গাঠনিক পদ্ধতি কী? গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা?

গাঠনিক পদ্ধতি (Structural Method) :- 

ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে গাঠনিক পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ভাষার অর্থবহ চর্চা করানো হয়। এটি মূলত শিক্ষতকেন্দ্রিক পদ্ধতি। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপাদানের মিথস্ক্রিয়া ও একটি কাঠামোগত পরিকল্পনায় কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অর্জন যাচাই সম্পর্কিত মাত্রায় পৌঁছার জন্য গাঠনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

সাধারণত বাংলা বিষয়ের ব্যাকরণ অংশের পাঠদানে এ পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। তবে শিক্ষক চাইলে বাংলা প্রথম পত্রের পরে সাহিত্য পাঠ উপস্থাপনে কিংবা বাংলা দ্বিতীয় পরের নির্মিতি অংশেও এ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করতে পারেন।


গাঠনিক পদ্ধতিতে (Structural Method) শিক্ষক ব্যাকরণ বই ছাড়াই শ্রেণিতে বাংলা ব্যাকরণের পাঠ উপস্থাপন করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে সাহিত্যের ক্লাসে পঠিত বিষয়ের ওপর আলোচনা এবং সাহিত্যপুস্তক অবলম্বনে প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে আলাপ আলোচনার দ্বারা শিক্ষার্থীদের ভাষার শৃঙ্খলা, বিশুদ্ধ প্রয়োগ এবং রূপ-রীতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা দেওয়া যায়।

এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীন ও সক্রিয় থাকে বলে ব্যাকরণের মতো বিষয়যন্ত্র পাঠেও আনন্দ উপভোগ করে। এতে ভাষা ও সাহিত্যের নানা ধরনের বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা চলতে পারে। তবে সব সময় লক্ষ রাখা আবশ্যক আলোচনার প্রসঙ্গটি যেন কাঠামো নিয়ন্ত্রিত এবং সুনির্বাচিত হয়।

অর্থাৎ প্রসঙ্গ যেন মূল লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে না যায়। গাঠনিক পদ্ধতিতে পাঠের যথোপযুক্ত অবতারণা শিক্ষার্থীদের নিকট ব্যাকরণ পাঠকে সঙ্গ ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
গাঠনিক পদ্ধতি কী

গাঠনিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য :-

  • এটি একটি চলমান ও অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।
  • এটি কার্যক্রম বাস্তবায়নকালে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
  • শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে এটি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিকে Situational Approach হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।
  • এটি শিক্ষার্থীর শিখন উদ্দেশ্য পরিমাপ করতে সক্ষম। এ পদ্ধতি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক দুইভাবেই সম্পন্ন করা যায়।
  • এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষাদানের পরবর্তী করণীয় পদক্ষেপ ঠিক করে থাকেন।
  • গাঠনিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষণ পদ্ধতি, উপকরণের ধরন ও ব্যবহার পরিবর্তন করা হয়।

গাঠনিক পদ্ধতির সুবিধা :-

  • শিক্ষার্থীদের নিকট ব্যাকরণ পাঠকে বাস্তনামুখ, সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
  • শিক্ষার্থীদের ভাষা বিভাগ এবং বিশ্লেষণ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা দেওয়া যায়।
  • শিক্ষার্থীরা স্বাধীন ও সক্রিয় থাকে।
  • ব্যাকরণ পাঠ আনন্দবোধ করে।
  • কেবল ভাষা নয় সাহিত্যের যে কোনো পাঠেও এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে পারে।
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয় বলে শিখন শেখানো কার্যক্রমের সকল স্তরে এ পদ্ধতি ব্যবহার উপযোগী।
  • এ পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান উপযোগী।
  • অগ্রগতি বা পারদর্শিতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গাঠনিক পদ্ধতি সাহায্য করে।
  • মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ থাকে বলে এ পদ্ধতিতে শিখন-শেখানো কার্যক্রম হয়।
  • এ পদ্ধতিতে সমদ্বিতভাবে ভাষা ও সাহিত্য পাঠদান সময়।
আরও পড়ুন :- আরোহী পদ্ধতি কি?

গাঠনিক পদ্ধতির অসুবিধা :-

  • শিক্ষার এ প্রক্রিয়া অনেকটা সময় সাপেক্ষ।
  • বিষয় নির্বাচন সুনির্দিষ্ট না হলে শিখনফল অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।
  • জটিল বিষয়ে অনেক সময় এ পদ্ধতিতে পাঠদান সম্ভব নয়।
  • শিক্ষকের প্রশিক্ষণ না থাকলে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
  • পর্যান্ত বিষয়জ্ঞান না থাকলে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে উল্টো ফল আসে।

গাঠনিক পদ্ধতি মূলত ভাষাভিত্তিক পদ্ধতি। প্রতিটি ভাষার থাকে নিজস্ব ব্যাকরণ। ব্যাকরণ হচ্ছে ভাষার কতগুলো নিয়ম শৃঙ্খলার সমষ্টি। বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বে যে সুশৃঙ্খল নিয়ম দ্বারা বাংলা ভাষাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে ভাষার কোনো না কোনো কাঠামো (structure)।

শ্রেণিতে এই গঠন কাঠামো ভিত্তিক কর্মপত্র ও কর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলা ব্যাকরণ পাঠ দিলে অর্থপূর্ণ শিখন নিশ্চিত হয়, না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা কমে। তাই গাঠনিক পদ্ধতি ভাষা শিক্ষণের একটি আদর্শ পদ্ধতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ