ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি আলোচনা কর?

ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি :-

মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে পণ্যসামগ্রী উত্তোলন, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বণ্টন, পরিবহন, গুদামজাতকরণ এবং এগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।

মানুষের অভাব বিভিন্নমুখী এবং বিচিত্রধর্মী। অভাব পূরণের নিমিত্তে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে পণ্য বা সেবা পৌছাতে হয়। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ব্যবসায়ে নিত্যনতুন জটিলতাও বেড়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃতি লাভ করছে। নিম্নোক্ত চিত্রে ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি প্রদর্শনপূর্বক আলোচনা করা হলো-
ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি

১. শিল্প (Industry) :-

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের ৰূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয় তাকে শিল্প বলে।

প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ আহরণ এবং মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য সম্পদের আকার-আকৃতি পরিবর্তন করাই শিল্পের কাজ।

সাধারণত প্রকার শিল্পের অস্তিত্ব দেখা যায়, যথা- কৃষিজাত শিল্প, প্রজনন শিল্প, নিষ্কাশন শিল্প, উৎপাদন শিল্প, সেবা শিল্প ও নির্মাণ শিল্প।

কৃষিজ্ঞাত শিল্প কৃষিপন্য যথা- ধান, পাট, গম ইত্যাদি উৎপাদনে নিয়োজিত।

আরও পড়ুন:- ব্যবসা কাকে বলে?

প্রজনন শিল্পে উৎপাদিত পণ্য পুনরায় আরেকটি পণ্য উৎপাদনে ব্যাপৃত থাকে। যথা-হাঁস-মুরগীর খামার, পশু খামার, পোনা উৎপাদন খামার ইত্যাদি।

নিষ্কাশন শিল্প প্রকৃতি থেকে (যথা-পানি, বায়ু বা মাটির নিচ থেকে) সম্পদ আহরণ করে।

নির্মাণ শিল্পের মাধ্যমে পুল, রাস্তা, দালান ইত্যাদি নির্মিত হয়। আর কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য প্রস্তুত হয় উৎপাদন শিল্পে। সেবা প্রদানে (যাথা-গ্যাস ও পানি সাপ্লাই, বিদ্যুৎ বিতরণ) ব্যাপৃত থাকে সেবা পরিবেশক শিল্প।

২. বাণিজ্য (Commerce) :-

বাণিজ্য উৎপাদকের নিকট থেকে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ব্যবহারকারী বা ভোক্তার নিকট পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে।

এ ছাড়াও আধা-প্রস্তুত পণ্য (Semi-processed Products) ও কাঁচামাল শিল্প কারখানার মালিকদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার কাজেও বাণিজ্য জড়িত থাকে।

উৎপাদকের নিকট থেকে পণ্যের ব্যবহারকারীর নিকট পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, বাণিজ্য সেগুলোকে দূরীভূত করে।


পণ্য বিনিময় (trade) পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা, ব্যাংকিং, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বাণিজ্যের আওতাভুক্ত।

৩. প্রত্যক্ষ সেবা (Direct service) :-

প্রত্যেক সেবা এক ধরনের অদৃশ্যমান পণ্য। প্রত্যক্ষ সেবা বলতে সেসব সেবাকর্মকে বোঝায় যা ভোক্তাদের সরাসরি প্রদান করা হয়।

যেমন - শিক্ষকতা, ডাক্তারি, ওকালতি, সাংবাদিকতা, সংগীত পরিবেশন ইত্যাদি প্রত্যক্ষ সেবার অন্তর্ভুক্ত।

এসব পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা অন্যদেরকে সরাসরি সেবা প্রদান করে থাকেন। তারা কোনো দৃশ্যমান পণ্য প্রস্তুত করেন না, তবে দৃশ্যমান পণ্য প্রস্তুতকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট অবদান রাখেন।

৪. শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক বার্যাবলি (Activities auxiliary to industry and commerce) :-

শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি হচ্ছে সেসব কার্যাবলি যা পরোক্ষভাবে শিঙ্ক ও বাণিজ্যের সাথে জড়িত এবং প্রতিনিয়তই শিল্প ও বাণিজ্যকে সহায়তা করে আসছে। পণ্য গবেষণা, বাজার গবেষণা, বিক্রয়িকতা ইত্যাদি এ কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের যেসব শ্রম ও সেবা কর্ম অর্থ উপার্জনের জন্য পরিচালিত হয় এবং মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত চাহিদা পুরণে সক্ষম, সে সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। শুধু তাই নয়, অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কার্যাবলিও এর আওতাভূক্ত।

আরও পড়ুন:- শিল্প কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ