অর্থসংস্থান কাকে বলে? অর্থসংস্থানের প্রকারভেদ?

অর্থসংস্থান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মানবদেহে শোণিত প্রবাহের মতো। রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে কিংবা রক্তের প্রবাহ সচল না থাকলে যেমনি মানব দেহ অসাড় হয়ে যায়, ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা সম্ভব না হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রারম্ভিক অবস্থায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, উৎপাদন কার্য চালানো, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও আসবাবপত্র সংগ্রহ, কর্মচারীদের বেতনাদি পরিশোধ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে অর্থের আবশ্যকতা রয়েছে। তাই যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীকে প্রথমেই অর্থসংস্থানের উৎসের সন্ধান করতে হয়।


এ অর্থ বা টাকাকে আমরা সাধারণত 'মূলধন' বা 'পুঁজি' বলে থাকি। প্রয়োজনীয় মূলধন ব্যতীত ব্যবসায় সাফল্যের সাথে পরিচালনা করা যায় না। তাই ব্যবসায়ের অর্থসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর গুরুত্বকে সামনে রেখে এ পোস্টে আমরা ব্যবসায়ের অর্থসংস্থান কী তা জেনে নেয়ার পাশাপাশি আলোচনা করবো এর প্রকারভেদ এবং অন্য একটি পোস্টে উৎসসমূহ সম্পর্কে।

অর্থসংস্থান শব্দের অর্থ :-

'Finance' শব্দটি ল্যাটিন 'Finis' থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো অর্থ যোগান বা সংস্থান। আমাদের দেহের জন্য যেমন রক্তের প্রয়োজন, তেমনি ব্যবসায়ের জন্যও অর্থের প্রয়োজন। তাই অর্থই ব্যবসানোর মূল চালিকা শক্তি। অর্থ ছাড়া ব্যবসায় শিল্প বাণিজ্য পরিচালনার কথা চিন্তা করা যান না।
অর্থসংস্থান কাকে বলে

অর্থসংস্থান কাকে বলে :- 

সহজ কথায় অর্থ সংস্থান বলতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহের ব্যবস্থাকে অর্থ-সংস্থান বলে।

বি. ও হুইলার (B. O. Wheeler)- এর ভাষায়, “ব্যবসায় অর্থসংস্থান বলতে ব্যবসায়ের সেই কাজকে বোঝায় যা ব্যবসায় সংস্থার আর্থিক চাহিদা মেটানো ও সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মূলধন তহবিল সংগ্রহ করা সংরক্ষণের সাথে জড়িত।"

গ্লস এবং বেকার (Gloss and Baker) ব্যবসায় অর্থসংস্থান কাকে বলে? এ সম্পর্কে বলেন, ছোটো বড় সকল আয়তনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের তহবিলের উৎসসমূহ এবং সে সব উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ বা ঋণের সদ্ব্যবহারের সাথে ব্যবসায় অর্থসংস্থান জড়িত।"

অর্থসংস্থান কি? জর্জ টেরি (George R Tery) এর মতে, “যে কোনো ধরনের মূলধন, দল, নগদ তহবিল ইত্যাদি যদি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে নিয়োগ করা হয় তবে তাকে ব্যবসায় অর্থসংস্থান বলে।

ব্যবসায় অর্থসংস্থানের প্রকারভেদ :-

বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে অর্থসংস্থান করা হয়। অর্থসংস্থানের এসব উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য অর্থ সরবরাহ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায় অর্থসংস্থানের প্রকারভেদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়:

আরও পড়ুন:- অংশীদারি ব্যবসায় বিলোপ সাধন কি?

১. স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান (Short-term financing) :-

অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করার উপযোগী অর্থসংস্থানকে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান বলা হয়। সাধারণত ১ বছর বা তারও কম সময়ের জন্য ব্যবসায়ে যে মূলধন ব্যবহার করা হয় তাকে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান বা স্বল্পমেয়াদি মূলধন বলে।

কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ক্রয় বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্যসামগ্রী ক্রয় এবং ব্যবসায়ের অন্যান্য নৈমিত্তিক খরচ মেটানোর জন্য স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের প্রয়োজন হয়।

২. মধ্যমমেয়াদি অর্থসংস্থান (Intermediate term financing) :-

সাধারণত ১ বছরের ওপরে কিন্তু ১০ বছরের কম সময়ের জন্য ব্যবহৃত অর্থসংস্থানকে মধ্যমমেয়াদি অর্থসংস্থান বলে।

অবশ্য কারো কারো মতে মধ্যম মেয়াদ বলতে ১ বছরের অধিক তবে ৫ বছর পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। মধ্যমমেয়াদি অর্থসংস্থানের তখনই প্রয়োজন হয়, যখন স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানে প্রয়োজন মিটে না, আবার দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থান প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই ব্যয়বহুল প্রতীয়মান হয়।

৩. দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থান (Long term financing) :-

ব্যবসায়ের স্থায়ী সম্পদ জন্ম ও প্রাথমিক খরচ নির্বাহ করার জন্য যে মূলধন সরবরাহ করা হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থান বা দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বলে।

ব্যবসায়ের জন্য জমি, দালান, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি স্থায়ী সম্পদ অন্য কারখানা নির্মাণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থের প্রয়োজন হয়। অনেক বছর যাবত এসব সম্পদ স্থায়ী থাকে বলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানকে স্থায়ী অর্থসংস্থানও বলা হয়।

  
এরূপ অর্থসংস্থান সাধারণত ১০ বছরের অধিক সময়ের জন্য করা হয়। অনেকে আবার ৫ বছরের অধিক সময়কেও দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থান হিসেবে বুঝিয়ে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ