সর্বত্রই ব্যবসায় ছড়িয়ে আছে এবং আমরা সবাই এর অংশ। আমরা পিৎজা খাচ্ছি, জিন্স প্যান্ট পড়ছি, আমাদের গাড়ি, টেলিভিশন দেখা- এ সব কিছুই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদন, বণ্টন এবং বিক্রম হচ্ছে।
এসব পণ্য ও সেবা যেন আমরা ক্রয় করতে পারি সেজন্য আমরা অর্থ উপার্জন করি এবং সেটাও কোনো না কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।
আপনার উপার্জিত অর্থ যে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখছেন সেটাও একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যে পণ্যটি আপনি ক্রয় করছেন, সে পণ্যটি উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রয় পর্যন্ত কার্যক্রমে কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জড়িত।
একবার চিন্তা করুন, আপনি যেখানে বসবাস করেন তার আশপাশের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে। এখন চিন্তা করুন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানবিহীন এ পৃথিবী কেমন হতে পারে? প্রতিষ্ঠানবিহীন পৃথিবীতে আপনাকে বাঁচতে হলে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের সমাজে ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করছে। আসুন তাহলে জেনে নেই "ব্যবসায়" বা 'ব্যবসা' বলতে কী বুঝায়?
কিন্তু ব্যাপক অর্থে পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।
ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সংঙ্গা দিয়েছেন-
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়িক তত্ত্বের প্রবক্তা রজার ডাব্লিউ ব্যাবসন ব্যবসা কাকে বলে? এ সম্পর্কে বলেছেন-
পণ্যসামগ্রী, সেবা এবং মতাদর্শের উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত যে সকল মানবীয় কার্যাবলি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় এদের সবগুলোই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।"
সুতরাং ব্যবসায়ের প্রকৃতিকে দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সার্বজনীন। এ দুপ্রকৃতির ব্যবসায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবসায় (Individual business) :-
একক মালিকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ, ব্যবসায় ক্ষেত্র নির্বাচন, ব্যবস্থাপনা নীতি নির্ধারণ, মুনাফার একক ভোগ- সবই ক্ষুদ্রাকারে এবং একজন মালিক দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে।
এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মালিকই সর্বেসর্বা। ব্যবসায়ের মালিক বলে তিনিই লাভ-লোকসানের জন্য এককভাবে দায়ী। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
২. সার্বজনীন ব্যবসায় (Universal business) :-
অংশীদারি ব্যবসায়, যৌথ মূলধনী ব্যবসায়, সমবায় ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন ইত্যাদির প্রকৃতি সার্বজনীন। কারণ এ সব প্রতিষ্ঠানের জন্য হয় আইন অনুগভাবে। আবার এগুলোর ক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহ থেকে শুরু করে লাভ-লোকসান কটন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা নীতি ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্র নির্ধারণ ইত্যাদি সংযুক্তভাবে করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসায়ের কার্যক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে বৃহত্তর।
১ - মুনাফা অর্জন (Making profit) :-
ব্যবসায়ের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। কারণ ব্যবসায়ের ধরন যা-ই হোক না কেন, মালিকগণ মুনাফা অর্জনকেই প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করে ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে থাকেন।
২ - ঝুঁকি গ্রহণ (Bearing risk) :-
ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লাভ-লোকসানের হুঁকি। প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার সাফল্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সুতরাং ব্যবসায়ের অস্তিত্বের সাথে লাভ-লোকসানের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি জড়িত।
৩ - উদ্যোগ গ্রহণ (Entrepreneurship) :-
সায়ী প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। কারণ উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যবসায় স্থাপিত হতে পারে না। সুতরাং উদ্যোগ গ্রহণও ব্যবসায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
8 - মূলধন সংস্থান (Supply of capital) :-
মূলধন ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি। সঠিক সময়ে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু গঠন ও পরিচালনার নিমিত্তে সঠিক পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন। মালিক বা উদ্যোক্তাগণ মূলধন নিজেদের তহবিল থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
৫ - সংগঠন (Organisation) :-
প্রয়োজনীয় উপকারণগুলোকে একত্রিত বা সমন্বিত করে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কার্য শুরু করার নামই সংগঠন। উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানগুলো অর্থাৎ ভূমি, শ্রম ও মূলধন করেও উদ্যোগ বা সাংগঠনিক ভূমিতা ব্যতীত একত্রিত হতে পারে না। সংগঠনের সাফল্যের ওপরই ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে।
৬ - সম্পদ আহরণ (Wealth earning) :-
ভোক্তাদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে ব্যবসায়ী প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উত্তোলন করে এবং তা ক্রেতাদের ব্যবাহরোপযোগী করে পরিবেশন করে।
৭ - উৎপাদন বা উপযোগ সৃষ্টি (Production of creation of utility) :-
ক্রেতাগণ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যাদি চূড়ান্ত ভোগের উপযোগী করে পেতে চায়। এ জন্যেই ব্যবসায় আহরিত প্রাকৃতিক সম্পদের মাঝে উপযোগিতা সৃষ্টি করে এবং ক্রেতাদের ভোগের উপযোগী করে তা বাজারজাত করে।
৮ - মিতব্যয়িতা (Frugality) :-
ব্যবসায়ী সর্বদাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বাড়াবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
৯ - পণ্য বণ্টন (Distribution of products) :-
ব্যবসায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বণ্টন। ব্যবসায়ের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনস্থল থেকে ভোক্তার নিকট বণ্টন করা হয়।
১০ - গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি (Development of quality) :-
পণ্য বা সেবার গুণগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি ব্যবসায়ের বিশেষ করে আধুনিক ব্যবসায়ের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক ব্যবসায়ীই চায় তার পণ্য বা সেবা ভোক্তাদের সন্তুষ্টি লাভ সক্ষম হোক এবং এটি পণ্য বা সেবার বাজারে বিশিষ্টতা লাভ করুক।
১১ - ক্রেতা-বিক্রেতা (Buyer and seller) :-
ব্যবসায়িক লেনদেনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা। অর্থ প্রদান ও অর্থ গ্রহণ, এ দুটির অস্তিত্ব ব্যবসায়িক লেনদেনে অপরিহার্য।
১২ - সুনির্দিষ্ট উপকরণ (Specific input) :-
পণ্য, সেবা, উৎপাদন, বন্টন, বাজারজাতকরণ, গুদামজাতাকরণ, পরিবহন এগুলো হচ্ছে ব্যবসায়ের কতিপয় সুনির্দিষ্ট উপকরণ। এ উপকরণগুলো ছাড়া ব্যবসায় সম্পূর্ণ অচল।
১৩ -পূর্বানুমান (Forecasting) :-
ভবিষ্যত বাজারের সঠিক অনুমানের ওপরই ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জন তথা সফলতা নির্ভর করে। সুতরাং ব্যবসায়ীকে ক্রেতাদের প্রয়োজন, অভিরুচি, পছন্দ ইত্যাদির ভিত্তিতে ভবিষ্যত বাজার সম্পর্কে পূর্বানুমান করে সেই অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, আহরণ ও মজুত করতে হয়।
১৪ - নিয়মিত লেনদেন (Regular transactions) :-
ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়মিত ও পৌনঃপুনিকভাবে হতে হয়। আকস্মিক কোনোরূপ লেনদেনকে ব্যবসায় বলা যায় না।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায় মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সম্পাদিত কার্যকলাপ হলেও তাতে ওপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যাবলি বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। এসব বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকলে তাকে ব্যবসায় বা ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বলে অভিহিত করা যায় না।
একবার চিন্তা করুন, আপনি যেখানে বসবাস করেন তার আশপাশের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে। এখন চিন্তা করুন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানবিহীন এ পৃথিবী কেমন হতে পারে? প্রতিষ্ঠানবিহীন পৃথিবীতে আপনাকে বাঁচতে হলে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের সমাজে ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করছে। আসুন তাহলে জেনে নেই "ব্যবসায়" বা 'ব্যবসা' বলতে কী বুঝায়?
ব্যবসা কাকে বলে :-
সাধারণ অর্থে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পন্যদ্রব্য ক্রয়বিক্রয় সংক্রান্ত কাজকে ব্যবসায় বলা হয়। অর্থাৎ স্বল্প মূল্যে পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করার কার্যই ব্যবসায়।কিন্তু ব্যাপক অর্থে পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।
ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সংঙ্গা দিয়েছেন-
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়িক তত্ত্বের প্রবক্তা রজার ডাব্লিউ ব্যাবসন ব্যবসা কাকে বলে? এ সম্পর্কে বলেছেন-
পণ্যসামগ্রী, সেবা এবং মতাদর্শের উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত যে সকল মানবীয় কার্যাবলি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় এদের সবগুলোই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।"
আরও দেখুন:- ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা কর?
গ্লস ও বেকার এর মত ব্যবসা হলো-
"দেশের প্রয়োজন মোতাবেক পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও বিক্রয়ের নির্মিত পরিচালিত মানুষের একক বা সম্মিলিত প্রচেষ্টাই মূলত ব্যবসায় "
বেয়ার হুইয়ার ব্যবসা কাকে বলে এ সম্পর্কে বলেছেন -
"মুনাফা লাভের অনুপ্রেরণায় সমাজে পণ্যসামগ্রী ও সেবা সরবরাহ করার জন্য সংগঠিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়।"
সুতরাং, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের আহরণ, রূপান্তরকরণ ও বাজারজাতকরণের পর ভবিষ্যত প্রয়োজনের নিমিত্তে এদের পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য ও সেবাকর্ম পৌঁছে দেবার যাবতীয় কার্যাবলিকে ব্যবসায় বলে।
আরও পড়ুন:- বাণিজ্য কাকে বলে?
গ্লস ও বেকার এর মত ব্যবসা হলো-
"দেশের প্রয়োজন মোতাবেক পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও বিক্রয়ের নির্মিত পরিচালিত মানুষের একক বা সম্মিলিত প্রচেষ্টাই মূলত ব্যবসায় "
বেয়ার হুইয়ার ব্যবসা কাকে বলে এ সম্পর্কে বলেছেন -
"মুনাফা লাভের অনুপ্রেরণায় সমাজে পণ্যসামগ্রী ও সেবা সরবরাহ করার জন্য সংগঠিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়।"
সুতরাং, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের আহরণ, রূপান্তরকরণ ও বাজারজাতকরণের পর ভবিষ্যত প্রয়োজনের নিমিত্তে এদের পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য ও সেবাকর্ম পৌঁছে দেবার যাবতীয় কার্যাবলিকে ব্যবসায় বলে।
ব্যবসা কত প্রকার ও কি কি :-
প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ আহরণ, উৎপাদন, বণ্টন এবং এদের সহায়ক কার্যাবলিকে ব্যবসায় বলা হয়। অর্থাৎ শিল্প, বাণিজ্য, প্রত্যক্ষ সেবাকর্ম ও শিল্প বাণিজ্যে সহায়তাকারী সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়। এরূপ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়কে শিল্প, বাণিজ্য, প্রত্যক্ষসেরা ও ব্যবসায় সহায়ক কার্যাবলি এ চারভাগে ভাগ করা যায়। চিত্রে বিস্তৃতাকারে এ শ্রেণিবিন্যাস দেখানো হলো:ব্যবসার প্রকৃতি :-
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। এসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার প্রত্যক্ষ কারণ যদিও ব্যক্তিগত অর্থাৎ ব্যবসায়ের মালিক বা মালিকগণের জন্যে মুনাফা অর্জন করা, তবুও সমাজবদ্ধ মানুষের অভাব পূরণের নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, শিল্প স্থাপন এবং দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে তোলার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ব্যবসায় সার্বজনীন দায়িত্ব পালন করে থাকেআরও পড়ুন:- বাণিজ্য কাকে বলে?
সুতরাং ব্যবসায়ের প্রকৃতিকে দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সার্বজনীন। এ দুপ্রকৃতির ব্যবসায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবসায় (Individual business) :-
একক মালিকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ, ব্যবসায় ক্ষেত্র নির্বাচন, ব্যবস্থাপনা নীতি নির্ধারণ, মুনাফার একক ভোগ- সবই ক্ষুদ্রাকারে এবং একজন মালিক দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে।
এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মালিকই সর্বেসর্বা। ব্যবসায়ের মালিক বলে তিনিই লাভ-লোকসানের জন্য এককভাবে দায়ী। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
২. সার্বজনীন ব্যবসায় (Universal business) :-
অংশীদারি ব্যবসায়, যৌথ মূলধনী ব্যবসায়, সমবায় ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন ইত্যাদির প্রকৃতি সার্বজনীন। কারণ এ সব প্রতিষ্ঠানের জন্য হয় আইন অনুগভাবে। আবার এগুলোর ক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহ থেকে শুরু করে লাভ-লোকসান কটন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা নীতি ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্র নির্ধারণ ইত্যাদি সংযুক্তভাবে করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসায়ের কার্যক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে বৃহত্তর।
ব্যবসার বৈশিষ্ট্য :-
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন তথা অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, বণ্টন এবং এ সংক্রান্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল বৈধ কর্মই ব্যবসায়। ব্যবসায়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নলিখিত মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয়।১ - মুনাফা অর্জন (Making profit) :-
ব্যবসায়ের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। কারণ ব্যবসায়ের ধরন যা-ই হোক না কেন, মালিকগণ মুনাফা অর্জনকেই প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করে ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে থাকেন।
২ - ঝুঁকি গ্রহণ (Bearing risk) :-
ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লাভ-লোকসানের হুঁকি। প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার সাফল্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সুতরাং ব্যবসায়ের অস্তিত্বের সাথে লাভ-লোকসানের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি জড়িত।
৩ - উদ্যোগ গ্রহণ (Entrepreneurship) :-
সায়ী প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। কারণ উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যবসায় স্থাপিত হতে পারে না। সুতরাং উদ্যোগ গ্রহণও ব্যবসায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
8 - মূলধন সংস্থান (Supply of capital) :-
মূলধন ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি। সঠিক সময়ে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু গঠন ও পরিচালনার নিমিত্তে সঠিক পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন। মালিক বা উদ্যোক্তাগণ মূলধন নিজেদের তহবিল থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:- অর্থসংস্থান কাকে বলে?
৫ - সংগঠন (Organisation) :-
প্রয়োজনীয় উপকারণগুলোকে একত্রিত বা সমন্বিত করে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কার্য শুরু করার নামই সংগঠন। উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানগুলো অর্থাৎ ভূমি, শ্রম ও মূলধন করেও উদ্যোগ বা সাংগঠনিক ভূমিতা ব্যতীত একত্রিত হতে পারে না। সংগঠনের সাফল্যের ওপরই ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে।
৬ - সম্পদ আহরণ (Wealth earning) :-
ভোক্তাদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে ব্যবসায়ী প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উত্তোলন করে এবং তা ক্রেতাদের ব্যবাহরোপযোগী করে পরিবেশন করে।
৭ - উৎপাদন বা উপযোগ সৃষ্টি (Production of creation of utility) :-
ক্রেতাগণ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যাদি চূড়ান্ত ভোগের উপযোগী করে পেতে চায়। এ জন্যেই ব্যবসায় আহরিত প্রাকৃতিক সম্পদের মাঝে উপযোগিতা সৃষ্টি করে এবং ক্রেতাদের ভোগের উপযোগী করে তা বাজারজাত করে।
৮ - মিতব্যয়িতা (Frugality) :-
ব্যবসায়ী সর্বদাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বাড়াবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
৯ - পণ্য বণ্টন (Distribution of products) :-
ব্যবসায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বণ্টন। ব্যবসায়ের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনস্থল থেকে ভোক্তার নিকট বণ্টন করা হয়।
১০ - গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি (Development of quality) :-
পণ্য বা সেবার গুণগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি ব্যবসায়ের বিশেষ করে আধুনিক ব্যবসায়ের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক ব্যবসায়ীই চায় তার পণ্য বা সেবা ভোক্তাদের সন্তুষ্টি লাভ সক্ষম হোক এবং এটি পণ্য বা সেবার বাজারে বিশিষ্টতা লাভ করুক।
১১ - ক্রেতা-বিক্রেতা (Buyer and seller) :-
ব্যবসায়িক লেনদেনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা। অর্থ প্রদান ও অর্থ গ্রহণ, এ দুটির অস্তিত্ব ব্যবসায়িক লেনদেনে অপরিহার্য।
১২ - সুনির্দিষ্ট উপকরণ (Specific input) :-
পণ্য, সেবা, উৎপাদন, বন্টন, বাজারজাতকরণ, গুদামজাতাকরণ, পরিবহন এগুলো হচ্ছে ব্যবসায়ের কতিপয় সুনির্দিষ্ট উপকরণ। এ উপকরণগুলো ছাড়া ব্যবসায় সম্পূর্ণ অচল।
১৩ -পূর্বানুমান (Forecasting) :-
ভবিষ্যত বাজারের সঠিক অনুমানের ওপরই ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জন তথা সফলতা নির্ভর করে। সুতরাং ব্যবসায়ীকে ক্রেতাদের প্রয়োজন, অভিরুচি, পছন্দ ইত্যাদির ভিত্তিতে ভবিষ্যত বাজার সম্পর্কে পূর্বানুমান করে সেই অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, আহরণ ও মজুত করতে হয়।
১৪ - নিয়মিত লেনদেন (Regular transactions) :-
ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়মিত ও পৌনঃপুনিকভাবে হতে হয়। আকস্মিক কোনোরূপ লেনদেনকে ব্যবসায় বলা যায় না।
আরও পড়ুন:- কোম্পানি কাকে বলে?
১৫ - শ্রম বিভক্তিকরণ (Division of labor) :-
উৎপাদনমূলক ব্যবসায়ের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো শ্রমের বিভক্তিকরণ। শ্রম বিভক্তিকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উৎপাদান ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়াস চালানো হয়।
১৬ - সামাজিক দায়িত্ব (Social responsibility) :-
বর্তমান যুগে ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালন। জনগণ ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর চাপের কারণে সামাজিক দায়িত্ব পালন ব্যবসায়ের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
১৭ - সেবামূলক মনোভাব (Service motive) :-
সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে ব্যবসায় গ্রাহকদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী সঠিক স্থানে সঠিক সময়ে পণ্যসামগ্রী হাতে পৌঁছে দেয়।
১৫ - শ্রম বিভক্তিকরণ (Division of labor) :-
উৎপাদনমূলক ব্যবসায়ের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো শ্রমের বিভক্তিকরণ। শ্রম বিভক্তিকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উৎপাদান ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়াস চালানো হয়।
১৬ - সামাজিক দায়িত্ব (Social responsibility) :-
বর্তমান যুগে ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালন। জনগণ ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর চাপের কারণে সামাজিক দায়িত্ব পালন ব্যবসায়ের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
১৭ - সেবামূলক মনোভাব (Service motive) :-
সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে ব্যবসায় গ্রাহকদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী সঠিক স্থানে সঠিক সময়ে পণ্যসামগ্রী হাতে পৌঁছে দেয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায় মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সম্পাদিত কার্যকলাপ হলেও তাতে ওপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যাবলি বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। এসব বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকলে তাকে ব্যবসায় বা ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বলে অভিহিত করা যায় না।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.