সমাসোক্তি অলংকার কাকে বলে? সমাসোক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ?

সমাসোক্তি অলংকার কাকে বলে :-

বর্ণনীয় বিষয়ের (উপমেয়) ওপর অন্যবস্তুর (উপমান) ব্যবহার আরোপ করা হলে যে অর্থসৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম সমাসোক্তি অলংকার।

অর্থাৎ উপমেয়ের ওপর উপমানের ব্যবহার আরোপ হলে তাকে সমাসোক্তি অলংকার বলে।

সমাসোক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-

১. উপমানের কোনো উল্লেখ থাকে না, তবে তার ব্যবহার বা আচরণের উল্লেখ থাকে।


২. উপমেয় একা এবং তার ব্যবহার বা আচরণ পুরোপুরি উপমানের।

৩. উপমেয়ের ওপর আরোপিত ব্যবহার থেকেই উপমানকে চেনা যায়।

৪. ব্যবহার বা আচরণ সাধারণভাবে গুণগত বা ক্রিয়াগত।

৫. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপমেয় অচেতন বস্তু, তার ব্যবহার চেতনের।
সমাসোক্তি অলংকার কাকে বলে

সমাসোক্তি অলংকারের উদাহরণ :-

উদাহরণ : (i)

শুনিতেছি আজো আইম প্রাতে উঠিয়াই,
‘আয়’ ‘আয়’ কাঁদিতেছি তেমনি সানাই। —নজরুল ইসলাম

সংকেত :

যে কান্না মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক, অচেতন 'সানাই-এর ওপর তা আরোপিত। চেতন মানুষই এখানে উপমেয়, কিন্তু তার উল্লেখ নেই, আছে তার ব্যবহারের (কান্নার) উল্লেখ। এই ব্যবহারের আরোপ হল ‘সানাই-এর ওপর। অতএব, ‘সানাই এখানে অনুক্ত 'মানুষ'-এর উপমান অলংকার সমাসোক্তি।

আরও পড়ুন :- অনুপ্রাস অলংকার কি?

উদাহরণ : (ii)

শুনিয়া উদাসী
বসুন্ধরা বসিয়া আছে এলোচুলে
একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল
দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহ্নবীর কূলে
বক্ষে টানি দিয়া।

—রবীন্দ্রনাথ (সোনার তরী/যেতে নাহি দিব)

ব্যাখ্যা :

‘বসুন্ধরা’ উদ্ধৃত স্তবকের উপমেয় বা বর্ণনীয় বিষয়, উপমানের উল্লেখ নেই। আমাদের পরিচিত 'বসুন্ধরা' (মাটির পৃথিবী) অচেতন। কিন্তু এখানকার বর্ণিত 'বসুন্ধরা' মেঠোসুরে বাঁশির কান্না শুনে ‘উদাসী’, ‘হিরণ্য অঞ্চল বক্ষে’ টেনে এলোচুলে বসে আছেন।

বলা বাহুল্য, এ স্বভাব 'বসুন্ধরা'র নয়, আঁচল বুকে-টানা এলোচুলে বসে-থাকা উদাসিনী নারীর ব্যবহার বা আচরণ কবি আরোপ করেছেন, 'বসুন্ধরার ওপর। ওই 'নারী'ই 'বসুন্ধরা" র উপমান। উপমান 'নারী'কে চেনা যায় উপমেয় ‘বসুন্ধরা'র ওপর আরোপিত আচরণের বর্ণনা থেকেই।

অতএব, উপমেয়ের উপর উপমানের ব্যবহার আরোপের সৌন্দর্যই উদ্ধৃত স্তবকের অলংকার, সে অলংকারের নাম সমাসোক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ