উৎপ্রেক্ষা অলংকার কাকে বলে? উৎপ্রেক্ষা অলংকারের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ

উৎপ্রেক্ষা অলংকার কাকে বলে :-

গভীর সাদৃশ্যের কারণে প্রকৃতকে (উপমেয়কে) যদি পরাত্মা (উপমান) বলে উৎকট (প্রবল) সংশয় হয় এবং যদি সে সংশয় কবিত্বময় হয়ে ওঠে, তাহলে যে অর্থসৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম উৎপ্রেক্ষা অলংকার।

উৎপ্রেক্ষা অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-

১. উপমেয়-উপমানের সাধারণ সাদৃশ্য থেকে উপমা, অভেদ থেকে রুপক, আর প্রবল সংশয় থেকে উৎপ্রেক্ষা। গভীর সাদৃশ্য এ সংশয়ের কারণ।

২. সংশয় একদিকে—উপমেয়কে উপমান বলে সংশয়।

৩. এ সংশয় কবিত্বময়, সাধারণ সংশয় থেকে অলংকার হয় না।

৪. কবিত্বের গুণে প্রত্যক্ষ উপমেয়েরে তুলনায় কাল্পনিক উপমানকেই বেশি সত্য বলে মনে হয়।
উৎপ্রেক্ষা অলংকার কাকে বলে

উৎপ্রেক্ষা অলংকারের প্রকারভেদ :-

উৎপ্রেক্ষা অলংকার দু-রকমের। যথা -

(ক) বাচ্যোৎপ্রেক্ষা (বাচ্যা + উৎপ্রেক্ষা) এবং

(খ) প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা (প্রতীয়মানা + উৎপ্রেক্ষা)।

বাচ্যোৎপ্রেক্ষা কাকে বলে :-

যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে ‘যেন, 'বুঝি', 'জনু', 'মনে হয়', 'মনে গণি' জাতীয় কোনো সংশয়বাচক শব্দের উল্লেখ থাকে, তার নাম বাচ্যোৎপ্রেক্ষা।

উদাহরণ :

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় :

পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। —সুকান্ত ভট্টাচার্য


সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :

কলঙ্কিত গোলাকৃতির সাদৃশ্যে উপমেয় 'পূর্ণিমা-চাঁদ-কে ক্ষুধাতুর মানুষের পক্ষে অত্যাবশ্যক উপমান ‘ঝলসানো রুটি' বলে কবির মনে প্রবল সংশয় হচ্ছে। সংশয়সূচক শব্দ 'যেন'-র উল্লেখে সংশয়ের ভাবটি প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। অতএব, এটি বাচ্যোৎপ্রেক্ষা অলংকারের দৃষ্টান্ত।

প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা কাকে বলে :-

যে উৎপ্রেক্ষা অলংকারে কোনো সংশয়বাচক শব্দের উল্লেখ থাকে না, কিন্তু অর্থ থেকে সংশয়ের ভাবটি অনুমান করে নেওয়া যায়, তার নাম প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।

উদাহরণ :

এ ব্রহ্মাণ্ড ঝুলে প্রকাণ্ড রঙিন মাকাল ফল। - যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:

উদ্ধৃত চরণে উপমেয় 'ব্রহ্মাণ্ড', উপমান 'মাকাল ফল'। বাইরের রূপে লোভনীয় অথচ ভেতরের সারশূন্য 'ব্রহ্মাণ্ড' এবং 'মাকাল ফল' দুই-ই। এই গভীর সাদৃশ্যের কারণে 'ব্রহ্মাণ্ড'-কে একটি ঝুলন্ত প্রকাণ্ড 'মাকাল ফল' বলে কবির মনে প্রবল সংশয় হচ্ছে। সংশয়ের কবিত্বময় প্রকাশে এখানে অলংকার হয়েছে উৎপ্রেক্ষা। তবে, সংশয়মূলক শব্দের কোনো উল্লেখ নেই বলে উদাহরণটি প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ