অতিশয়োক্তি কাকে বলে :-
বিষয়ীর (উপমানের) সিদ্ধ অধ্যবসায় হলে, অর্থাৎ উপমান উপমেয়কে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেললে এবং সেই কারণে উপমেয়ের কোনো উল্লেখ না থাকলে যে অর্থসৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়, তারই নাম সাধারণ অতিশয়োক্তি।অতি সহজ ভাবে বললে, উপমেয় লুপ্ত এবং উপমান প্রবল হলে তখন তাকে অতিশেয়োক্তি বলে।
আরও পড়ুন :- ব্যতিরেক অলংকার কি?
অতিশয়োক্তি অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-
১. উপমেয়ের উল্লেখ থাকে না, অর্থাৎ উপমেয় লুপ্ত।২. বাক্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য থেকে উপমেয়কে চেনা যায়।
৩. উপমান একা, সর্বাত্মকভাবে প্রতিষ্ঠিত।
৪. উপমেয়-উপমানের সাদৃশ্য এখানে চূড়ান্ত, অভেদ সম্পূর্ণ।
উদাহরণ : (i)
মুকুতামণ্ডিত বুকে নয়ন বর্ষিলউজ্জ্বলতর মুকুতা! —মধুসূদন (মেঘনাদবধকাবা/৬ষ্ঠ গ)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
নিকুম্ভিলা যজ্ঞস্থলের দিকে পা বাড়ানো মেঘনাদের বিদায়-মুহূর্তের একটি করুণ দৃশ্য উদ্ধৃত উদাহরণটি। বেদনার্ত প্রমীলার ক্রন্দন-দৃশ্য। নয়ন থেকে অশ্রুধারাই তো বর্ধিত হল। কিন্তু অশ্রু এখানে অনুপ্ত। প্রমীলার নয়ন বা বর্ষণ করল, কবির চোখে তা 'মুকুতা'। তারই উল্লেখ এখানে আছে।
অর্থাৎ, প্রকৃত বা উপমেয় 'অশ্রু'-র উল্লেখ নেই, আছে কেবল অপ্রকৃত বা উপমান 'মুকুতা'র (মুস্তা) উল্লেখ। অতএব, অলংকার এখানে অতিশয়োক্তি (বিশেষ নাম ‘রূপকাতিশয়োপ্তি)।
আরও পড়ুন :- উৎপ্রেক্ষা অলংকার কি?
কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুই রে অভাগী,
কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা
এ ভুজগে ? —মধুসূদন (মেঘনাদবধকাব্য/১ম সর্গ)
ব্যাখ্যা :
বিধ্বংসী লঙ্কাযুদ্ধের জন্য রাবণ দায়ী করলেন সূপর্ণখাকে। পঞ্চবটীবনে 'কালকূটে ভরা ভুজগ'টিকে দেখারই পরিণাম এ যুদ্ধ।
উদাহরণ : (ii)
হায় সূর্পণখা,কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুই রে অভাগী,
কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা
এ ভুজগে ? —মধুসূদন (মেঘনাদবধকাব্য/১ম সর্গ)
ব্যাখ্যা :
বিধ্বংসী লঙ্কাযুদ্ধের জন্য রাবণ দায়ী করলেন সূপর্ণখাকে। পঞ্চবটীবনে 'কালকূটে ভরা ভুজগ'টিকে দেখারই পরিণাম এ যুদ্ধ।
কিন্তু, বিধ্বস্ত রাবণের দৃষ্টিতে যা 'ভুজগ' (সাপ), প্রকৃত অর্থে তিনি এখানে রামচন্দ্র। সূর্পণখা রামচন্দ্র আর লক্ষ্মণকে দেখেই কামাসক্ত হয়ে রক্তারক্তি-কাণ্ডের সূচনা করেছিল, কোনো সাপ দেখে নয়।
অতএব, ‘ভূলা' এখানে উপমান মাত্র, তার উপমেয় 'রামচন্দ্র। বক্তার (রাবণের) মূল্যায়নে এবং কবির প্রকাশভঙ্গিতে উপমান-উপমেয়ের সাদৃশ্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং তাদের অভেদ এখানে পরিপূর্ণ। ফলে, বাক্যে উপমেয় 'রামচন্দ্র পুরোপুরি লুপ্ত, উপমান 'ভুজঙ্গ সর্বাত্মকভাবে প্রতিষ্ঠিত। বলা যায়, উপমান সম্পূর্ণভাবে উপমেয়কে গ্রাস করে ফেলেছে। সুতরাং, এখানকার অলংকার অতিশয়োক্তি।
আরও পড়ুন :- উপমা অলংকার কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.