উপমা অলংকার কাকে বলে :-
একই বাক্যে বিজাতীয় দুটি বস্তুর মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্যের উল্লেখ না করে কেবল সাদৃশ্যটুকু দেখানো হলে যে অর্থসৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম উপমা অলংকার।উপমা অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-
১. একটিমাত্র বাক্য থাকবে।২. দুটি বিজাতীয় বা বিসদৃশ বস্তুর মধ্যে তুলনা হবে (উপমেয়-উপমান)।
আরও পড়ুন :- সমাসক্তি অলংকার কাকে বলে?
৩. বস্তুদুটির বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্যের উল্লেখ থাকবে না।
৪. বস্তুদুটির মধ্যে সাদৃশ্য বা মিলটুকু দেখানো হবে (সাধারণ ধর্ম)।
৫. সাদৃশ্য দেখানো হবে সাধারণত বিশেষ বিশেষ শব্দ ব্যবহার করে (সাদৃশাবাচক শব্দ)। উপমা অলংকারে ব্যবহার্য সাদৃশাবাচক শব্দের তালিকাটি এইরকম মত, মতন, ন্যায়, রূপে, নিত, পারা, প্রায়, তুলা, সম, তুলা, হেন, যেমতি, কল্প, সদৃশ, বৎ, যথা, যেন, রীতি ইত্যাদি।
অতএব, উপমার চারটি অঙ্গ-উপমেয়, উপমান, সাধারণ ধর্ম ও সাদৃশাবাচক শব্দ।
৬. উপমেয়-উপমানের ভেদ মেনে নিয়ে কেবল সাদৃশ্যটুকু দেখানো— বিজাতীয় বস্তুর সাদৃশ্য প্রতিষ্ঠার এটি প্রথম স্তর।
উপমা অলংকারের প্রকারভেদ :-
বাংলায় উপমার উল্লেখযোগ্য বিভাগ ছ-টি। এগুলো হলঃ(ক) পূর্ণোপমা ;
(খ) লুপ্তোপমা;
(গ) মালোপমা;
(ঘ) স্মরণোপমা;
(ঙ) বস্তু-প্রতিবস্তুভাবের উপমা ;
(চ) বিম্ব-প্রতিবিম্বভাবের উপমা।
এখন আমরা এইসব উপমা কাকে বলে ও উদাহরণ সহ আলোচনা করব।
পূর্ণোপমা কাকে বলে :-
যে উপমা অলংকারের উপমেয়, উপমান, সাধারণ ধর্ম এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ—এই চারটি অঙ্গেরই উল্লেখ থাকে, তার নাম পূর্ণোপমা (পূর্ণা + উপমা)।
উদাহরণ :
(i) আনিয়াছি ছুরি তীক্ষ্ণদীপ্ত প্রভাতরশ্মিসম। - রবীন্দ্রনাথ
উদাহরণ :
(i) আনিয়াছি ছুরি তীক্ষ্ণদীপ্ত প্রভাতরশ্মিসম। - রবীন্দ্রনাথ
সংকেত :
উপমেয় ‘ছুরি’, ‘উপমান 'প্রভাতরশ্মি', সাধারণ ধর্ম ‘তীক্ষ্ণদীপ্ত’, সাদৃশ্যবাচক শব্দ 'সম'।
আরও পড়ুন :- রূপক অলংকার কি?
উদাহরণ :
(ii) সিন্দুরবিন্দু শোভিল ললাটে
গোধূলি ললাটে, আহা! তারার যথা! —মধূসূদন
সংকেত :
উপমেয় ‘সিন্দুরবিন্দু’, উপমান ‘তারার-', সাধারণ ধর্ম ‘শোভাসৃষ্টি, ('শোভিল—ক্রিয়াগত), সাদৃশ্যবাচক শব্দ 'যথা'।
লুপ্তোপমা কাকে বলে :-
যে উপমা অলংকারে উপমেয়ের উল্লেখ থাকেই, কিন্তু অন্য তিনটি অঙ্গের (উপমান - সাধারণ ধর্ম - সাদৃশ্যবাচক শব্দ) যেকোনো একটি, দুটি বা তিনটিই লুপ্ত থাকে (অর্থাৎ, এদের উল্লেখ থাকে না), তার নাম লুপ্তোপমা (লুপ্তা উপমা)।
মালোপমা কাকে বলে :-
যে উপমা অলংকারে উপমেয় একটি এবং উপমান একের বেশি, তার নাম মালোপমা (মালা উপমা)।
উদাহরণ :
i) তোমার সে-চুল জড়ানো সুতার মতো, নিশীথের মেঘের মতন। —বুদ্ধদেব বসু
আরও পড়ুন :- যোগ্যতা পদ্ধতি কি?
উদাহরণ :
i) তোমার সে-চুল জড়ানো সুতার মতো, নিশীথের মেঘের মতন। —বুদ্ধদেব বসু
আরও পড়ুন :- যোগ্যতা পদ্ধতি কি?
সংকেত :
উপমেয় 'চুল, উপমান 'সূতা' আর 'মেঘ'।
ii) উড়ে হোক ক্ষয়
ধূলিসম তৃণসম পুরাতন বৎসরের যত নিষ্ফল সঞ্চয়। - রবীন্দ্রনাথ
সংকেত : উপমেয় ‘সঞ্চয়, উপমান 'ধূলি' আর 'তৃণ'।
উপমেয় 'চুল, উপমান 'সূতা' আর 'মেঘ'।
ii) উড়ে হোক ক্ষয়
ধূলিসম তৃণসম পুরাতন বৎসরের যত নিষ্ফল সঞ্চয়। - রবীন্দ্রনাথ
সংকেত : উপমেয় ‘সঞ্চয়, উপমান 'ধূলি' আর 'তৃণ'।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.