আলোচনা পদ্ধতি কাকে বলে :-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পাঠ উপস্থাপনে সনাতন পদ্ধতির মধ্যে আলোচনা পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। কোনো একটি সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে কয়েকজনের মিলিত প্রচেষ্টায় পারস্পরিক মত বা ভাব বিনিময় বা কথোপকথনকেই আলোচনা বলে।আলোচনা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক সময় কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান করা যায়। নির্ধারিত এবং অনির্ধারিত যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তাহলে আমরা বলতে পারি- কোনো সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে শ্রেণিতে বা শ্রেণির বাইরে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে কখনো কখনো শিক্ষকের সহযোগিতায় যখন সমাধানের চেষ্টায় নিয়োজিত হয় তখন তাকে আলোচনা পদ্ধতি বলে।
আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মতামত দেয় এবং আলোচনা করে থাকে। তাই এটি বক্তৃতা পদ্ধতি থেকে স্বতন্ত্র এবং অপেক্ষাকৃত উন্নত।
আলোচনার পুরো প্রক্রিয়াটি চলে শিক্ষক অথবা দলনেতার পরিচালনায়। এখানে সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে। এ পদ্ধতিটি জোড়া বা দলগতভাবে প্রয়োগ করা যায়। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামত দানের সুযোগ ঘটে এবং নিজেদের আত্মচেষ্টায় জ্ঞান অর্জনের ফলে তা স্থায়ী হয়।
আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য :-
- শিক্ষার্থী-শিক্ষক উভয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
- শিক্ষক/দলনেতার নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে এ পদ্ধতি পরিচালিত হয়।
- আলোচনার বিষয়বস্তু পূর্ব নির্ধারিত বা অনির্ধারিত হতে পারে।
- পদ্ধতি বাস্তবায়নের আগেই বিষয়বস্তু নির্ধারণ, সময় নির্ধারণ, দল গঠন ইত্যাদি কাজ করে নিতে হয়।
- এটি একটি দলভিত্তিক পদ্ধতি ।
- শিক্ষক আলোচনার বিষয়বস্তু এবং দিকনির্দেশনা দেন। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই প্রধান। শিক্ষক কেবল সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন।
- অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।
- প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের অন্তরায়।
- শিক্ষার্থী নিজস্ব চিন্তা চেতনায় বিষয়বস্তুর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তৈরি করে।
- এ পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
আলোচনা পদ্ধতির সুবিধা :-
- শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর সক্রিয় হওয়ার সুযোগ থাকে।
- নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করে সমস্যা সমাধান করতে পারে বলে মুখস্থ নির্ভরতা কমে যায়।
- শিক্ষার্থীরা চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী হয়।
- সৃজনশীলতা বিকশিত হয়।
- শিক্ষার্থীরা স্ব-শিখনে উদ্বুদ্ধ হয়।
- সকলের যুক্তির ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হয় বলে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সহমর্মী হয়।
- জীবনের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হয় বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জিত হয়।
- ভুল ও দুর্বলতা সংশোধনের পথ সৃষ্টি হয়।
- শ্রেণিশৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীরা নিজেরা দায়িত্বশীল হয় বিধায় শিক্ষকের এ ব্যাপারে ভাবতে হয় না।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহানুভূতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসহ নানাবিধ মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে।
আলোচনা পদ্ধতির অসুবিধা :-
বাংলা বিষয়ে পাঠ উপস্থাপনে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হিসেবে আলোচনা পদ্ধতি থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিচে অসুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো।- পদ্ধতিটির প্রয়োগ সময় সাপেক্ষ
- প্রতিটি ধাপের জন্য দেওয়া ৩৫-৪০ মিনিট সময় এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য উপযোগী নয়।
- নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে এ পদ্ধতি কার্যকরী নয়।
- উচ্চ মেধার শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী হলেও মধ্য ও নিম্ন মেধার শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী নয়।
- যথাযথ তদারকির অভাবে এ পদ্ধতিতে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
- অধিক শিক্ষার্থী সংবলিত শ্রেণিকক্ষে এ পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা যায় না।
- এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে অনেক সময় শ্রেণিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। দক্ষ শিক্ষকের অভাব এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের অন্তরায়।
- পাঠ্যসূচি ও শিক্ষাক্রম সমাপ্ত করা যায় না।
আরও পড়ুন :- ভূমিকাভিনয় পদ্ধতি কি?
আলোচনা পদ্ধতির প্রয়োগ কৌশল :-
উদ্দেশ্যভিত্তিক যথাযথ পরিকল্পনা করে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের পরিকল্পনার ৩টি অংশ থাকে। যথা :১. প্রস্তুতি :
শিক্ষার্থী-শিক্ষক উভয়ের প্রস্তুতি আবশ্যক হলেও শিক্ষকের প্রস্তুতি বেশি মাত্রায় প্রয়োজন। কারণ তিনি শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিচালিত করবেন। আনুষঙ্গিক উপকরণাদি অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ করে বিষয়গুলোকে সুবিন্যস্ত করবেন। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে, সে জন্য তা মনোবিজ্ঞান ও যুক্তিসম্মত হতে হবে। বিষয়বস্তুকে সংক্ষিপ্ত আকারে বোর্ডে লিখে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি থাকবে।
২. আলোচনা :
এ পর্বে শিক্ষক শ্রেণি নিয়ন্ত্রণে রেখে সকল শিক্ষার্থী যাতে মনোযোগ দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করবেন। আলোচনায় প্রত্যেক দলের সদস্যবৃন্দ যাতে দলের অন্য সদস্যদের আলোচনা মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং সকলের মতামত নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেদিকে খেয়াল করবেন।
৩. মূল্যায়ন :
আলোচনা পদ্ধতির সর্বশেষ উপাদান মূল্যায়ন। এর তিনটি ধারা থাকবে -
- বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীর ধারণা মূল্যায়ন;
- শিক্ষার্থীর মানসিক ধারণার পরিবর্তন;
- আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রদত্ত নির্দিষ্ট কর্মের মূল্যায়ন।
আরও পড়ুন :- কর্তৃকারক কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.