সভার ইংরেজি শব্দ Meeting যার আবিধানিক অর্থ হলো কোন আইনানুগ কার্য সম্পাদনের জন্য দু'বা ততোধিক ব্যক্তির একত্র মিলন। কোন কোম্পানির সদস্য বা পরিচালকগণ কোম্পানি আইনের বিধান কিংবা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোম্পানির কার্যাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে প্রয়োজনিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যে সভায় মিলিত হয়, তাকে কোম্পানি সভা (Company Meeting) বলে।
আইনগত ভাবে কোম্পানির কার্যাবলী ও বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান করতে হয়। কোম্পানি গঠন হতে বিলুপ্ত পর্যন্ত যে সমস্ত সভা বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিকে অনুষ্ঠান করতে হয়, তা হলোঃ ক. পরিচালকদের সভা, শেয়ার হোল্ডারদের সভা ও উত্তমর্ণদের সভা, বিধিবন্ধ সভা, বার্ষিক সাধারণ সভা প্রভৃতি।
কোনো কোম্পানির সদস্য বা পরিচালক বা ঋণদাতাগণ কোম্পানি আইনের বিধান বা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোম্পানির কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যে সভায় মিলিত হন সে সভাকে কোম্পানি সভা বলা হয়।
কোম্পানি সভা বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেমন:
i. আইনের বিধান প্রতিপালনের জন্য।
ii. কোনো বিশেষ বিষয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
iii. কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যাদি বিনিময় করার জন্য।
iv. কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলিতে উল্লিখিত কোনো বিষয় বা রীতি অনুসরণের জন্য।
আরও পড়ুন:- ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
কোম্পানি সভা সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা নিচে আলোচিত হলো।
জে. সি. ডেনিয়ার এর ভাষ্যমতে, “সংশ্লিষ্ট সকলের (শেয়ারহোল্ডার/ পরিচালক / পাওনাদার) যৌগ স্বার্থ রক্ষাকল্পে আইনের বিধান অনুযায়ী কোম্পানির ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভাকে কোম্পানি সভা বলে।"
আউয়াল খান ও সহযোগীদের মতে, "কোম্পানি আইন অনুযায়ী এবং প্রচলিত প্রথানুসারে কোম্পানির ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে সময়ে সময়ে অনুষ্ঠিত সদস্যদের/পরিচালকদের /পাওনাদারদের সভাকেই কোম্পানি সভা বলে।"
সুতরাং কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, পরিচালকমণ্ডলী কিংবা ঋণদাতাগণ পারস্পরিক তথ্য ও মতামত বিনিময়ের নিমিত্তে সমবেত হলে বা সভায় মিলিত হলে তাকে কোম্পানি সভা বলে।
ক. পর্ষদ সভা (Board meeting) :-
কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ তাদের ওপর প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যে সভায় মিলিত হন তাকে পর্ষদ সভা নামে অভিহিত করা হয়।
খ. কমিটি সভা (Committee meeting) :-
কোম্পানির কোন বিশেষ বিষয় বা কাজ তদারক করার জন্য পরিচালকমন্ডলীর কতিপয় সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সদস্যগণ যে অধিবেশনে মিলিত হন তা কমিটি সভা নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:- পন্য বিনিময় কাকে বলে?
ক. বিধিবদ্ধ সভা (Statutory meeting) :-
কোম্পানি গঠনের পর এর শেয়ারহোাল্ডারগণ সর্বপ্রথম যে সাধারণ সভায় মিলিত হয় তাকে বিধিবন্ধ সভা বলে।
খ. বার্ষিক সাধারণ সভা (Annual general meeting) :-
প্রতিটি আর্থিক বছর শেষে কোম্পানির সাধারণ সদস্যগণ যে সভায় মিলিত হন তাকে বার্ষিক সাধারণ সভা বলে। প্রতিবছর অন্তত একবার এ সভা আহ্বান করতে হবে।
গ. অতিরিক্ত সাধারণ সভা (Extraordinary general meeting) :-
যেকোনোা সময় কোনো জরুরি ও গুরুত্বূপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এগ্রহণের জন্য কোম্পানির শেয়ারহােল্ডারদের যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাই অতিরিক্ত সাধারণ সভা।
ক. শ্রেণি সভা (Class meeting) :-
কোম্পানিতে বিভিন্ন শ্রেণির শেয়ার থাকে; যেমন-সাধারণ শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার ইত্যাদি। এক এক শ্রেণির শেয়ারের নামানুসারে শেয়ার মালিকদের নামকরণ করা হয়। কাজেই কোনো বিশেষ শ্রেণির শেয়ার মালিকদের স্বার্থে যে সভা আহবান করা হয় তাকে শ্রেণি সভা বলা হয়।
খ. পাওনাদারদের সভা (Creditors meeting) :-
কোম্পানির ঋণদাতা বা পাওনাদারদের (উত্তমণ) বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য যে সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাকে পাওনাদারদের সভা বা ঋণদাতাদের সভা বলা হয়।
১) সঠিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সভা আহব্বান :-
সঠিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোম্পানি সভা আহ্বান করতে হবে। শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভা আহবানের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ পরিচালকমন্ডলী। তারা পর্ষদ সভায় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুসারে সভা আহবান করার সিদ্ধান্ত বৈধ পর্ষদ সভায় পাস করতে হবে। নতুবা সাধারণ সভা আহবানের নোটিশ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সভার কার্যবিবরণী বৈধ হবেনা।
২) সঠিক নোটিশ :-
সভার নোটিশ কোম্পানি আইন অনুযায়ী অথবা প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যথা নিয়মে ও যথা সময়ে প্রচার করতে হবে। নোটিশে সভা আহবানকারীর নাম, দস্তখত ও সিলমোহর থাকতে হবে।
৩) প্রয়োজনীয় কোরাম :-
সাধারণ সভা বৈধ হতে হলে এতে ন্যূনতম সংখ্যক সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী কমপক্ষে যে সংখ্যক সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকতে হয় তাকে কোরাম বা গণপূর্তি সংখ্যা বলা হয়। সে সকল সদস্যদেরকে নিয়ে কোরাম গঠিত হয় তাদেরকে অবশ্যই "কার্যক্ষম সদস্য" (Effective member) হতে হবে। সভায় কোরাম না হলে এই সভার সিদ্ধান্ত আইনসম্মত এবং বৈধ হবে না। কোরাম গঠনের নিয়ম কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলীতে উল্লেখ থাকে। যদি পরিমেল নিয়মাবলীতে এরূপ কিছু না থাকে তবে মোট সদস্যের ১/৩ অংশের।
৪) সঠিক ব্যক্তিদের উপস্থিতি :-
কোম্পানী কর্তৃক যে সকল ব্যক্তিকে সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে বা বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র সে সব ব্যক্তিরাই সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন। অনাহুত কোন ব্যক্তি কোম্পানির সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারবে না।
৫) সভাপতি হিসেবে সঠিক ব্যক্তি :-
বৈধ সভার পঞ্চম শর্ত হলো সাধারণ সভায় সঠিকভাবে নিযুক্ত একজন সভাপতিত্ব করবেন।
৬) আইনানুগ উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্ত :-
যে উদ্দেশ্যে কোম্পানির সভা আহব্বান করা হয়, তা অবশ্যই আইন অনুযায়ী হতে হবে। কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থী কোন বিষয় আলোচনা করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সভা অনুষ্ঠান করা হলে সে সভা বৈধ হবেনা।
কেননা সমষ্টিগতভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধান করে অথবা ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের কার্যপদ্ধতি নির্ধারণে, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সকলের অধিবেশন বা সভা অনুষ্ঠান একা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, তাই অতি সহজেই সভায় যৌথ আলোচনার মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমাধান করা যায়।
সাধারণ সভায় সমস্যার সমাধান আলোচনা করা হয়ে থাকে এবং যৌথভাবে আলাপ আলোচনা করা হয়ে থাকে এবং যৌথভাবে আলাপ আলোচনা ও ত্রুটি বিচ্যুতি নির্ণয়পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে সহজেই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হয়।
কোম্পানির ক্ষেত্রে সভার গুরুত্ব অনেক। এর অন্যতম কারণ ব্যবস্থাপনা হতে মালিকানার পৃথকীকরণ ব্যবস্থা। আর তাই আইনের মাধ্যমে কোম্পানিকে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠানের জন্য বাধ্য করা হয়েছে।
সভাসমূহের মাধ্যমে কোম্পানির সমস্যা আলোচনা করা হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন কোম্পানি সঠিক ও পরিচালনা পর্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক। এর জন্য কোম্পানি পরিচালনা সহজ হয়।
সভার গুরুত্ব অনুধাবন করে কোম্পানি আইনে কোম্পানি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের বৈঠক বা সম্ভার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন শেয়ারহোল্ডারদের সভা, পরিচালকদের সভা, উত্তমর্ণদের সভা ইত্যাদি। সভার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শ্রম, অর্থ ও কর্মীশাসন তথা ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন কাঠামোর সকল স্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফলে প্রত্যেক বিভাগের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং এভাবে সর্বোচ্চ সমন্বয় সাধন করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সভা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসাবে গণ্য। অর্থাৎ যে কোন প্রতিষ্ঠানে আধুনিক গণতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার হিসাবে সভার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সবার কাছে স্বীকৃত।
আইনগত ভাবে কোম্পানির কার্যাবলী ও বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান করতে হয়। কোম্পানি গঠন হতে বিলুপ্ত পর্যন্ত যে সমস্ত সভা বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিকে অনুষ্ঠান করতে হয়, তা হলোঃ ক. পরিচালকদের সভা, শেয়ার হোল্ডারদের সভা ও উত্তমর্ণদের সভা, বিধিবন্ধ সভা, বার্ষিক সাধারণ সভা প্রভৃতি।
কোম্পানি সভা কাকে বলে :-
কোনো আইনানুগ কার্য সম্পাদনের জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে মিলিত হয়ে আলাপ-আলোচনার পর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তাদের সম্মিলনকে সাধারণ অর্থে সভা বলা হয়।কোনো কোম্পানির সদস্য বা পরিচালক বা ঋণদাতাগণ কোম্পানি আইনের বিধান বা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোম্পানির কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যে সভায় মিলিত হন সে সভাকে কোম্পানি সভা বলা হয়।
কোম্পানি সভা বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেমন:
i. আইনের বিধান প্রতিপালনের জন্য।
ii. কোনো বিশেষ বিষয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
iii. কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যাদি বিনিময় করার জন্য।
iv. কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলিতে উল্লিখিত কোনো বিষয় বা রীতি অনুসরণের জন্য।
আরও পড়ুন:- ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
কোম্পানি সভা সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা নিচে আলোচিত হলো।
জে. সি. ডেনিয়ার এর ভাষ্যমতে, “সংশ্লিষ্ট সকলের (শেয়ারহোল্ডার/ পরিচালক / পাওনাদার) যৌগ স্বার্থ রক্ষাকল্পে আইনের বিধান অনুযায়ী কোম্পানির ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভাকে কোম্পানি সভা বলে।"
আউয়াল খান ও সহযোগীদের মতে, "কোম্পানি আইন অনুযায়ী এবং প্রচলিত প্রথানুসারে কোম্পানির ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে সময়ে সময়ে অনুষ্ঠিত সদস্যদের/পরিচালকদের /পাওনাদারদের সভাকেই কোম্পানি সভা বলে।"
সুতরাং কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, পরিচালকমণ্ডলী কিংবা ঋণদাতাগণ পারস্পরিক তথ্য ও মতামত বিনিময়ের নিমিত্তে সমবেত হলে বা সভায় মিলিত হলে তাকে কোম্পানি সভা বলে।
কোম্পানি সভার প্রকারভেদ :-
কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী, শেয়ারহোল্ডার এবং ঋণদাতাগণ কোম্পানির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রকমের সভায় মিলিত হয়ে থাকেন। একটি কোম্পানি সংগঠনে সাধারণত নিন্মোক্ত আলোচিত সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে:পরিচালকমন্ডলীর সভা (Meeting of the board of directors) :-
কোম্পানি আইন ও সংঘবিধি বা পরিমেল- নিয়মাবলির নির্দেশ অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালকদের দ্বারা অনুষ্ঠিত সভাকে পরিচালকমন্ডলীর সভা বলে। পরিচালকমন্ডলীর সভাকে দুভাগে ভাগ করা যায়।ক. পর্ষদ সভা (Board meeting) :-
কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ তাদের ওপর প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যে সভায় মিলিত হন তাকে পর্ষদ সভা নামে অভিহিত করা হয়।
খ. কমিটি সভা (Committee meeting) :-
কোম্পানির কোন বিশেষ বিষয় বা কাজ তদারক করার জন্য পরিচালকমন্ডলীর কতিপয় সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সদস্যগণ যে অধিবেশনে মিলিত হন তা কমিটি সভা নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:- পন্য বিনিময় কাকে বলে?
শেয়ারহােল্ডারদের সভা (Shareholders meeting) :-
কোম্পানির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কোম্পানির শেয়ারহােন্ডার বা শেয়ার মালিকগণ যে সভায় একত্রিত হন তাকে শেয়ারহােল্ডার বা শেয়ার মালিকদের সভা বলে। শেয়ারহােল্ডারদের সভা আবার তিন প্রকার, যথা:ক. বিধিবদ্ধ সভা (Statutory meeting) :-
কোম্পানি গঠনের পর এর শেয়ারহোাল্ডারগণ সর্বপ্রথম যে সাধারণ সভায় মিলিত হয় তাকে বিধিবন্ধ সভা বলে।
খ. বার্ষিক সাধারণ সভা (Annual general meeting) :-
প্রতিটি আর্থিক বছর শেষে কোম্পানির সাধারণ সদস্যগণ যে সভায় মিলিত হন তাকে বার্ষিক সাধারণ সভা বলে। প্রতিবছর অন্তত একবার এ সভা আহ্বান করতে হবে।
গ. অতিরিক্ত সাধারণ সভা (Extraordinary general meeting) :-
যেকোনোা সময় কোনো জরুরি ও গুরুত্বূপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এগ্রহণের জন্য কোম্পানির শেয়ারহােল্ডারদের যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাই অতিরিক্ত সাধারণ সভা।
বিশেষ সভা (Special meeting) :-
ওপরে আলোচিত সভাসমূহ ছাড়া কোম্পানির ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আরও কিছু সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যথাক. শ্রেণি সভা (Class meeting) :-
কোম্পানিতে বিভিন্ন শ্রেণির শেয়ার থাকে; যেমন-সাধারণ শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার ইত্যাদি। এক এক শ্রেণির শেয়ারের নামানুসারে শেয়ার মালিকদের নামকরণ করা হয়। কাজেই কোনো বিশেষ শ্রেণির শেয়ার মালিকদের স্বার্থে যে সভা আহবান করা হয় তাকে শ্রেণি সভা বলা হয়।
খ. পাওনাদারদের সভা (Creditors meeting) :-
কোম্পানির ঋণদাতা বা পাওনাদারদের (উত্তমণ) বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য যে সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাকে পাওনাদারদের সভা বা ঋণদাতাদের সভা বলা হয়।
কোম্পানির বৈধ সভার শর্তাবলি :-
সব ধরনের সভা অনুষ্ঠান করলেই তা বৈধ হয়না। বৈধ সভার জন্য বিশেষ কতকগুলো শর্ত আছে। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো১) সঠিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সভা আহব্বান :-
সঠিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোম্পানি সভা আহ্বান করতে হবে। শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভা আহবানের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ পরিচালকমন্ডলী। তারা পর্ষদ সভায় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুসারে সভা আহবান করার সিদ্ধান্ত বৈধ পর্ষদ সভায় পাস করতে হবে। নতুবা সাধারণ সভা আহবানের নোটিশ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সভার কার্যবিবরণী বৈধ হবেনা।
২) সঠিক নোটিশ :-
সভার নোটিশ কোম্পানি আইন অনুযায়ী অথবা প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যথা নিয়মে ও যথা সময়ে প্রচার করতে হবে। নোটিশে সভা আহবানকারীর নাম, দস্তখত ও সিলমোহর থাকতে হবে।
৩) প্রয়োজনীয় কোরাম :-
সাধারণ সভা বৈধ হতে হলে এতে ন্যূনতম সংখ্যক সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী কমপক্ষে যে সংখ্যক সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকতে হয় তাকে কোরাম বা গণপূর্তি সংখ্যা বলা হয়। সে সকল সদস্যদেরকে নিয়ে কোরাম গঠিত হয় তাদেরকে অবশ্যই "কার্যক্ষম সদস্য" (Effective member) হতে হবে। সভায় কোরাম না হলে এই সভার সিদ্ধান্ত আইনসম্মত এবং বৈধ হবে না। কোরাম গঠনের নিয়ম কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলীতে উল্লেখ থাকে। যদি পরিমেল নিয়মাবলীতে এরূপ কিছু না থাকে তবে মোট সদস্যের ১/৩ অংশের।
৪) সঠিক ব্যক্তিদের উপস্থিতি :-
কোম্পানী কর্তৃক যে সকল ব্যক্তিকে সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে বা বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র সে সব ব্যক্তিরাই সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন। অনাহুত কোন ব্যক্তি কোম্পানির সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারবে না।
৫) সভাপতি হিসেবে সঠিক ব্যক্তি :-
বৈধ সভার পঞ্চম শর্ত হলো সাধারণ সভায় সঠিকভাবে নিযুক্ত একজন সভাপতিত্ব করবেন।
৬) আইনানুগ উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্ত :-
যে উদ্দেশ্যে কোম্পানির সভা আহব্বান করা হয়, তা অবশ্যই আইন অনুযায়ী হতে হবে। কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থী কোন বিষয় আলোচনা করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সভা অনুষ্ঠান করা হলে সে সভা বৈধ হবেনা।
আরও পড়ুন:- ব্যবসায় কাকে বলে?
কোম্পানির সভার গুরুত্ব :-
আধুনিক ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক মনোভাব বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম অবদান। আর সভার মাধ্যমেই এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হিসেবে বর্তমানে সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।কেননা সমষ্টিগতভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধান করে অথবা ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের কার্যপদ্ধতি নির্ধারণে, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সকলের অধিবেশন বা সভা অনুষ্ঠান একা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, তাই অতি সহজেই সভায় যৌথ আলোচনার মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমাধান করা যায়।
সাধারণ সভায় সমস্যার সমাধান আলোচনা করা হয়ে থাকে এবং যৌথভাবে আলাপ আলোচনা করা হয়ে থাকে এবং যৌথভাবে আলাপ আলোচনা ও ত্রুটি বিচ্যুতি নির্ণয়পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে সহজেই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হয়।
কোম্পানির ক্ষেত্রে সভার গুরুত্ব অনেক। এর অন্যতম কারণ ব্যবস্থাপনা হতে মালিকানার পৃথকীকরণ ব্যবস্থা। আর তাই আইনের মাধ্যমে কোম্পানিকে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠানের জন্য বাধ্য করা হয়েছে।
সভাসমূহের মাধ্যমে কোম্পানির সমস্যা আলোচনা করা হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন কোম্পানি সঠিক ও পরিচালনা পর্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক। এর জন্য কোম্পানি পরিচালনা সহজ হয়।
সভার গুরুত্ব অনুধাবন করে কোম্পানি আইনে কোম্পানি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের বৈঠক বা সম্ভার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন শেয়ারহোল্ডারদের সভা, পরিচালকদের সভা, উত্তমর্ণদের সভা ইত্যাদি। সভার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শ্রম, অর্থ ও কর্মীশাসন তথা ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন কাঠামোর সকল স্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফলে প্রত্যেক বিভাগের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং এভাবে সর্বোচ্চ সমন্বয় সাধন করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সভা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসাবে গণ্য। অর্থাৎ যে কোন প্রতিষ্ঠানে আধুনিক গণতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার হিসাবে সভার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সবার কাছে স্বীকৃত।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.