বক্রোক্তি অলংকার কাকে বলে? বক্রোক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ?

বক্রোক্তি অলংকার কাকে বলে :-

যেখানে বক্তব্যকে সোজাসুজি না বলে বাঁকাভাবে অর্থাৎ একটু ঘুরিয়ে বলা হয়, অথবা বক্তব্যকে সহজ অর্থে গ্রহণ না করে অন্য আর্থে গ্রহণ করা হয়, সেখানে কণ্ঠভঙ্গি অথবা শ্লেষের কারণে এক ধরনের শ্রুতিমাধুর্যের সৃষ্টি হয়। এর নাম বক্রোক্তি অলংকার।

বক্রোক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-

১. বক্রোক্তি (বক্র + উক্তি) অর্থ বাঁকা কথা। কথায় সৌন্দর্য ফোটানোর লক্ষ্যেই এ বক্রতা আবশ্যক। উক্তির এই বক্তৃতা সৃষ্টির জন্য কবিরা দুটি কৌশল প্রয়োগ করেন একটি ‘কাকু' বা কণ্ঠভঙ্গি, আর একটি 'শেষ' বা স্বার্থকতা (কথাটির দুটি অর্থ)।

২. বক্রোক্তির প্রথম লক্ষণ, বস্তুার তরফে বক্তব্যকে একটু ঘুরিয়ে বলা। 'কাকু' বা বিশেষ কন্ঠভঙ্গির সাহায্যেই কথায় বক্তৃতা আনা যেতে পারে। ভঙ্গিটা যদি এমন হয় যে, হাঁ- প্রশ্নবাক্য দিয়ে না-বোধক বক্তব্য অথবা না প্রশ্নবাক্য দিয়ে হাঁ-বোধক বক্তবা প্রকাশ পায়, তাহলে হবে কাকু-বক্রোন্তি।


৩. বক্রোক্তির দ্বিতীয় লক্ষণ, শ্রোতার তরফে বক্তব্যকে সহজ অর্থে গ্রহণ না করে অন্য অর্থে গ্রহণ করা।

অর্থাৎ, বক্তা যে কথাটি প্রয়োগ করেছেন তার দুটি অর্থ- একটি বক্তার অভিপ্রেত অর্থ, অন্যটি শ্রোতার গৃহীত অর্থ।

অতএব, কথাটির প্রয়োগে শেষ আছে। দেখা যায়, শেষের সুযোগ নিয়ে শ্রোতা প্রতিবারই কথাটিকে বক্তার অনভিপ্রেত অর্থের দিকে টেনে নিচ্ছেন, অভিপ্রেত অর্থটি বারে বারে উপেক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে বক্তা এবং শ্রোতার উক্তি-প্রত্যুক্তির মধ্য দিয়ে এক ধরনের শ্রুতিমাধুর্য তৈরি হতে থাকে। এরই নাম শেষ-বক্রোক্তি।
বক্রোক্তি অলংকার কাকে বলে

বক্রোক্তির প্রকারভেদ বা শ্রেনীবিভাগ :-

বক্রোক্তি দু-রকমের। যথা-

(ক) কাকু-বক্রোক্তি এবং

(খ) শ্লেষ-বক্রোক্তি

এখন এই দুই প্রকার বক্রোক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কাকু বক্রোক্তি কাকে বলে :-

যে বক্রোক্তি অলংকারে কাকু বা বিশেষ কন্ঠভঙ্গির হাঁ-প্রশ্নবাক্যে না-বোধক বক্তব্য অথবা না প্রশ্নবাক্যে হাঁ-বোধক বক্তব্য প্রকাশ পায়, তার নাম কাকু-বক্রোন্তি।

আরও পড়ুন :- অতিশয়োক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য?

উদাহরণ :

রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী,
আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে ? - মধুসূদন

ব্যাখ্যা :

“মেঘনাদবধকাব্য" থেকে উদ্ধৃত এই চরণদুটি হাঁ-প্রশ্নবাক্যের ভঙ্গিতে উচ্চারিত। এর উত্তরে শ্রোতাকে উপলব্ধি করতে হয় যে, প্রমীলা ভিখারি রাঘবকে একটুও ভয় করে না। উপলব্ধিটি না-বোধক। বিশেষ কন্ঠভক্তির সাহায্যে উচ্চারিত হাঁ-প্রশ্নবোধক না-বোধক বক্তব্য প্রকাশ পেল বলে এখানে কাকু-বক্রোক্তি হয়েছে।

শ্লেষ-বক্রোক্তি কাকে বলে :-

যে বক্রোক্তি অলংকারে বক্তার কথায় শ্লেষ বা দুটি অর্থ থাকে এবং শ্রোতা বক্তার অভিপ্রেত অর্থটি গ্রহণ না করে অন্য অনভিপ্রেত অর্থটি গ্রহণ করেন, তার নাম শ্লেষ-বক্রোক্তি।

আরও পড়ুন :- উপমা অলংকার কি?

উদাহরণ :

বক্তা - দ্বিজরাজ হয়ে কেন বারুণী সেবন ?
শ্রোতা - রবির ভয়েতে শশী করে পলায়ন।

ব্যাখ্যা :

বক্তার প্রথম কথায় 'দ্বিজ' এবং 'বারুণী" শব্দের দুটি করে অর্থ। 'দ্বিজ' শব্দের একটি অর্থ ব্রাক্ষ্মণ এবং ‘বারুণী'-র একটি অর্থ মদ। অতএব বস্তুার অভিপ্রেত অর্থ-ব্রাহ্মণ হয়ে মদ খাও কেন ? ‘দিজ’ শব্দের দ্বিতীয় অর্থ চাঁদ, 'বারুণী'-র অর্থ পশ্চিমদিক। শ্রোতার গৃহীত অর্থটি এইরকম—চাঁদ পশ্চিমদিকে যাচ্ছে কেন? এই অর্থ ধরেই তার উত্তর—সূর্য উঠছে, তাই চাঁদ ডুবছে। এটি বক্তার অনভিপ্রেত অর্থ। এইভাবে শ্রোতা শ্লেষের সুযোগে বক্তার অভিপ্রেত অর্থটি গ্রহণ না করে অনভিপ্রেত অন্য অর্থটি গ্রহণ করায় শ্লেষ-বক্রোক্তি হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ