অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য :-
কিছু স্বকীয় গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যের জন্য অংশীদারি ব্যবসায় ব্যবসায়িক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। অংশীদারি ব্যবসায়ের এ বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ১. সহজ গঠন প্রণালি (Easy formation) :-
অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা সহজ বলে এ ধরনের ব্যবসায় অধিক জনপ্রিয়। কারণ, কয়েকজন লোক একত্রিত হয়ে লাভ-লোকসান কন্ট্রনের একটা হার নির্ধারণ করা বৈধ কোনো ব্যবসায় গঠন করলেই তা অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে গণ্য হবে।
২. আইনের সম্পর্ক (Legal relation) :-
অংশীদারি ব্যবসায় ১৯৩২ সালের ভারতীয় অংশীদারি আইন অনুসারে গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ আইন বাংলাদেশেও গৃহীত হয়েছে।
৩. সদস্য সংখ্যা (Number of members) :-
যেকোনো আকারে অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য ২ হতে সর্বাধিক ২০ জন সদস্যে প্রয়োজন হয়। অবশ্য ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সদস্যদের সর্বোচ্চ সীমা ১০ জন।
8. মূলধন সরবরাহ (Supply of capital) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের মূলধন অংশীদারগণই সরবরাহ করে থাকেন। তবে কে কী পরিমাণ মূলধণ সরবরাহ করবে তা নির্ভর করে চুক্তির ওপর।
৫. অংশীদারদের পারস্পরিক সম্পর্ক (Interrelation of partners) :-
অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক চুক্তির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
৬. অংশীদার হবার যোগ্যতা (Eligibility to become partner) :-
নাবালক, বিকৃত মস্তিষ্ক, দেউলিয়া কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী-এ ধরনের লোক ছাড়া যে কেই স্বজ্ঞানে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অংশীদার হতে পারে।
৭. অপরিসীম দায় (Unlimited liability) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের দেনার জন্য প্রত্যেক অংশীদার ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে দায়ী। ব্যবসায়ের দেনার জন্য প্রয়োজন হলে একজন সাধারণ অংশীদারের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রয় করে দায় পরিশোধ করা যেতে পারে।
৮. মুনাফা বণ্টন (Distribution of profit) :-
অংশীদারগণের মধ্যে কে কী হারে মুনাফার অংশ পাবে তা নির্ভর করে চুক্তির শর্তের ওপর। তবে চুক্তিতে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকলে মুনাফা সকল অংশীদারদের মধ্যে সমান ভাগে বিভক্ত হবে।
৯. ব্যবস্থাপনা (Management) :-
প্রচলিত আইনানুসারে অংশীদারি ব্যবসায়ের সকল অংশীদার অথবা সকলের পক্ষে এক বা একাধিক অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
আরও পড়ুন:- ব্যবসায় দায়িত্ব কি?
১০. আইনগত সত্তা (Legal entity) :-
আইনের সৃষ্টিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের কোনো আইনগত সত্তা নেই। সে জন্যেই অংশীদারি ব্যবসায়ের নামে কোনো মামলা দায়ের করা যায় না।
১১. চূড়ান্ত সম্বিশ্বাস (Utmost good faith) :-
অংশীদারগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্বিশ্বাস এ ব্যবসায়ের সফলতা ও টিকে থাকার চাবিকাঠি। কারণ বিশ্বাস থেকেই অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি।
১২. ব্যবসায়ের বৈধতা (Legality of business) :-
কোনো ব্যবসায় অংশীদারি ব্যবসায় হতে হলে তা অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বৈধ হতে হবে। কোনো অবৈধ ব্যবসায় অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে আইনগত ভাবে স্বীকৃতি পায় না।
১৩. মালিকানা অহস্তান্তরযোগ্যতা (Non-transferability of ownership) :-
একজন অংশীদার তার মালিকানার অংশ যথেচ্ছভাবে হস্তাস্তার করতে পারে না। তবে সকল অংশীদারি সম্মতিক্রমে তার অংশ হস্তান্তর করতে পারে।
১৪. ব্যবসায়ের আয়তন (Size of business) :-
সীমিত মূলধন এবং সীমাহীন দায়দায়িত্বের জন্য এ ধরনের ব্যবসায়ের আয়তন ক্ষুদ্র হয়ে থাকে।
১৫. সম্পদের মালিকানা (Ownership of assets) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের সমস্ত সম্পদের মালিকানা যৌথভাবে সব অংশীদারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ব্যবসায়ের অবসাযন কালে অংশীদারগণ সমান সমান ভাবে কিংবা চুক্তি অনুযায়ী সম্পদের অংশীদার হয়ে থাকে।
১৬. নিবন্ধনে ঐচ্ছিকতা ( Willingness to registration) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন ঐচ্ছিক। অংশীদারগণ ইচ্ছা করলে ব্যবসায় নিবন্ধান করতে পারেন, নাও করতে পারেন। এতে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।
১৭. অংশীদারদের পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব (Mutual agency of partners) :-
অংশীদারগণ ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে একে অপরের প্রতিনিধি। প্রত্যেকেই ব্যবসায়িক কাজের জন্য যৌথভাবে এবং এককভাবে দায়ী।
১৮. ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব (Stability of business) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব মূলত অংশীদারদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তবে কোনো অংশীদারের মস্তিষ্ক বিকৃতি, দেউলিয়াত্ব ইত্যাদি কারণেও ব্যবসায় ভেঙ্গে যেতে পারে।
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো অংশীদারি ব্যবসায়কে অপরাপর ব্যবসায় সংগঠন থেকে পৃথক ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আরও পড়ুন:- কোম্পানির সংগঠনের বৈশিষ্ট্য লিখ?
অংশীদারি ব্যবসায়ের কিছু নিজস্ব স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য ব্যবসায় থেকে একে আলাদা করেছে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এ ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা আরও জেনেছি, এ ব্যবসায়ের কিছু উপাদান রয়েছে যা এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এখন আমরা অংশীদারি ব্যবসায়ের গুরুত্ব এবং সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।
মাঝারি আয়তনের ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে অংশীদারি সংগঠন ব্যবসায় জগতে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সীমিত পুঁজি ও একক পরিচালনাগত কারণে একমালিকানা ব্যবসায় যেখানে অবরুদ্ধ, অংশীদারি ব্যবসায় সেখানে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গুণে অগ্রসরমান। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে অংশীদারি ব্যবসায়ের ভূমিকা অসীম। ব্যবসায়িক ভূবনে অংশীদারি ব্যবসায়ের এ গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নে আলোচনায় তুলে ধরা হলো:
১. অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন ( Economic welfare) :-
অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনে অংশীদারি ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একাধিক মালিকের সম্মিলিত পুঁজির দ্বারা গঠিত এ ব্যবসা-এর মালিককে, শ্রমিক-কর্মীদেরকে এবং সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে।
২. একচেটিয়া ব্যবসায়ের বিলোপসাধন (Elimination of monopoly business) :-
দেশে একচেটিয়া ব্যবসায়ের বিলোপসাধনে এ ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাঝারি আয়তন ও ক্ষুদ্রায়তনের অধিক সংখ্যক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায়, ব্যবসায় জগতে একচেটিয়া ব্যবসায়ের প্রভাব হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
৩. কর্মসংস্থান (Employment) :-
দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এ ব্যবসায়ের ভূমিকা ও গুরুত্ব অসীম। দেশের স্বল্পবিত্ত বেকার জনশক্তি অল্প পুঁজি নিয়ে বন্ধুবান্ধব বা কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সহায়তায় অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে পারে। এতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়।
8. সামাজিক কল্যাণ (Social welfare) :-
অংশীদারি ব্যবসায় মাঝারি কিংবা ক্ষুদ্রায়তনের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে থাকে। এ ব্যবসায়ের দ্বারাই উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী দেশের আনাচেকানাচে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়। এতে সামাজিক সেবা নিশ্চিত হয়।
৫. শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন ও বিকাশ (Entrepreneurship development) :-
অংশীদারি ব্যবসায় দেশের শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। একক মালিক যেখানে অধিক ঝুঁকির ভয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠনে অপরাগ, সেখানে কয়েকজন ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন সহজতর হয়
৬. ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ (Expansion of business) :-
ব্যবসায় জগতে এ ব্যবসায় ক্ষুদ্রাকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সামগ্রিক ব্যবসায়ের সম্প্রারণে বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যেসব ক্ষেত্রে কোম্পানি ব্যবসায় গড়ে তোলা দুষ্কর, সেসব ক্ষেত্রে এ ব্যবসায় সাফল্যজনকভাবে তার ব্যবসায়িক কার্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
২. মূলধন ও ঋণ সংগ্রহে সুবিধা :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিক অধিক বলে এ ধরনের ব্যবসায়ের পক্ষে প্রয়োজন মোতাবেক বেশি পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা সহজসাধ্য হয়। আবার অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অধিক পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করা অংশীদারি ব্যবসায়ের পক্ষে সহজ হয়।
৩. যৌথ পরিচালনা :-
অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনার জন্য সকল অংশীদার একক ও যৌথভাবে দায়ী থাকে। সকলেই তাদের পৃথক পৃথক যোগ্যতা অনুসারে পরিচালনার দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। এর ফলে সকলের সম্মিলিত পরিচালনায় ব্যবসায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই সফলতা অর্জিত হয়।
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ :-
ব্যবসায়ে নানাবিধ পরিস্থিতিতে বা যে কোনো কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এরূপ পরিস্থিতিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিকগণ একত্রিত হয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করতে পারেন।
৫. অসীম দায়ের সুবিধা :-
অংশীদারগণের দায় অসীম বলে অংশীদারি ব্যবসায় বাজার হতে অত্যন্ত সহজে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে আবার একই কারণে অংশীদারগণ তাদের সাধ্যমত ব্যবসায়কে লাভজনক করার প্রচেষ্টায়ও লিপ্ত থাকে।
৬. গোপনীয়তা রক্ষা :-
শুধু কযেকজন অংশীদার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকে বলে এ ধরনের ব্যবসায়ে সহজেই গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয়।
৭. নতুন অংশীদার গ্রহণ :-
ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধি করতে হলে বা অতিরিক্ত মূলধনের প্রয়োজন হলে সকল অংশীদারের যৌথ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যে কোনো সময় নতুন অংশীদার গ্রহণ করা যায়।
৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতান্ত্রিকতা :-
ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির ক্ষেত্রে সকল সদস্য সম্মিলিতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে তা যথাযথ, কার্যকর ও সময়োপযোগী হয়ে থাকে।
৯. ঝুঁকি বণ্টন :-
এ ধরনের ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান সকল অংশীদার শেয়ারের অনুপাতে বা শর্তানুসারে ভাগ করে নেয়। ফলে প্রত্যেক মালিকের ভাগে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
১০. অধিক জনসংযোগ :-
অংশীদারি ব্যবসায়ে মালিক একধিক থাকায় তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্রেতা বিক্রেতা, সরবরাহকারী, শ্রমিক ও কর্মচারী, ঋণদাতা, ব্যাংক ও প্রতিবেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি ব্যবসায়ের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
১২. ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি :-
সম্মিলিত পরিচালনা, সুষ্ঠু জনসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
১৩. দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ :-
অংশীদারি ব্যবসায় তুলনামূলকভাবে বৃহৎ আকারের প্রতিষ্ঠান বিধায় প্রয়োজনবোধে অধিক বেতন দিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মচারী নিয়োগ করা যায়।
১৪. শ্রম বিভাগ :-
প্রতিষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে বৃহদায়তন হওয়ায় শ্রমিক বা কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রেও শ্রমবিভাগের সুবিধা পাওয়া যায়। এভাবে ক্রমবিভাগের প্রবর্তন ব্যবসায় উন্নয়নের সহায়ক।
১৫. মালিকানা ও পরিচালনায় একাত্মতা :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিক ও পরিচালক মূলত অংশীদাররাই হয় বিধায় তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়া সহজ হয়। ফলে প্রত্যেকেই একত্র হয়ে কাজ করে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে সফল করে তুলতে সচেষ্ট থাকে।
১৬. ব্যবস্থাপনা বিশেষায়ন :-
বিভিন্ন অংশীদার ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যথা- বিপণন, হিসাবরক্ষক, প্রশাসন, গবেষণা ইত্যাদি) বিশেষায়িত হলে ব্যবসায় দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা সহজ হয়।
১. আইনগত সত্তার অভাব :-
অংশীদারি ব্যবসায় আইন সৃষ্ট নয় বলে এর কোনো আইনগত সত্তা নেই। আইনগত সত্তার অভাব থাকায় এরূপ ব্যবসায় পরিচালনায় কখনো কখনো অসুবিধা দেখা দেয়।
২. স্থায়িত্বের অভাব :-
অংশীদারি ব্যবসায় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। কোনো অংশীদারের মৃত্যু হলে, কোন অংশীদার পাগল বা দেউলিয়া হলে কিংবা অংশীদারগণের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে এ ধরনের ব্যবসা ভেঙ্গে যায়।
৩. মূলধনের সীমাবদ্ধতা :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের তুলনায় যৌথ প্রচেষ্টা মাধ্যমে এ ব্যবসায়ে অধিক মূলধন সংগৃহীত হয়, তবে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এ মূলধন যথেষ্ট নয়। তাই বৃহৎ শিল্প কারখানা স্থাপনে এ ব্যবসায় তেমন উপযোগী নয়।
8. অসীম দায় :-
অংশীদারি ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদারের দায় অসীম। অর্থাৎ কোনো একজন অংশীদারের কার্যাবলির জন্য সকল অংশীদারের সমুদয় সম্পত্তি দায়গ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। এজন্য অনেকের অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহী হয় না।
৫. মালিকানা হস্তান্তরে বাধা :-
যেহেতু অংশীদারি ব্যবসায়ে মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য নয় সেহেতু কেউ ইচ্ছা করলেও সহজে এ ধরনের ব্যবসায় পরিত্যাগ করতে পারে না।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা :-
কোনো জটিল বিষয়ে সকল অংশীদারের পক্ষে কমতম হওয়া, কিংবা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল অংশীদারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হতে পারে।
৭. পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতা :-
ব্যবসায় শুরু করার সময় সকল অংশীদার পারস্পরিক বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও কালক্রমে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা জন্ম নিতে পারে। আর এরই ফলে অংশীদারি ব্যবসায় ভেঙ্গে যায়।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর কারণে অংশীদারি ব্যবসায় কোম্পানি সংগঠন কিংবা অন্যান্য বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধাসমূহ অর্জন করতে পারেনি। যদিও পুঁজি সংগ্রহ ও আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় অপেক্ষা অংশীদারি ব্যবসায় বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছে।
১০. আইনগত সত্তা (Legal entity) :-
আইনের সৃষ্টিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের কোনো আইনগত সত্তা নেই। সে জন্যেই অংশীদারি ব্যবসায়ের নামে কোনো মামলা দায়ের করা যায় না।
১১. চূড়ান্ত সম্বিশ্বাস (Utmost good faith) :-
অংশীদারগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্বিশ্বাস এ ব্যবসায়ের সফলতা ও টিকে থাকার চাবিকাঠি। কারণ বিশ্বাস থেকেই অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি।
১২. ব্যবসায়ের বৈধতা (Legality of business) :-
কোনো ব্যবসায় অংশীদারি ব্যবসায় হতে হলে তা অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বৈধ হতে হবে। কোনো অবৈধ ব্যবসায় অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে আইনগত ভাবে স্বীকৃতি পায় না।
১৩. মালিকানা অহস্তান্তরযোগ্যতা (Non-transferability of ownership) :-
একজন অংশীদার তার মালিকানার অংশ যথেচ্ছভাবে হস্তাস্তার করতে পারে না। তবে সকল অংশীদারি সম্মতিক্রমে তার অংশ হস্তান্তর করতে পারে।
১৪. ব্যবসায়ের আয়তন (Size of business) :-
সীমিত মূলধন এবং সীমাহীন দায়দায়িত্বের জন্য এ ধরনের ব্যবসায়ের আয়তন ক্ষুদ্র হয়ে থাকে।
১৫. সম্পদের মালিকানা (Ownership of assets) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের সমস্ত সম্পদের মালিকানা যৌথভাবে সব অংশীদারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ব্যবসায়ের অবসাযন কালে অংশীদারগণ সমান সমান ভাবে কিংবা চুক্তি অনুযায়ী সম্পদের অংশীদার হয়ে থাকে।
১৬. নিবন্ধনে ঐচ্ছিকতা ( Willingness to registration) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন ঐচ্ছিক। অংশীদারগণ ইচ্ছা করলে ব্যবসায় নিবন্ধান করতে পারেন, নাও করতে পারেন। এতে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।
১৭. অংশীদারদের পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব (Mutual agency of partners) :-
অংশীদারগণ ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে একে অপরের প্রতিনিধি। প্রত্যেকেই ব্যবসায়িক কাজের জন্য যৌথভাবে এবং এককভাবে দায়ী।
১৮. ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব (Stability of business) :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব মূলত অংশীদারদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তবে কোনো অংশীদারের মস্তিষ্ক বিকৃতি, দেউলিয়াত্ব ইত্যাদি কারণেও ব্যবসায় ভেঙ্গে যেতে পারে।
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো অংশীদারি ব্যবসায়কে অপরাপর ব্যবসায় সংগঠন থেকে পৃথক ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আরও পড়ুন:- কোম্পানির সংগঠনের বৈশিষ্ট্য লিখ?
অংশীদারি ব্যবসায়ের কিছু নিজস্ব স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য ব্যবসায় থেকে একে আলাদা করেছে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এ ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা আরও জেনেছি, এ ব্যবসায়ের কিছু উপাদান রয়েছে যা এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এখন আমরা অংশীদারি ব্যবসায়ের গুরুত্ব এবং সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।
অংশীদারি ব্যবসায়ের গুরুত্ব :-
মাঝারি আয়তনের ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে অংশীদারি সংগঠন ব্যবসায় জগতে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সীমিত পুঁজি ও একক পরিচালনাগত কারণে একমালিকানা ব্যবসায় যেখানে অবরুদ্ধ, অংশীদারি ব্যবসায় সেখানে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গুণে অগ্রসরমান। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে অংশীদারি ব্যবসায়ের ভূমিকা অসীম। ব্যবসায়িক ভূবনে অংশীদারি ব্যবসায়ের এ গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নে আলোচনায় তুলে ধরা হলো:
১. অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন ( Economic welfare) :-
অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনে অংশীদারি ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একাধিক মালিকের সম্মিলিত পুঁজির দ্বারা গঠিত এ ব্যবসা-এর মালিককে, শ্রমিক-কর্মীদেরকে এবং সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে।
২. একচেটিয়া ব্যবসায়ের বিলোপসাধন (Elimination of monopoly business) :-
দেশে একচেটিয়া ব্যবসায়ের বিলোপসাধনে এ ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাঝারি আয়তন ও ক্ষুদ্রায়তনের অধিক সংখ্যক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায়, ব্যবসায় জগতে একচেটিয়া ব্যবসায়ের প্রভাব হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
৩. কর্মসংস্থান (Employment) :-
দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এ ব্যবসায়ের ভূমিকা ও গুরুত্ব অসীম। দেশের স্বল্পবিত্ত বেকার জনশক্তি অল্প পুঁজি নিয়ে বন্ধুবান্ধব বা কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সহায়তায় অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে পারে। এতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়।
8. সামাজিক কল্যাণ (Social welfare) :-
অংশীদারি ব্যবসায় মাঝারি কিংবা ক্ষুদ্রায়তনের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে থাকে। এ ব্যবসায়ের দ্বারাই উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী দেশের আনাচেকানাচে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়। এতে সামাজিক সেবা নিশ্চিত হয়।
৫. শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন ও বিকাশ (Entrepreneurship development) :-
অংশীদারি ব্যবসায় দেশের শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। একক মালিক যেখানে অধিক ঝুঁকির ভয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠনে অপরাগ, সেখানে কয়েকজন ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন সহজতর হয়
৬. ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ (Expansion of business) :-
ব্যবসায় জগতে এ ব্যবসায় ক্ষুদ্রাকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সামগ্রিক ব্যবসায়ের সম্প্রারণে বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যেসব ক্ষেত্রে কোম্পানি ব্যবসায় গড়ে তোলা দুষ্কর, সেসব ক্ষেত্রে এ ব্যবসায় সাফল্যজনকভাবে তার ব্যবসায়িক কার্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন:- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লিখ?
৭. সম্মিলিত প্রচেষ্টার সুফল (Fruitful result of joint effort) :-
অংশীদারি ব্যবসায় যৌথ উদ্যোগ ও কয়েকজনের সম্মিলিত পুঁজি বিনিয়োগের ফসল। সামাজিক জীবনে অনেকেই এরূপ যৌথ প্রচেষ্টার দ্বারা বহু অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করে থাকে। এর সুফল ব্যক্তি জীবন থেকে সমাজ জীবনেও বিস্তার লাভ করে।
৮. পণ্যের মান উন্নয়ন (Improvement of quality of products) :-
ব্যবসায় জগতে অংশীদারি ব্যবসায়ের আগমন সামগ্রিক ব্যবসায়ের আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। কেননা নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ব্যবসায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improvement of standard of living) :-
অংশীদারদের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, প্রচুর পরিমাণে পণ্য উৎপন্ন হয় এবং তা দেশের সকল প্রান্তে পৌঁছান সম্ভব হয়। এতে শ্রমিক-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধিত হয় এবং সামগ্রিকভাবে তা জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনে। ফলে জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হয়।
সুতরাং সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সংগতি বিধানের স্বার্থে অংশীদারি ব্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির ব্যবসায় যতোদিন বিদ্যমান থাকবে অংশীদারি ব্যবসায়ও পৃথিবীতে ততোদিন বিরাজ করবে।
মাঝারি আকৃতির ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে অংশীদারি ব্যবসায়ের কতগুলো বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এসব সুবিধার কারণে জনগণের চাহিদা পূরণার্থে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বন্টনের মাধ্যমে এ ব্যবসায় সাফল্যের সাথে টিকে আছে। অংশীদারি ব্যবসায়ের এ সুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা হলো:
১. গঠনে সহজসাধ্যতা :-
অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই বলে এটি গঠন করা অত্যন্ত সহজ। দুই বা ততোধিক প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ ব্যক্তি সম্মিলিত মূলধনের ভিত্তিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ-লোকসান বণ্টনের হার স্থির করে যে কোনো সময় এ ব্যবসায় আরম্ভ করতে পারে।
৭. সম্মিলিত প্রচেষ্টার সুফল (Fruitful result of joint effort) :-
অংশীদারি ব্যবসায় যৌথ উদ্যোগ ও কয়েকজনের সম্মিলিত পুঁজি বিনিয়োগের ফসল। সামাজিক জীবনে অনেকেই এরূপ যৌথ প্রচেষ্টার দ্বারা বহু অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করে থাকে। এর সুফল ব্যক্তি জীবন থেকে সমাজ জীবনেও বিস্তার লাভ করে।
৮. পণ্যের মান উন্নয়ন (Improvement of quality of products) :-
ব্যবসায় জগতে অংশীদারি ব্যবসায়ের আগমন সামগ্রিক ব্যবসায়ের আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। কেননা নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ব্যবসায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improvement of standard of living) :-
অংশীদারদের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, প্রচুর পরিমাণে পণ্য উৎপন্ন হয় এবং তা দেশের সকল প্রান্তে পৌঁছান সম্ভব হয়। এতে শ্রমিক-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধিত হয় এবং সামগ্রিকভাবে তা জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনে। ফলে জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হয়।
সুতরাং সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সংগতি বিধানের স্বার্থে অংশীদারি ব্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির ব্যবসায় যতোদিন বিদ্যমান থাকবে অংশীদারি ব্যবসায়ও পৃথিবীতে ততোদিন বিরাজ করবে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা :-
মাঝারি আকৃতির ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে অংশীদারি ব্যবসায়ের কতগুলো বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এসব সুবিধার কারণে জনগণের চাহিদা পূরণার্থে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বন্টনের মাধ্যমে এ ব্যবসায় সাফল্যের সাথে টিকে আছে। অংশীদারি ব্যবসায়ের এ সুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা হলো:
১. গঠনে সহজসাধ্যতা :-
অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই বলে এটি গঠন করা অত্যন্ত সহজ। দুই বা ততোধিক প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ ব্যক্তি সম্মিলিত মূলধনের ভিত্তিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ-লোকসান বণ্টনের হার স্থির করে যে কোনো সময় এ ব্যবসায় আরম্ভ করতে পারে।
২. মূলধন ও ঋণ সংগ্রহে সুবিধা :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিক অধিক বলে এ ধরনের ব্যবসায়ের পক্ষে প্রয়োজন মোতাবেক বেশি পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা সহজসাধ্য হয়। আবার অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অধিক পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করা অংশীদারি ব্যবসায়ের পক্ষে সহজ হয়।
৩. যৌথ পরিচালনা :-
অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনার জন্য সকল অংশীদার একক ও যৌথভাবে দায়ী থাকে। সকলেই তাদের পৃথক পৃথক যোগ্যতা অনুসারে পরিচালনার দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। এর ফলে সকলের সম্মিলিত পরিচালনায় ব্যবসায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই সফলতা অর্জিত হয়।
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ :-
ব্যবসায়ে নানাবিধ পরিস্থিতিতে বা যে কোনো কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এরূপ পরিস্থিতিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিকগণ একত্রিত হয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করতে পারেন।
৫. অসীম দায়ের সুবিধা :-
অংশীদারগণের দায় অসীম বলে অংশীদারি ব্যবসায় বাজার হতে অত্যন্ত সহজে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে আবার একই কারণে অংশীদারগণ তাদের সাধ্যমত ব্যবসায়কে লাভজনক করার প্রচেষ্টায়ও লিপ্ত থাকে।
৬. গোপনীয়তা রক্ষা :-
শুধু কযেকজন অংশীদার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকে বলে এ ধরনের ব্যবসায়ে সহজেই গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয়।
৭. নতুন অংশীদার গ্রহণ :-
ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধি করতে হলে বা অতিরিক্ত মূলধনের প্রয়োজন হলে সকল অংশীদারের যৌথ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যে কোনো সময় নতুন অংশীদার গ্রহণ করা যায়।
৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতান্ত্রিকতা :-
ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির ক্ষেত্রে সকল সদস্য সম্মিলিতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে তা যথাযথ, কার্যকর ও সময়োপযোগী হয়ে থাকে।
৯. ঝুঁকি বণ্টন :-
এ ধরনের ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান সকল অংশীদার শেয়ারের অনুপাতে বা শর্তানুসারে ভাগ করে নেয়। ফলে প্রত্যেক মালিকের ভাগে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
১০. অধিক জনসংযোগ :-
অংশীদারি ব্যবসায়ে মালিক একধিক থাকায় তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্রেতা বিক্রেতা, সরবরাহকারী, শ্রমিক ও কর্মচারী, ঋণদাতা, ব্যাংক ও প্রতিবেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি ব্যবসায়ের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
১২. ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি :-
সম্মিলিত পরিচালনা, সুষ্ঠু জনসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
১৩. দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ :-
অংশীদারি ব্যবসায় তুলনামূলকভাবে বৃহৎ আকারের প্রতিষ্ঠান বিধায় প্রয়োজনবোধে অধিক বেতন দিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মচারী নিয়োগ করা যায়।
১৪. শ্রম বিভাগ :-
প্রতিষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে বৃহদায়তন হওয়ায় শ্রমিক বা কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রেও শ্রমবিভাগের সুবিধা পাওয়া যায়। এভাবে ক্রমবিভাগের প্রবর্তন ব্যবসায় উন্নয়নের সহায়ক।
১৫. মালিকানা ও পরিচালনায় একাত্মতা :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিক ও পরিচালক মূলত অংশীদাররাই হয় বিধায় তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়া সহজ হয়। ফলে প্রত্যেকেই একত্র হয়ে কাজ করে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে সফল করে তুলতে সচেষ্ট থাকে।
১৬. ব্যবস্থাপনা বিশেষায়ন :-
বিভিন্ন অংশীদার ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যথা- বিপণন, হিসাবরক্ষক, প্রশাসন, গবেষণা ইত্যাদি) বিশেষায়িত হলে ব্যবসায় দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা সহজ হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধা :-
অংশীদারি ব্যবসায়ের বহুবিধ সুবিধার পাশাপাশি কতিপয় অসুবিধাও রয়েছে। অংশীদারি ব্যবসায়ের এ অসুবিধাগুরো নিম্নে আলোচিত হলো:১. আইনগত সত্তার অভাব :-
অংশীদারি ব্যবসায় আইন সৃষ্ট নয় বলে এর কোনো আইনগত সত্তা নেই। আইনগত সত্তার অভাব থাকায় এরূপ ব্যবসায় পরিচালনায় কখনো কখনো অসুবিধা দেখা দেয়।
২. স্থায়িত্বের অভাব :-
অংশীদারি ব্যবসায় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। কোনো অংশীদারের মৃত্যু হলে, কোন অংশীদার পাগল বা দেউলিয়া হলে কিংবা অংশীদারগণের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে এ ধরনের ব্যবসা ভেঙ্গে যায়।
৩. মূলধনের সীমাবদ্ধতা :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের তুলনায় যৌথ প্রচেষ্টা মাধ্যমে এ ব্যবসায়ে অধিক মূলধন সংগৃহীত হয়, তবে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এ মূলধন যথেষ্ট নয়। তাই বৃহৎ শিল্প কারখানা স্থাপনে এ ব্যবসায় তেমন উপযোগী নয়।
8. অসীম দায় :-
অংশীদারি ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদারের দায় অসীম। অর্থাৎ কোনো একজন অংশীদারের কার্যাবলির জন্য সকল অংশীদারের সমুদয় সম্পত্তি দায়গ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। এজন্য অনেকের অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহী হয় না।
৫. মালিকানা হস্তান্তরে বাধা :-
যেহেতু অংশীদারি ব্যবসায়ে মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য নয় সেহেতু কেউ ইচ্ছা করলেও সহজে এ ধরনের ব্যবসায় পরিত্যাগ করতে পারে না।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা :-
কোনো জটিল বিষয়ে সকল অংশীদারের পক্ষে কমতম হওয়া, কিংবা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল অংশীদারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হতে পারে।
৭. পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতা :-
ব্যবসায় শুরু করার সময় সকল অংশীদার পারস্পরিক বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও কালক্রমে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা জন্ম নিতে পারে। আর এরই ফলে অংশীদারি ব্যবসায় ভেঙ্গে যায়।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর কারণে অংশীদারি ব্যবসায় কোম্পানি সংগঠন কিংবা অন্যান্য বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধাসমূহ অর্জন করতে পারেনি। যদিও পুঁজি সংগ্রহ ও আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় অপেক্ষা অংশীদারি ব্যবসায় বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.