প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অবস্থায় তার কার্য সম্পাদন করতে হয়। সকল সময় প্রতিষ্ঠান যে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে এমন কথা নাই। প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। এসব উপাদানই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ গঠন করে।
ব্যবস্থাপকেরা এবং তাদের প্রতিষ্ঠান যে পরিবেশে ব্যবসায়িক কার্যাবলি পরিচালনা করে সে পরিবেশ সম্পর্কে ব্যবস্থাপকদের স্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমরা এখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করবো। এখন প্রশ্ন হলো ব্যবসায়ের পরিবেশ বলতে কী বোঝায়?
সুতরাং যেসব উপাদান দ্বারা ব্যবসায় পরিবেষ্টিত থাকে এবং যেসব উপাদান ব্যবসায়ের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে সেগুলোর সমন্বয়ে ব্যবসায় পরিবেশ গড়ে ওঠে।
মানুষের জীবনধারা যেমন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়, ব্যবসায়িক কর্মপ্রক্রিয়াও তেমনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বহুবিধ উপাদান দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়।
এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত দিক, রয়েছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রয়েছে সরকারি নিয়মকানুন ও রাজস্ব নীতি ব্যবসায় পরিচালনার লক্ষ্যে এসব উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পারিপার্শ্বিক অবস্থাই ব্যবসায় পরিবেশ।
যে সকল পরিবেশগত উপাদান প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি ব্যবসায় কার্যক্রমের ওপর প্রভাব বিস্তার করে কিন্তু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়ন্ত্রণযোগ্য তাকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলে।
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিরাজমান অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শক্তি বা পক্ষসমূহের সমন্বয়ে এরূপ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিচে অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদানসমূহ কীভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করা হলো।
শেয়ারহোল্ডার :-
এরা ভোটের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাকে বা পরিচালক পর্ষদকে প্রভাবিত করে। বিশেষত, লিমিটেড কোম্পানির বেলায় এ অবস্থাটি সৃষ্টি হয়। কাজেই ব্যবস্থাপনাকে তাদের মর্জির দিকে খেয়াল রাখতে হয়।
সরবরাহকারী :-
শিল্প বা কারবারের জন্য পণ্য সরবরাহকারী মর্জি মতো ব্যবস্থাপনাকে শিল্পোতপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। কারণ পণ্য যথাসময়ে সরবরাহ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বা ক্রেতাদেরকে পণ্য প্রদান করা সম্ভব না হওয়ার আশংকা থাকে।
মধ্যস্থ ব্যবসায়ী :-
মধ্যস্থ ব্যবসায়ী এক ধরনের বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান যারা উৎপাদনকারী ও ভোগকারীদের মধ্যে অবস্থান করে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় ও বণ্টনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন:- ব্যবসায় মূল্যবোধ কাকে বলে?
মধ্যস্থ ব্যবসায়ীগণ কাজের ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যথা- পাইকার, মুচরা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, দালাল, ফড়িয়া, ঝুঁকিবাহক প্রভৃতি।
এসব মধ্যস্থ ব্যবসায়ীগণ পণ্য ও সেবাকর্মের স্বত্নগত, স্থানগত ও কালগত উপযোগ সৃষ্টি করে ব্যবসায়ের কার্যপ্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
গ্রাহক :-
ক্রেতার স্বার্থ সর্বদাই প্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় থাকে। ব্যবস্থাপনা ক্রেতার পছন্দ, রুচি, ফ্যাশন প্রভৃতি বিবেচনা করে ক্রেতাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে।
প্রতিযোগী :-
প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রতিযোগী কখন কোন কৌশল নির্ধারণ করবে তা ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করতে হয় এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য অনুরূপ বা তদপেক্ষা উন্নত কৌশল গ্রহণ করতে হয়।
কর্মচারী :-
কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার। কাজেই কর্মচারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সুবিধা-অসুবিধা, পরামর্শ প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করতে হয়।
অন্যান্য সংস্থা :-
প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো সময় ঋণদাতা ব্যবস্থাপনাকে তাদের ইচ্ছামতো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কৌশল নির্ধারণ বা পরিবর্তন করতে চাপ দেয়, এভাবে প্রতিষ্ঠান ঋণদাতা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আবার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাস লাইন গ্রহণ, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স, আয়কর হ্রাস, মূল্য সংযোজন কর ইত্যাদি বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে, ব্যবস্থাপনাকেও তার কার্য পদ্ধতি সেভাবে নির্ধারণ করতে হয়।
আরও পড়ুন:- ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব লিখ?
(ক) সাধারণ পরিবেশ (General environment) এবং
(খ) কার্য পরিবেশ (Task environment)।
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা শক্তিসমূহ প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে সেগুলা দ্বারা সৃষ্টি হয় সাধারণ পরিবেশের। পক্ষান্তরে, কার্য পরিবেশ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিগোষ্ঠী বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। নিম্নে বাহ্যিক পরিবেশের আওতাধীন উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:
প্রাকৃতিক উপাদান (Natural element) :-
প্রকৃতিগত কারণে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
কোনো দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবস্থান আয়তন, জনসংখ্যা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
এ উপাদানসমূহের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতির দ্বারা ব্যবসায় কার্যকালাপ প্রভাবিত হয়। সে কারণেই এসব উপাদানের অনুকূল ক্ষেত্রে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা অধিক পরিমাণে গড়ে ওঠে।
অর্থনৈতিক উপাদান ( Economic element) :-
অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেছেন, "অর্থনৈতিক পরিবেশ কতকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যা ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ব্যয়ের ধরনকে প্রভাবিত করে"।
এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থ ও বাগ ব্যবস্থা, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ মূলধন ইত্যাদি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
একটি দেশের জাতীয় আয় ভোগের পরিমাণ, উৎপাদান ও বণ্টন, গড় মাথাপিছু আয় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে কোন দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ। কাজেই উপরিউক্ত উপাদানসমূহ অনুকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান (Social and cultural element) :-
মানুষ সমাজবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এ সমাজবদ্ধ মানুষের ধ্যানধারস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, মনোভাব ও বিশ্বাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সামাজিক পরিবেশ। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর ও সামাজিক উপাদানগুলোর প্রভাব অসীম।
সামাজিক পরিবেশ সহজ, সুন্দর ও অনুকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্য তার কামা লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদন (Political and legal element) :-
একটি দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত উপাদানসমূহ ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কোনো দেশের সরকারি নিয়মকানুন, আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুকূল হলে ব্যবসায়ও দ্রুতগতিতে বিকশিত হতে পারে।
ঠিক তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীল, ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, বাণিজ্য নীতি, রাজস্বনীতি, বিনিয়োগনীতি ইত্যাদির আনুকূল্য এবং সরকারি পৃষ্টপোষকতা ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদান (Information and technological element) :-
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, বর্তমান কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাও তেমনি মানুষের জীবনধারা কে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের দ্বারা গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফলে বিশ্ব পাচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার ক্রেতা ও ভোক্তারা পাচ্ছে নতুন নতুন পণ্য ও সেবাসামগ্রী।
আবার তথ্য ব্যবস্থার অবাধ প্রবাহ ব্যবসায় বাণিজ্য গতি সজার করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ব্যতীত আজকের বিশ্বায়নের যুগে ব্যবসায়-বাণিজ্যে অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রত্যাশা দূরশামাত্র।
ব্যবসায়ের পরিবেশ কি :-
পরিবেশ হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমষ্টি। অধ্যাপক চেম্বারস-এর মতে, “পরিবেশ হচ্ছে কোনো কিছুর উন্নতি বা সমৃদ্ধির ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহের সমষ্টি।সুতরাং যেসব উপাদান দ্বারা ব্যবসায় পরিবেষ্টিত থাকে এবং যেসব উপাদান ব্যবসায়ের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে সেগুলোর সমন্বয়ে ব্যবসায় পরিবেশ গড়ে ওঠে।
মানুষের জীবনধারা যেমন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়, ব্যবসায়িক কর্মপ্রক্রিয়াও তেমনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বহুবিধ উপাদান দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়।
এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত দিক, রয়েছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রয়েছে সরকারি নিয়মকানুন ও রাজস্ব নীতি ব্যবসায় পরিচালনার লক্ষ্যে এসব উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পারিপার্শ্বিক অবস্থাই ব্যবসায় পরিবেশ।
ব্যবসায়ের পরিবেশ সম্পর্কে নিয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
দত্ত ও মুখার্জী এ দুই লেখকের মতে, “যেসব ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাকে ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে।"
ব্যবসায় পরিবেশ কি? এ সম্পর্কে এন.সি. রায় চৌধুরী- বলেন, "যেসব অবস্থা ব্যবসায়ের উন্নতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বলে।"
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যবসায় পরিবেশ কাকে বলে এ সম্পর্কে বলা যায়, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার পরিবর্তনশীল চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, আইনগত এবং তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট ব্যবসায়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বা ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে।
ব্যবসায়ের পরিবেশ হলো ব্যবসায়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমষ্টি। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বলতে সাধারণত বাহিরের সেসব উপাদানগুলোকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ বয়ে আনতে পারে কিংবা ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন:- অংশীদারি ব্যবসা কাকে বলে?
দত্ত ও মুখার্জী এ দুই লেখকের মতে, “যেসব ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাকে ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে।"
ব্যবসায় পরিবেশ কি? এ সম্পর্কে এন.সি. রায় চৌধুরী- বলেন, "যেসব অবস্থা ব্যবসায়ের উন্নতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বলে।"
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যবসায় পরিবেশ কাকে বলে এ সম্পর্কে বলা যায়, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার পরিবর্তনশীল চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, আইনগত এবং তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট ব্যবসায়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বা ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে।
ব্যবসায়ের পরিবেশ হলো ব্যবসায়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমষ্টি। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বলতে সাধারণত বাহিরের সেসব উপাদানগুলোকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ বয়ে আনতে পারে কিংবা ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন:- অংশীদারি ব্যবসা কাকে বলে?
ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানসমূহ :-
বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও পরিবর্তনশীলতার যুগে ব্যবসায়ে সাফল্য অর্জন সম্পূর্ণ রূপে এর পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অভ্যন্তরীণ (Internal) এবং বাহ্যিক (Exterinal) উভয় প্রকার হয়ে থাকে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ কর্মচারী, মালিকপক্ষ ও পরিচালনা পরিষদ দ্বারা গঠিত। পক্ষান্তরে, বাহ্যিক পরিবেশে রয়েছে সরবরাহকারী, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ, ব্যাংক বিমা কোম্পানি, সরকারি সংস্থা, তেতাবৃন্দ ইত্যাদি।অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদান :-
ব্যবসায়ের পরিবেশগত উপাদান সমূহের সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত। কোনোটি সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।যে সকল পরিবেশগত উপাদান প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি ব্যবসায় কার্যক্রমের ওপর প্রভাব বিস্তার করে কিন্তু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়ন্ত্রণযোগ্য তাকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলে।
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিরাজমান অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শক্তি বা পক্ষসমূহের সমন্বয়ে এরূপ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিচে অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদানসমূহ কীভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করা হলো।
শেয়ারহোল্ডার :-
এরা ভোটের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাকে বা পরিচালক পর্ষদকে প্রভাবিত করে। বিশেষত, লিমিটেড কোম্পানির বেলায় এ অবস্থাটি সৃষ্টি হয়। কাজেই ব্যবস্থাপনাকে তাদের মর্জির দিকে খেয়াল রাখতে হয়।
সরবরাহকারী :-
শিল্প বা কারবারের জন্য পণ্য সরবরাহকারী মর্জি মতো ব্যবস্থাপনাকে শিল্পোতপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। কারণ পণ্য যথাসময়ে সরবরাহ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বা ক্রেতাদেরকে পণ্য প্রদান করা সম্ভব না হওয়ার আশংকা থাকে।
মধ্যস্থ ব্যবসায়ী :-
মধ্যস্থ ব্যবসায়ী এক ধরনের বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান যারা উৎপাদনকারী ও ভোগকারীদের মধ্যে অবস্থান করে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় ও বণ্টনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন:- ব্যবসায় মূল্যবোধ কাকে বলে?
মধ্যস্থ ব্যবসায়ীগণ কাজের ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যথা- পাইকার, মুচরা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, দালাল, ফড়িয়া, ঝুঁকিবাহক প্রভৃতি।
এসব মধ্যস্থ ব্যবসায়ীগণ পণ্য ও সেবাকর্মের স্বত্নগত, স্থানগত ও কালগত উপযোগ সৃষ্টি করে ব্যবসায়ের কার্যপ্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
গ্রাহক :-
ক্রেতার স্বার্থ সর্বদাই প্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় থাকে। ব্যবস্থাপনা ক্রেতার পছন্দ, রুচি, ফ্যাশন প্রভৃতি বিবেচনা করে ক্রেতাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে।
প্রতিযোগী :-
প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রতিযোগী কখন কোন কৌশল নির্ধারণ করবে তা ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করতে হয় এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য অনুরূপ বা তদপেক্ষা উন্নত কৌশল গ্রহণ করতে হয়।
কর্মচারী :-
কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার। কাজেই কর্মচারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সুবিধা-অসুবিধা, পরামর্শ প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করতে হয়।
অন্যান্য সংস্থা :-
প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো সময় ঋণদাতা ব্যবস্থাপনাকে তাদের ইচ্ছামতো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কৌশল নির্ধারণ বা পরিবর্তন করতে চাপ দেয়, এভাবে প্রতিষ্ঠান ঋণদাতা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আবার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাস লাইন গ্রহণ, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স, আয়কর হ্রাস, মূল্য সংযোজন কর ইত্যাদি বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে, ব্যবস্থাপনাকেও তার কার্য পদ্ধতি সেভাবে নির্ধারণ করতে হয়।
আরও পড়ুন:- ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব লিখ?
বাহ্যিক পরিবেশের উপাদান :-
প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিবেশ দুভাগে বিভক্ত:(ক) সাধারণ পরিবেশ (General environment) এবং
(খ) কার্য পরিবেশ (Task environment)।
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা শক্তিসমূহ প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে সেগুলা দ্বারা সৃষ্টি হয় সাধারণ পরিবেশের। পক্ষান্তরে, কার্য পরিবেশ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিগোষ্ঠী বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। নিম্নে বাহ্যিক পরিবেশের আওতাধীন উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:
প্রাকৃতিক উপাদান (Natural element) :-
প্রকৃতিগত কারণে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
কোনো দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবস্থান আয়তন, জনসংখ্যা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
এ উপাদানসমূহের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতির দ্বারা ব্যবসায় কার্যকালাপ প্রভাবিত হয়। সে কারণেই এসব উপাদানের অনুকূল ক্ষেত্রে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা অধিক পরিমাণে গড়ে ওঠে।
অর্থনৈতিক উপাদান ( Economic element) :-
অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেছেন, "অর্থনৈতিক পরিবেশ কতকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যা ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ব্যয়ের ধরনকে প্রভাবিত করে"।
এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থ ও বাগ ব্যবস্থা, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ মূলধন ইত্যাদি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
একটি দেশের জাতীয় আয় ভোগের পরিমাণ, উৎপাদান ও বণ্টন, গড় মাথাপিছু আয় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে কোন দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ। কাজেই উপরিউক্ত উপাদানসমূহ অনুকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান (Social and cultural element) :-
মানুষ সমাজবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এ সমাজবদ্ধ মানুষের ধ্যানধারস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, মনোভাব ও বিশ্বাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সামাজিক পরিবেশ। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর ও সামাজিক উপাদানগুলোর প্রভাব অসীম।
সামাজিক পরিবেশ সহজ, সুন্দর ও অনুকূল হলে ব্যবসায় বাণিজ্য তার কামা লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদন (Political and legal element) :-
একটি দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত উপাদানসমূহ ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কোনো দেশের সরকারি নিয়মকানুন, আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুকূল হলে ব্যবসায়ও দ্রুতগতিতে বিকশিত হতে পারে।
ঠিক তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীল, ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, বাণিজ্য নীতি, রাজস্বনীতি, বিনিয়োগনীতি ইত্যাদির আনুকূল্য এবং সরকারি পৃষ্টপোষকতা ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদান (Information and technological element) :-
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, বর্তমান কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাও তেমনি মানুষের জীবনধারা কে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের দ্বারা গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফলে বিশ্ব পাচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার ক্রেতা ও ভোক্তারা পাচ্ছে নতুন নতুন পণ্য ও সেবাসামগ্রী।
আবার তথ্য ব্যবস্থার অবাধ প্রবাহ ব্যবসায় বাণিজ্য গতি সজার করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ব্যতীত আজকের বিশ্বায়নের যুগে ব্যবসায়-বাণিজ্যে অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রত্যাশা দূরশামাত্র।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.