মাথা খাটানো পদ্ধতি কি :-
শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তার সুযোগ দিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া মাথা খাটানো পদ্ধতি। সমস্যাবহুল মানব জীবনে প্রতি মুহূর্তে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। শিক্ষার্থীরা শিখন-শিখানো কার্যক্রমের উচ্চচিত্তনমূলক সমস্যাগুলো মাথা খাটিয়ে নিজে এককভাবে বা শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমাধানের এক বা একাধিক উপায় খুঁজে বের করতে পারে। মাথা খাটানো পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মাথায় একরকম চিন্তার ঝড় বইয়ে দেওয়া হয়। আর আমরা এই ওয়েবসাইটে এরকম পোস্ট প্রতিনিয়ত প্রকাশিত করি।সে অর্থে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো সুনির্দিষ্ট সমস্যা উপস্থাপন করে তাদের তাৎক্ষণিক চিন্তা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের চিন্তা ভাবনাকে এককভাবে, জোড়ায় বা দলগতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সমস্যাসমাধানে সচেষ্ট করা হয় তাকে ব্রেইন স্টর্মিং বা মাথা খাটানো পদ্ধতি বলে।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সফলভাবে কর্মতৎপর রাখার জন্য চিন্তামূলক এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্নমুখী চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পায়। ফলে তাদের চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর শিক্ষার্থীরাও পাঠে কার্যকরভাবে সক্রিয় থাকে।
মাথা খাটানো পদ্ধতির সুবিধা :-
- শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি বলে শিক্ষার্থীরা পাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
- শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পায়।
- এ পদ্ধতি সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে। জটিল সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান সম্ভব।
- শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও কল্পনাশক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- একে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
- শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- দলে কাজ করে আত্মতৃত্তি উপভোগ করে।
- বাংলা শিখন-শেখানোয় পদ্ধতিটি বেশ কার্যকরী।
মাথা খাটানো পদ্ধতির অসুবিধা :-
অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মাথা খাটানো পদ্ধতির কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিচে এ অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলোআরও পড়ুন :- সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কী?
এ পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এ পদ্ধতিটির সর্বাধিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত করতে, তাদের চিন্তাশক্তির উৎকর্ষ সাধন করতে, সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে এ পদ্ধতি বেশ ফলপ্রসূ।
এ পদ্ধতিটি প্রয়োগে শিখন উদ্দেশ্য অর্জিত হয় বেশি। তাই এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কৌশল সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
- শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে সকল শিক্ষার্থীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না।।
- মেধাবী শিক্ষার্থীরা এতে বিশেষ সুবিধা পেলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সুযোগবঞ্চিত হয়।
- যথাযথ তদারকির অভাবে শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
- চূড়ান্তভাবে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি এটি নয়, কারণ উপস্থাপন ও ফলাবর্তন পর্বেও পরিবর্তন বা পরিমার্জনের সুপারিশ আসতে পারে।
- এ পদ্ধতি ব্যবহারের সময় শ্রেণি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কোলাহল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
- শিক্ষকের প্রস্তুতি ও দক্ষতার অভাবে এ পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে।
- বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন যথার্থ না হলে সময় ও পরিশ্রম বিফলে যেতে পারে।
- বিভিন্ন দলের মতামত সার-সংক্ষেপ করার সময় মতভেদ বা বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
- অনেক সময় আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়। ফলে সময় বেশি লাগে।
- শ্রেণিকক্ষের আয়তন ছোট হলে অনেক সময় দল গঠনে সমস্যা হয়।
- বিষয়বস্তুর ওপর প্রাথমিক ধারণা না থাকলে অনেক শিক্ষার্থী মতামত প্রদান থেকে বিরত থাকে।
মাথা খাটানো পদ্ধতির প্রয়োগ কৌশল :-
- একক, জোড়ায়, দলগতভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
- দলগতভাবে প্রয়োগ করতে হলে বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করে দল গঠন করতে হবে।
- সুবিধা অনুযায়ী বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে প্রত্যক দলের মাঝে বিভাজন করে দিতে হবে।
- প্রত্যেক দলের জন্য আলাদা আলাদা সমস্যা হলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন :- গাঠনিক পদ্ধতি কি?
- দলগত কাজের উপস্থাপনা থাকবে। উপস্থাপনে পোস্টার পেপার বা প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটাল স্লাইড ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এক দলের পোস্টার অন্য দলের সাথে বিনিময় করে মতামত নেওয়া যেতে পারে।
- প্রত্যেক দলের লিখিত মতামতের সাথে অন্যান্য দলের মতামত বা Feed back নিয়ে সংযোজন বা বিয়োজন করা যেতে পারে।
মাথা খাটানো পদ্ধতি কার্যকর করার উপায় :-
- সকল শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- দলের সকল সদস্যের কাছ থেকে মতামত নিতে হবে।
- কাজ সমাপ্ত করার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং ফাঁকে ফাঁকে সচেতন বার্তা দিতে হবে।
- প্রাথমিকভাবে সকলের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
- ভুল বক্তব্য বা মতামতের জন্য কাউকে তিরস্কার বা উপহাস করা যাবে না।
এ পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এ পদ্ধতিটির সর্বাধিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত করতে, তাদের চিন্তাশক্তির উৎকর্ষ সাধন করতে, সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে এ পদ্ধতি বেশ ফলপ্রসূ।
এ পদ্ধতিটি প্রয়োগে শিখন উদ্দেশ্য অর্জিত হয় বেশি। তাই এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কৌশল সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
আরও পড়ুন :- দলীয় পদ্ধতি কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.