্রীকে ব্যবস্থাপনার সর্বজনীন কার্যাবলী প্রয়োগ করতে হয়।
(গ) সামাজিক সংগঠন :-
বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী সামাজিক সংগঠন যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করতে হয়।
(ঘ) রাষ্ট্র বা সরকার :-
যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এজন্য প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বলেছেন, “ভাল ব্যবস্থাপনা ছাড়া একটা ভাল সরকার বালির উপর তৈরী বাড়ির মত।"
(ঙ) ব্যবসায় সংগঠন :-
আধুনিক বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় সাংগঠনিক কার্যের প্রতিটা স্তরেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন:- একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি কি কি?
৩. অপারেটিং ব্যবস্থাপনা (Operating Management) :-
ব্যবস্থাপনার তৃতীয় স্তর হলো অপারেটিং স্তর। এ স্তর সংগঠনের নিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকদের সাথে সম্পর্কিত। এ স্তরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ; যথা-সহকারী ব্যবস্থাপক, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ, সুপারভাইজার বা ফোরম্যান। এরা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।
ব্যবস্থাপনার পরিধি বা আওতা :-
ব্যবস্থাপনা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সুস্পষ্টভাবে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনের নিমিত্তে মানব সম্পাদিত কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া। সুতরাং এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবস্থাপনার পরিধি বর্ণনা করা হল:১. ব্যক্তি ও সংগঠনের ভিত্তিতে পরিধি :-
কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একদল ঐক্যবদ্ধ লোক থেকে সংগঠনের জন্ম হয়। মুনাফা বা অমুনাফাভিত্তিক উভয় সংগঠনের ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা পরিব্যপ্ত। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ(ক) ব্যক্তি জীবন :-
যে কোন ব্যক্তির জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুষ্ঠুভাবে জীবনকে চালাতে বা পরিচালনা করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকীয় জ্ঞানের প্রয়োগ অপরিহার্য।
(খ) পারিবারিক জীবন :-
একটি পরিবারকে বিশেষ করে যৌথ পরিবারে গৃহকর্তা বা কর্ত্রীকে ব্যবস্থাপনার সর্বজনীন কার্যাবলী প্রয়োগ করতে হয়।
(গ) সামাজিক সংগঠন :-
বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী সামাজিক সংগঠন যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করতে হয়।
(ঘ) রাষ্ট্র বা সরকার :-
যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এজন্য প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বলেছেন, “ভাল ব্যবস্থাপনা ছাড়া একটা ভাল সরকার বালির উপর তৈরী বাড়ির মত।"
(ঙ) ব্যবসায় সংগঠন :-
আধুনিক বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় সাংগঠনিক কার্যের প্রতিটা স্তরেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন:- একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি কি কি?
2. কাজের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার পরিধি :-
বিখ্যাত ব্যবস্থাপনাবিদ পিটার এফ. ড্রাকারের মতে, নিম্নোক্ত তিন ধরনের কাজ ব্যৱস্থাপনা সম্পাদন করে।
(ক) প্রতিষ্ঠান পরিচালনা :-
প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অর্থ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা। এর মূল উদ্দেশ্য হবে গ্রহণযোগ্য মূল্যে পণ্য ও সেবা পরিবেশন করা এবং সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। এ লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যই ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত।
(খ) ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা :-
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপকীয় কার্যে নিয়োজিত সকল নির্বাহী বা ব্যবস্থাপকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা ব্যবস্থাপনার কাজ। এজন্য ব্যবস্থাপনা প্রত্যেক নির্বাহীর জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, নেতৃত্ব, নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানসহ তাদের কার্যের তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(গ) শ্রমিক কর্মী ব্যবস্থাপনা :-
প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মীকে একজন মানুষ ও একটি সম্পদ এই দুই দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হয়। তাই দেখা যায় যে, তাদের সাথে উঁচু স্তরের ব্যবস্থাপকগণকে মোট কার্যসময়ের শতকরা ৬০ হতে ৮০ ভাগ সময় আলাপ আলোচনা ও যোগাযোগ সাধনে ব্যয় করতে হয়।
এছাড়া কর্মীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি, নেতৃত্ব দান, প্রেষণা, কর্মী পরিচালনা, বদলি, বরখান্ত, ছাঁটাই, অবসর গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের মত মৌলিক কার্য ব্যবস্থাপনার আওতাধীন।
(ক) প্রতিষ্ঠান পরিচালনা :-
প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অর্থ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা। এর মূল উদ্দেশ্য হবে গ্রহণযোগ্য মূল্যে পণ্য ও সেবা পরিবেশন করা এবং সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। এ লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যই ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত।
(খ) ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা :-
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপকীয় কার্যে নিয়োজিত সকল নির্বাহী বা ব্যবস্থাপকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা ব্যবস্থাপনার কাজ। এজন্য ব্যবস্থাপনা প্রত্যেক নির্বাহীর জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, নেতৃত্ব, নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানসহ তাদের কার্যের তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(গ) শ্রমিক কর্মী ব্যবস্থাপনা :-
প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মীকে একজন মানুষ ও একটি সম্পদ এই দুই দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হয়। তাই দেখা যায় যে, তাদের সাথে উঁচু স্তরের ব্যবস্থাপকগণকে মোট কার্যসময়ের শতকরা ৬০ হতে ৮০ ভাগ সময় আলাপ আলোচনা ও যোগাযোগ সাধনে ব্যয় করতে হয়।
এছাড়া কর্মীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি, নেতৃত্ব দান, প্রেষণা, কর্মী পরিচালনা, বদলি, বরখান্ত, ছাঁটাই, অবসর গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের মত মৌলিক কার্য ব্যবস্থাপনার আওতাধীন।
৩. কৌশল প্রয়োগের ভিত্তিতে পরিধি :-
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বহুমুখী কার্য সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল গ্রহণ করতে হয়, যা ব্যবস্থাপনার আওতাধীন। এরূপ কৌশল গ্রহণের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন ধরনের পলিসি, বাজেট, উপদেষ্টা নীতি নির্ধারণ, বিভাগীয় করণ, কমিটি গঠন, প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন, নেতৃত্ব ও প্রেষণাদান, পরিদর্শন ইত্যাদি কর্মসূচী গ্রহণ করতে হয়।আরও পড়ুন:- স্টক কাকে বলে?
৪. কার্যবিভাগের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিধি :-
প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়; যেমন- উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, ক্রয়, বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাপনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা, জন-সংযোগ ও শ্রমিক-কর্মী ব্যবস্থাপনা, অফিস ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা পরিব্যপ্ত।ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য :-
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য কী? নিশ্চয়ই মুনাফা অর্জন করা। তাই ব্যবস্থাপনার মূখ্য উদ্দেশ্য হবে 'মুনাফা অর্জন'। আবার প্রতিষ্ঠান যদি সামাজিক সেবাপ্রদানকারী হয়, তাহলে এর ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হবে জনগণের কল্যাণসাধন'। অর্থাৎ উদ্দেশ্যবিহীন ব্যবস্থাপনা হতে পারে না। যাই হোক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার মূখ্য ও গৌণ উদ্দেশ্যগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।১. মুনাফা অর্জন ও মুনাফা সর্ব্বোচ্চকরণ :-
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য প্রথমত মুনাফা অর্জন করা এবং দ্বিতীয়ত বছর বছর মুনাফার পরিমাণ যতটা সম্ভব বৃদ্ধি করা। মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যম ব্যবস্থাপনা মালিকের পক্ষের সম্পদ বৃদ্ধি করে।
২. ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ :-
মুনাফার একটি অংশ ব্যবসায়ের সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ করা ব্যবস্থাপকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। ফলপ্রসূত ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের সফল সম্প্রসারনের সহায়ক।
৩. সম্পদের ফলপ্রসূত ব্যবহার :-
প্রতিষ্ঠানের মানবীয় ও অমানবীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ফলে প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধশালী হয়।
৪. মানব সম্পদের উন্নয়ন :-
প্রতিষ্ঠানে সঠিক কর্মী নিয়োগদান ও তাদের সক্ষমতা উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার আরেকটি উদ্দেশ্য। নিয়োগকৃত কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
৫. শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা :-
প্রতিষ্ঠানে যাতে কর্ম-অসন্তোষ দেখা না দেয় তার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত ব্যবস্থাপকেরা চৌকষ নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কর্ম-পরিবেশ আনন্দদায়ক করে রাখে।
৬. পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন :-
উৎপাদিত পণ্য ও সেবার গুণগত মান সমুন্নত রাখাও ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য। ব্যবস্থাপনীয় কার্যাবলির মাধ্যমে ভালো মানের পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। একই সাথে সেবার মানও উন্নত করা হয়।।
৭. সমন্বয়সাধন :-
সাবলীল যোগাযোগের মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করার জন্য ব্যবস্থাপনা প্রচেষ্টা চালায়। কারণ ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য হলো আন্তঃবিভাগীয় সমস্বয়সাধন করা।
৮. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি :-
সুনাম ব্যতীত সাফল্যের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। তাই ব্যবস্থাপনার একটি উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনগণের সাথে জনসংযোগের মাধ্যমে এবং উঁচুমানের পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করা।
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি :-
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে এর মানবীয় ও অমানবীয় (Human & Non-human) উপকরণের সঠিক ব্যবহার ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপকগণ যেসব কাজ সম্পাদন করেন, সেগুলোকেই ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি বলে।ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পর্কে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন রকম মতামত দিয়েছেন। তবে আধুনিক লেখকদের মতে ব্যবস্থাপনার মুখ্য কাজ চারটিঃ পরিকল্পনা, সংগঠন, নেতৃত্বদান ও নিয়ন্ত্রণ।
এগুলোর ভেতরে আরও প্রাসঙ্গিক কাজ রয়েছে। যেমন কর্মীসংস্থান, বেষণা ও সমন্বয়সাধন ইত্যাদি। ব্যবস্থাপনার কার্যসমূহ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদিত হয় বিধায় এগুলোকে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াও বলা হয়।
১. পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা :-
লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে অতীত ও বর্তমানের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি পূর্বাভাস প্রণয়ন করতে হয়। কার্যকর ও নিপুণ পূর্বানুমানের উপর পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ নির্ভর করে। আর ভবিষ্যতে কোন কাজ কোথায়, কখন, কিভাবে, কার দ্বারা সম্পাদন করা হবে তার পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই পরিকল্পনা।
ধরুন, আপনাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীদেরকে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সফরে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হবে, কখন, কিভাবে এবং কত সময়ের জন্য যাওয়া হবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। আর এটাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান কাজ। মূলত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কে, কখন, কোথায়, কিভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে কোন কাজ সম্পন্ন করবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করার নামই পরিকল্পনা।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও নীতি নির্ধারণ, প্রকল্প গ্রহণ, কৌশল, পলিসি ও কর্মসূচী নির্ধারণ, বাজেট প্রণয়ন প্রভৃতি পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তার অতীত অভিজ্ঞতা, বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং এর সামর্থ্য ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিকল্পসমূহ হতে সর্বোত্তমটি বেছে নেয়।
২. সংগঠিতকরণ :-
সংগঠন হচ্ছে গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার কৌশল। তাই বলা যায় কোন প্রতিষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্য নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন প্রকৃতির কার্যাবলীকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা, অতঃপর কার্য সম্পাদনে বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব কি হবে, তাদেরকে কতটুকু কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দিতে হবে তা নির্ধারণ করা, অবশেষে যে সব ব্যক্তি বিভাগ অথবা উপবিভাগ থাকবে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কি হবে তা নির্ধারণ করাই হচ্ছে সংগঠন।
এ সমস্ত কার্যকে যখন কোন কাঠামো বা রূপরেখায় প্রকাশ করা হয় তখন তাকে সংগঠন কাঠামো বলে।
৩. কর্মীসংস্থান :-
সংগঠিতকরণের পরের কাজটি হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ করা। ব্যবস্থাপনাকে সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শ্রমিক-কর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ, উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন, নিয়োগদান, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ইত্যাদি কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়।
৪. নির্দেশনা ও নেতৃত্বদান :-
প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীদেরকে নির্দেশ প্রদান করতে হয়। কর্মীরা কোন কাজ কখন করবে, কিভাবে করবে এ সম্পর্কিত আদেশ প্রদানকেই সাধারণভাবে নির্দেশনা বলে।
নেতা হিসেবে ব্যবস্থাপক কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করেন, প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করেন, তত্ত্বাবধান করেন, সর্বোপরি তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। তাই নির্দেশনা হলো ব্যবস্থাপনার সঞ্জীবনী শক্তি।
৫. প্রেরণা (Motivation) :-
কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ জাগত করার প্রক্রিয়াকে প্রেরণা বলে।
কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা, আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ ইত্যাদি সঠিক বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন আর্থিক ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে কর্মীদেরকে কার্যে প্রেরণা দেওয়া হয়। প্রেরণার মাধ্যমে কর্মী পূর্ণ উদ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে।
৬. সমন্বয়সাধন :-
সমন্বয়সাধন হলো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের প্রক্রিয়া। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এতে কাজে ভারসাম্য আসে, শৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং উন্নত সেবা নিশ্চিত করে দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সমন্বয়সাধন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা সংগঠনের সকল বিভাগের কাজের মধ্যে মিলন ঘটায়।
9. নিয়ন্ত্রণ :-
ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হল নিয়ন্ত্রণ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম ঠিকমত সম্পাদন করা হচ্ছে কিনা কিংবা ব্যবস্থাপকগণের নির্দেশ মোতাবেক কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখা এবং কোনরূপ বিচ্যুতি হলে তার সংশোধনকরাকেই নিয়ন্ত্রণ বলে। নিয়ন্ত্রণ মূলত: Verification of Performance,
ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্তর বা পর্যায় ও ব্যবস্থাপক :-
ব্যবস্থাপনা স্তর বলতে ব্যবস্থাপনার পর্যায়কে বুঝায়। যে কোন বড় ধরনের প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর বা পর্যায় থাকে, যেমন- উচ্চ পর্যায়, মধ্যম পর্যায় এবং নিম্ন পর্যায়। এ সকল পর্যায়ে অবস্থানরত নির্বাহীদেরকে পদমর্যাদানুযায়ী কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের উপরই ব্যবস্থাপনা তথা প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে।
যাইহোক, এ পর্যায় গুলোকে ব্যবস্থাপনা স্তর (Management hierarchy or Management level) বলা হয়।
Ii this contexts Skinner & Ivancevich says, "Levels of management means the managerial hierarchy in an organization. Typically three distinct levels, executives, middle and first line, usually portrayed as pyramid."
সুতরাং বলা যায় যে, কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে তিনটি স্তর বা পর্যায় পরিলক্ষিত হয়, চিত্রে যা পিরামিডের মত দেখায়, তাকে ব্যবস্থাপনা স্তর বা পর্যায় বলে। নিচে বিভিন্ন স্তর বর্ণনা করা হল
১. ব্যবস্থাপনার উচ্চস্তর (Top level of management) :
এটি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে উঁচু স্তর। এ স্তরে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে।
সুতরাং যে স্তরে প্রতিষ্ঠানের চিন্তামূলক কার্যাদি সম্পাদিত হয় অর্থাৎ উদ্দেশ্য, নীতি, পরিকল্পনা ইত্যাদি নির্ধারিত হয়, তাকে ব্যবস্থাপনার উচ্চ স্তর বলে।
আর এ স্তরে যারা অবস্থান করেন, তাদেরকে উচ্চ স্তরীয় (Top level) ব্যবস্থাপক বলে।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকদেরকে প্রধান নির্বাহী অফিসার (CEO), প্রেসিডেন্ট, নির্বাহী পরিচালক (ED) প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণই সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব বহন করেন।
R. L. Daft says, "A manager who is at the top of the organizational hierarchy and responsible for the entire organization. "
According to Stoner "Top management is responsible for the overall management of an organization. These people are called executives. They establish operating policies and guide the organization interactions with the environment."
সুতরাং বলা যায় যে, যে ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন, তাদেরকে উচ্চ ব্যবস্থাপক এবং ঐ স্তরকে ব্যবস্থাপনার উচ্চস্তর বলে।
২. ব্যবস্থাপনার মধ্যমস্তর (Middle level of management) :
ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তর হলো এমন একটি স্তর যেখানে অবস্থানরত ব্যবস্থাপকগণ উচ্চ স্তর কর্তৃক নির্ধারিত পলিসি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিচের স্তরে নির্দেশনা দিয়ে থাকে এবং কার্য যথাযথভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে।
নিচের স্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই এ স্তরের ব্যবস্থাপকদের প্রধান দায়িত্ব।
Stoner ও অন্যান্যরা বলেন, “মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ নিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকদের এবং কখনো কখনো কার্যরত কর্মীদেরও নির্দেশ প্রদান করেন। (Middle managers direct the activities of lower-level managers and sometimes those of operating employes as well.)
Bartol & Martin says, "Middle managers beneath the top levels of the hierarchy who are directly responsible for the work of managers at lower levels."
উল্লেখ্য যে, এ স্তরের ব্যবস্থাপকদেরকে অনেক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন- বিভাগীয় প্রধান, মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক, গবেষণা, ল্যাবরেটরী পরিচালক, উপ-মহা ব্যবস্থাপক, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপক, অর্থ ব্যবস্থাপক প্রভৃতি।
সুতরাং বলা যায় যে, সংগঠন কাঠামোর উপর থেকে নীচ পর্যন্ত অবস্থিত স্তরগুলোর মধ্যে মধ্যম পর্যায়কে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা এবং এ স্তরে অবস্থানরত ব্যবস্থাপকদেরকে মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপক বলে।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকদের প্রধান দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনাকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক বা নিম্নস্তর (First Line or Lower level of management) :
ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্তরের মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থারত স্তরকে ব্যবস্থাপনার নিম্নস্তর বলে। উচ্চ পর্যায় কর্তৃক নির্ধারিত পলিসি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের কার্য-সম্পাদনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাদের সুপারভাইজার, ফোরম্যান, কর্মনায়ক প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। তাঁরা কার্য-সম্পাদনের জন্য শ্রমিক কর্মীদের পরিচালনা করে থাকে বলে এ স্তরীকে তত্ত্বাবধায়ক পর্যায় ও (Supervisory level) বলা হয়ে থাকে।
According to Bartol & Martin "First line managers are managers at the lowest level of the hierarchy who are directly responsible for the work of operating employes."
সুতরাং বলা যায় যে, যে স্তরে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কার্য-সম্পাদন করা হয়, তাকে নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপনা বলে এবং যারা এ স্তরে নির্দেশনা প্রদান করেন তাদেরকে নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপক বলা হয়।
যাইহোক, এ পর্যায় গুলোকে ব্যবস্থাপনা স্তর (Management hierarchy or Management level) বলা হয়।
Ii this contexts Skinner & Ivancevich says, "Levels of management means the managerial hierarchy in an organization. Typically three distinct levels, executives, middle and first line, usually portrayed as pyramid."
সুতরাং বলা যায় যে, কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে তিনটি স্তর বা পর্যায় পরিলক্ষিত হয়, চিত্রে যা পিরামিডের মত দেখায়, তাকে ব্যবস্থাপনা স্তর বা পর্যায় বলে। নিচে বিভিন্ন স্তর বর্ণনা করা হল
১. ব্যবস্থাপনার উচ্চস্তর (Top level of management) :
এটি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে উঁচু স্তর। এ স্তরে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে।
সুতরাং যে স্তরে প্রতিষ্ঠানের চিন্তামূলক কার্যাদি সম্পাদিত হয় অর্থাৎ উদ্দেশ্য, নীতি, পরিকল্পনা ইত্যাদি নির্ধারিত হয়, তাকে ব্যবস্থাপনার উচ্চ স্তর বলে।
আর এ স্তরে যারা অবস্থান করেন, তাদেরকে উচ্চ স্তরীয় (Top level) ব্যবস্থাপক বলে।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকদেরকে প্রধান নির্বাহী অফিসার (CEO), প্রেসিডেন্ট, নির্বাহী পরিচালক (ED) প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণই সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব বহন করেন।
R. L. Daft says, "A manager who is at the top of the organizational hierarchy and responsible for the entire organization. "
According to Stoner "Top management is responsible for the overall management of an organization. These people are called executives. They establish operating policies and guide the organization interactions with the environment."
সুতরাং বলা যায় যে, যে ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন, তাদেরকে উচ্চ ব্যবস্থাপক এবং ঐ স্তরকে ব্যবস্থাপনার উচ্চস্তর বলে।
২. ব্যবস্থাপনার মধ্যমস্তর (Middle level of management) :
ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তর হলো এমন একটি স্তর যেখানে অবস্থানরত ব্যবস্থাপকগণ উচ্চ স্তর কর্তৃক নির্ধারিত পলিসি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিচের স্তরে নির্দেশনা দিয়ে থাকে এবং কার্য যথাযথভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে।
নিচের স্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই এ স্তরের ব্যবস্থাপকদের প্রধান দায়িত্ব।
Stoner ও অন্যান্যরা বলেন, “মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ নিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকদের এবং কখনো কখনো কার্যরত কর্মীদেরও নির্দেশ প্রদান করেন। (Middle managers direct the activities of lower-level managers and sometimes those of operating employes as well.)
Bartol & Martin says, "Middle managers beneath the top levels of the hierarchy who are directly responsible for the work of managers at lower levels."
উল্লেখ্য যে, এ স্তরের ব্যবস্থাপকদেরকে অনেক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন- বিভাগীয় প্রধান, মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক, গবেষণা, ল্যাবরেটরী পরিচালক, উপ-মহা ব্যবস্থাপক, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপক, অর্থ ব্যবস্থাপক প্রভৃতি।
সুতরাং বলা যায় যে, সংগঠন কাঠামোর উপর থেকে নীচ পর্যন্ত অবস্থিত স্তরগুলোর মধ্যে মধ্যম পর্যায়কে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা এবং এ স্তরে অবস্থানরত ব্যবস্থাপকদেরকে মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপক বলে।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকদের প্রধান দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনাকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক বা নিম্নস্তর (First Line or Lower level of management) :
ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্তরের মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থারত স্তরকে ব্যবস্থাপনার নিম্নস্তর বলে। উচ্চ পর্যায় কর্তৃক নির্ধারিত পলিসি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব।
এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের কার্য-সম্পাদনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাদের সুপারভাইজার, ফোরম্যান, কর্মনায়ক প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। তাঁরা কার্য-সম্পাদনের জন্য শ্রমিক কর্মীদের পরিচালনা করে থাকে বলে এ স্তরীকে তত্ত্বাবধায়ক পর্যায় ও (Supervisory level) বলা হয়ে থাকে।
According to Bartol & Martin "First line managers are managers at the lowest level of the hierarchy who are directly responsible for the work of operating employes."
সুতরাং বলা যায় যে, যে স্তরে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কার্য-সম্পাদন করা হয়, তাকে নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপনা বলে এবং যারা এ স্তরে নির্দেশনা প্রদান করেন তাদেরকে নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপক বলা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.