দলীয় কাজ কি :-
শিখন শেখানো কার্যক্রমে দলগত কাজ একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে বিবেচিত। একই বয়সের বা একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একত্রে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এ শিক্ষালাভ করে। এক্ষেত্রে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীরাই বেশি সক্রিন থাকে। শিক্ষক শুধু গাইড বা মডারেটর হিসেবে এখানে কাজ করেন।
এভাবে দলীয় কাজে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে সক্রিয় ও মনোযোগী করতে পারলে বিভিন্ন মেধা ও সক্ষমতার শিক্ষার্থীদের কাছে শিখন আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে। আর শিখন আনন্দময় অভিজ্ঞতায় পরিণত হলে তা শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি স্থায়ী হয়।
এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষাদীর জ্ঞান, দক্ষতার পাশাপাশি মানবিক গুণাবলিরও বিকাশ ঘটে। দলনেতাকে দলের সব সদস্যের মতামতের উপর গুরুত্ব দিতে হয়। এভাবে তাদের মধ্যে সামাজিক গুণাবলিরও বিকাশ ঘটে।
এ পদ্ধতিতে দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত কয়েকটি দলকে শিক্ষক তাদের কাজ উপস্থাপন করতে বলবেন। শ্রেণির অন্য শিক্ষার্থীদের ফলাবর্তনের সুযোগ দিবেন। প্রয়োজনে শিক্ষক নিজে ফলাবর্তন প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে চকবোর্ড, পোস্টার বা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন :- পেশাগত উন্নয়ন কি?
দলীয় কাজ ভিন্ন ভিন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিখন সহযোগিতা প্রদানের জন্য একটি উত্তম কৌশল। শ্রেণিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে অনেক সময় জড়তা ভেঙে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। শিক্ষক ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এ সকল শিক্ষার্থী চিহ্নিত করলে এবং এসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে প্রতি দলে শ্রেণির একজন অগ্রসর শিক্ষার্থীকে দলনেতা করে কাজ প্রদান করলে দলনেতা সমপর্যায়ের দুর্বল শিক্ষার্থীদের শিখন সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন।
দলীয় কাজে শিক্ষকের করণীয় :-
- স্পষ্ট করে দলগত কাজ বুঝিয়ে দেওয়া।
- নেতা মনোনয়ন এবং প্রতিটি ভিন্ন কাজে দলনেতা পরিবর্তন করা।
- ঘুরে ঘুরে কাজ পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে সহযোগিতা করা।
- দলের সদস্যদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য হলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
- কাজ শেষে দলনেতাকে উপস্থাপন করতে বলা।
- সকল দলে একই কাজ না দেয়া থাকলে একটি দলের উপস্থাপন শেষে অন্য দলের ফিডব্যাক চাওয়া।
- একই বিষয়ের বিভিন্ন দলের উপস্থাপন এবং অন্য শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক শেষে প্রয়োজনে চূড়ান্ত ফিডব্যাক ও নির্দেশনা দেওয়া।
দলীয় কাজে শিক্ষার্থীদের করণীয় :-
- শিক্ষার্থীদের দলে ভাগ হয়ে বসা।
- দলের সকল সদস্যের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা ও আলোচনায় অংশ নেওয়া।
- একসময় একজন কথা বলা।
- একজন কথা বলার সময় অন্যরা মন দিয়ে শোনা।
- সকলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া।
- একে অপরকে সম্মান দেওয়া।
- সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখানো।
- অন্যের মতামতের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
- নিজের মতামত জোর করে অন্যদের উপর চাপিয়ে না দেওয়া।
- কাজের সময় দীর্ঘ হলে দলনেতা কর্তৃক সময় নিয়ন্ত্রণ করা।
- আলোচনা শেষে সিদ্ধান্তগুলো খাতায় লেখা।
- কাজ শেষে শিক্ষক কর্তৃক নির্দেশিত হলে দলনেতা কর্তৃক উপস্থাপন।
- শিক্ষক বা অন্য দলের শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত ফলাবর্তনের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সংশোধন করে নেওয়া।
আরও পড়ুন :- মাথা খাটানো পদ্ধতি কি?
দলীয় কাজের সুবিধা :-
- দলের সদস্যরা কাজের মধ্যে আনন্দ পায়।
- পাঠদানে বৈচিত্র্য আনা যায় ফলে একঘেয়েমি দূর হয়।
- কাজে গতির সৃষ্টি হয়।
- পাঠে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
- বিষয় বিশ্লেষণে শিক্ষার্থীরা সক্রিয় থাকে বিধায় পাঠে ক্লান্তিবোধ হয় না।
- বিষয়ের পুঙ্খানুপুষ্প বিশ্লেষণ সম্ভব হয়।
- শিক্ষার্থীদের জড়তা দূর হয়।
- হার-জিতের লজ্জা থাকে না।
- দলের সদস্যদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয় বলে শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণ সহজ হয়।
- পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আনা সহজ হয়।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের যোগ্যতা গড়ে ওঠে।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে যুক্তিবাদী মানসিকতা গড়ে ওঠে।
- অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধর মানসিকতা গড়ে ওঠে।
- শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতার বিকাশ ঘটে
- শিখন কার্যকর, ফলপ্রসূ ও স্থায়ী হয়।
দলীয় কাজের অসুবিধা :-
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝে মাঝে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- অনেক সময় মতপার্থক্য দ্বন্দ্বে রূপ নিতে পারে। .
- শিক্ষকের পরিমিতিবোধ এবং সময় ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকলে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে।
- অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী সংবলিত শ্রেণিকক্ষে এ পদ্ধতির শিক্ষণ কার্যক্রমে বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখা অপেক্ষাকৃত কঠিন হতে পারে।
দলীয় কাজ ভিন্ন ভিন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিখন সহযোগিতা প্রদানের জন্য একটি উত্তম কৌশল। শ্রেণিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে অনেক সময় জড়তা ভেঙে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। শিক্ষক ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এ সকল শিক্ষার্থী চিহ্নিত করলে এবং এসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে প্রতি দলে শ্রেণির একজন অগ্রসর শিক্ষার্থীকে দলনেতা করে কাজ প্রদান করলে দলনেতা সমপর্যায়ের দুর্বল শিক্ষার্থীদের শিখন সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন।
আরও পড়ুন :- শ্লেষ অলংকার কাকে বলে?
এভাবে দলীয় কাজে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে সক্রিয় ও মনোযোগী করতে পারলে বিভিন্ন মেধা ও সক্ষমতার শিক্ষার্থীদের কাছে শিখন আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে। আর শিখন আনন্দময় অভিজ্ঞতায় পরিণত হলে তা শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি স্থায়ী হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.