একমালিকানা ব্যবসায়ের ধারণা :-
ব্যবসায় সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আদি এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় সংগঠন হচ্ছে একমালিকানা ব্যবসায়। ব্যবসায় উদ্ভবের ঊষালগ্নেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্ম এবং আজঅবধি এক মালিকানা ব্যবসায় উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরূপ প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং এর গঠন পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ।একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক শুধু মাত্রই একজন ব্যক্তি। মালিক নিজ দায়িত্বে নিজস্ব তহবিল থেকে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কিংবা ব্যাংক বা এ জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করে মূলধন সরবরাহ করে থাকে।
এক মালিকানা ব্যবসায় বিশ্বের সর্ব প্রাচীন ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। অতীত কাল হতেই এরূপ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি সাধিত হয়ে আসছে ভবিষ্যতেও হবে। একথা নিশ্চিত করেই বলা চলে যে, সুদূর ভবিষ্যতেও একমালিকানা ব্যবসায়ের জয় জয়কার অব্যাহত থাকবে।
একমালিকানা ব্যবসায় কাকে বলে :-
একজন মাত্র ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা সংগঠন বা ব্যবসায় বলে।এ ধরনের ব্যবসায়ে একজনই মালিক থাকেন যিনি ব্যবসায়ের প্রধান আয়োজক ও ব্যবস্থাপক। তিনি ব্যবসায়ের সমস্ত পুঁজি সংগ্রহ করেন এবং এর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মালিক একাই এ ব্যবসায়ের যাবতীয় ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং লাভ-লোকসানের ভাগীদারও তিনি একাই হন। মালিক ইচ্ছা করলে ব্যবসায় পরিচালনায় অন্যদের সাহায্যও গ্রহণ করতে পারেন। তবে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার চূড়ান্ত দায়িত্ব মালিকের ওপরই ন্যস্ত থাকে।
বিভিন্ন গ্রন্থকার বিভিন্নভাবে একমালিকানা ব্যবসায়ের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো:
একমালিকানা ব্যবসায় কাকে বলে? এ সম্পর্কে রবার্ট ক্রিটনার ও তার সহযোগীদের মতানুসারে,
“যে ব্যবসায় সংগঠনের মালিক ব্যবসায়ের সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হয় এবং একাই সকল দেনার দায় বহন করে তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে।"
বি.ও. হুইলার এর মতে একমালিকানা ব্যবসায় কী? তার হলো -
“একমালিকানা ব্যবসায় হলো এমন এক ধরনের ব্যবসায় সংগঠন যার মালিক ও নিয়ন্ত্রক একজন মাত্র ব্যক্তি।"
ওপরের আলোচনা ও সংজ্ঞার আলোকে আমরা এক মালিকানা ব্যবসায় কি? তা বলতে পারি, যে ব্যবসায়ে মালিক একাই প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করে ব্যবসায় পরিচালনা করেন, ঝুঁকি বহন করেন ও লাভ-লোকসানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে।
একজন ব্যক্তি কর্তৃক পুঁজি যোগান দেওয়ার কারণে এবং একজন ব্যক্তির শারীরিক পরিশ্রমের সীমাবদ্ধতার কারণে এক মালিকানা ব্যবসায়ের আকার ছোটো হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:- অর্থসংস্থান কাকে বলে?
একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য :-
একমালিকানা ব্যবসায় কতিপয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে সৃষ্টির আদিকাল হতে অদ্যাবধি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। যে সব বৈশিষ্ট্যের জন্য একমালিকানা ব্যবসায় সমধিক জনপ্রিয় সেগুলো নিয়ে আলোচিত হলো।১. একমালিকানা (Single ownership) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি। তিনি একাধারে যেমন ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, মুলধন সংগ্রহ ও ব্যবসায়ের প্রকৃতি নির্ণয় করে থাকেন, তেমনি ব্যবসায়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য তিনিই এককভাবে দায়ী থাকেন।
২. সহজ গঠন (Easy formation) :-
একমালিকানা ব্যবসায় সংগঠন সর্বাপেক্ষা সহজসাধ্য, স্বল্পসময় সাপেক্ষ, কম ব্যয়বহুল এবং আইনের জটিলতা মুক্ত সমাজের যে কোনো ব্যক্তি যে কোন সময় অত্যন্ত সহজভাবে এরুপ ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তুলতে পারেন।
৩. মূলধন সরবরাহ (Supply of capital) :-
মালিক বা উদ্যোক্তা এককভাবে নিজ দায়িত্বে ব্যবসায়ের মূলধন সরবরাহ করে থাকেন। এরূপ ক্ষেত্রে মালিক নিজ তহবিল হতে, বন্ধুবান্ধার বা আত্মীয়স্বজন কিংবা ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করে মূলধন সংগ্রহ করে থাকেন।
8. পৃথক সত্তাহীনতা (No separate entity) :-
আইনের চোখে একমালিকানা প্রতিষ্ঠানের কোনোরূপ পৃথক সত্তা নেই। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মালিক ব্যবসায়ের সাথে একাত্ম ও অভিন্ন। ব্যবসায়ের নামে কোনোরূপ মামলা দায়ের করার অর্থ পক্ষান্তরে মালিকের নামেই মামলা দায়ের বোঝাবে।
৫. সীমাহীন দায় (Unlimited liability) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিকের দায়দায়িত্ব অসীম। ব্যবসায়ের যে কোনো প্রকার ঋণের জন্য ব্যবসায়ের মালিক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন। অর্থাৎ ব্যবসায়ের ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে প্রয়োজন হলে মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা চলে।
৬. আয়তন (Size) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের আয়তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একজন মালিক এককভাবে মূলধন বিনিয়োগ করেন বলে ব্যবসায়েরর আয়তন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি বহু বৃহদায়তন ব্যবসায় একমালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:- শিল্প ও বানিজ্যের পার্থক্য?
৭. একক ঝুঁকি (Undivided Risk) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের সমস্ত ঝুঁকি একা মালিককেই বহন করতে হয়। ব্যবসায়ের কোনোরূপ লোকসান হলে এর দায়িত্ব পুরোটাই মালিককে গ্রহণ করতে হয়।
৮. মুনাফার একক ভোগকারী (Sole profit) :-
এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত সমস্ত মুনাফা একমাত্র মালিকই ভোগ করে থাকেন। মালিকের সাথে কোনো ব্যক্তি লাভের অংশ ভাগ করে নেয় না।
৯. ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ (Individual control) :-
মালিক তার বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
১০. প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান (Direct supervision) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক নিজেই পরিকল্পনা তৈরি করেন, নীতি প্রণয়ন করেন এবং লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য ব্যবসায়িক কার্যাদি পরিচালনা বা তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
১১. সরকারি নিয়মকানুন (Government rules and regulations ) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মকানুন অত্যন্ত শিথিল। এটি আইন সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান নয় বিধায় গঠন, পরিচালনা, মুনাফা বণ্টন, বিবরণাদি দাখিল, অবসায়ন এর কোনো পর্যায়েই সরকারের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
১২. লাভ-লোকসান বণ্টন (Distribution of profit and loss) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান মালিক একাই ভোগ বা বহন করে থাকেন। অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো লাভ-লোকসানের ক্ষেত্রেও তিনি একক ভোগের অধিকারী।
১৩. সামাজিক উন্নয়ন (Social development) :-
একক মালিকের ইচ্ছানুসারে গঠিত ও পরিচালিত হয় বলে সমাজের প্রয়োজনানুসারে উৎপাদন কার্য পরিচালনা, বণ্টন ও চাকরি প্রদান করে সমাজের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।
১৪. হিসাবনিকাশে স্বাধীনতা (Freedom of accounts) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের হিসাবপত্র সরকারি বিধান অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হয় না। এমনকি চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট দ্বারা হিসাবাদি পরীক্ষা করারও প্রয়োজন হয় না।
১৫. দ্রুত সিদ্ধান্ত (Quick decision) :-
ব্যবসায়িক স্বার্থে কখনো কখনো দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মালিকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিধায় যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
আলোচ্য একমালিকানা ব্যবসায়ের এসব বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ ব্যবসায়ের গুরুত্ব কতখানি। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এ ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।
একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :-
যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। ক্ষুদ্রায়তনের একমালিকানা ব্যবসায়ের সূচনা হয়েছিল সেই প্রাচীনযুগে। আর তখণ থেকে অদ্যাবধি এ ব্যবসায়ের যে অব্যাহত আধিপত্যা আমরা দেখতে পাই তা থেকে সহজেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।নিম্নে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব বিধৃত হলো।
১. আত্ম-কর্মসংস্থান (Self-employment) :-
স্বল্প আয়ের লোকেরা তাদের সুবিধামত যে কোনো স্থানে অল্প পুঁজি ও সামান্য লোকবল নিয়ে কোনো দ্রব্য উৎপাদন বা ব্যবসায়ে নিয়োজিত হতে পারে। ফলে বহুলোক নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিতে পারে। এতে বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং লোকজনের আয়ও বাড়ে।
২. সম্পদের সুষম বণ্টন (Proper distribution of resources) :-
ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট হওয়ায় দেশের শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সকল স্থানে ব্যাপকভাবে একমালিকানা ব্যবসায় গড়ে ওঠে। অন্যান্য বৃহদায়তন ব্যবসায়ের ন্যায় এক্ষেত্রে সম্পদ সীমিত ব্যক্তির হাতে পুঞ্জিভূত হওয়ার সম্ভাবনা কম, এতে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়।
আরও পড়ুন:- ব্যবসায় সংগঠন কাকে বলে?
৩. স্বল্প মূলধনের ব্যবসায় (Business of small capital) :-
একমালিকানা ব্যবসায় স্বল্প মূলধনের ব্যবসায়। ফলে সমাজের সকল শ্রেণির লোক অতি সহজেই এরূপ ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Proper use of natural resources) :-
দেশের ভেতর প্রাপ্তব্য প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় যথেষ্ট অবদান রাখে। বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন তাদের এলাকায় যেসব সম্পদ পাওয়া যায় তা ব্যবহার করে অতি সহজেই এ ব্যবসায় শুরু করতে পারে।
৫. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Raising standard of living) :-
ক্ষুদ্রায়তনের হলেও এরূপ ব্যবসায় সারাদেশে বিস্তৃতির মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অন্যদিকে জনগণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ ( Capital formation and investment) :-
একমালিকানা ব্যবসায় স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়। এ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের লক্ষ্যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সঞ্চয়প্রবণ হয়ে মূলধন গঠন করে। ফলশ্রুতিতে দেশের সামগ্রিকভাবে মূলধন গঠন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৭. ব্যবসায় বানিজ্যের সম্প্রসারণ (Expansion of business & commerce) :-
একমালিকানা ব্যবসায় দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রাসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একদিকে যেমন এ ব্যবসায় কাচাঁমাল ও উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী দেশের সকল প্রান্তের ভোক্তার কাছে পৌঁছাবার নিশ্চয়তা দেয় অন্যদিকে এ ধরনের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ব্যবসায় স্থাপনে উদ্যোগী হয়। এতে ব্যবসায়ের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে।
৮. পরিবর্তনের সাথে সংগতি বিধান (Adjustment with change) :-
বাজারে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্বের পেছনে একটি বড় কারণ। পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে এ ব্যবসায়ের মালিক সম্যক অবগত থাকেন এবং সে অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন।
৯. উত্তম প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র (A suitable field for training) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা তাকে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলে, অর্থাৎ এটি একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
১০. উদ্যোক্তা সৃষ্টি (Creation of entrepreneur) :-
স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায় গড়ে তোলার সুযোগ থাকায় সমাজের অনেক লোকই এ ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে সমাজে উদ্যোক্তা শ্রেণির সৃষ্টি হয় যারা প্রতিষ্ঠার। ব্যাবসাবাণিজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১১. জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি (Increase of national income and wealth) :-
জাতীয় আয় ও সম্পদ একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা দেশের আনাচেকানাচে এ ব্যবসায়ের বিস্তার লাভের ফলে বহুলোকের আয়ের পথ প্রশস্ত হয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি পায় যা জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিরই নামান্তর।
১২. বৃহৎ উৎপাদনে সহায়তা ( Assistance to large-scale production) :-
বৃহদায়তন উৎপাদনকে সচল রাখার ক্ষেত্রে এ ব্যবসায়ের ভূমিকা অসীম। একমালিকানা ব্যবসায় বৃহৎ উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে।
১৩. জনসেবা (Public service) :-
ক্ষুদ্রায়তন হবার ফলে দেশের সর্বত্র এ ব্যবসায় গড়ে ওঠে। ফলে উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য ও সেবা সকল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে এ ব্যবসায় জনগণের সেবাদান করে।
সুতরাং ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট ব্যবসায় সংগঠন হলেও একমালিকানা ব্যবসায় যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে পৃথিবীর সকল দেশে এ জাতীয় ব্যবসায়ের সংখ্যাই অধিক।
৩. স্বল্প মূলধনের ব্যবসায় (Business of small capital) :-
একমালিকানা ব্যবসায় স্বল্প মূলধনের ব্যবসায়। ফলে সমাজের সকল শ্রেণির লোক অতি সহজেই এরূপ ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Proper use of natural resources) :-
দেশের ভেতর প্রাপ্তব্য প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় যথেষ্ট অবদান রাখে। বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন তাদের এলাকায় যেসব সম্পদ পাওয়া যায় তা ব্যবহার করে অতি সহজেই এ ব্যবসায় শুরু করতে পারে।
৫. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Raising standard of living) :-
ক্ষুদ্রায়তনের হলেও এরূপ ব্যবসায় সারাদেশে বিস্তৃতির মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অন্যদিকে জনগণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ ( Capital formation and investment) :-
একমালিকানা ব্যবসায় স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়। এ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের লক্ষ্যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সঞ্চয়প্রবণ হয়ে মূলধন গঠন করে। ফলশ্রুতিতে দেশের সামগ্রিকভাবে মূলধন গঠন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৭. ব্যবসায় বানিজ্যের সম্প্রসারণ (Expansion of business & commerce) :-
একমালিকানা ব্যবসায় দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রাসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একদিকে যেমন এ ব্যবসায় কাচাঁমাল ও উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী দেশের সকল প্রান্তের ভোক্তার কাছে পৌঁছাবার নিশ্চয়তা দেয় অন্যদিকে এ ধরনের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ব্যবসায় স্থাপনে উদ্যোগী হয়। এতে ব্যবসায়ের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে।
৮. পরিবর্তনের সাথে সংগতি বিধান (Adjustment with change) :-
বাজারে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্বের পেছনে একটি বড় কারণ। পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে এ ব্যবসায়ের মালিক সম্যক অবগত থাকেন এবং সে অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন।
৯. উত্তম প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র (A suitable field for training) :-
একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা তাকে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলে, অর্থাৎ এটি একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
১০. উদ্যোক্তা সৃষ্টি (Creation of entrepreneur) :-
স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায় গড়ে তোলার সুযোগ থাকায় সমাজের অনেক লোকই এ ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে সমাজে উদ্যোক্তা শ্রেণির সৃষ্টি হয় যারা প্রতিষ্ঠার। ব্যাবসাবাণিজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১১. জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি (Increase of national income and wealth) :-
জাতীয় আয় ও সম্পদ একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা দেশের আনাচেকানাচে এ ব্যবসায়ের বিস্তার লাভের ফলে বহুলোকের আয়ের পথ প্রশস্ত হয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি পায় যা জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিরই নামান্তর।
১২. বৃহৎ উৎপাদনে সহায়তা ( Assistance to large-scale production) :-
বৃহদায়তন উৎপাদনকে সচল রাখার ক্ষেত্রে এ ব্যবসায়ের ভূমিকা অসীম। একমালিকানা ব্যবসায় বৃহৎ উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে।
১৩. জনসেবা (Public service) :-
ক্ষুদ্রায়তন হবার ফলে দেশের সর্বত্র এ ব্যবসায় গড়ে ওঠে। ফলে উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য ও সেবা সকল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে এ ব্যবসায় জনগণের সেবাদান করে।
সুতরাং ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট ব্যবসায় সংগঠন হলেও একমালিকানা ব্যবসায় যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে পৃথিবীর সকল দেশে এ জাতীয় ব্যবসায়ের সংখ্যাই অধিক।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.