অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন কি? অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি কী?

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন কাকে বলে :-

সহজ অর্থে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন বলতে ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যবসায়ের সমুদয় বিষয়-সম্পত্তি ও দায়-দেনার সার্বিক নিষ্পত্তি করাকে বোঝায়।

বিস্তৃত অর্থে সকল অংশীদারের মধ্যকার অংশীদারি সম্পর্কের বিলুপ্তিকে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন বলে।

কোনো প্রতিষ্ঠানের সকল অংশীদারদের মধ্যকার অংশীদারি সম্পর্কে পরিসমাপ্তিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিলোপসাধন বলা হয়।

কোনো অংশীদার যদি অন্যান্য সকল অংশীদারদের সাথে অংশীদারি সম্পর্ক ছেদ করে তবে সেক্ষেত্রে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন হয়েছে একথা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে উক্ত অংশীদারের অংশীদারি সম্পর্কের অবসান ঘটেছে বলা যায়। 


কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যান্য অংশীদারগণ পারস্পরিক নতুন সম্পর্কের মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায় কার্যকর রাখতে পারে। ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন করার জন্য। অংশীদারি সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠান উভয়েরই বিলোপসাধন করতে হয়।

সুতরাং অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন বলতে অংশীদারি ব্যবসায়ের অংশীদারি সম্পর্কে অবসান, প্রতিষ্ঠানের সকল স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পত্তি ও দেনা পাওনার নিষ্পত্তি এবং অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের বিলোপসাধনকেই বোঝায়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন কি

অংশীদারির বা অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি :-

অংশীদারগণের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়িক সম্পর্কের অবসানকেই অংশীদারির বিলোপসাধন বলে।

অংশীদারি আইন ১৯৩২ অনুসারে নিম্নলিখিত উপায়ে বা পদ্ধতিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন ঘটতে পারে। ব্যবসায়ের

১. সম্মতির ভিত্তিতে বিলোপসাধন :-

অংশীদারি ব্যবসায়ের সকল সদস্য সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিলোপসাধন করতে পারে।

২. বাধ্যতামুলক বিলোপসাধন :-

নিম্নবর্ণিত তিনটি কারণ অংশীদারি ব্যবসায় বাধ্যতামূলকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
  • ব্যবসায়ের সকল সদস্য কিংবা একজন ছাড়া বাকি সব সদস্য দেউলিয়া হয়ে পড়লে।
  • ব্যবসায় অবৈধ হয়ে গেলে।
  • রাষ্ট্রীয় ভাবে আইন করে কোনো বিশেষ ধরনের ব্যবসায় বন্ধ করে দেওয়া হলে।


৩. মেয়দান্তে বিলোপসাধন :-

কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো অংশীদারি ব্যবসায় গড়ে ওঠলে ঐ সময়ের পর এর বিলোপ সাধিত হবে। যেমন- ঈদ পর্যন্ত ব্যবসায়ের জন্য কোনো ব্যবসায় গঠিত হলে ঈদের পরে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

৪. কাজ সমাপনান্তে বিলোপসাধন :-

কোনো নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কোনো অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হলে এবং ঐ কার্য সমাপ্ত হয়ে গেলে ব্যবসায়ের বিলুপ্তি ঘটবে। যেমন- কলেজ, হোস্টেল নির্মাণের জন্য যদি দুজন ঠিকাদার একটি কিস্তিতে আবদ্ধ হয় তবে হোস্টেল নির্মাণ শেষ হলে ব্যবসায় বিলুপ্তি হবে।

৫. মৃত্যুজনিত বিলোপসাধন :-

কোনো অংশীদারের মৃত্যু হলে ব্যবসায়টির বিলুপ্তি ঘটবে।

৬. দেউলিয়াপনার কারণে বিলোপসাধন :-

কোনো অংশীদার বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়টি দেউলিয়া বলে ঘোষিত হলে অংশীদারি ব্যবসায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

৭. বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিলোপসাধন :-

শুধু ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায়ের যে কোনো অংশীদার বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সমাপ্তি ঘটাতে পারে।

৮. আদালতের নির্দেশে বিলোপসাধন :-

কোনো বিশেষ কারণে আদালত যদি কোনো অংশদারি ব্যবসায়কে বিলুপ্ত করার নির্দেশ দেন তবে তা বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য আদালত ব্যবসায় বিলোপসাধনের নির্দেশ দিতে পারে :

  • যদি কোনো অংশীদার পাগল হয়।
  • যদি কোনো অংশীদার ব্যবসায় চালাতে স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়।
  • যদি কোনো অংশীদার দেউলিয়া হয়ে যায়।
  • যদি কোনো অংশীদার ইচ্ছাকৃত ও সচেতনভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করে।
  • যদি আদালত মনে করে যে, ব্যবসায়টিতে শুধু লোকসানই হবে।
  • যদি কোনো অংশীদার তৃতীয় কোনো পক্ষের নিকট তার অংশ বিক্রয় বা হস্তান্তর করে।
  • যদি আদালত কোনো অংশীদারের দেনার দায়ে তার সম্পত্তি আটক করে।
  • সর্বোপরি কোনো কারণে আদালত যদি মনে করে যে, এ ব্যবসায়টির বিলোপ সাধিত হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ